শাহেদ জানালার পাশে চুপ করে বসে আছে। তার হাতে একটি চিরকুট। আর সামনের টেবিলে পড়ে আছে একটি নীল রুমাল। রুমালটি বেশ পুরনো। রং উঠে গেছে। কয়েক স্থান থেকে সুতাও বেড়িয়ে আছে। খোলা জানালার বাইরে খেলা করছে সকালের সোনা রোদ। পাশের পুকুরের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে হাঁসের দল। কোনটা মাথা ডুবিয়ে খাবার খোঁজছে আবার কোনটা ডুব দিয়ে উঠে শরীরের পানি ঝারছে।
শাহেদ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কি দেখছে তা সে নিজেও জানে কিনা সন্দেহ আছে। কতক্ষণ যাবৎ এখানে বসে আছে, কেন বসে আছে তাও অনুমান করা কঠিন। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আসলে বর্তমানে নেই শাহেদ। সে হারিয়ে গেছে প্রায় বিশ বছর আগের জীবনে। স্কুলের স্মৃতি জীবন্ত হয়ে উঠেছে আজ তার চোখে।
শাহেদ তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব অনেক। প্রতিদিন প্রায় তিন মাইল পথ হেঁটে যেতে হয়। আবার দিন শেষে হেঁটেই ফিরে আসতে হয়। বাড়িতে আসতেই কান্তিতে ঘুম এসে যায়। কোনদিন সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়ে। এমনই একদিন স্কুল থেকে ফিরে ঘুমাচ্ছিল শাহেদ।
হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। শাহেদ, দেখ কারা এসেছে।
শাহেদ দ্রুত বিছানা থেকে নামল, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ঘরটাও কেমন অন্ধকার অন্ধকার লাগছে। তাই সে হারিকেন জ্বালানোর চেষ্টা করছে। এসময় হুড়মুর করে তার রুমে ঢুকল রিতা, নীলা আর পারভিন। সাথে আছে রিতার ছোট ভাই শিপন। শিপনকে সে আগেও দেখেছে। গত বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতার দিন রিতার সাথে সে স্কুলে এসেছিল। এদের সবাইকে রুমে ঢুকতে দেখে শাহেদ একেবারে চমকে উঠল। গত দুই বছর এক সাথে পড়লেও তার কাসের কোন মেয়ে এর আগে তাদের বাড়িতে আসেনি। বিশেষ করে রিতাকে দেখে সে বেশি অসস্থিতে পড়েছে। এই মেয়েটাকে একদম সহ্য করতে পারে না শাহেদ। দেখতে ভাল হলেও রিতা খুব চঞ্চল। কখন কাকে কি বলে বসবে তার কোন ঠিক নেই। ওর বাবা আবার টিএনও অফিসে চাকুরী করে। সে জন্য সবাই একটু সমীহ করে চলে।
অন্যদিকে শাহেদ ছোট্ট বেলা থেকেই বেশ লাজুক। মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলাই তার অভ্যাস। দরকার না হলে কারো সাথে কথা বলে না। কাসের মেয়েরাও তাকে তেমন একটা ঘাটায় না। কিন্তু রিতা মেয়েটা দুষ্টের একশেষ। কিছু দিন ধরে সে শাহেদের পিছু লেগেছে। সুযোগ পেলেই খোঁচা দিয়ে রাগানোর চেষ্টা করে। কৌশলে বোকা বানিয়ে শাহেদকে বিব্রতও করেছে কয়েকবার। এই তো গত সপ্তা’র কথা, একদিন দেখা গেল শাহেদের রাফ খাতার একপৃষ্ঠা জুড়ে নীলার নাম লেখা। সে বাইরে থেকে এসে দেখে, খাতা নিয়ে কাসের সবাই হৈ চৈ করছে। ব্যাপার দেখে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি। হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিছুক্ষণ। পরে অবশ্য নীলাই বলে দিয়েছিল, যে এটা রিতারই কন্ড। এর পর থেকে শাহেদ রিতার কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই মেয়েটা নানা কথায় তাকে খোঁচা দিয়েছে। আর আজ সেই মেয়েটাই দলবল নিয়ে একেবারে তার বাড়িতে চলে এসেছে। না জানি কি মতলব নিয়ে এসেছে?
