অনেকেই পোস্ট দিয়ে চিৎকার করছেন করোনার ঔষধ এসে গেছে। মানুষ গনহারে শেয়ার দিচ্ছে। সত্যি কথা হলো, যে ঔষধটা নিয়ে এত চেঁচামেচি সেটা এখনো বাজারজাত হয় নি (আপতত সে সম্ভাবনা নাই) কিন্তু নকল করে যে বাজারে আসবে না, বাংলাদেশে এর গ্যারান্টি নাই। অসাধুরা সুযোগ নেবেই। মানুষও ধুমায়া কিনবে। জ্বর হলে মুড়ির মত করে খাবে।
একটি টিকা বা প্রতিষেধক সফলভাবে বের করে আনা বেশ জটিল কাজ। এর জন্য অনেক সময় ও অর্থ দরকার হয়। টিকা বিক্রির অনুমতি পাওয়ার আগে অনেক লম্বা সময় ধরে হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। প্রি-ক্লিনিক্যাল টেস্ট, ক্লিনিক্যাল টেস্ট, এনালাইসিস, লাইসেন্স এত সব প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করে আসতে প্রচুর সময় দরকার। আর কতটা অর্থ দরকার কল্পনাও করতে পারবেন না। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীগুলোরও এতটা অর্থ বরাদ্দ নেই। পিফিজার, মার্ক, গ্লাক্সোস্মিথ, স্যানোফি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন এর মত বড় বড় কোম্পানীগুলোও অসহায়। তার কারন অধিকাংশ কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী এত লং প্রসেসে ইনভেস্ট করতে চায় না।
কোভিড-১৯ এর জন্য টিকা খুঁজতে কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে চ্যারিটেবল ডোনেশন ব্যবহার করা হচ্ছে।এর মধ্যে একটি হলো অলাভজনক সংস্থা দা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডসেন ইনোভেশন বা “সিইপিআই”। যার যৌথ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আছে নরওয়ে ও ভারত সরকার, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং দা ওয়েলকাম ট্রাস্ট।সিইপিআই ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস ও মডার্নার ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচিতে সহায়তা করছে।আরেকটি সংস্থা “জিএসকে” তাদের হাতে থাকা প্রযুক্তি দিয়ে সিইপিআইকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে।
মহামারি ভাইরাসের একটা পরিসংখ্যান দেখুন,
পক্স ভ্যারিওলা ভাইরাস (গুটি বসন্ত) কবে রোগটি প্রথম ধরা পড়ে সঠিক কোন তথ্য নাই। কয়েক শতাব্দি পর ১৭৯৬ সালে প্রথম এর টিকা আবিষ্কার হয়। কিন্ত টিকা আবিষ্কারের ২০০ বছর পরও ভারতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়।অবশেষে ১৯৭৯ সালে এই ভাইরাস নির্মুল করা হয়।
জিকা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়েছিল ১৯৪৭ সালে।যার কোন ঔষধ বা টিকা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি।
ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটির প্রথম ভ্যাকসিন বাজারে এসেছিল ২০১৫ সালে। যে ভ্যাকসিন গত বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দেয় নি।
পোলিও ভাইরাস প্রথম ধরা পড়েছিল ১৯১৬ সালে। মহামারী আকার ধারণ করা ভাইরাসটির কারণে পঙ্গু হয়ে যায় কত মানুষ আর প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। ১৯৫০ সালে এসে এই ভাইরাসের টিকা আবিস্কার হয়।
২০০২ ও ২০০৩ সালে পৃথিবীর প্রায় ১৭ টি দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়েছিল সার্স এবং মার্স ভাইরাস। এখন পর্যন্ত সার্স এবং মার্স ভাইরাসের কোনো টিকা তৈরী করতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা।
এইচআইভি ভাইরাস(এইডস) প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৮১ সালে। এর পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইডস রোগের কারনে ২কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৬% এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আজ পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন টিকা বা ঔষধ নেই।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর কারণে ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সাল এই এক বছরেই মারা গেছেন প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এখনো এর স্থায়ী কোন সমাধান নেই। কিছু ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রচুর। অনেক দেশই এসব ঔষধ বিক্রির অনুমোদন দেয় না।
২০০৯-১০ সালে সোয়াইন ফ্লু'র সময় প্রায় ষাট লাখ মানুষকে গ্লাক্সোস্মিথক্লেইনের পানডেমরিক্স ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।পরে এমন কিছু সমস্যার জন্য বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো।কারণ ভ্যাকসিনটি নেয়ার পর একজন মানুষ দিনে অনেক বার ঘুমিয়ে পড়তো অর্থাৎ স্লিপিং ডিজঅর্ডার সমস্যায় আক্রান্ত হতো।
দয়া করে যা দেখবেন তাই নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না। মহামারী আকার ধারণ করা একটা ভাইরাসের এত সহজ সমাধান থাকলে পৃথিবী এত অসহায় পড়ে থাকত না। আপনার বাংলাদেশে তৈরী হয়ে গেছে করোনার ঔষধ আর জ্ঞান বিজ্ঞানে এই দেশ থেকে হাজার গুণ উন্নত দেশগুলোও অসহায় আত্মসমর্পণ করছে ভাইরাসটির কাছে। ব্যাপারটা খুব হাস্যকর, খুবই হাসকর।
ঘরে থাকুন। সতর্ক থাকুন। সুস্থ থাকুন।