হিজরি, ১৪৩৭ ।জিলহজ্বের ১০
তারিখ। আনন্দ-উল্লাসের ঢেউ এসে আঁচড়ে পড়ছে
মুসলিমদের ঘরে ঘরে।এখন চলছে আজকের মহান কর্ম সম্পাদনের পূর্ব প্রস্তুতি।
কুরবানির পশু যবেহ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে ছোটদের উৎসাহের কোন ঘাটতি নেই।পশুকে নিজ হাতে খাওয়াবে, গায়ে হাত
বুলিয়ে দেবে, আর অতি শান্ত-শিষ্ট পশু হলেতো আর কথাই নেই - ডানপিটেরা আদর করতে করতে একদম পিঠে চড়ে
বসবে।এতেই ওদের মহানন্দ যেন।
ঈদুল আযহার সালাত শেষে যথারীতি পশু যবেহে ব্যস্ত এখন সবাই। মূল্যের
তারতম্যে নানান কিছিমের পশু।ভারত থেকে গরু না আসায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গরুর বাজার বেশ চড়া।তবু বেচাকেনার মধ্যে প্রভাব ফেলেনি তেমন
।যবেহের পাট চুকিয়ে চামড়া নিয়ে এবার পড়তে হলো বেকায়দায় বেশ।বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা তবু দেখা মিলল না উপযুক্ত ক্রেতার। শেষে যা বলল তাতেই দিতে বাধ্য হলো বিক্রেতারা।
.
বিকেল সাড়ে চারটা।
পাশের বাসা থেকে একটা ভারী বস্তু আনতে হবে। রিকশা ডেকে দাঁড় করালাম।বস্তুটি রিকশায়
তুলতে বিলম্ব হচ্ছে কিছুক্ষণ।চালকের দিকে লক্ষ্য করলাম- পরিপূর্ণ যুবক ছেলে।চেহারা ঠিকরে কান্তি ফুটছে।অপার্থিব এক আলোতে চোখ-মুখ জ্বলজ্বল করছে।ফর্সা সুন্দর গড়নের চেহারা। পোশাক-পরিচ্ছদও বেশ
পরিপাটি।পরনে কালো ট্রাউজারের সঙ্গে সাদা ছাপযুক্ত হালকা কালো রঙের শার্ট।পেশাদার রিকশা-চালকের সঙ্গে ওর
ন্যূনতম সঙ্গতি নেই।
কয়েক মুহূর্ত ভেবে ওকে কিছু জিজ্ঞাস করতে বাধ্য হলাম
-ভাই, ঈদে বাড়িতে যান
নাই?
-জ্বি-না, মাত্র তিনদিন আগে আসলাম, গাড়ি চলা শুরু হইলে চইলা যাবো
-বাড়ি কোন জেলায় ?
-দিনাজপুর
-আপনাকে দেখেতো রিকশাওয়ালা মনে হয়
না ভাই?
-আমি আসলে পড়াশোনা করি, অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে
পড়তেছি
-কোথায় পড়েন?
-দিনাজপুরেই।
দিনাজপুর সরকারি কলেজ
-কোন সাব্জেক্টে?
-একাউন্টিং এ
ছেলেটি খুব উৎসাহ নিয়ে উত্তরগুলো দিচ্ছিল।কথা আর দীর্ঘ করা হলো না।
শুধু কয়েকটি স্তুতি ও
প্রবোধ বাক্য দিয়ে ওকে সান্ত্বনা দিলাম।
এ রকম হাজারো শিক্ষার্থী রয়েছে বাংলাদেশে, দারিদ্র্য
যাদেরকে পিতামাতার স্নেহ-মমতা,ভাইবোনদের আদর-ভালোবাসামাখা ঈদের আনন্দ ত্যাজ্য করতে বাধ্য করে এবং
শিক্ষাবয়সেই রিকশা চালানোর মতো ভারী
পরিশ্রমের কাজে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের কি মন চায় না পিতামাতা-ভাইবোন-
আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে ঈদ-আনন্দ কাটাতে!? চায় অবশ্যই কিন্তু আজকের এ পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাই
এদেরকে এমন নির্মম জাঁতাকলে নিষ্পেষণ
করছে প্রতিনিয়ত।
একে একে সর্বস্বহারা করে ছাড়ছে।একদিকে
বিত্তবানেরা লাখ টাকার গরু কেনার প্রতিযোগিতায় ও তার প্রদর্শনীর উন্মাদনায়
মত্ত হয়ে ওঠে অপরদিকে
বিত্তহীনেরা দু'মুঠো অন্নের তালাশে হন্যে হয়ে ছোটে....
এ প্রান্তিকতার
উত্তরণ চাই। চাই না এ
বিভেদ-বৈষম্যে ভরা
শোষিত
সমাজব্যবস্থা।
(পরিবর্ধিত)
.
উত্তরা, ঢাকা
১৩/০৯/১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৯