রিতারা ঘরে ঢুকে দেখল, রুমটা বেশ অন্ধকার। আর শাহেদ অন্ধকারে হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনও জ্বালানো হয়নি। কিন্তু শাহেদ এমন বোকার মত তাকিয়ে আছে যে হারিকেন জ্বালানোর কথাও ভুলে গেছে। অবস্থা দেখে রিতা হারিকেনটা টেনে নিয়ে বলল, ম্যাচ কোথায়?
ততক্ষণে শাহেদের হুঁশ ফিরেছে, সে নিজেই হারিকেনটা টেনে নিয়ে জ্বালাতে চাইল। কিন্তু রিতা দিল না।
শাহেদ ম্যাচ খোঁজে দিয়েই বিছানা গুছাতে গেল। কিন্তু পেছন ফিরে দেখে ততক্ষণে তার চৌকির উপর এলোমেলো বিছানার পাশে বসে পড়েছে নীলা আর পারভিন। তার পড়ার টেবিলের সামনে একটা মাত্র চেয়ার । সেটা দখল করেছে শিপন।
শাহেদ কি বলবে, কি করবে ভেবে না পেয়ে আমি আসছি, তোমরা বস বলে দ্রুত বাইরে গেল। বাড়ির ভেতর যেতেই মা জিজ্ঞেস করলেন, নতুন মেয়েটার নাম কী? ওদের বাড়ি কোথায়? নীলা আর পারভিন শাহেদদের গ্রামেরই মেয়ে। মা এদের চেনেন। কিন্তু রিতারা থাকে স্কুলের পাশে সরকারী কোর্য়ার্টারে। তাছাড়া ওরা এ এলাকায় এসেছে মাত্র দুই বছর হলো। ওকে আগে কখনো দেখেনি। শাহেদ বলল- ওর নাম রিতা। আমাদের স্কুলে পড়ে। এটুকু বলেই সে বোকার মত জিজ্ঞেস করল- মা, ওরা কেন এসেছে তোমাকে কি কিছু বলেছে? প্রশ্ন করেই তার নিজের কাছেই মনে হলো বোকামী হয়ে গেছে। তার স্কুলের বন্ধুরা কেন এসেছে সেটা মা জানবেন কি করে?
মা কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, যা আগে হাত-মুখ ধুয়ে আয়। মায়ের কথা শুনে পুকুর ঘাট থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এলো। এসে দেখে, মা মুড়ি আর নারকেলের নারু বের করছে। দুটি প্লেটে নারু আর মুড়ি নিয়ে শাহেদ তার রুমে গেল। গিয়ে দেখে রিতা তার চেয়ারে বসে টেবিলের বই-খাতা গুছাচ্ছে। আর শিপন উঠে গেছে চৌকির উপর। তার বিছানাও একপাশে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। সে রুমে যেতেই পারভিন প্লেট দু’টা নিয়ে টেবিলে রাখল। মা এলেন পানির জগ আর গ্লাস নিয়ে। মা আসতেই রিতা চেয়ার ছেড়ে ওদের সাথে বিছানার বসল। শাহেদ দৌঁড়ে গিয়ে অন্য রুম থেকে আরেকটা চেয়ার নিয়ে এলো। কিন্তু সেটাতে আর কেউ বসল না। সবার খোঁজ-খবর নিয়ে মা বললেন, তোমরা খাও আমি আসছি।
রিতা প্লেট থেকে একটা নারু নিতে নিতে বলল, তোমাদের বাড়িতে এসে খুব অসস্থিতে ফেলে দিয়েছি, তাই না? কই না তো, অসস্থি হবে কেন? তাহলে আমরা যে আধাঘন্টা ধরে তোমার এখানে আছি, এর মধ্যে তুমি কয়টা কথা বলেছ? স্কুলে না হয় অনেকের সামনে মুখ খুলতে লজ্জা হয়। কিন্তু বাড়িতেও কথা বলনা না কি? একথা শুনে শাহেদ চুপ করে ভাবছে- তার কি দোষ? কি বলবে, কি করবে সে তার কিছুই তো বুঝতে পারছে না। তার অবস্থা দেখে নীলা বলল- থাক আর ভাবতে হবে না। নাও এবার মুড়ি খাও বলে নিজেও নিল। একে একে বাকিরাও নিল।
মুড়ি আর নারু খেতে খেতেই জেনেছে- আজ স্কুল ছুটির পর বাড়িতে বই-খাতা রেখে শিপনকে নিয়ে নীলা আর পারভিনের সাথে চলে এসেছে রিতা। এর আগে কখনো সে এ গ্রামে আসেনি তাই আজ এসেছে। আর নীলাদের এখানে এসে যখন শুনল যে কাছেই শাহেদদের বাড়ি, তখন সবাইকে নিয়ে চলে এসেছে এখানে। একটু পরেই মায়ের ডাক শুনে শাহেদ বাইরে গেল। ফিরে এলো চায়ের কাপ নিয়ে। সবাইকে দিয়ে নিজেও এক কাপ নিল। চায়ের কাপ হাতে নিয়েই রিতা জানতে চাইল, তোমাদের বাড়িতে আর মানুষজন কই? শাহেদ জানাল, আমরা তিন ভাই-বোন। দুই বোনই আমার বড়। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তারা শ্বশুরবাড়িতে। মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে। বাকি সময় মা-বাবা আর আমিই বাড়িতে থাকি। বাবা হয়তো এখন বাজারে গেছেন। তিন বান্ধবী মিলে নানা কথায় পরিবেশটা অনেকটা হালকা করে এনেছে। শাহেদ নিজেও আগের চেয়ে সহজ হয়ে কথা বলছে। এমন সময় নীলা বলল, বাহিরে কিন্তু অন্ধকার হয়ে গেছে। বাড়িতে যাবি কিভাবে? অন্ধকারের কথা শুনে রিতা একটু চমকে উঠল মনে হয়। তারপর বলল, চল তাড়াতাড়ি বের হই। বের হবার কথা বলেই টেবিল থেকে শরৎ চন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসটা তুলে নিল। বইটা হাতে নিয়ে বলল, এটা নিয়ে যাই। পড়া শেষ হলে আরেকদিন এসে দিয়ে যাব। শাহেদ কিছু বলবে কিনা বুঝতে পারল না। বইটা সে এসেছে মাত্র দুই দিন। এখনো পড়া শেষ হয়নি। টেবিলে আরো বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের বই আছে। একবার চাইল এটা ছাড়া অন্য যে কোনটা নিতে বলবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বলা হলো না।
একে একে সবাই বের হলো রুম থেকে। বাইরে বেশ অন্ধকার। গ্রামের পথ, অন্ধকারে কিভাবে যাবে সবাই ভাবছে। নীলা বলল, আমি আগেই বলেছিলাম বসার দরকার নেই। শুধু দেখা করেই চলে যাব। রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল, যত দোষ তোর। তোর জন্যই এত দেরী হলো। এখন যাবি কি করে? এসময় মা এলেন, টর্চলাইট হাতে নিয়ে। কেউ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিতা ঝোপ করে মাকে সালাম করে বসল। ওর দেখা দেখি নীলা আর পারভিনও সালাম করল। সবার মাথা ছুঁয়ে মা দোয়া করলেন। রিতাকে দোয়া করতে গিয়ে ওর মাথা বুকের সাথে জড়িয়ে আদর করে বললেন- মা, আবার এসো। আজ তো কিছুই করতে পারলাম না। আর শাহেদ তো আগে কিছুই বলেনি যে তোমরা আসবে। তারপর শাহেদকে টর্চলাইট দিয়ে বললেন, যা ওদেরকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা প্রথমে গেল পারভিনদের বাড়ি। পারভিনকে রেখে গেল নীলাদের ওখানে। সময় যত যাচ্ছে অন্ধকার তত বাড়ছে। তাই রিতাকে নীলা আর তার মা তাদের বাড়িতেই রাত থেকে যেতে জোর করলেন। কিন্তু সে রাজি হলো না। অন্যদিকে এই অন্ধকারে এতটা পথ যাবে কি করে সেটা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়ল। পথের মাঝামাঝি অনেকটা পথ আবার জনশূণ্য। ফসলের মাঠের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে রাস্তাটা। একপর্যায়ে রিতাই বলল, শাহেদ তুমি একটু এগিয়ে দিতে পারবে না? বেশি দূর যেতে হবে না। শুধু মাঠ পার করে দিলেই হবে। তারপর চলে যেতে পারব। শাহেদ আস্তে আস্তে বলল, পারব। যদিও একা একা এ জনশূণ্য মাঠের মাঝখান দিয়ে ফিরে আসার কথা ভেবে তার কিছুটা ভয় করছিল। কিন্তুু নীলার মা বললেন, না বাবা; তুমি আবার ওকে পথে রেখেই চলে এসোনা। একেবারে বাড়িতে দিয়ে তারপর এসো। গ্রামের পথ, অন্ধকারে মেয়েটা যাবে কিভাবে। নীলাও তার মায়ের সাথে সাথে বলল, হ্যাঁ একটু কষ্ট করে বাড়িতেই দিয়ে এসো। শাহেদ এর উত্তরে আর কিছু বলল না।
