বিদ্র: এটা কোন ব্যাবসা সংক্রান্ত পোষ্ট না, সামুর ব্লগিয় পরিবেশ নিয়ে আলোচনা।
আমার এক খালাতো ভাই, আমার চেয়ে দুই বছরের বড়, দেখতে সুদর্শন, লেখাপড়ায় ভালো ও বেশ টাকা পয়সাও আছে। তবে কথাবার্তায় অতটা স্মার্ট না। আজ থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগের কথা, জেলা শহরে বাসা, ঢাকায় এসেছে মাষ্টার্স এ পড়তে জগন্নাথ এ। ঢাকায় এসে অনে সুন্দরি মেয়ে দেখে পাগল হয়ে গেল প্রেম করার জন্য। প্রথম দর্শনে তাকে অবজ্ঞা করার আসলে সহজ না, সে এতটাই সুদর্শন। তবে যে মেয়েই পটায় ধরে রাখতে পারে না। আমি এত দিনে ব্যাপারটা ধরে ফেলেছি। কিছুদিন গেলেই মেয়েরা জানতে চায় বাবা কি করে, খুবই স্বাভাবিক। ছোট হলেও আমাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মত। তাকে আমি পরামর্শ দিলাম, ভাই বাবা কি করে জানতে চাইলে দয়া করে বলবেন না ভুসি মালের ব্যাবসা করে। ভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করল তাহলে কি মিথ্যা কথা বলব? আমি বললাম না তা কেন তবে বলবেন পোল্ট্রি ফিডের ডিলারশিপের ব্যাবসা করে। আমার পরামর্শটা কাজে লেগেছিল।
যাই হোক গল্পটা বললাম এই কারণে যে সামান্য একটু ভাষার ব্যাবহার অনেক কিছু পরিবর্তন করে দিতে পারে। বন্ধু শত্রু হয়ে যেতে পারে আবার শত্রুও বন্ধু হয়ে যেতে পারে। ব্লগে কি আমরা কেউ কারো শত্রু না আমাদের কারো সথা কারো স্বর্থের টানাপোড়ন আছে? ব্লগে গত কয়দিন ধরে যা চলছে তাতে মনে হচ্ছে সামনা সামনি থালে আর একটা নিউ মার্কেটের ঘটনা ঘটে যেত। সব কিছুর সুত্রপাত আমার মনে হয় ভাষার অনিয়ন্ত্রিত ব্যাভার নিয়ে। একজন আর একজনকে আক্রমণ করবে, কটাক্ষ করবে, অপমান করবে, তিরষ্কার করবে বা একজন আর একজনের খারাপ কাজের প্রতিবাদ করবে, পোষ্ট দিবে, মন্তব্য করবে এটা তো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তিরষ্কার, আক্রমণ বা প্রতিবাদের ভাষা যেমন শালিন হতে হবে ঠিক তেমনই সহমত পোষণ বা প্রসংশার ভাষাও শালিন হতে হবে। কোন একটা প্রতিবাদ বা কটাক্ষমূলক পোষ্টে দেখা যায় কমেন্ট গুলো যেন আরও বেশি আক্রমণাত্মক বা অশালীন হয়।
উদাহরণ স্বরুপ উল্লেখ করতে পারি যে, কাল্পনিক_ভালোবাসা ভাই তার একটা পোষ্টে এরকম কপি পোষ্ট নিয়ে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে চড়ম ভাবে তিরষ্কার করেছেন কিন্তু ভাষা কিন্তু ছিল যথেষ্ট শালীন। একজন অন্যায় করলে আর একজন প্রতিবাদ করবে বা করা উচিৎ, এতে কোনই দ্বিমত নেই। তবে প্রতিবাদের ভাষাটা নিয়েই যত সমস্য। আপনি চোর বা চুরি করেছেন না বলে আপনি কপি করেছেন বললে একই অপরাধ বুঝায়, ভাষার তারতম্যে অপরাধের কোনই তারতম্য হয় না। তবে লাভ যেটা হবে যে ভাষা শালিন হলে হ্য়ত ভূল বুঝা বা ভূল স্বিকার করার একটা অনুপ্রেরণা পেতে পারে। আর ভাষা খারাপ হলে যেটা হয় যে দেখা মাত্রই হয়ত মাথা গরম হয়ে যায় আর তখন আরও বেশি উল্টাপাল্টা মন্তব্য, পোষ্ট আসা শুরু হয়। ঠিক যেমন একজন খারাপের একটা লিষ্ট দিলে অপর পক্ষেরও একইরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এবং এটা চেইন রিঅ্যাকশনের মত বৃদ্ধি পেতেই থাকে।
ভাষা যে মানুষকে কতটা পরিবর্তন করতে পারে তার একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে ব্লগার জ্যাকেল। যে পোষ্টে ব্লগার জ্যাকেল কে নিয়ে চড়ম অশালীন কথা বলা হয়েছে ঐ পোষ্টেই ব্লগার জ্যাকেল এর মন্তব্যের প্রতিউত্তরে লেখক বলেছেন উনি মেনে নিয়েছেন এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার কথাও বলেছে। চাঁদগাজীকে কেন তাহলে আপনারা দুর করলেন? উনার কটাক্ষমূলক ভাষার কারণেই তো। এখন তাহলে নিজেরাই আবার উনার চেয়েও আপত্তিকর ভাষা ব্যাবহার করছেন। তাহলে আপনাদের প্রতিবাদের উদ্দেশ্যটা আসলে কোথায় দিকনির্দেশ করে? আমরা যারা লিখতে আসি না, শুধু পড়তে আসি তারা আশা করি ভালো কিছু পড়ার। তবে একটা বিষয় খুবই আশ্চর্য্য লাগে যে ভালো লেখার চেয়ে এসব আক্রমণাত্মক লেখাগুলোই কেন যেন বেশি বেশি উৎসাহ ও আকর্ষণ লাভ করে। এটাও কি আমাদের চরিত্রের ভেতরে রুপটাই প্রতিফলিত করে না?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:১২