ইয়াওমুল আশুরা ।১০ই মুহাররাম ।দিনটির মর্যাদা অপরিসীম। অমর অমর ইতিহাসজড়িত দিনটি পৃথিবীর ঊষাকাল হতে বয়ে আসছে সময়ের স্রোত ধরে - আজ অবধি। মহত এ দিনে সৃষ্টি করা হয় মহাবিশ্বের। প্রথম মানব এবং নবি হযরত আদম(আঃ)'র অস্তিত্ব দান করা হয় এ দিনে । পৃথিবীর ভূখণ্ডেও তাঁকে প্রেরণ করা হয় মুহাররমের এ দশ তারিখেই । অনুতপ্ত হয়ে শত শত বছর রোনাযারির পর এ তাৎপর্যমণ্ডিত দিনেই তাঁর তাওবা কবুল করা হয়।এ দিনে হযরত ইবরাহীম (আঃ)কে নমরুদের অগ্নিগহ্বর হতে পরিত্রাণ দেওয়া হয়।হযরত ইউনুস (আঃ)কে মৎসোদর থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এ শ্রেষ্ঠ দিনেই।এ তাৎপর্যমণ্ডিত দিনেই হযরত আইয়ুব আঃকে কুষ্ঠরোগমুক্ত করা হয়। এছাড়া আরো অসংখ্য অগণিত ঘটনা-উপাখ্যানের রঙিন তুলিতে আঁকা আশুরার এ দিনটি।
শুধু মুসলিমদের নিকট নয় অমুসলিম বিশেষ করে হযরত মূসা (আঃ)এর সম্প্রদায় ইহুদিদের নিকটও এ দিনটি সমভাবে মর্যাদাপূর্ণ।ফেরাউনের নিদারুণ অত্যাচার অনাচার থেকে তাদের মুক্তির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচিত হয় এ মহান দিনে।অবসান ঘটে দাম্ভিক ও অত্যাচারী বাদশা ফেরাউনের।মহিম রবের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মূসা (আঃ)সহ তাঁর সম্প্রদায় তথা ইহুদিগণ এ দিনটিতে সাওম পালন আরম্ভ করেন।ইসলাম আগমনের পরও মদিনার ইহুদিদের সাওম পালনের সে ঐতিহাসিক ধারা অব্যাহত ছিলো।মহানবি (সাঃ) বিষয় সম্পর্কে অবগত হলেন এবং ঘোষণা দিলেন "আনা আহাক্কু বি-মূসা মিনকুম" অর্থাৎ আমি মূসা (আঃ)'র অনুসরণের ব্যাপারে তোমাদের চে' অধিক হকদার । তিনিও এরপর ইয়াওমে আশুরাতে সাওম পালন শুরু করেন এবং উম্মতকে আদেশ করেন। তবে দিনটির আগে কিংবা পরে তিনি আরেকটি দিন মিলিয়ে মোট দুটি সাওমের নির্দেশ দেন।অর্থাৎ নয় ও দশ অথবা দশ ও এগারো এভাবে মিলিয়ে সাওম দুটি পালন করতে হয়।শারয়ী বিধান হিসাবে রোজা দুটি নফল হলেও এর তাৎপর্য অসীম।নবি (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আশুরার সাওম দুটি পালন করবে আল্লাহ তা'আলা তার পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।তাছাড়া শ্রেষ্ঠ চারটি মাসের একটি এ মুহাররম যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে রয়েছে।
অন্যদিকে পুণ্যময় এ দিনে একটি ছিন্নমূল সম্প্রদায় আপন শরীর ক্ষত বিক্ষত করার ভ্রান্তযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা চালায় এবং মাতম করে 'হায় হুসাইন ! হায় হুসাইন !' বলে।
হযরত আলী (রাঃ) এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত হুসাইন (রাঃ) ।ইয়াযিদী সৈন্যের হাতে ৬১ হিজরি সনের মুহাররমের এ দিনটিতেই তিনি কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। এ ঘটনাকে যেকোনভাবে ধর্মীয় খাতে প্রবাহিত করা হয়।এভাবে উদ্ভব ঘটে এ মাতম-প্রথার। যা স্রেফ আবেগতাড়িত এবং মনগড়া আবিষ্কার।কোন রকমের যুক্তি ও দলিলের পরোয়া না করে এই আধুনিক সমাজেও রীতিমতো পালন করা হচ্ছে এ ধ্বংসাত্মক প্রথা।যুক্তির আলোকে দেখলেও এটা আত্মঘাতী বৈ কিছু না। পৃথিবীর এমন কোন ধর্ম কিংবা সভ্যতা নেই যেখানে আপন দেহের ক্ষতিসাধনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।থাকলে, নিঃসন্দেহে সেটা কোন আদর্শ ধর্ম কিংবা সভ্যতা নয় ।সুতরাং সকল ভ্রান্ত অসভ্য এবং আত্মঘাতী প্রথা থেকে ফিরে এসে সুস্থ সুন্দর এবং সঠিক ধারার ইসলাম চর্চাই একজন প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য।
.
উত্তরা, ঢাকা
১২/১০/১৬
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২