সে শুধু রিতাকে বলল, চল এখন যাই। রিতা নীলা ও তার মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বলল, চল। বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদূর আসার পর রিতা বলল, না তোমাদের এখানে এভাবে আসাটা মনে হয় ঠিক হয়নি। কে কি মনে করল কি জানি? তাছাড়া তোমাকে এ রাতের বেলা কষ্ট করে এতটা পথ যেতে হচ্ছে। আবার একা ফিরে আসতে হবে। সরি শাহেদ, আসার আগে এভাবে চিন্তা করে আসিনি। হঠাৎ ইচ্ছা হলো তাই চলে এসেছি। শাহেদ বুঝাতে চাইল যে, না তার কোন কষ্ট হবে না। সে প্রতিদিনই তো এপথ দিয়ে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু রিতা শাহেদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কথাই বলে যাচ্ছিল। সে বলল, তবে তোমার মাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। খালাম্মা যখন জড়িয়ে আদর করছিল তখন আমারও ইচ্ছা ছিল কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকি। কিন্তু লজ্জা লাগছিল তাই পারিনি। এখন মনে হচ্ছে লজ্জা পাওয়াটা ঠিক হয়নি।
কথা বলতে বলতে ওরা মাঠের মাঝে এসে পড়েছে। এখানে রাস্তার দুই পাশে অনেকদূর পর্যন্ত শুধু ফসলের জমি। রাতের আঁধারে ভয় ভয় লাগে। চাঁদ এখনো উঠেনি। তবে অসংখ্য তারার আলোয় অন্ধকারটা একটু কম। রিতা কথা বন্ধ করে আকাশের দিকে একবার চাইল। তারপর বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আজ থেকে তিন বছর আগে আমার মা মারা গেছেন। শিপন তখন খুব ছোট। কেবল হাঁটতে শিখেছে। একটু একটু কথাও বলতে পারে। আমি খুব কান্না-কাটি করছিলাম। শিপন প্রথমে কিছু বুঝেনি। ভেবেছিল মা হয়ত ঘুমিয়ে আছে। তাই সে মায়ের বিছানার কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । যখন মাকে সবাই কাধে করে নিয়ে যেতে চাইল, তখনই কি মনে করে যেন চিৎকার শুরু করল। কেউ তাকে রাখতে পারছিল না। এক সময় দেখলাম কেউ একজন শিপনকে আমার কোলে এনে দিয়ে বলল, ওরে একটু সামলাও। আমাকে কিছু করতে হয়নি, কিছুক্ষণ কেঁদে একসময় নিজেই থেমে গেল। সেই যে থামল, আর জেগে ওঠল না। কেমন যেন স্তব্দ হয়ে গেল। এখন সে বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকে। কাউকে কিছু বলতে চায় না। বেশি ুধা লাগলে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
আম্মা মারা যাওয়ার মাস ছয়েক পর বাবা আবার বিয়ে করেছেন। নতুন মা খুব ভাল। শিপন ও আমাকে খুবই আদর করেন। কিন্তু আমি স্বস্থি পাইনা। শিপনও নতুন মার চেয়ে আমার কাছে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। স্কুল থেকে বাড়িতে আসলেই দেখা যায় আমার কাছে এসে ঘুর ঘুর করে।
রিতার জীবনের গল্প শুনতে শুনতে শাহেদ কখন জানি শিপনের হাতটি আস্তে করে ধরেছে। শিপনও তার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে হাঁটছে । অন্য দিকে রিতা বলেই যাচ্ছে তার কথা। স্কুলে আমি খুব দুষ্টুমি করি। সবাই কি মনে করে জানি না। তবে ওসব করি শুধু একটু নির্মল আনন্দ পাবার জন্য। নিজেকে ভুলে থাকার জন্য। তোমাকেও তো কতবার বিব্রত করেছি। আমি দুঃখিত, তুমি কিছু মনে করোনা। প্রথম দিকে আমার মনে হয়েছিল, তুমি অহংকারী। তাই