দীর্ঘ আড়াই বছর প্রেমের পর এক জোছনা রাতে ধুমধাম করে বিয়ে করল অন্নি আর রাতুল। এই আড়াই বছরে তাদের প্রেমে কোন বিবাদ ছিল না, কোন সন্দেহ ছিল না। যাকে বলে একেবারে বিশুদ্ধ প্রেম!
উভয় পরিবারই বিয়েতে রাজি ছিল। রাতুল অবশ্য বিয়ে করতে চায় নি। কারন হিসাবে সে "অন্নিকে বলেছিল আর মাত্র কয়েকটা মাস অপেক্ষা করো! আমি ব্যবসা নিয়ে একটা অবস্থানে আসি"। অন্নি মানে নি। অন্নির কথা একটাই আমার তোমাকে চাই! যা করবে আমাকে সাথে নিয়ে করবে। রাতুল কৌতুক করে বলেছিল "আমি তো সৌদির ভিসার জন্যও চেষ্টা করতেছি! তোমার জন্যেও একটা দেখবো নাকি?"
রাতুল আর অন্নি ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে দুজনে বড় হয়েছে। লেখাপড়া করেছে। স্কুলে গিয়েছে। বিকেলবেলা মাঠে গিয়ে একসাথে খেলা করেছে। ডানপিটে স্বভাবের কারনে রাতুল অনেকবার বাবা মায়ের হাতে মার খেয়েছে। রাতুল মার খেয়েছে শুনলে অন্নি নীরবে কেদে যেত। হৃদয়ের গভীরে ব্যথা অনুভব করত। অন্নি কোনদিন মায়ের সাথে বেড়াতে গেলে রাতুলের সারাদিন কেটে যেত আনমনা হয়ে।
এভাবে কখন যে দুজনে দুজনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে বুঝতেই পারে নি। বুজলো, যখন রাতুল গ্রাম ছেড়ে চাকরীর উদ্দেশ্যে ঢাকা গেল। দুজনে আলাদা হওয়ার পর কারো ভাল লাগে না। রাতে ঘুমাতে গেলেও মনে পড়ে, খেতে বসলেও মনে পড়ে। অবশেষে আর থাকতে না পেরে শহর ছেড়ে আবার গ্রামে চলে এল রাতুল। ঢাকা থেকে অনেক কিছুই আনলো অন্নির জন্য। এক বিকেলে পুকুরঘাটে বসে দুজন দুজনকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিলো।
বাসর রাতে রাতুল অন্নির হাত ধরে আগের পরিকল্পনা মত ছাদে চলে গেল। তারা ইচ্ছে করেই জোছনা রাতে বিয়ে করেছে যাতে সারারাত জোছনা উপভোগ করে গল্প করতে পারে। শুরু হলো দুজনের কথার ফুলঝুরি। গভীর রাত পর্যন্ত চলল দুজনের গল্প। হাতে হাত রেখে শপথ নিলো দুজনের কেউ কোনদিন হাত ছাড়বে না।
বিয়ের পর একমাসের মধ্যে রাতুলের সৌদির ভিসা হয়ে গেল। রাতুল সৌদি চলে গেল। রাতুল আর অন্নির অনেক স্বপ্ন। তারা যে বাড়িতে থাকে সেখানে রাতুলের ভাগে যায়গা একদম অল্প। তাদের দুজনের স্বপ্ন আলাদা যায়গা কিনে একটা বাড়ী করবে। দুটো বাচ্চা হবে। সুখের একটা সংসার হবে। দুজনে আজ খুব খুশি।
কিন্তু কে জানত নিয়তির নির্মম খেলা। সৌদি গিয়ে তিনটা মাসও থাকতে পারে নি। সড়ক দুর্ঘটনায় দুটো পা হারিয়ে দেশে ফিরে এল রাতুল। রাতুলের পঙ্গুত্বের কারনে অন্নির বাবা মা অন্নিকে নিয়ে যেতে চাইলো। রাতুল মনে মনে খুশি হয়েছিল। একটা পঙ্গু মানুষের সাথে ওর জীবনটা নষ্ট হোক এটা মন থেকে চাচ্ছিল না। সেও পরামর্শ দিলো অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হওয়ার জন্য। রাতুলের মা, মানে অন্নির শাশুড়ি, ননদ সবাই পরামর্শ দিলো " ফুটফুটে চেহারা আর ভরা যৌবন। যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও।" বান্ধবীরা একই পরামর্শ দিলো। পারলে এখনি তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেয়। অন্নি সবার কথাই শুধু শুনে যাচ্ছে। কাউকে কিছুই বলছে না।
সবাই অন্নির দিকে তাকিয়ে আছে ওর সিদ্ধান্ত শুনতে চায়। অবশেষে বললো "ভালবেসেছি যাকে বিয়েও করেছি তাকে, সারাজীবন তার সাথেই থাকবো, ভালোবাসার মধ্যে ফিরে যাওয়ার কোন শর্ত থাকে না। ভালোবাসার বসবাস হৃদয়ের গহীনে",,,,,,,
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