সুমি মাঝে মাঝে আমার বাসায় আসে। এসেই আমার রুমে গিয়ে বোরকা টোরকা খুলে চুলটুল ছেড়ে দিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। সাতারকুলের এক ফ্লাটে আমি একা থাকি। বাড়িওয়ালা আংকেল আমার দূর সম্পর্কের আত্নীয়। আমাকে খুব ভালবাসেন। তবুও ভয় করে এভাবে ওর আসা যাওয়াকে হঠাৎ কী মনে করে বসেন। সুমিকে নিষেধ করি। কিন্তু ও শুনবে কেন?
আষাঢ় মাস। টিপটপ বৃষ্টি পড়ছে সকাল থেকে। ভিজতে ইচ্ছে করছে। একা একা ভিজতে ভাল লাগে না। আপাতত কোন কাজ নেই। শুয়ে আছি। জানালা দিয়ে বৃষ্টির টাপুর টুপুর নাচ দেখতেছি। আজ দুপুরে সুমি আসবে। তখন একসাথে ভিজবো।
সুমি নতুন প্লান নিয়ে এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজবে না। ও খিচুড়ি খাবে। চুলা জ্বালিয়ে আমি খিচুড়ি বসালাম।কাটাকুটি যা লাগে সব করে দিল সুমি। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে গেছে। ওরে ফ্যানের নিচে পাঠিয়ে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই খিচুড়ি রেডি। দুইটা প্লেট ধুয়ে খিচুড়ি নিতে গেলাম। সুমি মানা করে দিল। এক প্লেটে নিতে হবে। একই প্লেটে নিলাম। একটাই চামচ।
প্লেট হাতে করে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। সুমি এখনো চুল শুকাচ্ছে। ধপাশ করে এসে আমার কোলে বসে পড়ল। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই। আরেকটু হলে খিচুড়ির প্লেট হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল।
- কী হল বেগম সাহেবা? আরেকটু হলে তো আজ ভালমত খিচুড়ি খাইছিলা।
- কোন কথা না। খিচুড়ি খাওয়াইয়া দেও।
- আমি আগেই অনুমান করেছি। আজ আমার ডিউটি হবে। নাও হা করো!
এক চামচ সুমি আর এক চামচ আমি। এভাবে করে প্রায় অর্ধেক প্লেট খিচুড়ি শেষ হলো। বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। বারান্দা থেকে ঘরে চলে এলাম। বিছানায় লম্বা করে পা ছড়িয়ে বসে পড়ল সুমি। আমি ওর উরুকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়লাম। ও আমার চুলে বিলি কাটছে আর গল্প করছে।ওর সৎ মায়ের গল্প। ওর বাবার গল্প। কোনটা দুঃখের কোনটা সুখের। কখন যে বৃষ্টি থেমেছে আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল এসেছে টেরই পাইনি।
আমার কাছে আসলে সুমি যেতে চায় না। শুধু একটাই প্রশ্ন “এ বাসা আমার হবে কবে?” আমি বলি, “এ বাসা তো তোমার! যখন খুশি আসতেছো।” ওর মন ভরে না। আমি বুঝি। সুমিও বুঝে। ওর বাবার জন্য আমাদের বিয়েটা আটকে আছে। সুমির আর কেউ নাই। ঘরে সৎ মা আছেন। এই সৎ মা সুমির জন্য একজন কাল নাগ। বাবা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফুরসত নাই।
সুমি চলে যাবে। তৈরী হয়ে গেছে। আমি ডাকলাম,
- সুমি চলে যাবে?
- তুমি বললে থেকে যাব!
- না চলে যাও। তোমার বাবা রাগ করবেন।
সুমি আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম
- তোরে খুব ভালবাসিরে পাগলী!
সুমি নাক ফোস করে একটা ঝাড়ি দিয়ে, আমার বুকে আলতো করে একটা কিল দিয়ে বলল,
- আমি ভালবাসি না। হুহ! নিজের কাছে না রেখে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছ।
ওরে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিতে হবে। বাইক নিয়ে বেরোলাম। ঝকঝকে রোদ উঠেছে। কে বলবে একটু আগে এই শহরে বৃষ্টি হয়েছে। আর আমরা রচনা করেছি প্রেমের পদ্য।….সুখের মুহুর্তগুলো এত ক্ষণস্থায়ী কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:২৬