somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিশপ্ত (১ম - ৫ম পর্ব)

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপন্যাস হবে কি বড় গল্প হবে তা এখনও জানি না। লিখছি। এখন পর্যন্ত আটটি পর্ব পোষ্ট করেছি। অনেকে একটানে পড়তে পছন্দ করেন। তাদের জন্য ১ম থেকে ৫ম পর্ব পর্যন্ত এখানে দেয়া হলো।

বর্ষার মাস। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। গভীর রাতে বৃষ্টি হলে ঘুম ভালো হয়। কারণ, আবহাওয়াটা খুব ঠান্ডা থাকে। কিন্তু বদরপুর গ্রামের চেয়ারম্যান, আবুল কাশেমের ঘুম ভালো হচ্ছে না। তিনি ঘুমালেই আজে বাজে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নের ধরণ প্রচন্ড ভয়ানক। তিনি দেখেন, এক বৃদ্ধ লোক সাদা রঙের পায়জামা-পানজাবী পরা। চেহারাটা ঠিক মতো দেখা যায় না। দেখতে পারার কথাও না। কারণ, বৃদ্ধ লোকটি একটি কাপড় দিয়ে মুখটি বেধে রেখেছেন। লোকটি মসজিদের দরজার সামনে দাড়িয়ে তাকে বলেন, অই কুত্তা! দাও আছে তোর কাছে? থাকলে...দাও নে....তারপর নিজের গলায় নিজে কোপ মার....মর্ কুত্তা....মর
যা দেখলেই তিনি প্রচন্ড ভয় পাওয়া শুরু করেন। তার শরীর কাঁপতে থাকে, শরীর ঘামে ভিজে যায়। শুধু এতোটুকুই দেখলে হতো। কিন্তু স্বপ্নটি ওখানেই শেষ হয় না। তিনি আরও দেখেন, সেই মসজিদটি থেকে হাজার হাজার উলঙ্গ নারী বের হয়ে ছুটতে থাকে তার দিকে। তিনি তা দেখে দৌড়াতে থাকেন আর সেই বৃদ্ধ চিৎকার করে হাসতে থাকেন। ঠিক তখনই তার ঘুম ভেঙে যায়। পানির তেষ্টায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। প্রচন্ড ভয়ে তিনি কাপতে থাকেন। অনেক সময় পর্যন্ত সেই বৃদ্ধের হাসি তার কানে বাজতে থাকে।
বেশ কয়েক রাত ধরেই তিনি এই স্বপ্নটি নিয়ে বিচলিত। আজও মধ্যরাতে এই একই স্বপ্ন তিনি দেখলেন। আর সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেলো।

বাইরে গভীর অন্ধকার। বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে নিস্তব্ধ রাত যেনো কথা বলছে। অসাধারণ এই রাতে বারান্দার ই.জি চেয়ারে বসে আছেন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।
চারটি শোবার ঘর, দুটি বারান্দার দোতালার বিশাল বাড়িটিতে তিনি একা থাকেন। একাত্তর এর যুদ্ধে তার আঠারো বয়সি মেয়ে মারা গিয়েছিল। এই একমাত্র কন্যাটিকে তিনি প্রচন্ড ভালোবাসতেন। সেই মেয়েকে হারিয়ে তিনি এক প্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তারপরও এই একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য তিনি যুদ্ধের পর আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সেই স্ত্রী সন্তান প্রসবের সময় মারা যায়। সেই সন্তানটি বেচে ছিল। কিন্তু তাকে তিনি গ্রহণ করেননি। এই ঘটনাটি ৭৩-এর দিকে। প্রায় ৩৭ বছর বলতে গেলে তিনি নিঃসঙ্গতা নিয়েই পার করে দিয়েছেন। তবে এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁর অনেক একা একা লাগে। মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে। মনে হয়, এই নিঃসঙ্গ সময়ে যদি তাঁর মেয়েটি পাশে থাকতো!!

