somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

...ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরা বা Sleep Paralysis...

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলা আমি স্বভাব সুলভ ভাবে চিত হয়ে শুইতাম। দাদী এইভাবে শোয়া পছন্দ করতো না। দাদী আমাকে ডান কাত হয়ে শুতে বলতেন। তার কথায় তুড়িতে উড়িয়ে যেই সেই চিত হয়ে শুইতাম। বিরক্ত হয়ে দাদী বকা দিয়েই বলতো, "আরে গোলাম রাতে তো তোরে বোবায় ধরব" ভয় পেয়ে দাদীর দিকে কাত হয়ে জিজ্ঞাস করতাম দাদী বোবায় ধরা কি?

আমার এমন আগ্রহী প্রশ্নে দাদী অনেক মজা পায়। আদরে আব্লুত হয়ে আমার মাথায় ইলিবিলি কাটতে কাটতে তার জানা কল্প গল্পটি পটপট করে বলতে থাকে আমার কর্ণের কিনারে। দাদীর মুখেই প্রথম শোনা বোবায় ধরা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

দাদীর ভাষ্যমতে, যদি চিত হয়ে কেউ শোয় এবং তার পায়ের বৃদ্ধাঙুল ও নাকে ডগা বরাবর হয় তবে বোবায় ধরতে পারে। বোবা হচ্ছে বদ জীন জাতীয় কেউ।এভাবে চিত হয়ে শোয়াকে তারা নাকি পছন্দ করেন না। তাই ঐ অবস্থায় কেউ শুয়ে থাকলে কুৎসিত কালা দৈত্যকার বদ জীন তার বৃহদাকার ওজন ওয়ালা দেহ নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকা ব্যাক্তির শরীরের উপর চড়ে তার মুখ চেপে ধরে, তার গলার টোন টিপে ধরে। ঐ সময় বোবায় আক্রান্ত ব্যাক্তি নড়াচড়া-কথাবার্তা বলতে পারেননা। সুভাগ্যক্রমে যদি ঐ সময় কেউ তাকে সজাগ করে দিতে পারে তাহলে বেঁচে যেতে পারে নচেৎ কেল্লা ফতে-এক্বেবারে পরপারে।

দাদীর কাছ থেকে বোবায় ধরার এই ভয়ঙ্কর বর্ননা শোনার পর থেকে চিত হয়ে শোয় তো দূরের কথা ডান কাত হয়ে শুয়ে অনেক দোয়া-দুরুদ পরে ঘুমাতাম। সেই অভ্যাস এখনো আছে। এখন আর চিত হয়ে শুলে ঘুম আসে না তাই অটো কাত হয়ে ঘুমাই।

এই কাল্পনিক গল্পের ভয়টা আমার ভেতর অনেক বছর ছিল। খুব সম্ভ্যবত অনার্সে পড়ার সময় এই সম্পর্কে প্রয়াত মনবিজ্ঞানী ড. এম এ ফিরোজের লেখা একটা আর্টিক্যাল থেকে প্রথম এই সম্পর্কে সম্মক ধারনা পাই। তখন রাগে ইচ্ছে হচ্ছিল যে দাদীকে তার কল্পিত কাল বোবা ধরা জিনের মতো গলা টিপে ধরে জিজ্ঞাস করি এই উদ্ভুট গল্প আপনাকে কে বলছে বলেন এক্ষনি ঐ বদবখতের মুখোমন্ডল সিরিজ কাগজ দিয়ে ডলে দিব।

আচ্ছা যারা এখনো এই বোবা ধরা সম্পর্কে কোন ধারনা পান নাই তাদের জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে এই ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

বোবায় ধরার রহস্য উম্মোচনের আগে আমাদের ঘুম সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নেওয়া দরকার। ঘুম নিয়ে যারা গভেষনা করেছেন তাদের মতে মোটা দাগে ঘুমের দুইটা স্তর। ১. হালকা ঘুম ২. গভীর ঘুম. খেয়াল করবেন আমরা যখন ঘুমাতে যাই তখন প্রথম কিছুক্ষন প্রায় সজাগই থাকি পরে আস্তে আস্তে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। মজার ব্যাপার হলো এই গভীর ঘুম অবস্থায় কিন্তু আমরা সারারাত পার করিনা। আনুমানিক মোট ঘুমের ৭৫% গভীর ঘুম হলে ২৫% হালকা ঘুমে থাকি।

