স্যাটেলাইট চ্যানেলসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় রান্নার রেসিপী এবং
আমাদের দেশের প্রতিটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে রান্নার বিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখানো হচ্ছে।প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় সপ্তাহে একদিন রান্না বিষয়ক স্পেশাল সাব্লিমেন্টারী প্রকাশ করছে। বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো এবং প্রিন্ট মিডিয়ার রদ্ধন রেসিপী্র জোয়ার দেখে মনে হয় গোটা বাঙালি জাতিকে রোগাক্রান্ত করার জন্য রেসিপী মেকাররা উঠেপড়ে লেগেছেন।রোজার মাসে চ্যানেলগুলোতে রান্নার মহাউতসব শুরু হয়। একটা চ্যানেলে দেখেছি একজন রন্ধন শিল্পী ইফতারীর সময়(আযান শেষ হওয়া মাত্র) ঘর্মাক্ত অবস্থায় নানান রকম রান্না নিয়ে ঝাপিয়ে পরেন। তিনি আবার রান্না করেন, ঘাটে মাঠে,ঘরে বাইরে,জংগলে, বাড়ির ছাদে,সমুদ্র তীরে!্তাকে দেখেই বোঝা যায়-তিনি যে একজন রদ্ধন শিল্পীই নন, এক জন খাদকও বটে তা অনুমান করতে কারো ভুল হবার কথা নয়!
রান্নার উপকরণ হিসেবে প্রতিটি খাবারের রেসিপিতে তেল ও চিনির পরিমাণগত যে ব্যবহার দেখানো হয় তাতে মনে হয় এদেশে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়াবেটিস, কিডনিফেইল্যুর, হৃদরোগ মহামারি আকার ধারণ করবে(প্রকৃতপক্ষে এইসব রোগ ইতোমধ্যেই মহামারি আকারে ছরিয়ে পরেছে বললে ভুল হবেনা)। এ অনুষ্ঠানগুলো গলাধকরণ করে আমাদের মা-বোন-ভাবীরা যে বস্তা পঁচা জগাখিচুরি মার্কা রান্না করছেন তা কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত বা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
উদাহরণ স্বরূপ যেখানে ৫-১০ গ্রাম ভোজ্য তেল দিয়ে একটি ডিম ভাজা সম্ভব সেখানে আমাদের সামর্থবান (শতকরা ৬০%) মা-বোন-ভাবীরা ৩০-৫০ গ্রাম তেল ব্যবহার করছেন। এই সব খাবারের প্রতি বাচ্চারা এতোটাই আকৃস্ট হচ্ছে-যা লিখে বোঝানো যাবেনা। প্রতিটি পরিবারে এই অতিরিক্ত তৈলযুক্ত খাবার খেয়ে ৪৫-৫০ বয়স ঊর্ধ্ব লোকজন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনিফেইল্যুর, হৃদরোগে ভুগছেন।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তেল কত বেশি ব্যবহার করেন তার ওপর Status Maintain হয় মেয়েদের অবসর সময়ে আড্ডায় মুখরোচক গল্পে বের হয়ে আসে তথ্যটি। মাসে কেউ কেউ ৬-৭ লিটার তেল ব্যবহার করেন ৩-৫ জন সদস্যের পরিবারের জন্য। যেখানে আমাদের ছোটবেলায় ৭-৮ জন সদস্যের পরিবারে মাসে ১ সের (১ কেজি) তেল ব্যবহার করতে দেখেছি-যা অবশ্যই দারিদ্রের কারনে নয়।
পত্রিকায় পড়েছি- "হেলথ এন্ড নিউট্রেশন ডিপার্ট্মেন্ট পরিচালিত বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৯০% রোগ হয় খাদ্যাভাসের কারণে। আর ১০% রোগ হয় জন্মগত ত্রুটির কারণে। যেখানে মানুষের কোনো হাত থাকে না।" আমাদের দেশের রন্ধন এক্সপার্টদের কল্যাণে তেলযুক্ত খাবার খেতে অনেকে আকৃস্ট হচ্ছে কিম্বা লোভে পরেই বাধ্য হচ্ছে। সেই ক্ষতিকর খাবার খেয়ে এক শ্রেনীর আঁতেল ক্ষতির দিকটা তুলে নাধরে উল্টো দাঁত বের করে প্রশংসাও করেন-তাদের রান্না খুব ভালো হয়েছে।আমি নিশ্চিত, যারা সেই সব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসে রান্না খাদ্য চা- চামুচের একচামুচ খাবার মুখে দিতে নাদিতেই "ওয়াও" শব্দ করে প্রসংশা না করলে কর্তাব্যক্তিগণ বে-রসিক গেঁয়ো uncultured হয়ে যাবেন। সামু ব্লগেও ইদানীং রান্না কালচার বেশ জাকিয়েই শুরু হয়েছে। আমার মতই ব্লগের প্রায় সবাই রন্ধন শিল্পী হিসেবে নিজেদের জাহির করতে ঊঠেপরে লেগেছি। বিষয়টি নিয়ে ভাববার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি-বিষেশ ভাবে অতিরিক্ত মশলা জাতিয় রান্নার রেসিপীর বিষয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৫