দেশে দেশে এক অমানবিক নিয়ম অনেক সময় ধরেই সবার জ্ঞ্যাতে মহান তবিয়তে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে চালু আছে। আর এর নাম হলো "ঘুষ' ইংরেজীতে বলা হয় Bribery। ঘুষ কে উইকিপিডিয়াতে সংজ্ঞায়িত করেছে এইভাবে " Bribery, a form of corruption, is an act implying money or gift giving that alters the behavior of the recipient. Bribery constitutes a crime and is defined by Black's Law Dictionary as the offering, giving, receiving, or soliciting of any item of value to influence the actions of an official or other person in charge of a public or legal duty "। আমাদের মতো তৃতীয় সারির দেশগুলোর পাশাপাশি প্রথম সারির দেশগুলোতেও এই "ঘুষ" প্রথাটি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে যখন সভ্য মানুষ আস্তে আস্তে শ্রেণীবিভক্ত সমাজে রুপান্তরিত হতে থাকে ঠিক সেই সময়কাল থেকেই এই অনৈতিক ব্যাধির উদ্ভব। প্রাচীন ইতিহাসে এবং অনেক মহাকাব্যে আমরা এই ঘুষ প্রথার প্রচলন খুজে পাই। আর তাই এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় এই মহাব্যাধির শিকড় আমাদের সমাজে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত প্রোথিত। একদিনে চাইলেই একে নির্মুল করা সম্ভব নয়। কিন্তু যে নিয়মের প্রচলন করেছি আমরা মানুষেরাই তাহলে এর দায়ভার আমাদের উপরেই বর্তায়। ফলে এরকম অমানবিক এবং মানবতাহীন প্রথাকে আমাদেরকেই সচেতনতার ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সমাজ থেকে দূর করতে হবে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ চলতি বছর ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। সেবা পাওয়ার অধিকার থাকলেও ওই সেবা পেতে ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তারা। বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে গতকাল বৃহস্পতিবার টিআইয়ের ওই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় ঘুষপ্রবণ অঞ্চল বলে উল্লেখ করা হয়। টিআইয়ের জরিপ অনুযায়ী, আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত অঞ্চল।
টিআই ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের সাত হাজার ৮০০ নাগরিকের ওপর জরিপ চালায়। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশই বলেছে, তারা চলতি বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। ঘুষগ্রহীতাদের বেশির ভাগই পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সুত্র : http://www.prothom-alo.com/detail/news/210916
আমাদের সমাজে অনেক প্রকার ঘুষের প্রচলন আছে । উদাহরন সহ বলা যায় Many types of bribes exist: tip, gift, sop, perk, skim, favor, discount, waived fee/ticket, free food, free ad, free trip, free tickets, sweetheart deal, kickback/payback, funding, inflated sale of an object or property, lucrative contract, donation, campaign contribution, fundraiser, sponsorship/backing, higher paying job, stock options, secret commission, or promotion (rise of position/rank). সুত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Bribery
আমরা আজ মানুষজাতি আদিম সময় পার করে বিবর্তনের পথ ধরে সভ্যতার আধুনিক সময়ে পদার্পন করেছি। আমরা সময়ের সাথে সাথে নানা প্রতিকুলতার ভিতর দিয়ে যেয়ে ভালো - মন্দ, নৈতিক- অনৈতিক বোধ গুলোকে সঙ্গায়িত করতে পেরেছি। যে নিয়ম আমাদেরকে অমানবিক এবং অনৈতিক কাজ বলে ইঙ্গিত দেয় সে প্রথাকে ছুড়ে ফেলার সময় এসেছে অনেক আগেই। ঘুষ-দুর্নীতির বর্তমান ভয়াবহতার ব্যাপারটি প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার একটি স্পষ্ট চিত্র। আমি নিজেও জানি এ লড়াই খুবই কঠিন। দেশের মেহনতি এবং শ্রমজীবী, বুদ্ধিজীবি সমাজ সবাইকে এই অমানবিক সামাজিক প্রথার ( ঘুষ ) বিরেদ্ধে দাড়াতে হবে।কাজটা সহজ নয়, কিন্তু সবার সচেতনতাই পারে একটি সামাজিক ব্যাধিকে সমাজের ভিতর থেকে বিতাড়িত করতে। কারন এই রকম প্রথা বা নিয়ম মানুষের তৈরী আর তা বদলাতে পারে একমাত্র তারাই যারা এই রকম নিয়মের সূচনাকারী। । সেই সুস্পষ্ট লক্ষ্যে গড়ে তুলতে হবে জাতীয় জাগরণ। নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে এটিই হয়ে উঠবে এক জাতীয় নব-উত্থান। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৫১