এভাবেই এক একটা ঘটনা ঘটে যাবে আর তারপর মিডিয়া তোলপাড় হবে ,ফেবুতে পোস্টের বন্যা বইবে ।তারপর নতুন কোন ইস্যু আসবে ,সবাই সব ভুলে আবার সেটি নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বে ।সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে ।অপরাধী তার নিজস্ব ক্ষমতা আর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নিজেদের বাঁচিয়ে নেবে আর ভিকটিম সারা জীবন এই কষ্টের ভার বইবে ।অপরাধী আর ভিকটিম কাউকেই মনে রাখবেন না দর্শক,প্রশাসন ,মিডিয়া কিংবা ফেবু আর বিভিন্ন ব্লগে পোস্টদাতা আর মন্তব্যকারীগণ ।এইত আমাদের সোনার বাংলার চিরায়ত নিয়ম হয়ে উঠেছে ।
যাইহোক ,গল্প এটা নয় ।সময় এসেছে সেক্সসুয়াল হেরেজমেন্ট কি আমাদের সমাজকে বুঝানোর ।এটা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ।
"Sexual Harassment is a Crime in the subway, too – A crowded train is no excuse for an improper touch. Don't stand for it or feel ashamed, or be afraid to speak up. Report it to an MTA employee or police officer."
উপরের এই কথাগুলো নিউইয়র্ক সাবওয়ে ট্রেনের একটি এডুকেশনাল ম্যাসেজ ।
আমাদের দেশেও বিভিন্ন ইভেন্ট,পাবলিক প্লেস কিংবা গণ পরিবহণ যেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটবার কিঞ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে সেখানেই এই ধরনের প্রতিরোধমুলক প্রচারণার দরকার ।এতে করে ভিকটিম এই ধরনের অবস্থায় লজ্জায় অবনত না হয়ে প্রতিবাদ করতে উত্সাহিত হবে এবং অপরাধীর মনেও ভীতি সঞ্চার করবে ।সর্বোপরি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে ।
সময়ের প্রয়োজনে সমাজে পরিবর্তন আসছে ।মেয়েরা এখন আর শুধুই ঘরে বসে নেই ।তারাও ছেলেদের সাথে সমানতালে কাজের জন্য বের হচ্ছে ।আমাদের সমাজ এখন একটি সন্ধিক্ষন পার করছে যেখানে মেয়েদের অবাধ বিচরণ বাড়ছে কিন্তু তার সাথে তাল মিলিয়ে ছেলেদের মানসিকতার পরিবর্তনের হার খুবই কম ।এই পরিবর্তনের হার বাড়াতে হলে সব জায়গাতে নারীর উপস্থিতি আরও দ্রুত বাড়াতে হবে ।হঠাৎ করে একটি মেয়ে বাইক চালাতে শুরু করলে প্রথম প্রথম অনেক ছেলেই তার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাবে কিন্তু লক্ষ লক্ষ মেয়ে একই কাজ করলে সেটা সমাজের ছেলেদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠবে ।সমষ্টিগতভাবে ছেলেদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে ।হয়ত তারপরও কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকবেই ।কেননা সমাজে কিছু কিছু অপরাধী থাকবেই ।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় ।সাধারণ মানুষকে এদের মোকাবেলা করার জন্য ন্যুনতম সচেতন হতে হবে ।একা না হয় নাই পারলো ,অনেক মানুষ একসাথে এই অপরাধীদের মোকাবেলা করার মতো ন্যুনতম সাহস থাকা চাই ।
হাজার হাজার যুবাদের মধ্যেই ঘটনাগুলো ঘটলো ।তিনজন ছাড়া আর কোন যুবাকেই পাওয়া গেল না সেখানে ।এখন চলছে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশ আর মশাল মিছিলের আয়োজন । এই সব বিক্ষোভ সমাবেশ আর মশাল মিছিল কি আমাদের প্রায়শ্চিও করার জন্য নাকি বিচারের দাবি, নাকি অন্য কিছু !!হাজার হাজার মানুষের সামনে অপকর্ম করে ও যদি তার বিচারের জন্য দাবি করা লাগে , সভা সমাবেশ করা লাগে তাহলে এইসব আয়োজকদের কদিন পর প্রতিদিনই এইগুলা করা লাগবে ।যেমন ধরুন বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে ঠিকমত পানি দেয় না সেই দাবিতে মশাল মিছিল কিংবা মরটিন কয়েলে মশা মরেনা এই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ইত্যাদি ।
লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে আট দশজন মানুষ মিলে একজন মেয়েকে লাঞ্ছিত করার মতো দুঃসাহসী হয়ে উঠা আর জাতীয় দৈনিকগুলাতে এই ঘটনা হেডলাইন হয়ে প্রকাশ পাওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না ।এটার মাধ্যমে অপরাধীর মানসিক দৈন্যদশার মতো আমাদের পুরো সমাজেরই এক স্পষ্ট দৈন্যদশা প্রকাশ পেল । এই লজ্জা শুধু কয়েকজনের নয় ;এই লজ্জা আমাদের সবার ॥
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৪৭