হঠাৎ কাশেম সাহেবের মনে পড়ে কাল বদরপুর স্কুলে যেতে হবে। সেখানের একটা পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তিনি। স্কুলটিতে একটি রচনা প্রতিযোগিতা হয়েছিল। বিষয়: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সেই অনুষ্ঠানে তাকে একটা বক্তব্য দিতে হবে। তারপর বিজয়ী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দিতে হবে।
যাইহোক। তিনি বারান্দা থেকে উঠে এসে বেডরুমে ঢুকেন। চেয়ারে হেলান দিয়ে তিনি আমন্ত্রণ পত্রটি দেখতে থাকেন। খাম খুলে পত্রটি বের করেন এবং পড়েন। আর সাথে সাথেই তার মেজাজটা বিগড়ে যায়। স্বপ্ন নিয়ে ভয়ের সমস্ত ভাবনাগুলো যেনো হাওয়াতেই মিলিয়েই যায়। কারণ, এই অনুষ্ঠানে একজন বিশেষ অতিথি আছেন। যার নাম মোনায়েম মাষ্টার। ৭১-এর সময় তিনি ছিলেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর ছেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। এই কারণেই তাকে স্মৃতিচারণ করবার জন্য বিশেষ অতিথি করা হয়েছে। কিন্তু এই লোকটিকে তিনি একদম সহ্য করতে পারেন না। চেয়ারম্যান ইলেকশানের সময় এই মাষ্টার তার নামে যতসব উল্টা পাল্ট কথা বলে বেড়িয়েছে। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বলেছে, তোমরা এই কাশেমরে ভোট দিবা না.....ও হইলো রাজাকার......
ভোটে জয় পাওয়ার জন্য তাকে অনেক কাঠ-ঘোর পার করতে হয়েছিল। ডিসি অফিসে বার বার ধরনা দিতে হয়েছে। এমনকি দলের হাইকমান্ডকে খুশী রাখতে তার হিমশিম অবস্থা ছিল। অনেক কষ্টে পরে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
আবুল কাশেম কাগজ কলম নিলেন কালকের জন্য একটা স্পিচ লেখার জন্য।

সারা-রাত বৃষ্টি হওয়ার কারণে কাঁচা রাস্তা কাদা হয়ে গেছে। রফিকের মোটরসাইকেলের চাকা কিছুক্ষণ পর পর কাদায় আটকে যাচ্ছে। কিছুতেই এগুতে পারছে না। শেষমেষ কোনো উপায়ান্তু না দেখে রফিক তার পরণের জুতা খুলে মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাকে ঠেলে ঠেলে চলতে শুরু করলো।
কর্দমক্ত অবস্থায় রফিক চেয়ারম্যানের বাড়ি গিয়ে পৌছাল। তাকে দেখেই চেয়ারম্যান বলে উঠল, কি রে হারামজাদা, তোরে মোটরসাইকেল কিনে দিছি কি দেরী কইরা আসনের লাইগা।
রফিক হতাশা নিয়া বলে, চাচা কেমনে আমু। রাস্তাঘাট পেকে ভইরা গেছে। আমনেরে কেমনে নিমু আমি তো হেই চিন্তাই করতাছি।
তাদের দুজনের কথপকথনের মধ্যেই উপস্থিত হলো রফিকের সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা রওনা দিলো বদরপুর স্কুলের দিকে। কাদায় ভরা রাস্তা দিয়ে তারা যাচ্ছে। তবে মটরযানটি স্টার্ট দেয়া হয়নি। কাচা রাস্তায় চেয়ারম্যান বসে আছে মোটরসাইকেলে আর রফিক দু’হাতে হ্যান্ডেল ধরে টেনে টেনে হাটছে। আর চারপাশে ঘিরে হাটছে মিঠু, আসাদ, মতি ও দুলাল।

