somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসনামা THE JOURNEY BY BUSX((:P:-/:|

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস নামক বস্তুটার ক্ষেত্রে আমার কপালটা বরাবরই বেশ রকমের খারাপ। ছোটবেলার শুক্রবারের বাংলা ছবি দেখার কুফল হিসেবে প্রতিবারই ভাবতাম আমার পাশের ছিটে এসে ঐশ্বরিয়া বা মেগান ফক্সের ছোট কোন বোন এসে বসবে। কিন্তু তারা আসে না। হয় তাদের কোন সর্দিওয়ালা আঙ্কেল এসে আমার শার্ট ভিজিয়ে দেন। না হয় তাদের কোন আন্টি দুইবাচ্চা সহ এসে আমার কোলে একটা দিয়ে বলেন বাবা এট্টু রাখ তো। আমি সাদা
মনের মানুষ ভাল বুঝে বাচ্চাগুলান কোলে নিয়ে বসি। কিন্তু বাচ্চাগুলা মোটেও সাদা মনের মানুষ না। তারা আমার উপর মুত্র বিসর্জন করে নিজেদের প্রতিভার জানান দেন। একজন একবার অতি ঠান্ডা গলায় আমার কোলে বসা অবস্থায় বললেন, তুই উঠ আমি কুলে বসব না। আবার ঐশ্বরিয়াদের কোন কোন আত্মীয় আমার কাধে মাথা রেখে দমকলের সাইরেনের মত নাক ডাকেন। কেউ আবার আমার পেছনে বসে প্রবল ছিক্সথ সেন্সের জোরে
কিভাবে যেন বুঝে যান আমার পেছনদিকটা চুলকানো ভিষন প্রয়োজন। তখন সেই অতি দয়ালু মানুষেরা তাদের কাশফুলের মত নরম পায়ের আঙ্গুল দিয়ে আমার পেছনটা চুলকে দেন।

যাক, এসব নিত্যদিনের। সেদিনও আমি বাসে উঠার সময় কোন অনাকাঙ্খিত চমকের আশা করি নাই। টিকিট কাটার সময় কাউন্টারে বসা লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। আমি পাত্তা দিলাম না। নিজের ছিটে বসতে বসতে ভাবলাম, তিন বাচ্চা ওয়ালা কোন মা বা নাক ডাকা কন্টেস্টে অলিম্পিকে সোনা জয়ী কোন ভদ্রলোক আমার পাশে এসে বসবেন। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে এয়ারফোনটা কানে দিয়ে বসতে যাব। কানের পাশে হঠাৎ
স্যাকারিনের চেয়েও মিষ্টি গলা বলে উঠল, এটা কি ১৬ নম্বর সিট। আমার মাথার ভেতর চাচা চৌধুরির চেয়েও দ্রুত গতিতে হিসাব চলতে লাগল। আমা যেহেতু ১৫ তে বসেছি আর যেহেতু ১৪ নম্বর সামনে। তাই আমার পাশের ছিটটা ১৬ নম্বর। নাহ তা কেমনে হয়। কোন মতেই সুত্রে মেলে না। নিরুপায় আমি অবশেষে ছিটের পেছন দেখে বললাম,জ্বী। তিনি আমার পাশ কেটে ভেতরের ছিটে বসলেন। সেসময় তার চুলের ঝাপটা আমার মুখে এসে
পড়ল। আমার চোখের সামনে আঁধার হয়ে এল। আমার মাথার ভেতর ভোঁ ভোঁ শব্দ হতে লাগল। বহু কষ্টে ছিটের হ্যান্ডেল ধরে সামলে বসলাম। দুলতে থাকা পৃথিবীটাকে শান্ত করলাম। সে বসেই কানের ভেতর হেডফোন গুজে গান শুনতে লাগল। আমি উপরে তাকিয়ে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের মত স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিলাম এমন অপুর্ব সৃষ্টির জন্য এবং আমাকে তার পাশের ছিটে বসানোর জন্য।

বাস চলা শুরু হল। খোলা জানালা দিয়ে আসা অবাধ্য বাতাস তার চুল গুলো আবার আমার মুখে এনে ফেলছে। আমার ভেতর সিডর,ক্যাটরিনা,রিটা,নার্গিস সব দুর্যোগ একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। একবার ভাবলাম কথা বলি। কিন্তু কি দিয়ে শুরু করব।"কি গান শুনেন?" "ছিটে বসে আরাম পাচ্ছেন তো?" এমন অনেক কথা বলার আগেই কালের অতলে হারিয়ে গেল। তাছাড়া অতি লাজুক ছেলে হিসেবে আমার সুনাম আছে। আর আমার বাংলা সিনেমার থিওরি
অনুসারে তার কথা শুরু করার কথা। কোন কুলকিনারা না পেয়ে শেষে আমি চুপচাপ হেডফোন কানে গুজে দিলাম। হঠাৎ আমার কাঁধে আলতো টোকা পড়ল, তাকিয়ে দেখি মাঝারি ছাইজের ডিমের মত দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কানথেকে হেডফোন খুলতেই সে জিজ্ঞাসা করল,কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