এবার আসুন দেখি বোবায় কিভাবে ধরে -

যখন গভীর ঘুম থেকে কোন কারনে কেউ হঠাৎ জেগে উঠে তখন হয়তো তাকে আবিষ্কার করবে যে সে তার হাত-পা নাড়াতে পারছেনা, কথা বলতে পারছেনা। এই অবস্থায় সে স্বাভাবিক ভাবে ভয় পেয়ে যায়। অনুভূতি এমন হয় যেন কেউ বুকের উপর চেপে বসেছে, নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছেনা, হাত-পা পাথর হয়ে আছে।ঠিক তখনই মস্তিষ্ক তাকে মনে করিয়ে দেয় পূর্বে থেকেই তার জানা ভৌতিক সেই বোবা জীন কে।ঐ অবস্থার হ্যালোসেশনে সে সেই কল্পিত বোবা জীনকে দেখতেও পারে যেমন বর্ননা শুনেছিল তেমনই।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এটাকে বলা হয় Sleep Paralysis. বিশেষজ্ঞদের মতে বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস তেমন কিছু না এটি একটি ইন্দ্রিয় ঘটিত ব্যাপার।আমরা যখন ঘুমের ঘোরে কোন কারনে এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরতে যাই, ভয়ঙ্কর কোন স্বপ্ন দেখে আঁৎকে উঠি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে যায় কিন্তু আমাদের শরীর তখনও ঘুমের মধ্যে থাকে। আর ঠিক তখনই এই ঘটনাটা ঘটে মানে Sleep Paralysis হতে পারে।

যাইহোক, এতে ভয় পাবার কোনই কারন নাই। এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। অযথা ভয় পেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করে পরপারে যাওয়া সহজ হতে পারে। যারা দ্রুত পরপারে যেতে আগ্রহী তারা এখনো বোবা ধরায় বিশ্বাস রাখুন, কেমন?

আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই কেন Sleep Paralysis হয় -

১. অপর্যাপ্ত ঘুম: যারা গভীর রাত জেগে কাজ করে, টিভি দেখে তাদের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত ঘুম পরিলক্ষিত হয় এবং Sleep Paralysis হতে পারে।

২. অত্যাধিক মানসিক চাপ: যারা বিভিন্ন কারনে অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকেন তাদের Sleep Paralysis হতে পারে।

৩. অত্যাধিক ক্লান্ত শরীর: যারা সারাদিন অত্যাধিক শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করেন তাদের ক্ষেত্রে Sleep Paralysis হতে পারে।

৪. স্বপ্ন: ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর কোন স্বপ্ন দেখলে যেমন সাপে কামড়ানোর জন্য দৌড়াচ্ছে, কেউ খুন করার জন্য দৌড়াচ্ছে, উচু কোন ভবন থেকে পড়ে যাচ্ছে তখন Sleep Paralysis হতে পারে।

৫. তাছাড়া দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা, খিচুনী রোগ হলেও Sleep Paralysis হতে পারে।

আচ্ছা এ তো গেলো Sleep Paralysis হবার কারন সমূহ। তাহলে এ থেকে বেঁচে থাকার উপায় কি? সহজ উপায় হচ্ছে বোবায় ধরা বিশ্বাস করে কাল্পনিক দৈত্যকার জীনের ভয়ে পরপারে যাওয়া মানে লাইফ টাইম Sleep Paralysis (ফান)।

সমাধান:

১. কমপক্ষে ৭/৮ ঘন্টা ঘুমানো।

২. গভীর ঘুম হবার জন্য রাতে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করে ঘুমানোর ১০ মিনিট আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়া।

৩. নিজেকে অযথা টেনশন থেকে মুক্ত রাখা

৪. টাইম ম্যানেজমেন্ট এ দক্ষ হওয়া যাতে রাত জেগে কাজ করতে না হয় আর বিনোদনের জন্য রাত জেগে টিভি দেখার অভ্যাস ত্যাগ করা।

৫. ঘুমানোর আগে অযু করা, ঘুমানোর আগে কিছু মাসনুন দোয়া আছে সেগুলো পড়া, ঘুমের দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দিয়ে ঘুমানো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×