তোমাকে রাগানোর জন্য এসব করেছি। কিন্তু গতকাল হঠাৎ মনে হলো, না তুমি অহংকারী নও। সহজ-সরল তাই, নিজের মত আলাদা থাকতে চাও। সে জন্যই আজ তোমাকে সরি বলতে এসেছিলাম। কিন্তু তোমার মাকে দেখে সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম। কেন জানি বার বার আমার মায়ের কথা মনে হচ্ছিল। রিতার জীবনের গল্প শাহেদকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। তাই সে শুনেই যাচ্ছিল, কিছু বলার মত শক্তি পাচ্ছিল না। সে শিপনের হাতটি আরো ঘনিষ্টভাবে ধরে এগিয়ে যেতে লাগল। রিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠল- এই তো চলে এসেছি। ডানদিকে গলির মধ্যে আমাদের বাসা। গলির ভিতর সামান্য যেতেই দেখা গেল পাশাপাশি কয়েকটি গেইট। দ্বিতীয় গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, এটাই আমাদের বাসা। বলেই সে গেইট ধরে শব্দ করল।
শাহেদ বলল, তাহলে আমি আসি। রিতা শুধু বলল, না। একটু পরেই বারান্দার লাইট জ্বলে উঠল। একজন মহিলা বেরিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কে? রিতা বলল, মা আমরা এসেছি। শাহেদের বুঝতে আর বাকি থাকল না যে ইনিই রিতার নতুন মা। ভদ্র মহিলা এসে গেইট খুলে দিয়ে বললেন, এত রাত হলো কেন? আমি খুব চিন্তায় ছিলাম । তোমার বাবা এসে বাসায় না পেলে তো আবার রাগারাগি শুরু করতেন। রিতার মনেও একই ভয় ছিল। যাক এখনো তিনি বাসায় আসেননি।
রিতা পরিচয় করিয়ে দিল, মা ওর নাম শাহেদ। আমরা এক সাথে পড়ি। নীলাদের বাড়িও শাহেদদের গ্রামে। রাত হয়ে গেছে তাই সে আমাদের নিয়ে এসেছে। শাহেদ সালাম দিয়ে বলল, খালাম্মা আমি এখন আসি? খালাম্মা বললেন- এতটা পথ হেঁটে এসেছ, একটু বসে যাও। তারপরও শাহেদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিপনই তাকে টেনে নিয়ে গেল। ভিতরে নিয়ে রিডিং রুমে ওকে বসিয়ে রেখে রিতা ভেতরে গেল মায়ের সাথে। অন্ধকারে আসার সময় শাহেদ অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রুমের ভিতর আসতেই কিছুটা সংকোচবোধ করতে লাগল। এদিকে শিপন তার খেলনা পিস্তলটা বের করে এনেছে। এটা সি কয়েকদিন আগে বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। ছোট ছোট রাবারের গুলিও আছে। আজ সকালে সে এটা দিয়ে চড়–ই পাখি মারতে গিয়েছিল। কিন্তু একটুর জন্য লাগেনি। আরো কি বলতে যাচ্ছিল এমন সময় রিতা পানির জগ আর গ্লাস নিয়ে হাজির হলো। শাহেদকে বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে বলল ফ্রেশ হয়ে এসো। শিপনকেও ফ্রেশ হতে বলে সে আবার ভিতরে গেল। শাহেদ অনেকটা যন্ত্রচালিতের মত বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। সাথে শিপনও হাত-মুখ ধুয়ে এসেছে। টেবিলে এস দেখে রিতা প্লেটে ভাত বাড়ছে। শাহেদদের আসতে দেখে বলল, বসে যাও। কিছু না বলেই খেতে বসল শাহেদ আর শিপন। পাশে দাঁড়িয়ে দু’জনের প্লেটেই ভাত আর তরকারি তুলে দিতে লাগল রিতা।
