১. একের পর এক ভোট চুরি আর প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে এক যুগের ও বেশি সময় ধরে ক্ষমতা দখল করে রাখা একটা সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠাটাই সহজ আর স্বাভাবিক সমীকরণ। বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা তৃতীয়বারের (১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮) মতো দেশ চালানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারে নিয়োগ পাওয়া আওয়ামীলীগ নামের দলটি এই সহজ সমীকরণেই এখন আপদমস্তকে একটা স্বৈরাচারী দল। চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আজকের দিনশেষে শেখ হাসিনা একজন স্বৈরাচার সরকার প্রধান। এই ইমেজ নিয়ে তিনি ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি নিলে কিংবা দেশ বা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই শেখ হাসিনা এরশাদের মতোই একজন স্বৈরাচার হিসাবেই পরিগণিত হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে । তার আমলের ভিজুয়াল উন্নয়ন দিয়ে এই সত্যকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নাই, তার এই ইমেজ পরিবর্তনেরও কোনো সুযোগ নাই ।
২. বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারকে স্বৈরাচার মানতে আপনার কষ্ট হলে, হয় আপনি এই স্বৈরাচার এন্টারপ্রাইজের একজন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বেনিফিশিয়ারি নয়তো এই দলটির প্রতি আপনার বেহদাই অভ্যাসবশতঃ এক ধরনের অনুরাগ আছে । এই অনুরাগী মানুষগুলোর রাজনৈতিক বিবেচনা আওয়ামী গন্ডিতে বন্দী হয়ে গেছে যার আর স্বাধীন হবার সম্ভাবনাও নাই । তাদের এই ভালোলাগার অভ্যাসকে বদঅভ্যাস মনে করাটাই শ্রেয় !
৩. ছাত্র সমাজ একটা রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক শ্রেণীবিভাগ । এই স্বৈরাচারী সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রসমাজের একটা অংশকে ব্যবহার করে একটা পারফেক্ট গুন্ডাবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে - যার নাম ছাত্রলীগ । একাত্তরে যাদের জন্মও হয় নাই, এই ছাত্রলীগের মূলধন হলো একাত্তরের চেতনা বিক্রি করে নিজেদেরকে দেশপ্রেমী হিসাবে জাহির করা, স্বাধীনতা মানেই আওয়ামীলীগ, জোর জবরদস্তি মানুষকে এটা স্বীকার করতে বাধ্য করা, কেউ সরকারের কোনও অপকর্মের বিরোধিতা করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে এই চেতনাবাজদের আকশন নেওয়া আর তাদের বিপক্ষে কেউ কিছু বলতে গেলে তাদেরকে রাজাকারের ট্যাগ দেওয়া । তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার ঠিকাদার ।
৪. স্বৈরাচার সরকার সব সময় ক্ষমতা হারানোর এক প্রকার ভীতির মধ্যে থাকে । তারা তাদের শাসনের বিরুদ্ধে যে কোনো রকমের বিরোধিতা নিয়ে কোনো রকমের আলোচনায় যেতে চায় না বরং সহিংসতার মাধ্যমে বিরোধিতাকে জোরপূর্বক দমন করতে চায় । এই দমননীতি, সহিংসতা প্রায়শই সামরিক বা পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠান কিংবা তাদেরই কোনো অঙ্গ সগঠনের দ্বারা চালানো হয় । এটাই একটা স্বৈরাচার সরকারের আভিধানিক সংজ্ঞা । আওয়ামীলীগকে এই সংজ্ঞার মধ্যে ফেলতে কাউকে জাফর ইকবাল সাহেবের মতো জ্ঞানী বা বিজ্ঞানী হবারও দরকার নাই । এই সরকারের এই তান্ডব, আন্দোলনরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশের অ্যাকশন আর ছাত্রলীগকে এভাবে লেলিয়ে দেয়া - এইগুলা কোনোটাই অস্বাভাবিক, অবাক করা বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না বরং এটাই একটা স্বৈরাচার সরকারের বৈশিষ্ট্য বা সহজাত আচরণ !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২৪ ভোর ৫:৪৪