বদরপুর স্কুলে পুরস্কার বিতরনী শেষ হয়েছে। আপ্যায়নের জন্য হেড-মাষ্টার তার কক্ষে চেয়ারম্যানকে নিয়ে গেছেন। চেয়ারম্যান বসে আছেন হেড-মাষ্টার আ: সালামের চেয়ারে। ঠিক সামনেই দাড়িয়ে আছেন সালাম মাষ্টার।
কি মাষ্টার সাহেব, আপনার বিশেষ অতিথি দেখি আইজকা অনুপস্থিত? রাস্তায় রাস্তায় মুক্তিযুদ্ধের এতো বড় বড় কথা কইয়া বেড়ায় আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত!! ঘটনা কি?
সালাম মাষ্টার চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলেন। কিছু বলছেন না। তাকে এই প্রশ্নটি করা হবে সেটা তিনি জানতেন কিন্তু এর উত্তর তিনি কিভাবে দিবেন সেটা তিনি ঠিক করেননি। তারপরও বলে উঠলেন, জ্বি, উনি যে আসবেন না সেটা তো গতকল্যই জানিয়ে দিয়েছেন।
তাই নাকি? তো কারণটা কি বলেছেন?
সালাম মাষ্টার চুপ করে ছিলেন। চেয়ারম্যান সরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলছেন, তিনি যে আমার জন্য আসে নাই সে আমি বুঝতে পারছি। আমি খালি হুবুহু সেই বাক্যটি শুনতে চাই যেটা তিনি ব্যবহার করেছেন।
বাদ দেন না চেয়ারম্যান সাব। আসে নাই ব্যাস আসে নাই। কি দরকার আর এগুলো নিয়া কথা বাড়ানোর?
সাথে সাথেই হুংকার দিয়ে দাড়িয়ে গেলেন চেয়ারম্যান। আর বলতে শুরু করলেন, তোমার বেশী সাহস বাড়ছে মাষ্টার। তোমারে যে প্রশ্ন করছি সেই প্রশ্নের উত্তর দাও। এতো কথা পেচাইতে আমি তোমারে বলি নাই।
মাষ্টার তখন মাটিতে দিকে তাকিয়ে বলল, জ্বি উনি বলেছেন, যে অনুষ্ঠানে রাজাকার অতিথি হয়ে আসবে সে অনুষ্ঠানে আমি যাবো না। কারণ, আমি যদি সেখানে যাই তাহলে আমার ছেলের আত্মা কষ্ট পাবে।

এগুলো শোনার পর চেয়ারম্যান কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিলেন। তার সামনে হরেক রকমের খাবার এবং অর্ধেক খাওয়া সরবতের গ্লাস। এগুলো কিছুই আর তিনি স্পর্শ করেননি। উঠে চলে আসলেন সেখান থেকে।

২.

স্বন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। প্রকৃতিকে অন্ধকার কিছুক্ষণ পর জড়িয়ে ধরবে। রফিক চেয়ারম্যানের সাথে সারাদিন ছিল। এখন এই শেষ বেলায় সে তার ঘরে ফিরছে। তার মোটরসাইকেলটা চেয়ারম্যানের বাড়িতে রেখে এসেছে। রাস্তায় যে পরিমাণ কাদা জমেছে তাতে হেটেই যাওয়াই ভালো।
বাড়ি যাওয়ার পথে মোনায়েম মাষ্টারের বাড়ি পড়লো। তার খুব ইচ্ছে হলো মাষ্টারের সাথে দেখা করার। মোনায়েম মাষ্টার তারও শিক্ষক এবং খুব পছন্দের শিক্ষক। মাষ্টারের বাড়ির সামনে এসে রফিক দাড়ালো।

-স্যার কি বাড়িতে আছেন?
-আছি। কে, রফিক?
-জ্বি স্যার। আসসালুমুআলাইকুম।
সালামের উত্তর দিতে দিতে মাষ্টার তার দরজা খুললেন বললেন, আয়, ভিতরে আয়।
- স্যার কি ভালো আছেন?
- আছি বাবা। এই বয়সে আর থাকা। একা একা জীবন। বড় বিরক্তিকর। তো বাবা, তোমার কি খবর?
- আমি স্যার ভালোই আছি। চেয়ারম্যানের সাথে থাকি। ওনার দয়ায় বাইচা আছি।
মাষ্টার যেনো বিমর্ষ হয়ে উঠলেন। একটি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে রফিকের দিকে তাকালেন। এই সেই ছেলে যে তার ছাত্রদের মধ্যে সবচাইতে সৎ ছিল। তিনি বলে উঠলেন, রফিক, তুই আমার ছাত্রদের মধ্যে সব চাইতে সৎ এবং ভালো ছাত্র ছিলি। তোদের আমি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার উপদেশ দিয়েছিলাম। সবসময় বলেছিলাম, ভালো কে ভালো আর মন্দকে মন্দ বলে স্বীকার করতে। কিন্তু এখন দেখি আমার সব শিক্ষা সব উপদেশ ব্যর্থ। তোরা কেউ তা পালন করস নাই। ওই ভন্ড দেশদ্রোহীটার সাথে তোরা উঠা বসা করস। দেখলে বড় কষ্ট হয়।
কথাগুলো বলার সময় মাষ্টারের গলার স্বর কাঁপছিল। আর রফিক সব মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো শুনছিল। কিছুক্ষণ পর রফিক বলল, স্যার, আপনের শিক্ষা দিয়া তো জীবন চলে নাই। ইন্টার পাশ করলাম আর বাপটাও মইরা গেলো। আপনে তো সব দেখছেন। কি কষ্টে আমাগো দিন গেছে। জমি যা ছিল সব বেইচা দিয়া সৌদি যাওয়া পরামর্শ সবাই দিলো। তাই করলাম। মানুষ বিশ্বাস কইরা ধরলাম আদম বেপারী। হালার পুতেরা আমার সব টাকা মাইরা খাইলো। সৌদি আর যাওয়া....
কি যে কষ্টের দিন গেছে। এমনও দিন গেছে আমরা মা-পুতে দুই দিন না খাইয়া ছিলাম। এরুম বিপদের দিনে যদি চেয়ারম্যান আমার দিকে না চাইতো তাইলে আমি এতোদিনে শেষ হইয়া যাইতাম। ওনার লগে থাকি। ট্যাকা পাই প্যাট চালাই। উনার কারণে পেটে ভাত যায়। এইডাই এখন আমার জন্য বড়। উনি মানুষ কেমন আর আগে কি ছিলেন তা দিয়া আমি কি করুম।

