১। তুমি ফুলে ফুলে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরো
তুমি না চাইতেই যে ভালবাসা পেয়েছো
সেটা কাননে কুসুমকলি মনে করো
তুমি না চাইলেও সে ফুল ফুটবে
ফুল পছন্দ হলে যুতসই নাম দিতে পারো
যে নামেই ডাকো না কেন
সে মন খারাপ করবে না
ইচ্ছে হলে কামিনী নাম দিতে পারো
ডাকা মাত্রই বুকে অনঙ্গ কামনা নিয়ে
বৃন্ত থেকে মুখ তুলে জেগে উঠবে।
তুমি তো জানোই
তোমার দেয়া নামগুলো নিয়েই আমি পথে নামি
পথের দু'ধারে সামাজিক বৃক্ষায়ণ
বৃক্ষ জিজ্ঞেস করে কোথায় যাও রবি বাবু
আমি বলি ঐ সুদূর--- সিসিমপুর
অমনি ওরা শো শো করে হেসে উঠে
বাতাসে পাতা নাড়িয়ে সমন্বরে বলে---যাও
ফেরার পথে যেন একলা না দেখি।
এত গল্পের ভীরে তোমাকে আসল কথাটাই বলা হয়নি
তোমার দেয়া নামগুলোর মধ্যে রবি নামটাই ওদের মন:পুত
পাতার ফাঁকে রবি হাসে তাই বুঝি ঐ নামের কদর!
দেখো দেখি কান্ড!
কি এক পথ দূরত্বে বসে
কি এক বিশ্রী গল্প বানিয়ে বসলাম
তুমিতো তেপান্তরের মাঠে ছুটন্ত মেয়ে
তোমার কি আর এত কথা শোনার সময় আছে বলো
তার চেয়ে আমি কাঁদি-------- বৃষ্টি হই
তুমি ফুলে ফুলে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরো।
২। একদিন ফেরারী হবো
সুনন্দা একদিন ফেরারী হবো
একদিন বৃক্ষ হবো ধরো তুমি পাতা
একদিন আকাশ হবো তুমি নীল জমিন
স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে লীন।
একদিন মাটি হবো খাঁটি সোনা তুমি
একদিন নদী হবো ধরো তুমি তরী
একদিন সাঁকো হবো তুমি হবে ঘাট
মাঝরাতে লোনা বুকে হবে পুঁথিপাঠ।
একদিন বীন হবো ধরো তুমি সুর
একদিন গান হবো ধরো তুমি কথা
একদিন রাত হবো তুমি হবে মোম
নেশাতুর চোখ জুড়ে কামনার ধূম।
৩। অভিব্যক্তি
তোমার কপালের কুঞ্চিত রেখায়
কিছু অভিব্যক্তি ভাগাভাগি হয়ে গেছে
একটা অভিব্যক্তি বিস্ময়ের
একটা বেদনার
একটা নিপুণতার
এদের ঠিক নিচেই
আর একটা গাঢ়তর অভিব্যক্তি ঝুলে আছে।
যে বিস্ময়ে একদিন কাছে এসেছিল
সে বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেল ঠুনকো দ্বন্দ্বে
যে নিগূঢ় নিপুণতায় বুনেছিলে মায়াজাল
সেটাও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল এক মহাপ্রলয়ের হ্যাচকা টানে
এখন তোমার কপালে শুধু বেদনারাই ঘুরে ফিরে
পাকেচক্রে দেখা হয়ে যায় ঝুলন্ত অভিব্যক্তির সাথে।
সেই ঝুলন্ত অভিব্যক্তিটি
আমা কর্তৃক প্রোথিত ভালবাসার কচি চুম্বন চারা
যা মহীরূহ হয়ে আবহমানকাল তোমার সর্বাঙ্গ
এবং প্রতিটি হৃদস্পন্দন গ্রাস করে রইবে।
৪। চিনলে না
এইমাত্র ছিন্ন আলখেল্লা পরিহিত
যে রাস্তার ফকিরকে দুটো পয়সা ভিক্ষে দিলে
তাকে চিনতে পারোনি
যে রিকসায় মৃদুমন্দ বাতাস খেতে খেতে
বৈকালিক ভ্রমণটা সারলে
একটুর জন্য সেই রিকসার চালককেও চিনতে পারোনি
চকিতে যে দুষ্ট ছেলেটি
মায়ের বকুনি এড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল
তুমি বায়না ধরলে আজ তার সাথে ঘুড়ি ওড়াবে
তাকেও চিনতে পারোনি
যে ঋষিটি পার্কের মোড়ে বসে গভীর ধ্যানে মগ্ন
তোমার অলক্ষ্যে সেই দৃশ্যটিও
হারিয়ে গেল হাজার দৃশ্যের ভিড়ে।
তুমি চিনতে পারোনি কামরাঙা গাছ
একনাগাড়ে ল্যাজঝোলা বুলবুলিটি
চিনতে পারোনি স্কুলগেটে চানাচুর বিক্রেতা
চিনতে পারোনি সাহেবপুকুর
ঘাটের সিড়ি নারিকেল গাছ
তুমি চিনতে পারোনি মেঘের গর্জন
একটানা তিন দিন বর্ষণ
বারান্দার ওপাড়ে উন্মনা হাওয়া
সর্দি কাশিতে হেকিমের দাওয়া।
তুমি যে সাত দিন বেঘোরে ঘুমালে
সেই ঘুমের মধ্যেও একটা হাত ছিল সিথানে
তুমি পাশ ফিরে শুতে গিয়ে অজান্তে হাতটা টেনে নিলে
কিন্তু এত কিছুর সাথে মিশে যাওয়া মুখটি পুর্নবার দেখলে না।
ছবি: নিজস্ব এ্যালবাম।