যেদিন প্রথম জাহাঙ্গীরনগরে এসেছিলাম ১৯৯২ সাল
জানতাম কি জীবন নামক নাটকের বাকী পর্বটুকু এখানেই কেটে যাবে?
সেই বিকেলে খুব মন খারাপ ছিল
আম্মার কথা মনে পড়ছিল
মনে হচ্ছিল যেন কোন নির্বাসনে এসেছি।
আবার একটা নতুন জীবনের সম্ভাবনায় পুলকিতও হচ্ছিলাম।
নতুন আশা ও স্বপ্ন ঘেরা মন খারাপ করা সেই বিকেলকে ভুলতে পারিনি
সেদিন সূর্য অস্তমিত হচ্ছিল ঠিক আজকেরই মত
চৌরঙ্গীর ওপর থেকে কলাভবনের পাশে কুসুমের মত কমলা
সদ্য পরিচয় হওয়া আফসানা,
(সেদিন কি জানতাম কালে সে দেশের নামজাদা লেখক হবে)
বর্ণনা করছিল কেমন করে সন্ধ্যা নামে জাহাঙ্গীরনগরে
বলছিল জাহাঙ্গীরনগরে সন্ধ্যা কখনও পুরনো হয় না।
কৃষ্ণচূড়ার পাশে আমি পশ্চিমের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলছিলাম,
এতো খুন খারাবি রঙ!
কলিজায় কে ছুরি বসিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো।
তার সেই বর্ণনার মধ্যে কি যেন ছিল।
২৮ বছর পর আজও যেন সময় স্থির হয়ে আছে এখানে
এক তরুণী সহকর্মী বললেন, আপনাকে দেখে মনে হয় না এত পুরনো
বল্লাম, জাহাঙ্গীরনগরে সন্ধ্যা পুরনো হয় না জানো?
আজ সেখানে সেই চিরপুরাতন সন্ধ্যা নামার আগে
দেখছিলাম চিরনতুন আলোর নাচন পাতায় পাতায়
সমাবেশ, বক্তৃতা, মিছিল, হামলা, মামলার ভয় শেষে
ক্লান্ত ক্ষুধার্ত সহকর্মীদের সাথে
ভাত-ডাল-আলুভর্তায়
অমৃতের স্বাদ নিলাম
আমার সংগ্রামী সহকর্মীদের সেই নতুন আলোয়
হেঁটে যেতে দেখতে থাকলাম
আমি ক্রমে ক্রমে নতুন হতে থাকলাম ।