হাটার সময় আমার ছায়ার দিকে তাকালাম।একটা নয় দুইটা ছায়া আমার পেছনে হেটে আসছে। ভাল করে তাকালাম, কারন আমার পকেটে প্রাইভেটে পাওয়া টাকা। সামনের মাসের জন্য আমার ভাঙ্গা নৌকার ছেড়া পালের কাজ করবে। তাই এখন আমার পাশে দুইটা ছায়া অবশ্যই সন্দেহজনক। আমি আড়চোখে তাকালাম,সরাসরি তাকানো ঠিক হবে না। তাহলে ছায়ার মালিক কোন ছিনতাইকারী হলে আর রাখঢাক না রেখে পেটে এসে সরাসরি পেটে চাকু ধরে বলবে এই মাসের প্রাইভেটের টাকা দে। নাহ তার তো জানার কথা না যে আমি প্রাইভেট পড়াই। তবে বড় একটা ভুল হয়ে গেল। উচিত ছিল টাকাটা আন্ডারপ্যান্টের পকেটে রাখা। ছাত্রীর বাসায় যেয়ে বাথরূম কোথায়? জিজ্ঞাসা করা কি খুব অভদ্রতা হত? নাহ, এখন ভেবে কোন লাভ নেই। আসলে ভদ্রভাবে সব দিয়ে দেওয়াটাই ঠিক হবে। অবশ্য সব বলতে এই মাসের টাকাটাই আছে। আর শার্টের পকেটে একটা ছেড়া পাঁচ টাকার নোট আছে। একটু বেশিই ছেঁড়া। তিনটা দোকানে সিগারেট কেনার জন্য এই পাঁচ টাকা দিলাম দুই দোকানে বলল পাল্টায় দেন। আর এক দোকানদার সিগারেট টা ধরানোর ঠিক আগে বলল, খারান এই ট্যাকায় বিড়ি হইব না ,'হের থন এইডার মইদ্যে তামুক হান্দায়ে হোগা টানেন।' অপমানকর কথা। উচিত ছিল ভয়ংকর কিছু করা। না থাক আজ টাকাটা হাতে পেলে ওর দোকান থেকে এক প্যাকেট বেনসন কিনে দেখায় দেওয়া দরকার। কিন্তু হাইজ্যাকার যদি এখন সব নিয়ে যায় তবে জবাবটা আর দেওয়া হবে না। হাইজ্যাকারকে যদি বলি, ভাই এক প্যাকেট সিগারেট খাব কিছু টাকা দয়া করে দিবেন? নাহ সিগারেট খাওয়ার জন্য এরা টাকা দিবে না। এরা যে জিনিসটা ফেরত দেয়, মোবাইলের সিম। আমার মোবাইল নাই। এইটা শুনলে হয়ত তারা বিশ্বাস করবে না। চড়থাপ্পরও দিতে পারে। কিছু করার নেই। আমি পূর্ন দৃষ্টিতে ছায়া দুটোর দিকে তাকালাম। উহু, ফলস এলার্ম। দুইটাই আমার ছায়া। একটা রোডল্যাম্পের আলোতে আমার যান্ত্রিক ছায়া আরেকটা চাঁদের আলোয় আমার ছায়া। একটা সামনে লম্বালম্বি অনেক বড় আরেকটা আমার পাশে। টাকাটা যখন আমার কাছেই আছে মেছে যাওয়ার আগে বেশ কিছু জিনিস করতে হবে। হঠাৎ নাকে এসে একটা গন্ধ ধাক্কা মারল। তাকিয়ে দেখলাম বিরানি হাউজের সামনে দাঁড়ানো আমি। আমার পেটে বেশ জোরে মোচড় দিয়ে উঠল। কারন অবশ্য আছে। আজ ছাত্রীর আম্মু কিছু খেতে দেননি। প্রতিদিন দেন আজ দেননি। আমার পকেটের যে অবস্থা ছিল, আজ বেতন না দিলে আমাকে হয়ত বলতে হত,নাস্তা দিবেন না? তাদের অবশ্য জানার কথাও নয় যে তাদের প্রাইভেট টিউটর তাদের দেওয়া চানাচুর বিস্কিট আর চা দিয়ে ডিনার করেন। নাহ মাথা থেকে বিরিয়ানির গন্ধটা বের করতে হবে। কালকে মাকে হাজার তিন মানি অর্ডার করতে হবে। বাকি টাকা মেছভাড়া। অন্তত দুশটা টাকা হাতে রাখতে হবে। কাল ওকে নিয়ে একটু রিকশায় ঘুরাঘুরি করব। মাসে দুই তিনবারের বেশি ওকে নিয়ে বের হওয়া হয় না। ওর কেনাকাটার বাতিক খুবই বেশি। বড় বড় মল গুলোতে দোকানগুলোর দিকে যেভাবে তাকায়। ইচ্ছা হয় ব্যাগভর্তি টাকা এনে ওর হাতে দিয়ে বলি আজ এই ব্যাগের সবটাকার কেনাকাটা করবা। কোন জিনিস পছন্দ হলে যত খুশি হয় তার দামের ট্যাগের দিকে তাকিয়ে চুপসে যায়। ওহ আর একটা চটপটির দোকানও কিনতাম। একটা মানুষ ঝালে হাপাতে হাপাতে কিভাবে বলতে পারে মামা আরেক প্লেট দেন, এটা ভাল করে বোঝা দরকার। মেছের কাছে চলে আসছি হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে। বাড়িওয়ালার ছেলেটা এখানে আড্ডা দেয়। ছেলেটা মেধাবি ছিল। যেকোন অঙ্ক তিন চার ভাবে করত। ইদানিং দেখি রাতের বেলাও ঘোরাফেরা করে। ওর আব্বাকে বলতে হবে ব্যাপারটা।
দাদা ভালো আছেন?
হ্যাঁ। তুমি ভালো?
হ্যাঁ। আমিও ভালো। বেশ ভালো।
ওর হাসিটা সুস্থ মানুষের হাসি না। সত্যি বলতে মানুষের হাসি না।
আমি নিজের অজান্তে পকেটে হাত দিলাম।
বিরিয়ানির গন্ধটা এখনও নাকে ধাক্কা দিচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১২