১.
অনুষ্ঠানশেষে ভোজসভায় বেখেয়ালে গরম চা পড়ে গিয়েছিল। ঘরে এসে সে ঘটনাই বলছিলাম।
সবাই একযোগে প্রশ্ন করলো:
-তারপর কী করলে?
শুধু মা জানতে চাইলেন:
-বাবা! কোথায় পড়েছে দেখি, পুড়েটুড়ে যায়নি তো!
২.
-আব্বু! নানান ঝামেলায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। সারাক্ষণই উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকি, এই বুঝি নতুন কোনও বিপদ এলো!
-বিমানে করে যখন এলে, তুমি কি পাইলটকে দেখেছো?
-জ্বি না।
-কিন্তু তোমার জানা ছিল একজন পাইলট বিমানটা চালাচ্ছেন, তাই তুমি নিশ্চিন্ত ছিলে! এমন নয় কি?
-জ্বি!
-তাহলে তুমি তা জানোই, জীবনটা চালাচ্ছেন আল্লাহ। তার হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছো না কেন?
৩.
বাশশার আসাদ: হ্যালো! আমি অত্যন্ত শোকাহত! এতগুলো মানুষ মারা গেল!
ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ: ধন্যবাদ! আমাদেরকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে নামতে হবে।
বাশশার: জ্বি। সিরিয়াবাসী আপনার সাথে থাকবে। তারাও ভয়ংকর সন্ত্রাসের শিকার!
ফ্রাঁসোয়া: তা বটে!!!
৪.
-হুযুর! আমি বড়ই অলস। আমল করতে মন চায় না। বয়েস হয়েছে তবুও ইবাদতে মতি হয় না! ঘরভাড়ার রোজগারে খাইদাই, ঘুরিফিরি।
-ভালোই তো সুখে আছেন!
-আচ্ছা, এভাবে কোনও কিছু না করেই সওয়াব পাওয়ার কোনও রাস্তা নেই?
-তা আছে!
-বলুন, বলুন না!
-ভালো ভালো কাজের নিয়ত করবেন। সব সময়। প্রতিদিনই। কাজটা না করতে পারলেও সওয়াব পাবেন। বিনা পুঁজিতে লাভ!
-তাই!
-জ্বি, হাদীসে আছে!
৫.
ওমর: তোমাকে মিসরের গভর্নর নিযুক্ত করলাম। এখন বলো, তোমার কাছে কোনও চোরকে নিয়ে আসা হলে, কী করবে?
আমর বিন আস: তার হাত কেটে ফেলবো।
ওমর: তাহলে মনে রেখো, আমার কাছে মিসর থেকে কোনও ক্ষুধার্ত এলে, তোমার হাত কেটে ফেলবো!
৬.
কায়েস বিন সা‘দ। একজন দানবীর। কারীম। অসুস্থ হয়ে পড়লেন। একা একা শুয়ে আছেন। অল্পক’জন ছাড়া কেউ দেখতে এলো না।
-কী ব্যাপার! কেউ দেখতে আসছে না যে?
-বেশির ভাগ মানুষই তো আপনার কাছে ঋণী! লজ্জায় আসতে পারছে না!
-ঘোষণা দিয়ে দাও! সবার ঋণ মওকুফ করা হলো!
.
বিকেল নাগাদ আগত দর্শনার্থীদের ভীড়ে দরজা ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো!
৭.
-শায়খ! আমার ছেলেসন্তান নেই, মৃত্যুর পর আমার জন্যে দু‘আ করবে কে? সদকায়ে জারিয়া করার মতোও টাকাপয়সাও নেই, আমি কী করতে পারি?
-তুমি তাহলে একটা কাজ করতে পারো!
-কী কাজ?
-তুমি তাহলে ‘গুনাহে জারিয়া’ রেখে যেও না।
৮.
-কী করছো?
-ফেসবুক চালাচ্ছি।
-সারাদিনই দেখি, এ-নিয়ে বুঁদ হয়ে আছো, টাকা খরচ হয় না?
-জ্বি না। একদম ফ্রি!
-তাই! মনে রেখো, তুমি যখন একটা পণ্য বিনামূল্যে গ্রহণ করবে, তখন প্রকারান্তরে তুমিই ‘পণ্যে’ রূপান্তরিত হলে!
৯.
-আমি গুনাহ করলে কি লিখে রাখা হবে?
-হবে।
-তাওবা করলে?
-গুনাহটা মুছে যাবে।
-আবার গুনাহ করলে?
-লেখা হবে।
-আবার তাওবা করলে?
-গুনাহটা মুছে যাবে।
-আমি যদি আবারও গুনাহটা করি?
-আমলনামায় লিখে রাখা হবে!
-যদি আবারও তাওবা করি?
-গুনাহ মুছে যাবে!
.
বেদুইন: এভাবে কতোক্ষণ মোছা হবে?
নবিজী সা.: বান্দা ইস্তেগফার করতে বিরক্ত হওয়া পর্যন্ত, আল্লাহ ক্ষমা করে যেতে থাকেন।
১০.
হযরত! চারদিক থেকে এত বিপদ, এত চাপ! কী যে করি, আর সহ্য হয় না।
-যায়তুন তেল বের হয় কিভাবে জানো?
-চিপলে।
-হ্যা, যে কোনও ফল চিপলেই সুস্বাদু রস বের হয়ে আসে। তদ্রুপ বিপদাপদ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ধরনের ‘চাপ’।
এর মাধ্যমে তোমার ভেতর থেকে আরও সুন্দর কিছুর জন্ম হবে। তুমি আরও শুদ্ধ হবে। তুমি আরও পরিণত হবে! তোমার দামও বেড়ে যাবে!
১১.
নাস্তিক: ইসলাম ধর্মই যদি সঠিক হয়, তবে পৃথিবীর সবাই মুসলমান নয় কেন?
আস্তিক: তাহলে কি নাস্তিকতাই সঠিক?
নাস্তিক: আলবৎ সঠিক!
আস্তিক: তাহলে পৃথিবীর সবাই নাস্তিক নয় কেন?
১২.
হুযুর! আমার মেয়ের জন্যে অনেক প্রস্তাব আসছে। কাকে জামাই হিশেবে বেছে নিবো বুঝতে পারছি না!
-একজন মুত্তাকী দেখে বিয়ে দিন। সে আপনার মেয়েকে ভালোবাসলে রানী করে রাখবে। আর কোনও কারণে মেয়েকে পছন্দ না হলে, আল্লাহর ভয়ে অন্তত যুলুম করবে না!
১৩.
উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মদীনাবাসীকে বায়তুল মাল থেকে বন্টন করে দিচ্ছিলেন। একজন কৃতজ্ঞতাবশত বলে উঠল:
-জাযাকাল্লাহু খাইরান ইয়া আমীরাল মুমিনীন!
.
উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাথে সাথে বলে উঠলেন:
-কী আশ্চর্য! আমি তাদেরকে তাদের সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছি, আর তারা ভাবছে আমি তাদেরকে অনুগ্রহ করছি!
১৪.
ওস্তাদ: লুকিয়ে লুকিয়ে কী পড়ছো?
ছাত্র: একটা ম্যাগাজিন।
ওস্তাদ: দেখো বাছা! অরুচিকর খাবার খেলে যেমন তোমার পেট নষ্ট হবে, তদ্রুপ অরুচিকর বই পড়লেও তোমার ‘মাথা’ নষ্ট হবে!
১৫.
সামরিক আদালত: কেন নিরীহ সেনাটাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছো?
ফিলাস্তিনী: কারণ আমি খুবই গরীব। আমার কাছে পিস্তল কেনার টাকা নেই!
১৬.
-আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? ভাইকে নাকি বন্ধুকে?
হাকীম: ভাইকে ভালোবাসি যদি সে বন্ধুর মতো হয়। বন্ধুকে ভালোবাসি যদি সে ভাইয়ের মতো হয়।
১৭.
হুযুর ! আমি কিতাব-পত্র পড়ি, কিন্তু কিছুই আমার মনে থাকে না।
-ধরো এই খেজুরটা ভাল করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলো।
-খেয়েছি।
-তুমি কি বলতে পারবে, মানুষ কেন খায়?
-শরীরে শক্তি পাওয়ার জন্যে, বেঁচে থাকার জন্যে, পুষ্টি পাওয়ার জন্যে। শরীর বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যে।
-তুমি আমাকে দেখাও তো, তুমি খেজুরটা খেয়ে কতটুকু পুষ্টি লাভ করেছো?
-সেটা তো খালি চোখে দেখানো সম্ভব নয়।
-এবার বুঝবে, দেখো তুমি খেজুরটা খাওয়ার পর, এটার নির্যাস তোমার শরীরে গোশত-হাড়-চুল-নখ-কোষ-স্নায়ু-চামড়া ইত্যাদিতে প্রবৃদ্ধি ঘটাবে। কিন্তু তুমি সাথে সাথে টের পাবে না।
তদ্রূপ তুমি যখন একটা বই পড়বে:
সেটার পাঠনির্যাসও তোমার মেধা-মননে ছড়িয়ে পড়বে।
তোমার ভাষাজ্ঞানকে সমৃদ্ধ ও আর বিশুদ্ধ করবে।
তোমার জানাশোনার পরিধিকে বিস্তৃত করবে।
তোমার আমল-আখলাককে উন্নত আর বিশুদ্ধ করবে।
তোমার সাহিত্যবোধকে চাঙ্গা করবে।
এতসব হবে, কিন্তু টেরও পাবে না।
১৮.
সাংবাদিক: আপনারা এত দীর্ঘকাল কিভাবে দাম্পত্য জীবনকে টিকিয়ে রেখেছেন?
স্ত্রী: আমাদের যুগে কোন কিছু ভেঙে গেলে, সেটাকে মেরামত করা হতো, ফেলে দেয়া হতো না।
১৯.
আমাদের ফল বাগানে বাবা চোখ কলমের মাধ্যমে একটা লিচু গাছের উপর কাঁঠাল গাছ লাগিয়েছিলেন।
গাছে যখন ফল এলো, কাঁঠাল লিচুকে কথায় কথায় শুধু বলে, তুমি আকারে এত ছোট কেন?
লিচু সে কথার কোনো উত্তর না করে জানায়, বাইরেরটা আমাদের একই।
কাঁঠালের কথা শুনে লিচু গাছ কেবল মৃদু হাসে।
২০.
হুযুর খাস মজলিসে বয়ান করছেন। একজন প্রশ্ন করলো:
-হুযুর! আপনি অনেক দিন হলো আমাদের মসজিদে আছেন, কিন্তু আপনার সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। জীবন নিয়ে আমাদের কিছু বলুন না। এখানে আমরা ছাড়া তো আর কেউ নেই।
.
হুযুরের ইচ্ছে হলো, শ্রোতাদের সাথে একটু ‘মুযাক’ করবেন। তিনি বললেন:
-আমার জীবনের সেরা সময়টার কথা বলি?
-জ্বি বলুন!
-আমার জীবনের সেরা সময়টা কেটেছিল এক মহিলার কোলে! বিয়ের আগে!
.
শ্রোতারা সবাই মুখচাওয়াচাওয়ি করছে। কয়েকজনের তো চোখ বড় বড় হয়ে গেল। হুযুর কী বলছেন এসব! হুযুর এবার বললেন:
-এত অবাক হওয়ার কী আছে? আপনারাও তো মায়ের কোলেই বড় হয়েছেন, তাই নয় কি?
.
সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। একজন তো কেঁদেই দিল। গতসপ্তাহে তার মা মারা গেছে।
.
পরদিনও খাস মজলিস বসলো। হুযুর দেখলেন নতুন বিয়ে করা মুরীদ উপস্থিত নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল সে এখন হাসপাতালে আছে। দুদ্দাড় করে সবাই ছুটে গেলো। সবার চোখ ছানাবড়া! হাতে-পায়ে ও মাথায় ব্যান্ডেজ, শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে।
.
কি রে! তোমার এ-অবস্থা কে করেছে?
-হুযুর! আপনিই এটার জন্যে দায়ী!
-আমি কিভাবে করলাম? তোমার সাথে তো আমার গত চব্বিশ ঘণ্টাই দেখা হয়নি?
- তাহলে শুনুন! গতকাল আপনার গল্প শুনে আমারও ইচ্ছে হলো, স্ত্রীর সাথে একটু দুষ্টুমি করতে। সে তখন আমার জন্যে বড় মগে করে চা আনছিল, বড় একটা ট্রেতে হরেক রকমের নাস্তাও ছিল। আমি তাকে বললাম:
-মনটা খুবই খারাপ আজ!
-কেন কেন?
-বিয়ের আগের সুন্দর সময়ের কথা মনে পড়ছে!
-খুলে বলো!
-তোমার সাথে বিয়ের আগে, এক মহিলার কোলে মাথা রেখে আমার জীবনের সেরা সময়গুলো কাটিয়েছিলাম।
.
হুযুর! এরপরের কথা আমার আর মনে নেই। সকালে ঘুম থেকে জাগার পর দেখি এখানে কেবিনে শুয়ে আছি। হাত-পা পোড়া, মাথাটা ফাটা!
(সংগ্রহীত গল্প - লিখেছেন আতিকউল্লাহ)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