বিশ্ব নারী দিবসঃ কিছু জানা-অজানা কথা
করুণা বেগম, শাহানা, ফোরকান বেগম, শিরিন বানু, মনিকা মতিন , কাঁকনবিবি, তারামন বিবি, মীরা ও হালিমা খাতুন এদের নাম কেউ শুনেছেন কি ? আমি জানি আমার মত শিক্ষিত বা সুশিক্ষিত যারা অনলাইনে দেশকে ভালবেসে, একুশে ফেব্রুয়ারীর দিন মাথায় ফুলের মুকুট পরে, পহেলা বৈশাখের দিন ৮০০টাকা প্লেটের পান্তা ঈলিশ খেয়ে, ২৬শে মার্চের দিন সজোরে ইংলিশ-হিন্দি গান বাজিয়ে, ১৬ই ডিসেম্বরে September in Jessore Road কবিতা পাঠ ও গানটি গভীর মনযোগে শুনে দেশের ঐতিহ্যের নড়বড়ে দেওয়াল টিকিয়ে রেখেছেন তারা এই নামগুলো শুনেছেন হয়তো বাড়ির কাজের বুয়া বা গ্রামের কারও নাম হিসাবে। আপনারা জানেন কি যে সকল অকুতোভয় বীরের আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই বাংলার স্বাধীনতা অর্জিত হল তাদের মধ্যে এই নামগুলোও অন্যতম। তাহলে আমরা এতোদিন কেন জানিনা, কেন ইতিহাসে তাদের নাম নেই, কেনো কোন উপাধী তারা পায়নি ? ইতিহাসে নারী বারে বারে উপেক্ষিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অঙ্গনে নারীর অবদান-বলা যায় সর্বক্ষেত্রে, এরপরেও অনেকের নাম রয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্তরালে। কারন আর কিছু না, যা অনাদি কাল থেকে চলে আসছে, ওরা যে নারী। পুরুষ শাসিত এই সমাজে নারীদের কখনও সাফল্য বা জয়ের স্বীকৃতী দেওয়া যাবেনা। তারা তো পুরুষের অস্তিত্বের হুমকি। শুধু নারী দিবসে তাদেরকে নিয়ে কয়েকটি সভা সেমিনার, কিছু স্তুতি বাক্য পাঠ ও এসিড দগ্ধ এক বা দুটি নারীকে ফুল দেওয়ার ছবিটি ক্যামেরায় তুলে পেপারে ছাপিয়ে দিতে পারলেই দায়িত্ব কর্তব্য শেষ।
আপনারা জানেন কি, ৭১এ নির্যাতিত মা বোনের ঔরষে জন্ম নেওয়া সন্তান্দের পূনর্বাসনের জন্য তাদের সন্তান সংগ্রহ, লালন-পালন এবং বিদেশে দত্তক দেয়ার উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক শিশুকল্যাণ ইউনিয়ন। মহীয়সী নারী মাদার তেরেসা এসময়ে এসব দুঃস্থ নারীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন-আর তাঁর সংগ্রহকৃত প্রায় ৩০০ জন শিশুকে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের অনেক পরিবার দত্তক নিলেও বাংলাদেশের কোন পরিবার এগিয়ে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর আহবানে এসব নারীদের বিয়ে করার জন্য তরুণদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানালেও সাড়া পাওয়া গেল খুবই কম। এছাড়া যে সকল মা বোন অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ আর, দায়মুক্ত হতে চাচ্ছিলেন তাদের জন্য জানুয়ারি ৭২ থেকে অক্টোবর ৭২ পর্যন্ত গর্ভপাত আইন বৈধ করা হয়েছিলো। ?? আমি জানি আপনারা আমার মত ভুগোল আর ইতিহাস একসাথে পড়া মানুষ, কিভাবে এইগুলো জানবেন। আর জেনেই বা কি হবে ? প্রিয়াংকা শাহরুখের গোপন সম্পর্ক জানলেই হল, বিকজ উই আর আপডেইটেড। অনলি দ্য লুসারস এন্ড ব্যকডেইটেডস থিঙ্ক অব পাস্ট। হুহ...............
এশিয়ায় নারী শ্রমশক্তির সবচেয়ে বেশি আধিক্য চীনে। আমাদের বাংলাদেশেও সামগ্রিক বিচারে কর্মশক্তির বড় অংশটি দখল করে আছে নারীরা। মোট গ্রামীণ নারীর শতকরা ৭৭.৪ ভাগ কৃষিকাজে নিয়োজিত। ILO’র হিসাব অনুযায়ী, এদেশে নারীশ্রমিকের সংখ্যা শতকরা ৪৩ ভাগ। কিন্তু তাদের ন্যায্য অধিকারের বেলায় শিক্ষিতেরা চুপ। সৃষ্টি ও সভ্যতায় পুরুষের সাথে নারীর অবদান সমানে সমান, কোন অংশে কম নয়। পীথাগোরাস বিশ্বাস করতেন বিশ্বের সকল বস্তু সংখ্যা দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ১ সমস্ত সংখ্যার আদি, একারণে ১ দ্বারা ঈশ্বর বোঝানো হয়েছে, ২ সংখ্যাটি নারীর প্রতীক, ৩ পুরুষের প্রতীক, আর ৫ বিবাহের সংখ্যা, ৪ ন্যায়ের প্রতীক এবং ১০ হচ্ছে জাদু সংখ্যা। সুতরাং ঃ ২(নারী)+৩(পুরুষ)=৫ । নারীর অবদান কাজী নজ্রুলের মত আর কেউ মনে হয় এত দৃঢ় ও সুন্দর ভাবে বলতে পারেনিঃ
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি’।
আর রবী ঠাকুর তার আকাশ প্রদিপ কাব্যগ্রন্থে পুরুষের মুখ দিয়ে নারীর বন্দনা উচ্চারিত করে গেছেন,
‘নারীকে দিবেন বিধি পুরুষের অন্তরে মিলায়ে;
সেই অভিপ্রায়ে।
রচিলেন সূক্ষ্ম শিল্পকারুময়ী কায়া;
তারি সঙ্গে মিলালেন অঙ্গের অতীত কোন মায়া,
আজ ৮ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস । ১৮৫৭ সাল থেকে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রম থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে সেদিন গ্রেফতার হয়ে কারাগার ভোগ করেন অনেক নারী। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে - আফগানিস্তান,আর্মেনিয়া,আজারবাইজান,বেলারুশ,বুরকিনা ফাসো,কম্বোডিয়া, কিউবা,জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান,কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিনভোগ করেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শ্রদ্ধা জানাই বাংলার ইতিহাসে অন্ধগলিতে হারিয়ে যাওয়া নাম না জানা সেই বীর ও বীরাঙ্গনা মা ও বোনদের। শ্রদ্ধা জানাই নারী জাগরণের পেছনে অবিরাম ভূমিকা রেখে যাওয়া সব হার না মানা নারীসহ পৃথিবীর সকল শ্রমজীবী নারীর প্রতি। আর মনে প্রানে বিশ্বাস করি এবং নজ্রুলের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই-
সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন