somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাতক গ্যাসক্ষেত্র, টেংরাটিলা ব্লো-আউট

৩০ শে জুন, ২০০৮ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ই জুন মাগুরছড়া দিবস
মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১১ বছর পূর্ণ

ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছু সুপারিশ
(ধারাবাহিক-১৫)
--সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ছাতক গ্যাসক্ষেত্র, টেংরাটিলা ব্লো-আউটঃ
ছাতক গ্যাসক্ষেত্র ১৯৫৯ সালে আবিস্কৃত হয় এই কূপটি ছাতক-১ হিসেবে পরিচিত। এই গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৭ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের পর কূপে অত্যাধিক পানি আসার কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এই গ্যাসক্ষেত্রটিতে মোট মজুদ প্রায় ৩৩২ বিলিয়ন ঘনফুট, যার অধিকাংশই উৎপাদন করা হয়নি। এই ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস উৎপাদন পুনরায় শুরুর লক্ষ্যে বাপেক্সকে পাশ কাটিয়ে সরকার কানাডিয়ান বহুজাতিক নাইকো রিসোর্স কোম্পানিকে ইজারা দেয়। এই কোম্পানি ছাতক- ১ এর কাছেই ছাতক-২ কূপটি খনন করা শুরু করে এ বছরের প্রথম দিন থেকে। ছাতক-২ ( টেংরাটিলা )কূপটিতে ব্লো-আউট অবশ্যম্ভাবী ছিলনা। এর যথার্থ কারণ সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করেছে। কূপ-নকশা এবং খননকর্মে ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। উপরোক্ত ত্রুটিটি ছিল ১৯৯৭ সালে মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া কূপে সংঘটিত দুর্ঘটনার অনুরূপ। মাগুরছড়ায় দুর্ঘটনার পর তার কারণ তদন্ত করে দেখা যায় যে, কূপ খননকারী অক্সিডেন্টাল কোম্পানীর কূপ-নকশা এবং খনন পদ্ধতিতে ত্রুটি এবং এর সঙ্গে কোম্পানীর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করা হয়। একইভাবে টেংরাটিলা কূপেও কূপ-নকশা ও খনন কাজের একই ধরনের ত্রুটি হয়েছে। কূপটিতে যথাযথভাবে কেসিং না করার ফলে গ্যাস নরম বালি স্তরে চারদিকে ঢুকে পড়ে ও তা কূপের পরিপার্শ্বে ও বহু স্থান দিয়ে বের হতে থাকে। আর গ্যাসস্তর থেকে পুলিং আউট করার ফলে গ্যাস উপরে উঠে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূ পৃষ্ঠে এসে দুর্ঘটনাটি ঘটায়।
মাত্র ১১ বছর আগে মাগুরছড়া কূপের দুর্ঘটনার কারণ যেখানে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি ছাতক-২ খননের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়নি। একটি নতুন কূপ খনন করার পূর্বে তার আশপাশে পূর্বেকার খননকৃত কূপসমূহের সমূহ তথ্য ও খনন ইতিহাস বিবেচনায় আনা একটি প্রচলিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এই কূপের ভূগর্ভে কি ধরনের শিলা স্তর, কি ধরনের গ্যাস স্তর পাওয়া যায় এবং তাদের ব্যবহার কি রকম হবে- এ তথ্য সমূহ জানা থাকা সত্ত্বেও এ ব্লো-আউট গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
ছাতক(টেংরাটিলা) কূপে দুর্ঘটনায় তিন ধরনের ক্ষতি হয়েছে। প্রথমত, ভূ গর্ভে মূল্যবান গ্যাস মজুদের একটি বড় অংশ পুড়ে এবং বাতাসে উড়ে গিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঐ এলাকায় কৃষি ও প্রতিবেশের বড় রকমের ক্ষতি হয়েছে আর তৃতীয়ত, জনগণের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
টেংরাটিলার যে গ্যাসস্তরটিতে এই ব্লো-আউট ঘটে তা একটি বড় আকারের গ্যাসস্তর। নাইকো কোম্পানী ও বাপেক্স যৌথভাবে ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের মজুদ নতুনভাবে নির্ধারণ করে, মোট মজুদ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ঘনফুট, এ পরিমাণ গ্যাসের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৩,৩৬০ কোটি টাকা। তার মধ্যে কেবল এ নাইকো ও বাপেক্স যৌথভাবে আবার এক বছর পূর্বেই ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের মজুদ পুনর্মূল্যায়ন ও মজুদ পুনর্নির্ধারণ করে এবং তাতে বলা হয় যে , দুর্ঘটনাকবলিত এই গ্যাসস্তরে ১১৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে যার বাজার মূল্য প্রায় ৬,৭১৬ কোটি টাকা। ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের অন্য দুটি গ্যাসস্তর আরো গভীরে অবস্থিত। গ্যাস বিনষ্ট হওয়ার আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও পরিবেশের ক্ষতি ও মানুষের সম্পত্তির যে ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য যথাযথভাবে নির্ধারণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি ছাতক (টেংরাটিলা) দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ বাবদ কানাডিয়ান নাইকো রিসোর্স কোম্পানির উপর মাত্র ১০ কোটি টাকা জরিমানা নির্ধারণ করেছে। দেশপ্রেমিক ভূতাত্ত্বিকদের মতে, উক্ত জরিমানাকে অগ্রহণযোগ্য ও জনগণের সাথে উপহাস । বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীগুলো কতটা অদক্ষ এবং অযোগ্য তা ইতিমধ্যে সিমিটার, অক্সিডেন্টাল ও নাইকো কোম্পানীর কর্মকান্ড থেকেই তা স্পষ্ট হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য সরকারের কোন আগ্রহ নেই। ১৯৯৭ সালে মাগুরছড়া ব্লো-আউটে গ্যাস সম্পদ বিনষ্ট ও পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত কমিটি এ ক্ষতির হিসাবটি সরকারকে রিপোর্ট দেয়। সরকার সে মোতাবেক অক্সিডেন্টাল কোম্পানীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করে। কিন্তু কোম্পানী ক্ষতিপূরণ দেবার কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে সরকার পক্ষ জানায়। পরবর্তীতে অক্সিডেন্টাল কোম্পানী আরেক মার্কিন কোম্পানী ইউনোকলের কাছে অবৈধভাবে হস্তান্তর করে চলে যায়। পরে আবার ইউনোকল কোম্পানীও তাদের স্বত্ব শেভরনের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। কিন্তু মাগুরছড়া ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আর ফয়সালাই হলো না। গ্যাস ও তেল উত্তোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানীর সঙ্গে সরকারের সম্পাদিত চুক্তিগুলো ভয়াবহভাবে অসম,অযৌক্তিক, লুণ্ঠনভিত্তিক, জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের নমনীয় নীতির জন্যই দেশের অমূল্য গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনষ্ট করেও বিদেশী কোম্পানী পার পেয়ে যাচ্ছে। আর কতদিন বাংলাদেশের জনগণের মূল্যবান এই গ্যাস সম্পদ নিয়ে বিদেশী কোম্পানীর খামখেয়ালী ও লুণ্ঠন সহ্য করে যাবে সরকার। এটি মোটেই জনগণের কাম্য নয়।
একটি গ্যাসকূপ খনন করতে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীকে ডেকে এনে শেয়ার দেওয়ার প্রয়োজন নেই এ কাজ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স নিজেই করতে পারে। বাপেক্সকে দিয়েই বাংলাদেশের সকল গ্যাসকূপ খনন করা বাঞ্চনীয়। এক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক অসঙ্গতির কথা উঠা অবান্তর। ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ ৬,৭১৬ কোটি টাকার গ্যাস সম্পদ বা মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে ১৪ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বা এমবি-২, এমবি-৩, এমবি-৪, এমবি-৫সহ বাংলাদেশের সকল গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে প্রতিটি কূপে মাত্র ৪০ কোটি টাকা খরচের সঙ্গতি না থাকার যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। আর বাপেক্সের কারিগরি ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করা অজ্ঞতা ও প্রতারণার সামিল। বাপেক্স ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে এবং ফেঞ্চুগঞ্জ ও সালদানদী গ্যাসক্ষেত্রসমূহে কূপ খনন করে গ্যাস উৎপাদন চালু রেখেছে। তাই ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে-মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে, এমবি-২, এমবি-৩, এমবি-৪, এমবি-৫ সহ বাংলাদেশের সকল গ্যাসক্ষেত্রে বাপেক্সকে দায়িত্ব দিতে অসুবিধা কোথায় ছিল ?
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×