শোন রফিক, ভন্ড লোকেরা স্বার্থ বোঝে। তার স্বার্থ যতোদিন আছে সে ততোদিন তোরে সাথে রাখবো। যেদিন তার স্বার্থ ফুরাইয়া যাইবো সেদিন তোরে সে ছুইড়া ফালায়া দিবো।
একটা কথা মনে রাখবি। দেশ হইলো মা’র মতো। যে একদিন এই মারে বেচার চেষ্টা করছে সেখানে তোর মতো রফিক তার কাছে কিছুই না।

রফিক বিদায় নিলো মাষ্টারের কাছ থেকে। রওনা দিলো তার বাড়ির দিকে। তখন প্রকৃতি পুরো অন্ধকার।

রফিককে বিদায় দিয়ে মোনায়েম মাষ্টার তার শোবার ঘরে ঢুকলেন। দুকামরার এই নড়বড়ে ঘরটিতে তিনি একা থাকেন। তার স্ত্রী বহু আগে মারা যান। একটিমাত্র পুত্র সন্তানের বয়স তখন ছিল ৪ বছর। সেই ছেলেকে তিনি একাই কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। এই ছেলে আর স্কুলে শিক্ষকতা নিয়েই ছিল তার জগত।
এক সময় তিনি বদরপুর স্কুলের হেডমাস্টার হয়ে যান। সেই সময়টি ছিল ১৯৭১। সেই উত্তাল সময়টিতেই তিনি হেডমাষ্টার হন। আর তখন তার ছেলে মো: রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বদরপুরে রাসেলই ছিল একমাত্র ছেলে যে কিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছিল।
তো, রাসেল সেই উত্তাল দিনগুলোতে বাবাকে নিয়মিত চিঠি লিখতো। যার বেশীরভাগই ছিল সেই সময়কার রাজনৈতিক অবস্থা বিশেষ করে ঢাকার রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে। বলা যায়, ছেলের মুক্তমণা চিন্তায় তিনি মুগ্ধ ছিলেন। ছেলের দেশপ্রেমে তিনি গর্ববোধ করতেন। রাসেলের প্রতিটি চিঠি তিনি এখনও স্ব-যত্নে রেখে দিয়েছেন। প্রায়ই তিনি এগুলো বের করে পড়েন। আজও তার ইচ্ছে হলো পড়তে। এই চিঠিগুলো পড়লে বৃদ্ধ মাষ্টারের মধ্যে আবারও লড়াই করার প্রেরণা জেগে ওঠে। যেমন, যুদ্ধের আগে একটি চিঠিতে সে লিখেছিল,

বাবা,
আশা করি তুমি ভালো আছো। আমিও খুব ভালো আছি। একটি নতুন দেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে কেউ কি কখনো খারাপ থাকতে পারে বাবা!
হ্যা বাবা হ্যা.....আমরা একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। যে দেশ হবে আমাদের। আমরা খুব শিঘ্রই একটি স্বাধীন দেশের জন্য আন্দোলন করবো। আর সেই অপেক্ষাতেই আছি বাবা। অপেক্ষা করছি বঙ্গবন্ধুর ভাষণের। খুব বেশী দেরী নেই সেই ভাষণের।
আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করো না বাবা। তোমার ছেলে তোমাকে একটি নতুন দেশ দেবে বাবা। অপেক্ষা করো সেই দিনটির জন্য। যেই দিনটির সূর্য উঠবে আমাদের জন্য। যেই দিনটির নতুন সকাল হবে আমাদের জন্য। যেই সকাল হবে একটি স্বাধীন দেশের সকাল। প্রতিটি মুহূর্ত হবে স্বাধীন। অন্য কোনো শক্তির কাছে আর মাথা নত নয় বাবা। আর কেউ আমাদের দমাইয়া রাখতে পারবে না।
ভালো থেকো।