এরপর কি হল তা হয়তো সবাই অনুমান করতে পারছেন। কি অনুমান করছেন তা আমিও অনুমান করতে পারছি। আমরা অনেক কথা বললাম, কথা বলতে বলতে পথ এক ঝলকে শেষ হয়ে এল। নেমে যাবার আগের মুহুর্তে আমি বুকের সব সাহস সঞ্চয় করে বলে ফেললাম,আবার কি দেখা করতে পারি?
কিন্তু না গল্পে হঠাৎ একটা পটপরিবর্তন ঘটল। যেহেতু এই গল্পের অনুপ্রেরনা বাংলা সিনেমা তাই এক ভিলেনের আবির্ভাব হল। কোথায় যাচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে মুখ খোলার ঠিক আগের মুহুর্তে এক ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে গেল। আমার পেটে মেঘের গর্জন শুরু হয়ে গেল। পেট যানান দিচ্ছে তোমার এখন একটা বিশেষ ঘরে যাওয়া উচিত। যেকোন মুহুর্তে বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হয়ে যেতে পারে। বাসের মধ্যে এর
চেয়ে ব্রেকিং নিউজ আর কিছু হতে পারে না। তবে আমি শান্ত রইলাম, মুখে ভদ্রতার হাসি রেখে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলাম। কিন্তু পেট বড়ই বেয়াড়া। বাচ্চা ছেলের খেলনা কিনতে চাওয়ার মত সেও বলছে, এখনি এখনি এখ্‌খুনি। আমিও তাকে অনুনয় বিনয় হুমকি ধামকি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম,বাসটা থামলে সারাদিন তোর পছন্দের জায়গাতে বসে থাকিস। । আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে আর বিদ্যুৎ
চমকানো শুরু হয়ে গেছে। আমার মুখের হাসিটা আর ধরে রাখতে পারলাম না। মাথার ভেতর অনিন্দসুন্দর মুখটাকে সরিয়ে জায়গা করে নিল ছোট্ট একটা ঘর। তার চুলের মিষ্টি গন্ধ আর নাকে আসছে না। তার মধুমেশানো শব্দ গুলো কানে ঢুকছে না। তার গভীর ঝিলের মত চোখ আমাকে আমাকে টানছে না। আমার সমগ্র সত্তা তখন অন্য ধ্যানে নিমগ্ন। শালার ড্রাইভার একটু জোরে চালা। যেই দেশের রাস্তায় এত স্পিড ব্রেকার সেই
দেশের উন্নতি কেমনে হবে। সামনের গাধারে ওভারটেক কর ছাগল। এই তখন আমার মাথায় চলা চিন্তাগুলোর খন্ডাংশ। রান্নার বুয়ার চৌদ্দ গুষ্টি উইথ পাড়াপ্রতিবেশী উদ্ধার করা শুরু করলাম। বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হল। এই দিন দেখার জন্য আমার বেঁচে থাকতে হল।"কত দূর আর কত দূর বলওওও মাআআআআ" গানটা মনে হতে লাগল এই সময়ের জন্যই রচনা করা।এ যেন অন্তহীন যাত্রা। পেটের ভেতর তখন জলোচ্ছ্বাসের বিশাল
বিশাল ঢেউ আছড়ে পরছে। সুভাষিনী বলল, আর ইউ ওকে? নাহ আর পারলাম না এক লাফে উঠে গেটে হেলপারকে বললাম ভাই বাস থামান, নামব। হেলপার দাঁত কেলিয়ে বলল, স্যার অয়েট করুম নি? আমি মনে মনে ওর দাঁত গুলো গুড়াঁ করতে করতে বললাম ,না। এর পর আর বাসে ফেরত আসা যায় না। ব্যাপারটা প্রেমিকার বউভাতে বিরিয়ানী খাওয়ার চেয়েও অপমানকর। শেষ বারের মত সুনয়নার দিকে তাকিয়ে এক লাফে নামলাম প্রায় চলন্ত বাস থেকে।
চোখের সামনে একটা স্কুল ঘর দেখলাম। আমি তখন উছাইন বোল্ট আর স্কুল ঘরটা টাচ মার্ক। যে করেই হোক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতে কবে।

বেশ কিছুক্ষন পরে....

আমি রিক্সাতে উঠে বাকি পথটা যাচ্ছি। পথে যা দেখছি তাই ভাল লাগছে, নীল আকাশ,সবুজ গাছ,স্পিডব্রেকার। ছোটবেলায় শোনা নীতিবাক্যটা মনে পড়ল,"কে বলে ভাই স্বর্গ নরক বহুদূর....."শেষের দিকে অবশ্য নিজস্ব কিছু শব্দ ব্যবহার করলাম। রিক্সাওয়ালা মামারে বললাম,"একটা গান ছাড়েন মামা মোবাইলে।" সহযাত্রীর জন্য মনটা সামান্য আনচান করছে কিন্তু কি আর করা যাবে সব সিনেমার তো আর হ্যাপি এন্ডিং হয় না।
অবশ্য এন্ডিংটা ব্যক্তিগতভাবে হ্যাপি বলা যায়। শেষটায় যদি সময়মত........না আর ভাবতে পারছি না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×