উত্তরা হাউজবিল্ডিং, বলা চলে আমার ঘরের বারান্দা। বরাবরই তার বক্ষ মাড়াতে হয় আমার। তবে শুক্রবার শেষবেলায় আজই প্রথম।আসছিলাম উত্তরখান থেকে, গন্তব্য; সেক্টর -১১, রোড-১৫,বাড়ি-৮০।মূল সড়ক থেকে সোনারগাঁ জনপথ ধরে পা বাড়াচ্ছি রিকশা চেয়ে চেয়ে। গজ বিশেক এগুতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল।যেখানে রিকশা -লেগুনা থাকার কথা সেখানে শুধু উপচে পড়া জনস্রোত। বৃহদাংশ তাদের উঠতি বয়সের তরুণ -তরুণী; জুটিতে জুটিতে সাজানো।দেখেই বোঝা গেল এরা সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে।এখন রিকশাবিলাসের অপেক্ষায় আছে।রিকশা পেলেই ছুট....তার মানে এরাই রিকশার সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, বুঝতে কষ্ট হলো না আমার।আমি প্রায় বিলি কেটে কেটে রাস্তার পাশ ধরে আরেকটু সামনে এগোলাম।একই রকম অবস্থা। রিকশা দু একটা যা আসে তারাই লুফে নেয়।"এই খালি দিয়াবাড়ি যাবে?" এই বাক্যটা কানে আসতেই আমার পূর্বের ধারণায় নিশ্চিত হলাম। অর্থাৎ এরা সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে।প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। উদ্দেশ্য, আশপাশের পার্ক-উদ্যানে বিশেষ করে উত্তরার বিখ্যাত দিয়াবাড়িতে।সপ্তাহ শেষে এক বিকেল প্রিয়জন ও প্রকৃতির উষ্ণ আলিঙ্গনে তৃপ্তি হতে এবং তাদের যৌথ সান্নিধ্যের পরশ পেতে।যা সারা সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি অবসাদ দূর করে দিতে পারে এক বিকেলের প্রাণচাঞ্চল্যতায়।শরতের শেষবেলার কাশফুলরা যেন মাথা নেড়ে নেড়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
.
এখানে দু'বয়সের জুটিদের লক্ষ করা গেল।মাঝ বয়সী এবং উঠতি বয়সী। তবে আধিপত্য দ্বিতীয় শ্রেণিদের।উল্লেখ্য, উত্তরার উন্নত এলাকা এবং উচ্চবিত্ত অধুনা সমাজ হওয়ায় এদের সাজ সজ্জা, বিলাসিতা, স্বাস্থ্যসচেতনতা বলতে গেলে সর্বদা চুঁইয়ে পড়ে।কাজেই চোখের দেখায় তারুণ্য আর প্রৌঢ়ত্বের মাঝে তেমন কোন ফারাক নেই।নিখুঁত পারলারিং পৌঢ়াকে করে তোলে তরুণী আর তরুণীকে বানিয়ে ফেলে অপ্সরী। এ দেখে অতি বৃদ্ধের নীরস মনও ক্ষণিকের জন্য সরস হয়ে উঠবে।
.
স্বচ্ছ সুনীল আকাশ।আকস্মাৎ আলো আঁধারির মেলা; রোদ বৃষ্টির খেলা।শুভ্র মেঘের আল্পনা; যেন নিরুদ্দেশে ছুটে চলা ভেলা।দুধেল শাদা কাশফুলের মন মাতানো ঢেউ। শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ।মাঠে মাঠে পক্বপ্রায় ধানক্ষেত।দূর নীলিমার বুকে হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টিপথ।সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা। একেই বলে দুরন্ত উচ্ছল শরৎবেলা।তাইতো রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'শরৎ' কবিতায় এর বন্দনা গেয়েছেন- "আজি কি তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/হে মাতা বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ঝলিসে অমল শোভাতে।/পারে না বহিতে নদী জলধার,/মাঠে মাঠে ধার ধারে না'কো আর-/ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল /তোমার কাননসভাতে!/মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী, /শরৎকালের প্রভাতে।"
শহুরে প্রাণদের এসব কেবল কল্পনা।এই কল্পনাকে কিছুটা হলেও বাস্তবে রূপ দিতে পারে ঢাকাস্থ গড়ে ওঠা 'দিয়াবাড়ি'।উল্লেখিত প্রায় সব উপভোগ্য বস্তুরই সমাগম ঘটেছে সেখানে। পাশপাশি কৃত্রিম কিছু উপভোগ সামগ্রীরও সুব্যবস্থা রয়েছে এ সুবিশাল উদ্যানটিতে।লেকপাড়, বটতলা (বটচত্বর),নৌকা ভ্রমণব্যবস্থা,খানিক দূরে দূরে ছোট ছোট ছনের ঘর।কোলাহলমুক্ত শুনশান নীরব পরিবেশ। খানিকক্ষণ পরপর নীরবতার প্রাচীর ভেঙ্গে গর্জন করে উড়ে যাচ্ছে উড়োজাহাজ।খুব কাছ থেকে উড়েচলা বিমান দেখার একটি অদ্বিতীয় স্থান।আরো রয়েছে উদ্যানের মধ্যদিয়ে বয়েচলা ছোট্ট নদী, নদীর উপর স্টীলের ব্রীজ; যা অতিমাত্রায় স্থানটির সৌন্দর্যবর্ধন করেছে।আজকাল উদ্যানের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে বটচত্বর।কারণ, চলচিত্র তারকাদের পদভারে প্রায়শই জায়গাটি থাকে মুখরিত।ইতোমধ্যে বেশ নাটক-নাটিকার ফ্রেমে বদ্ধ হয়ে রূপালী পর্দায় বটবৃক্ষসহ ভেসে উঠেছে এ স্থানটি।এসবকে কেন্দ্র করে বটচত্বরে এসে তুমুল আনন্দে ফটাফট ছবি তুলছে দর্শনার্থীরা।অনেকের ভাগ্যে আবার চলচিত্রের 'পাখপাখালি' দেখার বিরল সুযোগও জুটে যাচ্ছে এখানে এসে।এ সবকিছু মিলিয়ে বড় চমৎকার, অসাধারণ, রোমাঞ্চকর এবং মনোরম একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে দিয়াবাড়িতে।
চাইলে আপনিও পারেন হারিয়ে যেতে প্রকৃতির এ অপার্থিব আবহে।যা আপনার সারা সপ্তাহের ক্লান্তি-ক্লেষ, অবসাদ-অবসন্নতা দূর করে বয়ে আনতে পারে অনাবিল শান্তি।আর প্রিয়জন সঙ্গী হলেতো আপনার এ 'শান্তি' হয়ে উঠবে স্বর্গীয় সুখ।
.
ঘুরোঘুরি শেষে ক্ষুধার হামলার শিকার হওয়া অস্বাভাবিক নয়।তবে প্রতিরোধের জন্য রয়েছে নানা খাদ্যের বিপুল সম্ভার- সমাহার। ফুচকা-চটপটি থেকে শুরু করে একদম শাহী পোলাও -বিরিয়ানী পর্যন্ত।সো, টেনশন ফ্রী।
.
সহজতম যাতায়াতঃ উত্তরা, হাউজবিল্ডিং। সেখান থেকে সোজা পশ্চিমে পনের কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত দিয়াবাড়ি। সোনারগাঁ জনপথ ধরে লেগুনা বা রিকশা যোগে অনায়াসেই পৌঁছা যাবে এ স্বপ্নভূমিতে।ভাড়া,২০ টাকা লেগুনা যোগে। রিকশাবিলাসে ৮০-১০০ টাকা।
.
ছায়ীদ আল আরিফ
উত্তরা, ঢাকা
১৩/১০/১৫
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩০