গেণ্ডারিয়া হতে নাভানার পেছনের হ্যাণ্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে পোস্তগোলায় যাচ্ছি ।আর নাক-মুখ দিয়ে রাজধানীর অমূল্য(?) ধুলো গলাধ:করণ করছি ।রাস্তার অবস্থা খুব করুণ।দুপুরে যা খেয়েছি এখানেই হয়ত শেষ হয়ে যাবে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় নিয়মিত কেউ যাতায়াত করলে খুব কম সময়েই শরীরের ওজন কমে যাবে।সকাল বিকাল ব্যায়ামের যন্ত্রণায় ভুগতে হবে না। এজন্যই হয়ত ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা যায় বিষ-ব্যথার অহরহ ক্যানভাস।উত্তরা যেতে হবে।তবে আপাতত মালিবাগে যাচ্ছি।সালসাবিলে উঠে বসলাম। যাত্রীসংখ্যা কম ।হেল্পার হাঁক ছেড়ে ছেড়ে ডাকছে"এ- সাইদাবাস,মালিবাগ,বাড্ডা,নতুন বাজার......."
দশ-বারজন হবে বসে বসে 'গরম' পোহাচ্ছি।আমার চোখ মোবাইল থেকে উঠে সামনের দিকে সেঁটে গেল।কী এক অসম্ভব সুন্দরী ! শুভ্র মুখখানিতে গোলাপি একটা চোখঘেরা সানগ্লাস লাগিয়েছে।দারুণ মানিয়েছে।এমন পরীরাও কি পাবলিক বাসে চড়তে পারে? অতিভদ্র নাকি চোরের লক্ষণ।মেয়েটির সৌন্দর্যটাও তেমন হল।একটু কাছাকাছি হতেই সব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেল।কেমন যেন ফ্যাকাসে ফ্যাকাসে মনে হচ্ছে এখন।ওদিকে ইচ্ছে করেও দৃষ্টি দিতে পারছি না।দেখতে দেখতে বাস ভরে গেল।দুপুরবেলা হওয়ায় রাস্তা বেশ ফাঁকা ।অল্পক্ষণেই মালিবাগ পৌঁছে গেলাম।কাজ সেরে উত্তরার বাসে উঠলাম।লোকাল বাসে যেমন গ্যাদারিং হওয়ার কথা তেমনি হল।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাটল বাড্ডা পর্যন্ত।সিট পেলাম ।তাও কপালের জোর।বরাবরের মতই জানালার ফাঁকা দিয়ে ডাস্টবিনের ঝাপ্টা মেরে আসা দুর্গন্ধ নাক মুখ প্রায় চেপে ধরছে।এই রাস্তাটা অর্থাত মালিবাগ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত যে পরিমাণ রোডডাস্টবিন তাতে করে "বিখ্যাত ডাস্টবিন রোড"নাম হওয়া দরকার ছিল এই রোডটার।ঢাকার সব কিছুরই উন্নতি হচ্ছে এমনকি দুর্গন্ধেরও ।এর সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার জন্য কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।আসলে মাথা তাকালেই না ব্যথা!উত্তরা চলে এসেছি। ভেতরে এখনও প্রচণ্ড গ্যাদারিং ।এই ভিড় ঠেলে নামতে কসরত কম হল না।বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হচ্ছি হঠাৎ পেছন হতে আওয়াজ এল"এই তনু"!ঘাড় ফিরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।স্যুট প্যান্ট, টাই পরা এক ভদ্রলোক।গা ঘেঁষা একটা ঝকঝকে উজ্জল প্রাইভেট কার । মনে হচ্ছে নতুন।লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হাস্যজ্জল চেহারায় আবার বলে উঠল "আরে তনু তুই এখানে?তা কেমন আছিস? কই যাচ্ছিস"?যেন দমই ছাড়ছে না।আমি ভদ্রলোকের সামনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থ মেরে আছি।ভদ্রলোকের চেহারায় শান্তর সাথে অনেকটা মিল পাচ্ছি।ও আমার ছোটবেলার বন্ধু।এক সাথেই কাটিয়েছি প্রায় কৈশোর পর্যন্ত।দশ বছর যাবত কোন যোগাযোগ নেই ওর সাথে।আচমকা রাস্তার শত শত ব্যস্ত মানুষের বিঘ্ন সৃষ্টি করে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল "আরে আমি শান্ত এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি"?এত বড় এক সাহেব আমার মত সাধারণ ব্যক্তির সাথে কুলাকুলি করল!রাজ্যের সব গর্বে যেন মন ভরে গেল। আমিও আবেগমাখা কণ্ঠে তুই কেমন....বলতে গিয়েও ঠোঁট ফসকে বের হল" আপনি কেমন আছেন ভাই"?এত বড় সাহেবকে কি তুই বলা চলে?বিবেকেই বাধা দেয়।আরে তুই দেখি আমাকে "আপনি" করে বলছিস।"আপনি" বলে লজ্জা না দিয়ে আগের "তুই"তে ফিরে যা।লজ্জিত গলায় বলল শান্ত।ওর এই সাহিত্যমার্কা কথা আমাকে "তুই"তে নামিয়ে দিল।জমে থাকা হাজারো কথা ছিল ওর সাথে।কিন্তু তা আর হল না।তারপরও যা হয়েছে এটাও কম নয়।ওর কারে বসে দশ-পনের মিনিট আলাপ করে বাসায় ফিরলাম।ও যথেষ্ট অনুরোধ করল ওর বাসায় যেতে।কিন্তু নিজেকে মিলাতে পারলাম না ওর সাথে ।শান্ত এখন জনাব শান্ত সাহেব।উত্তরা মডেল টাউনে তার ফ্ল্যাট বাড়ি।আর গাড়িতো আছেই।তিনি এখন প্রাইম ব্যাংকের অ্যাসেস্টেন্ট ম্যানেজার ।(২০১৩ তে লিখা)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫৩