আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষপটের একটা সময় ছিল শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতো দেখতো। আর ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেও এই বুঝ ছিল যে বাবা-মার পরেই শিক্ষকের মর্যাদা। সময়ের স্রোতে ডিজিটালে টাল-মাতাল দেশ। বানের বাতাসের তুড়ে কোথায় যেন ভেসে গেছে শিক্ষকের সেই মহান আদর্শ। দুর্ভাগ্য,পরিমল ধাচের শিক্ষকরা আখড়া গেড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। নিষ্ঠাবান শিক্ষক এখনো যারা আছেন তাদের শতকরা হার নেহায়েত কম-ই মনে হয়। আর ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক শিক্ষক সম্মানও ক্রমশো কমছে। প্রায়ই পত্রিকায় দেখি অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে তমুক শিক্ষককে পেটালো শামুক দলের ছাত্রকর্মীরা।
একজন ভালো মানের শিক্ষক একজন ছাত্র/ছাত্রীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। "তেরে জমিন পার" মুভিটা দেখে চোখের জলে শিখেছি অনেক কিছু। কিভাবে একজন শিক্ষক বন্ধুর মতো মিশে গিয়ে একজন অটিষ্টিক শিক্ষার্থীর ভেতরকার প্রতিভা বের করে আনে, কিভাবে একজন শিক্ষার্থীকে কখনোই বুঝতে পারে না এমন বিষয়কে সহজ করে বুঝায়, কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর ভেতরে "আমি পারবোই" ই শিখা প্রজ্জলন করে, একজন শিক্ষার্থী কিভাবে জিরো থেকে হিরো বনে যায় একজন ভালো মানের শিক্ষকের আদর্শিক ছোঁয়ায়।
প্রবাসে আসার পূর্বে সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষুদে শিক্ষক থাকার সুবাধে দেখেছি এক একজন ছাত্র-ছাত্রী এক এক ধরনের। একই বিষয় কেউ দ্রুত বুঝতে পারছে তো কেউ তা বুঝতে অনেক সময় নিচ্ছে আবার কেউ বুঝতেই পারছে না। বিষয়টা এমন না যে প্রথম জন খুব মেধাবী পরের জন মধ্যম মেধাবী আর শেষের জন বোকার হদ্দ। আসলে প্রত্যেকের মস্তিষ্কেই নিউরন সেল আছে, প্রাকৃতিক ভাবেই কারোটার কার্যক্ষমতা বেশি কারোটা কম। হয়তো প্রথম ছাত্রের ক্ষেত্রে যেইটা একবার বুঝলেই বুঝে যাচ্ছে সেটা হয়তো দ্বিতীয় জনের ক্ষেত্রে দুইবার বুঝানো লাগবে আর তৃতীয় জনের হয়তো বাস্তব ভিত্তিক উদাহরন সহ বুঝাতে হবে- এই যা।
ইস! যদি আমাদের দেশে এমন শিক্ষকের শতকরা হার বৃদ্ধি পেতো! স্বপ্ন দেখি একদিন আবারো অতীত ফিরে আসবে। শিক্ষকরা ফিরে পাবে তাদের পূর্ব-পূর্নমর্যাদা, ছাত্র-ছাত্রী ফিরে পাবে পিতা-মাতা সম অভিভাবক। আর আদর্শিক শিক্ষকতায় দেশের নবপ্রজন্মের মেরুদন্ড শক্ত হবে ক্রমান্বয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩১