টেনশনের সময় মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে। একা থাকতে গিয়ে নিজের যত্ন নিতে ভুলে যায়। প্রিয় মানুষটিকে তখন দ্বায়িত্ব নিতে হয় তার একটু অতিরিক্ত যত্ন করার। ঘটনা হচ্ছে শীলার মা মেডিকেল। শীলা আর আমি দুজনেই বাইরে থাকি। রাত অনেক হয়েছে। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে শীলা টেনশন করবে জানি। এজন্য তার খোঁজ খবর নিচ্ছি। হঠাৎ বলল,
"এখন মেসেজ দিও না"
বোঝা যাচ্ছে খুব টেনশনে আছে। শীলার আবার হাই প্রেশার। টেনশন বেড়ে যদি ঘুম কম হয় প্রেশার বেড়ে যাবে। আমি তাকে বললাম,
"ঘুমাও কাল সকালে দেখবে মা সুস্থ। যদি না ঘুমাও মা তো অসুস্থ সাথে তুমিও অসুস্থ হবে!"
"চুপ একদম কোন কথা বলবে না"
এই রামধমক দেওয়া মেসেজ দেখে আমি এমনিতেই চুপ হয়ে যেতাম। কিন্তু শীলা ধমক দিয়ে ভরসা পায় নি। ব্লক দিয়ে দিলো! প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম!
রাতে এক ফোটা ঘুমও হয় নি। এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছি। পরের দিন অপেক্ষা করলাম শীলা কখন মেসেজ দেবে। বিকেলের দিকে মেসেজ দিলো,
"কী করো? রাগ করেছ?"
"রাগ করিনি একটু কষ্ট পাইছি"
"আমি নিষেধ করার পরেও কেন কথা বললে?"
"সরি"
এটা নতুন কিছু নয়। মান অভিমান ঝগড়া যাই হোক না কেন, যার কারনেই হোক, দোষ কিন্তু আমার। সব সময় আমাকেই সরি বলতে হয়। আমিও মেনে নিয়েছি। সরি বলাটা এখন আমার দ্বায়িত্ব!
সরি বলার পরে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় সবকিছু। কিন্তু আজ কেন জানি স্বাভাবিক হতে পারছি না। শীলার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু মনে হাজার প্রশ্ন উকি দিচ্ছে। আমি সব সময় সরি বলি এটা কোন ব্যাপার না। ব্যাপার হচ্ছে শীলা তো একটি বারও আগ বাড়িয়ে কোনদিন বলেনি আমার সাথে কথা বলবে। কিংবা কোনদিন নিজে থেকে কল দেয় নি! তবে কি তাকে শুধু আমি ভালবাসি? সে আমার ভালবাসা উপভোগ করে মাত্র? কিন্তু শীলাকে যতটা জেনেছি এমনটা মনে হয় নি, বরং মনে হয়েছে আমি যতটা ভালবাসি সেও আমাকে ততটাই ভালবাসে।
ঘরে একটু কাজ চলছে। আমি মিস্ত্রীকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে কল দিলাম শীলাকে। বিশ মিনিটের মত হবে কথা বলেছি। মিস্ত্রী এসে একটা জিনিষ দেখিয়ে দেওয়ার জন্য ডাকল। শীলার কাছে অনুমতি চাইলাম,
"দু'মিনিট পরে কল ব্যাক করি?"
শীলা বলল,
"আচ্ছা ওকে।"
একটু পরেই কল ব্যাক করলাম। শীলা কল কেটে দিলো! একবার না দুইবার!
মনটা বড্ড খারাপ হলো। আধাঘন্টা পর শীলার মেসেজ,
"আজ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, দেশের পরিস্থিতি ভাল না"
ডাহা মিথ্যা কথা বলেছে। আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। দেশের পরিস্থিতির দোহাই দিয়েছে। হয়ত এমনও হতে পারে রাতে অন্য কোন বন্ধুর সাথে কথা বলবে। ঘুম এক ফোটাও আসলো না। রাতভর ভাবনায় মিশে থাকলাম।
কল কেটে দেওয়া অভদ্রতা। একান্ত ব্যস্ততায় কেটে দিলে উচিৎ হলো পরে ব্যাক করা। আমি অবশ্য কল কেটে দেওয়াকে শুধু অভদ্রতা না অপমানও মনে করি। অপেক্ষা করি কখন ব্যাক করবে। এখন যেমন করছি। প্রচন্ড ইচ্ছে করছে শীলার সাথে কথা বলব। কিন্তু কল দিতে ইচ্ছে করছে না। অপেক্ষা করছি শীলা আমাকে কল দিবে। এটাও জানি শীলা আমাকে কল দেবে না। কোনদিন দেয় নি। আজও দিবে না। কোনদিনও দেবে না। কিছু ভালবাসা পূর্ণতা পায় না। অপেক্ষাতেই কেটে যায় শত প্রহর। পেরিয়ে যায় যুগ যুগান্তর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৬