ইতি
রাসেল

এ ধরনের উত্তেজনায় ভরা চিঠি প্রায়ই রাসেল লিখতো। ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তিনি শুনতে পাননি। কারণ, তার ট্রানজিস্টারটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আর বাজারে আবুল কাশেম তার লোকজন দিয়ে সমস্ত দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল। কেউ যাতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি শুনতে পান বেতারে এই ভাষণ শোনানোর কথা থাকলেও শোনানো হয়নি। কিন্তু পরদিন সকালে সেই ভাষণ পূনপ্রচার হলেও কেউ জানতো না।
যাইহোক, ১৫ই মার্চ রাসেলের চিঠি আসলো। খুব সংক্ষিপ্ত চিঠি।

বাবা,
বলেছিলাম না একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের নিরাশ করেননি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। তবে খুব ইন্ডইরেক্টলী। মনে রেখো বাবা, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
ইতি
রাসেল

প্রতিটি দিন তিনি রাসেলের এ ধরনের চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন। ছেলেই তাকে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করেছে। তিনিই প্রথম মানুষ যিনি বদরপুর স্কুলে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলার লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে ছিলেন। এই জন্য তাকে হেড-মাষ্টার পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু এতে তিনি মোটেই নিরাশ হননি।
তারপর ২৫ শে মার্চ হামলা হলো ঢাকায়। ছেলের জন্য তিনি পাগল হয়ে উঠলেন। একমাত্র ছেলের অবস্থা তিনি জানতে পারছেন না।
দুমাস অপেক্ষার পর রাসেলের চিঠি আসলো। সেটা জুনের শুরুর দিকে ছিল।

বাবা,
তুমি কেমন আছো আমি জানি না। আমি এও জানি না আমার সেই সবুজ শ্যামল নিরীহ মানুষের গ্রামটিতে ঐ হায়নারা ঢুকেছে কিনা।
ভয়ঙ্কর বাবা। ওরা প্রচন্ড ভয়ঙ্কর। ওরা মানুষ না বাবা। যেভাবে ওরা ঘুমন্ত ঢাকার উপর কাপুরুষের মতো হামলা চালালো তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝতে পারবে না ওই মুহূর্তটা কি পরিমাণ ভয়ানক ছিল!
তোমার দোয়ায় আমি বেচে গেছি বাবা। আমি এতোদিন বোর্ডারে ট্রেনিং এ ছিলাম। তাই কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। আজ থেকে আমাদের অপারেশান শুরু হবে।
বাবা, আমি জানি না আমি বেচে থাকবো কি মরে যাবো। যদি বেচে থাকি তাহলে চিঠি পাবে। আর যদি মরে যাই তাহলে আর চিঠি পাবে না। তবে বাবা, দু মাসের বেশী আমার চিঠির জন্য অপেক্ষা করো না। কিন্তু বাবা, অপেক্ষা করো একটি নতুন দেশের। যে দেশের নাম হবে বাংলাদেশ।
ইতি
রাসেল

এই চিঠিটি পাবার কিছুদিন পরই হানাদার বাহিনী বদরপুর গ্রামে ঢোকে।
রাসেল ঠিক বলেছিল, ওরা ভয়ঙ্কর। আসলেই ওরা ভয়ঙ্কর। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে যুবকদের ধরে এনে তারা হত্যা করেছে। যুবতীদের ইজ্জত হরণ করেছে।
এ গ্রামে তাদের সর্ব ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে আবুল কাশেম। সেই দেশদ্রোহী আবুল কাশেম আজ এই গ্রামের একজন সম্মানিত চেয়ারম্যান। যা তাকে বেদনায় ভাসায়। লজ্জা দেয় ।
তার ছেলের শেষ চিঠি তিনি পেয়েছিলেন সেপ্টেবরের শেষ দিকে। সেখানে লেখা,