খাওয়া শেষ করে শাহেদ বলল, রাত অনেক হয়েছে। এবার আমি যাই। রিতা বলল আর একটু বস। তারপর যাও। কিছুক্ষণ পর শাহেদ খালাম্মার কাছ থেকে বিদয় নিয়ে বের হলো। রিতা চার্জলাইট নিয়ে আসল তার সাথে। গেইট থেকে কিছুদূর এসেই সে চার্জ লাইট অফ করে দিয়ে একহাতে শাহেদের হাত চেপে ধরে বলল, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আমাকে ক্ষমা করে দিও। শাহেদ রিতার হাতের ছুঁয়ায় চমকে উঠল। তাই প্রথমে কিছু বলতে পারল না। একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, আসার সময় তোমার জীবনের গল্প শুনতে শুনতেই আমি আগের সব ভুলে গেছি। তুমি ভাল থেকো, রিতা। তারপর রিতার হতে আলতো করে চাপ দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল শাহেদ। আস্তে আস্তে মিশে গেল অন্ধকারে। হাতের টর্চলাইটটাও জ্বালতে ভুলে গেছে সে। কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পর পিছনে ফিরে মনে হলো রিতা যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। শাহেদ একটা গোরলাগা ভাব নিয়ে পথ চলতে লাগল। এভাবে গোরের মধ্যেই কখন সে জনশূণ্য মাঠ পেরিয়ে নিজের গ্রামে চলে এসেছে সে খেয়াল করেনি। এক সময় শাহেদ নিজেকে আবিষ্কার করল নিজেদের উঠানে। তার শব্দ পেয়ে মা ডেকে বললেন- রিতাকে ওদের বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে এসেছিস তো? সে শুধু বলল, হ্যাঁ মা। মা বললেন, ভাল করেছিস। এবার খেতে আয়। আমি খেয়ে এসেছি বলেই শাহেদ নিজের রুমে গেল। শরীরটা বেশ কান্ত। তাই পড়ার টেবিলে না বসে সুজা শুয়ে পড়ল বিছানায়।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই শাহেদের মনে হলো গতকালের সব ঘটনা স্বপ্নের মধ্যে ঘটেছে। বাস্তবে এসব ঘটতেই পারে না। কিন্তু মায়ের কথা শুনে তাকে মানতেই হলো যে না এট স্বপ্ন নয়। কাল সত্যিই রিতা এসেছিল তাদের বাড়িতে। বাকি যা কিছু হয়েছে সেগুলোও সত্যি ঘটনা। মা কাছে এসে বললেন, মেয়েটা খুব ভাল, তাই না? তাছাড়া দেখতেও সুন্দর। শাহেদ মায়ের কথার জবাব না দিয়ে ভাবল, মা যদি একদিন আগে এ প্রশ্ন করত তাহলে হয়ত চোখ বুজেই বলে দিত- ভাল না কচু, একেবারে বদের হাড্ডি এই মেয়ে। কিন্তু এখন সে মাকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। শাহেদের সাড়া না পেয়ে মা ভেতরে চলে গেলেন। একলা হতেই শাহেদের মনে আবার ফিরে এলো গতকালের ঘটনা। একই সাথে রাজ্যের জড়তা এসে ভর করল তার উপর। রিতা তাদের বাড়িতে এসেছিল। এটা কাসের বন্ধুরা নিশ্চই জেনে যাবে। তারপর শুরু করবে কানা-ঘুষা। দু’জনকে ঘিরে হয়ত নানা রসাল কাহিনী ছড়াবে। যে কিনা মেয়েদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না, তাকে নিয়ে রসাল গল্প- বিষয়টা ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠল শাহেদের। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল, অন্তত দুই দিন সে স্কুলেই যাবে না। এতে হয়ত ঘটনাটা কিছুটা চাপা পড়তে পারে। এসব ভেবে সে পড়ার টেবিলেও মন বসাতে পারল না। আনমনে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে গেল কতক্ষণ। তারপর মনে হলো, টেবিলে একটা রুমাল ছিল। সেটা নেই। আশে পাশে খুঁজল, বিছানায় দেখল, প্যান্টের পকেটেও দেখল; না কোথাও নেই। তার স্পষ্ট মনে আছে, গতকাল স্কুল থেকে এসে টেবিলেই রুমালটা রেখেছিল। রুমে তো মা ছাড়া আর কেউ আসে না। তাহলে কে নিল? রিতা, পারভিন কিংবা নীলা নিতে পারে? ছিঃ সে কিভাবছে? ওরা কি তার রুমাল নিতে পারে?
