মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১১ বছর পূর্ণ
ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছু সুপারিশ
(ধারাবাহিক-১০)
--সৈয়দ আমিরুজ্জামান
১০টি দাবি নামাঃ
'মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটি'র পক্ষ থেকে ১০টি দাবি নামা উত্থাপন করা হয়েছে। দাবিসমূহ হচ্ছেঃ ১. মাগুরছড়ায় দায়িত্বহীনতার কারণে যে ব্লো-আউট ঘটেছে এবং গ্যাস সম্পদ, পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তার জন্যে অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে কমপক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করুন। এই ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত অক্সিডেন্টাল-ইউনোকলের দায়িত্ব গ্রহণকারী শেভরনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করুন এবং তাদের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আটক করুন।
২. মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণে পরিবেশগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আনারস, লেবু, ভূমি, বসত বাড়ি, পশু পাখি, প্রাকৃতিক শোষণ ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক উৎপাদন, পশু পাখির বসতি, ভূপৃষ্ঠস্থ প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ, ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের অধোগমন, প্রাণ বৈচিত্র, ভূমিস্থ অনুজীব, বনজ সম্পদ এবং মৃত্রিকার যে অপূরণীয় ক্ষতি, সেই ক্ষতিপূরণ আদায় করুন।
৩. মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ, বন, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের অপরাধে অক্সিডেন্টাল কোম্পানীর বিরুদ্ধে তার দেশের গাফিলতি আইন (Law of Negligence) কঠিন দায়িত্বের আইন (Law of Strict Liability) ও ক্ষতিপূরণের আইন (Law of Compensation) এর আওতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করুন ।
৪. গ্যাস ও তেল উত্তোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিদেশী তেল কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত অসম, অযৌক্তিক, লুণ্ঠন ভিত্তিক, জাতীয় স্বার্থবিরোধী, দেশের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতিকর উৎপাদন অংশীদারী চুক্তিগুলো অবিলম্বে বাতিল করুন।
৫ গ্যাস ও তেল হলো জনগণের সম্পত্তি, এর মালিক সমগ্র জনগণ, তাই জনগণের অবগতির জন্য এ যাবৎকালে সংগঠিত সব আলোচনা, চুক্তি, আমলা-রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি, বিদেশী কোম্পানির দেশীয় এজেন্টদের নাম ও তাদের প্রাপ্ত কমিশন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।
৬. বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন, অপচয় করার প্রক্রিয়ায় জড়িত ক্ষমতাবান ব্যক্তি, আমলা, ব্যবসায়ী, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ যেই হোন না কেন তাদের চিহ্নিত করুন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন।
৭. বিদেশী কোম্পানিকে মুনাফা যোগান দেয়ার জন্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর পরামর্শে দেশের উৎপাদনশীল খাত ক্ষতিগ্রস্ত করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বন্ধ করুন।
৮. দেশের শিল্পায়ন ও উৎপাদনশীল সামগ্রিক উন্নয়ন চাহিদা বিবেচনা করে এবং তার সঙ্গে সমন্বিতভাবেই গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই অনুসন্ধানের প্রক্রিয়ায় আগামীতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রতিবছর দেশীয় কোম্পানি উত্তোলিত গ্যাস বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের (বর্তমান ১৩০০ কোটি টাকা ) অন্তত শতকরা ২০ ভাগ গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন গবেষণা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রভৃতি কাজে ব্যয় করুন।
৯. দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেকে পঙ্গু করা চলবে না। গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলনের দায়িত্ব প্রধানতঃ বাপেকে দিতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. দেশের গ্যাস সম্পদ নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রদূত, প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত, অনৈতিক, দায়িত্বহীন, ভ্রান্ত ও উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী গ্যাস রফতানি চলবে না। শহর-গ্রামে ঘরে ঘরে, উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গসহ দেশের সর্বত্র এবং কলে-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০০৮ রাত ৯:৫৭