ঘড়িতে ৪.৩০ বাজে। ছুটির দিনে সকালবেলা জম্পেশ ঘুম হয় আমার। দরজা বন্ধ করে মোবাইল সাইলেন্ট করে মরার মত ঘুম। এত সকালে উঠার প্রশ্নই আসে না। আজ এত সকাল ঘুম থেকে উঠার কারন বউয়ের নির্দেশ!
গতরাত দুইটা পর্যন্ত মহারাণী আমাকে ঘুমাতে দেন নাই। আজ সকালে তাঁর অফিসের কলিগদের সাথে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাবে। রাত জাগার কারনে সকালে উঠতে পারবে না। আমার দ্বায়িত্ব হচ্ছে তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা।
যথাররিতী ডেকে দিলাম। আবছা অন্ধকারে চলে গেল ফুল দিতে। মনে মনে একটু আফসোস করলাম। এ জীবনের কী দাম? তার চেয়ে আরেকবার যদি ভাষা আন্দোলন হত। যুদ্ধ করে মরে যেতাম। অন্তত বছরে একবার প্রভাতে ফুল দিয়ে নিজ ইচ্ছায় না হোক, অফিসের চাপেও শ্রদ্ধা জানাত! কী এক বউ পাইলাম! একটুও শ্রদ্ধা নাই স্বামীর প্রতি। সারাক্ষণ ডিউটি করায়!
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। বউয়ের এক কলিগের স্বামী। ফোনটা রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম,
"এত সাত সকালে ফোন দিলেন। কী ব্যাপার ভাই?"
কান্নাভেজা কন্ঠে বললেন,
"ভাই আমার বউ রাতে কোথায় চলে গেছে আমারে একলা রাইখা।"
"হাহাহাহাহাহা..."
"হাসবেন না ভাই আমার একটা বাচ্চা নিয়া কোথায় যাব আমি? আমি মানুষকে মুখ দেখাব কেমনে?"
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললাম,
"ভাই আপনি আসেন আমার বাসায়, দুজনে মিলে বুদ্ধি করি কী করা যায়!"
ফজরের আজান হয়ে গেছে। ফোন রেখে নামাজ পড়ে বিছানা গুছিয়ে চা করলাম। এরই মধ্যে উনি চলে এসেছেন। দুজনে মিলে চা পান করলাম। চা খেতে খেতে বললাম,
"আজ একুশ ফেব্রুয়ারি। প্রভাতফেরীতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেছে আমার বউ। এজন্য বাসা এখন খালি।"
এতক্ষণে উনার কাছে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়েছে। বিজয়ীর একটা হাসি দিয়ে বললেন,
"ও তাহলে তো আমার বউও শহীদ মিনারে গেছে"
আবার হাসলাম। এবার একা না। দুজনে মিলে বেশ কিছুক্ষণ হাসলাম।
সব শেষে উনার প্রশ্ন,
"এই প্রভাতফেরী দুপুরবেলা করা যায় না?"
আরেকবার হাসলাম প্রাণ খুলে। ছুটির দিনের শুরুটা হল আনন্দ দিয়ে। এতক্ষণের চাপা ক্ষোভ আর কষ্ট নিমিষেই উদাও হয়ে দেখা দিল ফুরফুরে এক ধরণের আনন্দ। কেউ ফুল দিয়ে আনন্দ পায় কেউ ফুল দেওয়া মানুষগুলোকে নিয়েই আনন্দে কাটায়। সবই আনন্দ! ভালবাসার আনন্দ!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২২