যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বচ্চ রায় কামনা করে শাহাবাগ চত্বর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারন মানুষের আবেগের আন্দোলন এখন দেশের সব চাইতেই নয়-একমাত্র টপিকস। এই আন্দোলনের সাথে আমিও নিজের একাত্বতা প্রকাশ করে প্রত্যাশা করি-যুদ্ধাপরাধীদের/মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বচ্চ শাস্তি হবে।
যুদ্ধাপরাধ/মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম দন্ড প্রাপ্ত আসামী মওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যু দন্ডাদেশে সাধারন মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহন করেছিল-যদিও বিচার প্রকৃয়া নিয়ে সাধারন মানুষের ভিন্নমত ছিল এবং থাকবেই। যুদ্ধাপরাধ/মানবতা বিরোধী অপরাধের ২য় রায়ে সংস্লিষ্ট বিচারপতি লিখেছেঅ(সংক্ষিপ্ত)- “জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নির্দিষ্ট তদন্ত ও স্বাক্ষীগনের স্বাক্ষ্য প্রমানে সুনির্দিষ্ট ভাবে অপরাধ প্রমানীত হইয়াছে বিধায় আদালত আসামীকে যাবত জীবন/১৫ বছর কারাদন্ড প্রদান করে”! এখানেই সাধারন মানুষের আস্থা হারিয়েছে আদালত। কারন, যেখানে “গণহত্যা/ ধর্ষন ইত্যাদি অপরাধের সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া গিয়েছে-সেখানে কোনো যুক্তিতে মহামান্য বিচারপতি সর্বচ্চ শাস্তির পরিবর্তে যাবত জীবন/১৫ বছরের শাস্তি দিলেন? একই অপরাধে কিম্বা কাদের মোল্লা থেকে লঘু অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যু দন্ড হলেও কাদের মোল্লা কোন অশুভ শক্তির দাপটে লঘু দন্ড পেয়ে দুই আংগুল ফাঁক করে ভিক্টরী অর্জনের হাস্যমুখ দেখাতে পারেন? এই অসামঞ্জস্য/অনাকাংখিত রায় দেখেই সাধারন মানুষ বুঝতে পারছে-গত প্রায় চার বছরের মধ্যে প্রথম মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকার প্রান কেন্দ্রে অফিস টাইমে প্রকাশ্য রাজপথে জামায়াত শিবির-পুলিশের সহাবস্থানের পটভূমি!
১৯৯৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকলেও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার তাদের কোনো বিচার করেনি বরং তখন জামায়াত নেতারাই আওয়ামীলীগের অন্যতম মিত্র রাজনৈতিক দল ছিল-তাই তারা নিরাপদেই ছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তারা ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করে জামায়াতে ইসলামীকে তাদের রাজনৈতিক প্রচারণার টার্গেট করে। ভয়মুক্ত অপরাধের সংস্কৃতি এখন বাংলাদেশে রাজত্ব করছে। এটাই হলো এখানে অপরাধের বিশাল বিস্তার, বৈচিত্র্য ও ভয়াবহতার প্রধান কারণ। আওয়ামীলীগ-জামায়াত দুদলই দেশ রক্ষা আর গণতন্ত্র রক্ষার ঝাণ্ডা হাতে নিয়েই সব করছে। ৭১ সনে জামায়াতে ইসলামী এদেশের নিরীহ জনগনের উপর নির্মমতা চালিয়েছিল। একই ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগ ২০০৬ সনে লগি-বৈঠা নিয়ে জামায়াতেরমতই নিষ্ঠুরতা চালিয়েছিল আবার এখনও জামাতে ইসলাম ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রলয়কাণ্ড করছে। কথাটা নির্মম হলেও সত্য- সব কিছু বিবেচনায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি বড় মাপের অপরাধে আওয়ামী-জামায়াত সমার্থক। জানিনা-৭১ কিম্বা অন্য যেকোনো সময়ের হত্যা ধর্ষনেরমত অপরাধের কোনো বিচার করা যাবে না। এ দাবি যে কোনো সভ্য মানব সমাজে করা যায় এটা চিন্তার বাইরে। এরা ধর্মের নামে অহরহ শপথ নেয়, কিন্তু এদের এই কাজের দ্বারা ধর্মকে এরা নিজেদের বর্বর আলিঙ্গনে আবদ্ধ রাখে। আবার আওয়ামীলীগ ও সমর্থক বুদ্ধিজিবীরা ‘গণতন্ত্র’র নামে বিরোধী দল/মতের নির্মূল মুদ্রার এপিঠ বনাম অপিঠ ভিন্ন আর কিছু নয়! জামাতের কার্যবলীর দ্বারা যেমন ইসলামের গৌরব বৃদ্ধি করেনা, তেমনি আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রের নামে যাকরছে-তাতে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছে- তা যে কোনো সাধারন মানুষই স্বীকার করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর হরতাল ও সমাবেশের ক্ষেত্রেও হঠাত্ করে এখন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনা বাধায় মিছিল-সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। গত তিন বছর কর্মসূচি পালনে বলতে গেলে প্রায় নিষিদ্ধ দলটি হঠাত করেই পুলিশ প্রহরা ও সহায়তায় মিছিল মিটিং করেযাচ্ছে। ২ তারিখের কর্মসূচিতে বাধার বদলে পুলিশের সহায়তা পেয়ে খোদ দলটিও হতবাক। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছি- জামায়াতের হরতাল পালনকারী কর্মীরা পুলিশকে হরতাল চলাকালে ফুলের মালা ও তোড়া উপহার দেয়! হরতাল কর্মসূচির সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের মারদাঙ্গা সম্পর্ক থাকলেও এদিনের হরতালের সময় জামায়াত-পুলিশের মধ্যে একটা ভাই ভাই অবস্থা দেখা যায়।! কিছুদিন আগে একধরনের বামপন্থীদের হরতালের সময়ও তাদের সঙ্গে পুলিশের এই ভাই ভাই সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল! হত্যা-ধর্ষনের অভিযোগ অভিযুক্ত এবং আদালতের ভাষায় অভিযোগ প্রমানিত হবার পরেও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে লঘুদন্ড আওয়ামী-জামাত আতাতের রাজনীতিরই অংশ বিষেশ যা তরুন প্রজন্ম বুঝতে পেরেছে বলেই শাহাবাগ চত্বরসহ দেশ জুড়ে আজ একটাই দাবী আতাতের মাধ্যমে গণহত্যা আর মা-বোনদের নির্যাতনের অপরাধে অভিযুক্তদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে সর্বচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক।
দেশে আজ যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে ঠেলে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে এ চিন্তায় দেশের সর্বস্তরের জনগণ এখন আতঙ্কিত। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে তারা যে নতুন খেলা এখন শুরু করছে তার পরিণাম যে দেশ ও জনগণের জন্য আরও ভয়াবহ হবে এই সম্ভাবনার কালো মেঘ এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশকে আচ্ছন্ন করছে।
যুদ্ধাপরাধ এক বিশেষ পরিস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধ হলেও মূলত তা অপরাধ। অপরাধ বলেই তার বিচার এবং অপরাধীর শাস্তি প্রয়োজন-কাজেই যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