মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১১ বছর পূর্ণ
ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছু সুপারিশ
(ধারাবাহিক-১৭)
---সৈয়দ আমিরুজ্জামান
বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ গ্যাস ও জ্বালানী নিরাপত্তা অনুপস্থিতঃ
বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ গ্যাস নিরাপত্তা নেই। আর সে অর্থে তার জ্বালানী নিরাপত্তাও অনুপস্থিত, যেহেতু এখনো বাংলাদেশ ভীষণভাবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। পার্শ্ববর্তী বা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে বাণিজ্যিক জ্বালানী ব্যবহার বাংলাদেশের মতো একমুখী নয় বরং তা বহুমুখী (গ্যাস, তেল, কয়লা)। তাই তাদের পক্ষে ভবিষ্যৎ জ্বালানী নিশ্চয়তা অর্জন করা সহজতর। বাংলাদেশে গ্যাস ছাড়া অন্য নিজস্ব বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহার নেই বা খুব কম। মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি চাহিদার ৭০% মেটায় গ্যাস, ২৪%মেটায় তেল। কিন্তু তা পুরোটাই আমদানিকৃত এবং কয়লা ৪% এবং এটিও আমদানিকৃত। বর্তমানে দিনাজপুরে বড়পুকুরিয়ায় একটি কয়লা খনি কয়লা উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে এবং এ খনি সংলগ্ন একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এ কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে এই একটি খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দেশের সামগ্রিক জ্বালানিক্ষেত্রে কিছু সাহায্য করবে বা গ্যাসের ওপর কিছুটা চাপ কমাতে পারবে বলে অনেকে আশা করেন, তবে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে নয়। বাংলাদেশ যদি কয়লা উন্নয়ন পরিকল্পনা বড়ো আকারে বাস্তবায়ন করতে পারে । তবে তা গ্যাসের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। তবে বিগত দিনের অভিজ্ঞতা বেশ একটা আশাপ্রদ নয় ১৯৯৬ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০০৩ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে। এখন ২০০৫ সালের শুরুতেও তা চালু হলনা। তারপরও এ খনি থেকে কতটা কয়লা উত্তোলিত হবে তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। এখানে মজুদ ৩০০ মিলিয়ন টন কয়লা থাকলেও বর্তমানে খনি পরিকল্পনায় প্রথম পর্বে ৩০ মিলিয়ন টন ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা বা পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারের হাতে এমন কোন পরিকল্পনা নেই যে, বাংলাদেশে খুব ব্যাপক আকারে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। গ্যাস ও কয়লা ছাড়া এ দেশে ও তেল সম্পদ তেমন কিছু পাওয়া যায়নি, হরিপুরে একটি অতি ছোট তেলক্ষেত্র , কয়েক বছর তেল উৎপাদনের পর বন্ধ হয়ে যায়। মার্কিন সংস্থা (ইউএসজিএস) ও পেট্রোবাংলার যৌথ সমীক্ষা রিপোর্টে এ মন্তব্য করা হয় যে, প্রয়োজনীয় ভূতাত্ত্বিক উপাদানের অভাব থাকার কারণে এদেশের তেল সম্ভাবনা ভালো। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি যেমন জলবিদ্যুৎ অতি সামান্য আকারে বিদ্যমান এবং এর বড় প্রসার বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তেজষ্ত্র্নিয় জ্বালানির কারিগরি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আর অনেকে যে নবায়নযোগ্য বিকল্প জ্বালানি বা সৌরশক্তির কথা বলেন, তা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচলন শুরু হতে অন্তত আরো ৫০ থেকে ৬০ বছর সময় লাগবে। সুতরাং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নেই।
(বি:দ্রঃ সময়ের অভাবে আপডেট করা সম্ভব হলো না। আমার ধারাবাহিক এই লেখাটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। এ ছাড়া আমার এই লেখাটি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সেমিনারে মূল প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:৫৯