বাবা,
এই নিয়ে পাঁচটা অপারেশান করেছি। গেরিলা কায়দায় বাংলার সন্তানরা তাদের পরাস্ত করছে। তবে বাবা, গ্রামে গ্রামে যে তান্ডব লীলা আমি দেখেছি তা যদি তোমাকে বলি তুমি বুঝবে না। গ্রামের পর গ্রাম..... প্রান্তরের পর প্রান্তর শুধু রক্ত আর রক্ত। মুসলমানীত্ব রক্ষায় নাকি এই রক্তের বন্যা বাবা! কি হাস্যকর তাই না বাবা? আমাদের দেশের কিছু সন্তান তাদের সহায়তা করছে এই বলে যে তারা নাকি ইসলাম রক্ষা করছে। ইসলাম জানতাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে কি বাবা এইভাবে রক্ত দিয়ে খেলতে বলেছে? ইসলামে কি নারীদের দেহ লুটে খেতে বলেছে। কি অদ্ভুদ তারা। তারা ভুলে গেছে, ইসলামে এও বলেছে নিজের মাতৃভুমির রক্ষার কথা। তা তারা ভুলে গেছে। ভুলে গিয়ে নেমেছে লাশের খেলায়। প্রথম প্রথম লাশ দেখলে ভয়ে আঁতকে উঠতাম। কিন্তু এখন এতো লাশ দেখেছে এই চোখ যে লাশ এখন আর কোনো বিষয় না।
তবুও চিন্তা করো না বাবা। এই দেশ স্বাধীন হবেই। এই দেশের দামাল ছেলেদের রক্ত আল্লাহ বৃথা যেতে দেবে না। আমার সাথে খলিল, নাজিম, জাবের শহীদ হয়েছে। ওদের রক্ত বৃথা যাবে না বাবা।
এই দেশ স্বাধীন হবেই। তবে বাবা, একটি স্বাধীন দেশও যে আমাদের গড়তে হবে। তার জন্যও আমাদের লড়তে হবে। বাংলার ইতিহাসে হয়তো অনেক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বাবা, বাংলার ইতিহাসে ৭১-থাকবে রক্তাক্ত একাত্তর হয়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই একাত্তরকে স্বরণ করবে। কিন্তু তারা অনুভব করতে পারবে না কি ভয়াবহ রক্ত বন্যা হয়েছলি। এই রক্তাক্ত একাত্তর লাল অক্ষরে শুধু লেখাই থাকবে বাংলার ইতিহাসে।
আমি জানি না, একটি স্বাধীন দেশের পূর্ণ স্বাদ আমরা গ্রহণ করতে পারবো কিনা!
ভালো থেকো।
ইতি
রাসেল

এটিই ছিল ছেলের শেষ চিঠি। রাসেল যেনো বুঝতে পেরেছিল এ জাতি স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না।

মোনায়েম মাষ্টারের ছেলের চিঠি আর আসে নি। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু তার ছেলে ফেরেনি। তিনি কখনও এ নিয়ে দুঃখও পাননি। কারণ তার ছেলে এই দেশকে বাচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে। তার ছেলে তার গর্ব। কিন্তু যখন আবুল কাশেমের মতো লোক এ দেশে বুক উচিয়ে চলে তখন তার দুঃখ হয়। তখন খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি শুধু একটিই প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ, আমাদের যে ছেলেগুলা প্রাণ দিয়া গেছে; তাদের রক্তের কি কোনো মূল্য নেই!

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন মোনায়েম মাষ্টার। ছেলের চিঠিগুলো পড়লে তিনি ভেতরে ভেতরে একটি লড়াই করার প্রেরণা পান। আজও পেলেন। তার ভিতরে জেগে ওঠে একটি নতুন বিপ্লবের স্বপ্ন। তার ছেলে একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার জন্য বিপ্লব করেছেন। আর তিনি করবেন সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার বিপ্লব।

