সকালে অফিসে আসার পথে একটি বিষয় চোখে আটকে গেলো। একটি মেয়ে এবং তার এক ছেলে বন্ধু বাসে উঠেছে ইউনিতে যাবে বলে। মেয়েটি বাসে উঠে অপেক্ষা করতে লাগলো তার ছেলেবন্ধুটির ইশারার তাকে কোন সিটে বসার জন্য ইঙ্গিত করে। এবং কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে ছেলেটি যথারীতি মেয়েটিকে ইশারায় দেখিয়ে দিলো এই সিটে বসো এবং মেয়েটি বসে পড়লো। ঘটনাটি কিন্তু উল্টা ঘটতে পারতো। ছেলেটির জায়গায় মেয়েটি এবং মেয়েটির জায়গায় ছেলেটি হতে পারতো। মেয়েদের ইচ্ছার মুল্য আমাদের আধুনিক নামের তথাকথিত সমাজে কতটুকু আছে সেটা এক বিশাল প্রশ্ন। প্রতিনিয়ত নারীরা হচ্ছে প্রতিহিংসার শিকার। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৭৭৭ জন। ঘরে-বাইরে নারীরা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন।
বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। অবাক হলাম সেই সব দেশের তালিকার মধ্যে আফগানিস্তান এর নাম রয়েছে দেখে । সুত্র Click This Link
এক সময় খবরে পড়েছিলাম আফগানিস্তানের পুরুষরা তাদের স্ত্রী, কন্যাশিশু ও বোনদের মারধরের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় অনুমতি পাচ্ছে। নতুন একটি আইনে বলা হয়েছে মারধরের শিকার নারীর আত্মীয়রা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে পারবে না। এছাড়া এ সংক্রান্ত কোনো মামলাও আদালতে তোলা যাবে না। দেশটির পার্লামেন্ট লয়া জিগরায় সম্প্রতি এ ধরনের একটি আইন পাস হয়। তবে আইনটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের দফতরে তার সাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। সুত্র http://www.sheershanews.com/2014/02/06/24968 যেই দেশে এমন আইন পাস হবার অপেক্ষা করা হয় সেই দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয় কোন যুক্তিতে বুঝলাম না কেমনে কি ?
আরেকটি মজার তথ্য দেখলাম চীন,মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সরকারী ছুটি দিনভোগ করেন। পুরুষেরা না। কেন পুরুষদের একটু সুবিধা দিলে কি হইতো ? সাম্যের কথা বলে এগুলা কি ? এই সব সমালোচনা থেকে মুক্ত হতে হবে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে বলছে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ পুরুষই মনে করেন, স্ত্রীকে মার দেওয়া যায়। গ্রামের ৮৯% শহরের ৮৩% পুরুষ মনে করেন, স্ত্রী অন্যায় কিছু করলে স্বামীর মার দেওয়ার অধিকার আছে। শহরের ৯৩% এবং গ্রামের ৯৮% পুরুষই বিশ্বাস করেন, পুরুষ হতে হলে তাঁকে কঠোর হতেই হবে। আবার শহরের ৫০% এবং গ্রামের ৬৫% পুরুষ বিশ্বাস করেন, পরিবারকে রক্ষা করার জন্য নারীদের নির্যাতন সহ্য করা উচিত।
নির্যাতন বলছেন কাকে দাদা? এতো আমাদের সংস্কৃতি!বাংলাদেশে পুরুষ দেবতার পর্যায়ে পরে। এই দেবতা শুধু নারীর দেবতা। পুরুষকে দেবতা বানিয়েছে আমাদের ঘুনেধরা পচে যাওয়া পুরনো মূল্যবোধ। আমাদের সিনেমা, আমাদের সাহিত্য, আমাদের রাজনীতি সব কিছু সবসময় সুকৌশলে নারীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং এখনো দাঁড়াচ্ছে।
আমাদের পুরুষ যখন প্রেমিক তখন সে দেবতার মতো প্রেমিক সব দিয়ে দেয়। নিজের প্রেম বুঝাতে বুক থেকে থাবা দিয়ে হৃদপিণ্ড বের করে নিয়ে আসে। তাই দেখে নারী অসহায়ের মতো কাঁদে আর নিজেকে অভিশাপ দেয়। এই হল আজকের দিনের সিনেমা আর অতীতের শাবানা সে এক লম্বা ইতিহাস।
আমাদের পুরুষ যখন দেশপ্রেমিক পুরুষ তখন সে বেসরকারি চ্যানালের মালিক। সে যখন নারীর জন্য কাঁদে তখন তার একটা হাত নারীর আঁচল তলে থাকে। সে নারীকে পণ্য করে সে নারীকে ব্যাবহার করে তার মতো করে। পার্থক্য শুধু সে সাজিয়ে গুঁজিয়ে করে।
আমাদের পুরুষ যখন রাজনীতিবিদ তখন সে ম্যাশিনম্যান, তখন সে বাবুর বাবা ......……… থাক সেটা নাই বলি।
নারীকে তার নিজের অধিকার বুঝে নিতে হবে। নারীর শরীর নারীর অধিকার। ঘুণে ধরা পুরনো মূল্যবোধ আমাদের কি বাংলাদেশ দিয়েছে তা বলে দিচ্ছে ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের স্ট্যাটিস্টিক।
" আমি নারী আমি পারি/শুধু সৃষ্টিই নয় জানি ধ্বংস/আমি যে মহাশক্তির অংশ /আমি পারি প্রেমে বাঁধতে /পারি ভবিষ্যৎকে মুঠোয় ধরতে /হতে পারি,ক্ষুদ্র কিন্তু উচ্চ আমার আশা/আমি স্বাধীন/ আমি মুক্ত তাই আকাশে ভাসা "।
সকল জেন্ডারের মানুষ পরস্পরের বন্ধু হয়ে উঠুক; ক্ষমতা ও অধিকারের পুর্নবিন্যাস হোক। লিঙ্গীয় বন্ধুত্বের দিবসে সকল জেন্ডারের মানুষকে শুভেচ্ছা।