তৃতীয় দিন শাহেদ স্কুলে গেল। কিন্তু লজ্জায় জড়সর হয়ে থাকল। কেউ কিছু জ্ঞিস করে কিনা এই টেশনেই কাটল সারাক্ষণ। দুই- তিনবার আড় চোখে রিতাকেও দেখেছে । কিন্তু রিতার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখল না। এমন কি চোখ তোলেও একবার তাকাল না। আচ্ছা মেয়ে তো। ঠিক আছে, না তাকালেই ভাল।
প্রথম দিনটা অসস্থির মধ্যে দিয়েই কাটল। পরের দিন আর সেটাও থাকল না। সব কিছুই যেন আগের মতই চলতে লাগল। সব কিছু ঠিক থাকলেও শাহেদের মনে অন্য রকম একটা ভাবনা এসে ভর করল। কারণ প্রথমতঃ রিতার সেই আগের চঞ্চলতা দেখা গেল না। এখন সে চুপচাপ থাকে। শাহেদের মুখোমুখি হয়েগেলেও কথা বলার আগ্রহ দেখায় না। দ্বিতীয় পরিবর্তনটা এসেছে তার নিজের মনে। মনের মধ্যে কেমন যেন একটা ভাঙ্গনের সুর শুনতে পায় শাহেদ। কিন্তু সুরটার রকমফের বুঝতে পারে না সে। এভাবেই কেটে গেছে কয়েক মাস। টেস্ট পরীক্ষাও শেষ । কাস নেই। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়ার চাপ একটু বেশি। তাই আর কোথাও যাওয়া হয় না অনেক দিন। এমনি একদিন বিকালে হাঁটতে বের হলো শাহেদ। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো স্কুলের কাছে। তখন প্রায় সন্ধ্যা। স্কুলের মাঠে কেউ নেই। তাই কিছুক্ষণ এলোমেলো হাঁটাহাঁটি করে ফিরে যাচ্ছিল সে। এমন সময় দেখল রিতা আর শিপন তাদের বাসার সামনের গলির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সে তাকাতেই রিতা হাতের ইশারায় ডাকল। একই সাথে শিপন তার দিকে ছুটে আসতে শুরু করল। শাহেদও যন্ত্রচালিতের মত রিতাদের বাসার পথ ধরে হাঁটতে লাগল। কিছুটা পথ যেতেই শিপন এসে তার হাত ধরল। শাহেদ তখন শিপনের হাত ধরেই তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। ততক্ষণে রিতা গেইট খুলে দিয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করে বারান্দায় একটা চেয়ারে বসল শাহেদ। আরেকটা চেয়ার টেনে মুখোমুখি হয়ে বসল রিতা। দু’জনে কিছুক্ষণ চাপচাপ বসে থাকল। তারপর নীরবতা ভাঙ্গল রিতা। জানতে চাইল- সন্ধ্যার সময় স্কুলের মাঠে একা একা কি করছিলে?
শাহেদ কোন জবাব দিল না। হয়ত দেয়ার মত কোন জবাব খুঁজে পেল না তাই। আবার নীরবতা নেমে এলো। এরপর পরীক্ষার পড়ার খোঁজখবর নিল দু’জনেই। এক ফাঁকে রিতা জানাল, বাবার বদলি হয়েছে। তিনদিন আগে তিনি পাবনা গেছেন, নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে। রিতার এসএসএসি পরীক্ষা শেষ হলে সবাইকে নিয়ে যাবেন। কথাটা শুনে শাহেদ একটা হোঁচট খেল মনে হয়। একটা নিঃশ্বাসও বেড়িয়ে এলো। কিন্তু কেন এমন লাগল তা বুঝতে পারল না।
রিতার বাবা চাকরী করেন। তাঁর বদলি হলে তো যেতেই হবে। এতে তার খারাপ লাগার কি আছে? কিন্তু না, শাহেদের মন যুক্তি মেনে শান্ত হতে চাইল না। ভেতর থেকে কে যেন বলতে লাগল, না রিতা এখান থেকে যেতে পারে না। তাকে এখানেই থাকতে হবে।
কেমন যেন একটা ঝড় বইতে লাগল। অথচ সে বাইরে কিছুই প্রকাশ করল না। শুধু একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া টর্চলাইটটাও নিয়ে আসিনি। আমি এখন যাই। খালাম্মা কোথায়? ডাক, দেখা করে যাই। রিতা বলল, আম্মা পাশের বাসায় গেছেন। আসতে একটু দেরী হবে। তুমি একটু বস। কিন্তু শাহেদের আর বসতে ইচ্ছে হলো না। উঠে দাঁড়াল। সাথে সাথে রিতাও দাঁড়াল। দাঁড়িয়েই শাহেদের ডান হাতটা চেপে ধরে রিতা আবেদনের সুরে বলল, শাহেদ আমার কথা কি তোমার মনে থাকবে?
