somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমজনতা

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পর বিজয় উল্লাস আর পোলাপানের মতো শুকর নিয়া খেলা না করে মসজিদে ,মন্দিরে সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদের আয়োজন করুন ।মনের ঘৃণাকে নিয়ন্ত্রণ করুন।মসজিদ আর শহীদ মিনার নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন ।অতিরঞ্জিত চেতনা পরিহার করুন ।নিজেদের শোভন মানবিক দিকগুলো প্রদর্শণ করে ,যারা ভুল তাদের আর আপনাদের মধ্যে একটা পার্থক্য বজায়ে রাখুন ।
কারো লাশের উপর জুতা ছুড়ার চেয়ে তার জানাজাতে অংশ নিয়ে তার বিরুদ্ধে সৃষ্টিকর্তার কাছে নালিশ দেওয়া অনেক বেশি কর্যকর ।কারণ বাস্তবিক মৃত্যুর পর কাউকে শাস্তি দিতে পারার ক্ষমতা শুধু সৃষ্টিকর্তারই আছে ।
কেউ ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এমনটা করতেই পারে ,এটাও যুক্তিযুক্ত কিন্তু এধরনের কাজকে অতি বেশি রকমের বাহাবা দিয়ে তাকে ইতিহাসের হিরো বানাবার চেষ্টা করা একধরনের বোকামির কারণ হতে পারে । হয়ত বা এই হিরোইজমের কারণেই সে প্রকাশ্য শত্রুতে পরিনত হলো ।কাল একারণে তার জীবননাশের আশংকা থাকবে ।এর কারণ হিসাবে সে হত্যার শিকার হলে এর পিছনের বাহাবাদানকারীরা কয়েকদিন তাকে নিয়ে বন্দনা করবে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভুলে যাবে তাকে ।তার পরিবারকেই সেই বোঝা বহন করতে হবে আজীবন ।আজ কয়জন আমরা জানি কয়দিন আগে হত্যা হওয়া রাজিবের পরিবারের বর্তমান অবস্থা কি ?তাছাড়া মৃত ব্যক্তির উপর জুতা ছুড়ে প্রতিকী প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে একটি জীবন্ত চেতনার বলি হয়ে গেলে সেটা কত বেশি ফলপ্রসু হবে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ ।আর একজন সাজাপ্রাপ্ত ক্ষমতাহীন মৃত ব্যক্তির উপর জুতা কাহিনী ইতিহাসে কতটা মোটা দাগে লিপিবদ্ধ থাকবে সেটাও সময়ই বলবে ।

এই সুন্দর স্বাধীন দেশটা আমাদের সবার ,শুধুই শেখ মুজিব বা জিয়ার নয় ;তাদের ত্রুটিগুলো বাদ দিয়ে দেশের জন্য যে যতটুকুই করে গেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন ।অহেতুক তুলনা ,সমালোচনা দয়া করে বাদ দিন ।দল মত সবাইকে নিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপহার দিয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে উপযোগী করে তুলুন ,স্বদেশকে অন্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ বানানের ব্রত নিন আর তাতেই তারা আমাদের ইতিহাস পড়বে।একটি ব্যর্থ জাতি বা রাষ্ট্রের ইতিহাস নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না,শুধুই করুনা করে ।তাই ইতিহাস নিয়ে মারামারি করে রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করে দিয়েন না ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই শেষ কথা না ।স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহাসিক চেতনা শুধুই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্যে শেষ না করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং জাতীয় অগ্রগতির জন্যও বাচিয়ে রাখুন ।

সবকিছুর উপরে দেশের মানুষের সুখ সাচ্ছন্দ্্য ।এক যুদ্ধ ফয়সালা করে আরেক বড় যুদ্ধ লাগিয়ে দিলে আপনারা ইতিহাসের পাতায় কোন একসময় হিরো না হয়ে ভিলেন লিস্টেড হবেন এখন যেমনটা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে ।সাম্প্রদায়িকতার দানাকে বাতিল করুন ।ধর্মপ্রাণ মানুষদের আশ্বস্ত করুন ।জামাত শিবিরের পোলাপানদের গালাগালি বন্ধ করে তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের চেষ্টা করুন ।স্বাধীন দেশে জন্ম নেয়ার পরও কিভাবে এবং কেন স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে তার কারণ খুজে বের করে তার প্রতিকারের চেষ্টা করুন।

যারা ধর্ম আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে গুলিয়ে ফেলছেন তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করুন , একটি বারের জন্য কলপনা করতে বলুন স্বজন হারানোর ব্যথা ।
কোন ত্রকজন ডাক্তারের অনিচ্ছাকৃত ভুল চিকিৎসার কারণে যদি আপনার বাবা অথবা মা মারা যান আর সেই ডাক্তারকে যদি বিচারের মুখোমুখি করা হয় ,তবেও আপনি তার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডই চাইবেন হউক সে ডাক্তার আপনার ধর্মের বা হউক সে যত পরহেজগার ,মানবদরদী কিংবা বিখ্যাত চিকিৎসক ।আর কেউ যদি আপনার বাবা , মা কে শুধুই শাসকগোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য হত্যা করে তখন আপনি কি করবেন ?

মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারানোদের সমব্যথী হউন কিন্তু তাদের ক্রোধকে জাগিয়ে দিয়ে হিংস্র দানবে পরিণত করে ফেলবেন না। তাদের বিসর্জনের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ।আমরা স্বাধীন ,আমরা আর কোন যুদ্ধ চাইনা ।সবাই মিলে এই স্বাধীন ভূখন্ডকে সাজাতে চাই ।এতেই শহীদদের আত্মার শান্তি পাবে ।ভালবাসাই মানব আত্মাকে শান্তি দিতে পারে ,ঘৃণা পারেনা ।ঘৃণা থেকে যা পাওয়া যায় তা সাময়িক স্বস্তি ।

দেশীয় চেতনার মুখোশধারী ধর্মবিদ্বেষী লোকদের চেতনাযুদ্ধ থেকে পৃথক করুন ।তারা যতই স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলছে কিন্তু তাদের আসল আনন্দ কোন ধর্মকে হেয় করার মাধ্যমেই ।এরা ভয়ংকর কাপুরুষ যারা লোক দেখানো এক বিজয়ের মাধ্যমে অন্য বিজয়ের আনন্দ খুজে ফেরে ।সুযোগ পেলেই তারা দেশকে সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে ঠেলে দিতে পিছপা হবেনা ।আরও একটি যুদ্ধের মধ্যে পড়বে আমাদের দেশ ।তারা যতই বিদ্বান হউক পরিতাজ্য ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যে পরিমান চেতনা বা সচেতনতা তার চেয়ে বেশি সচেতন হওয়া আবশ্যক মক্তিযুদ্ধাদের পরিবারের প্রতি ।তারা কি পেল দেশের জন্য জীবন দিয়ে ।আমরা যদি তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করতে পারি বছর বছর স্মৃতি সৌধে আর শহীদ মিনারে ফুল আর যুদ্ধিপরাধিদের শাস্তি তাদের আত্মাকে কি পরিপূর্ণ শান্তি দিতে পারবে ?যে শহীদের পরিবার ঠিকমত তিন বেলা খাবার পায়না ,বাচ্চাদের টাকা পয়্সার অভাবে শিক্ষা দিতে পারছে না ,তাদের কাছে এই চেতনা শুধুই লোক দেখানো !

দেশকে রাজাকার আর ধর্মবিদ্বেষী (দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে যারা নাস্তিক বলে আখ্যায়িত হচ্ছে ) গ্রুপিংয়ের হাত থেকে বাচান ।দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠী এই বিভাজনে বিভাজিত হবার আগে আপনারা উভয়পক্ষই এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুজে বের করুন যুদ্ধ দিয়ে নয় ,পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে ।জেনে রাখুন ,আমরা সবাই আমজনতা আপনাদের এই সৃষ্ট কোন গ্রুপকেই সমর্থন করিনা এখন আপনাদের উদ্দেশ্য যতই মহৎ হউক না কেন।কারণ আমরা বিভাজন চাইনা , আরেকটি যুদ্ধ চাইনা কারণ এখন আমরা পরাধীন নই। শান্তি চাই।সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই ।হাসিনা ,খালেদা ,আওয়ামীলীগ বিএনপি ,জামাত ,মুক্তিযোদ্ধা ,রাজাকার ,ধর্মান্ধ বা অধিক চেতনাবাজ এই সব কোন দলেই আমাদের অবস্থান নাই কিন্তু তারপরও আমরা বাংলাদেশী।

দেশকে ভালকিছু দেবার দায়বদ্ধতা সবার মধ্যেই থাকা চাই পরবর্তী প্রজন্মর সুন্দর আর নিরাপদ বাসযোগ্য আবাসের জন্য ।

আমজনতাকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখান যুদ্ধ আর নোংরা কথা দিয়ে নয় ,যৌক্তিক ভালবাসার মাধ্যমে ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×