না, আজ আর রিতার কমল হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠল না শাহেদ। রিতার আবেদনেরও কোন জবাব দিল না। সে প্রথমে নিজের হাতটা আস্তে আস্তে ছাড়িয়ে নিল। তারপর রিতার দুই হাত টেনে আনল নিজের কাছে। হাত দু’টিকে পরম যত্নে তুলে আনল নিজের ঠোঁটের কাছে। তারপর কোমল হাত দু’টিতে আলতো করে ঠোঁটের ছোঁয়া এঁকে দিল। পরপর কয়েকবার। রিতা একটুও বাধা দিল না। বরং প্রতিটা স্পর্শে একটু একটু করে কেঁপে উঠল। অনেকটা মন্ত্রমুগ্ধের মত দাঁড়িয়ে থাকল। শাহেদ আস্তে আস্তে বলল, তুমি ভাল থেকো রিতা।
এর পর পরীক্ষার হলে দেখা হয়েছে কিন্তু আর কথা হয়নি কোন দিন। পরীক্ষা শেষ হলে রিতারা পাবনা চলে গেছে । কবে গেছে শাহেদ সে খবরও রাখেনি। আর কোন দিন দেখা হবে সেটাও ভাবেনি। এরপর কেটে গেছে বিশটি বছর। এর মধ্যে শাহেদের বাবা-মা দু’জনেই পরপারে পারি জমিয়েছেন। মা-বাবা বেঁচে থাকতে নানা জায়গায় তার জন্য পাত্রী দেখেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বিয়ে করা হয়ে উঠেনি। তারা মারা যাওয়ার পর বন্ধু-বান্ধবরা চেষ্টা করলেও সে আর আগ্রহ দেখায়নি। এখন নিঃসঙ্গতাই তার সঙ্গী। বোন-ভাগ্নিরা আসলে একটু ভাল লাগে। বাকিটা সময় কেটে যায় বই পড়ে কিংবা বাড়ির চারপাশে নিজের হাতে লাগানো গাছ-পালার যত্ন নিয়ে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল শাহেদের দিন। তার এই নিস্তরঙ্গ জীবনে আজ সকালে আবার ঝড় তুলে দিয়ে গেছে তার সেই স্কুল জীবনের সহপাঠিনী নীলা। নীলা তার তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে এসেছে, এটা সে আগেই শুনেছিল। আজ সকালে সে তার ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে চলে এসেছিল শাহেদের বাড়িতে। এসে দেখে দরজা বন্ধ। শাহেদ তখনো ঘুমে। তাকে ডেকে তুলে একটি খাম ধরিয়ে দিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় শুধু বলে গেছে এটা তাকে শিপন আরো দশ বছর আগে দিয়েছিল, তাকে দেয়ার জন্য। এটা হাতে পাওয়ার পর সে গ্রামের বাড়িতে আরো কয়েকবার এসেছে কিন্তু প্রতিবারই সাথে আনতে ভুলে যেত তাই আর এতদিন দেয়া হয়নি। সেই জন্য অবশ্য সে দুঃখও প্রকাশ করে গেছে। খামটা দিয়ে নীলা আর বসেনি। কিসের যেন তাড়া আছে বলে চলে গেল।
খামটার মধ্যে কি থাকতে পারে এটা নিয়ে শাহেদ অনেক্ষণ চিন্তা করেছে। কিন্তু কোন কুল পায়নি। উপরে শুধু লেখা আছে ’শাহেদ’। আর কোথাও কিছু লেখা নেই। যাই হোক, ভিতরে কি আছে তা দেখার জন্য খামটা খুলে ফেলল। খুলতেই বেরিয়ে এল একটা নীল রুমাল। বেশ পুরনো। রং উঠে গেছে। কয়েক স্থান থেকে সুতাও বেরিয়ে গেছে। রুমালটা মেলে ধরতেই একটা চিরকুট টেবিলে পড়ল। চিরকুটটা হাতে নিয়ে দেখল, তাতে লেখা আছে-
প্রিয় শাহেদ,
তোমাকে ভাল লেগেছিল। তাই স্মৃতি হিসেবে তোমার এ রুমালটা সারাজীবন কাছে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে রুমালটা ফেরত দিয়ে গেলাম। আর তোমাকে না বলে এটা নিয়েছিলাম বলে ক্ষমা করে দিও।
ইতি তোমার
রিতা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:২৮