৩.
চেয়ারম্যান সাহেবের আজও ঘুম ভালো হয়নি। ঘুমিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেই স্বপ্নটি দেখে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন। এই স্বপ্ন তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তাকে শান্তি দিচ্ছে না। শুধু যে স্বপ্ন তা কিন্তু না। আরেকজন মানুষ তাকে শান্তি দিচ্ছে না। মানুষটা হচ্ছে মোনায়েম মাষ্টার। এই মাষ্টার তাকে বরাবরই অপমান করে এসেছে।
যুদ্ধের পর পর এই মাষ্টার তাকে গ্রাম ছাড়া করেছিল। জুতোর মালা দিয়ে পুরো গ্রাম তাকে চক্কর খাইয়েছিল। এসব তিনি ভুলে যাননি। তার সব মনে আছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি গ্রামে বীরের বেশে ঢোকেন। বহু কষ্টে গ্রামের মানুষের সহানুভূতি তিনি আদায় করেছেন। আস্তে আস্তে গ্রামের ক্ষমতাশালী লোকে তিনি পরিণত হয়েছেন। কিন্তু তারপরও মাষ্টারের কোনো ক্ষতি তিনি করেননি। করেননি কারনও আছে। লোকমুখে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, দেখছো, কাশেম মিয়া কতো ভালা মানুষ। কাশেম মিয়ারে কত্ত অপমান করলো তাও সে মাষ্টাররে কিছু কয় নাই।
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এই গ্রামের মানুষ বড় নিরীহ। এটা কাশেম মিয়া জানে। তাই তাদের হৃদয়ে জায়গা পেতে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। প্রথমে তিনি গরীবদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। তারপর গ্রামে মাদ্রাসা, স্কুল দিলেন। বেকারদের একটা কিছু করার ব্যবস্থা করে দিলেন। ব্যস তার জায়গা সকলের অন্তরে হয়ে গেলো।
কিছু কিছু মানুষ ছাড়া এই গ্রামের সকলে তাকে পছন্দ করে। কিন্তু তারপরও মাষ্টারের স্পর্ধা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তিনি ঠিক করলে এবার মাষ্টাররে কিছু একটা করতে হবে।


সকাল হয়েছে। চারদিকে ফুটফুটে আলো। মিষ্টি রোদও উঠেছে। বাইরের উঠানে চেয়ারে বসে আছেন চেয়ারম্যান। পাশে রফিক।
- রফিক, মাষ্টারের হালচাল আমার ভালো লাগতাছে না।
- বাদ দেন চাচা। মুরুব্বী মানুষ। একটু ভুল করছেই। থাক।
- হ। ভুল করছে ভালো কথা। তো, আমিও তো একজন মুরুব্বি নাকি?
- জ্বে জ্বে। আমাগো এই পুরা গেরামে তো আপনেরা দুজনই মুরুব্বি আছেন। যাগোরে আমরা সম্মান করি।
- এহন একজন মুরুব্বী ভুল করছে। তাহলে আরেকজন মুরুব্বীরও তো উচিত ভুল করা। নাকি?
রফিক একটু অবাক হয়। প্রশ্নও করে, মানে কিছু বুঝলাম না চাচা।
- মানি বুঝলি না? মানি হইলো আমিও একটা ভুল করুম মাষ্টারের ঘরে আগুন জ্বালাইয়া দিয়া। তয় এই ভুলটা গেরামের কেউ জানবার পারবো না।
রফিক বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে, কি কন চাচা?
- ওই হারামজাদা, আমি কি জাপানি ভাষায় কথা কইছি।
- না...মানি...উনি বুইরা মানুষ...থাক চাচা.....
- ওই কুত্তার বাচ্চা। আমারে তুই কি বুঝাস? সোজা কথা বুঝস না? ওর ঘরে আগুন জ্বালা। ওর মাষ্টারী ঐ আগুনের সাথে দাউ দাউ কইরা জলবো। ওর লাশও যাতে মানুষে না পায়। আমি খালি ওর ছাই চাই ছাই।

রফিকের সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাষ্টার তার পছন্দের একজন মানুষ। সেই মানুষটার উপর হামলা সে কি করে করবে! মাষ্টার মানে শিক্ষক। তার কাছেই পড়াশুনা করেছে রফিক। এই পৃথিবীকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে এই মানুষটিই। মা-বাবা একটি মানব সন্তানকে ভুমিস্ট করে মাত্র। কিন্তু সেই মানব শিশুটির মধ্যে প্রাণ দেন তার শিক্ষক। মোনায়েম মাষ্টার সেই মানুষ। যে কিনা তার দেহে প্রাণ দিয়েছে। আর সেই মানুষটির উপর আঘাত সে কি করে করবে!!
চেয়ারম্যান একবার যার পেছনে লাগে তাকে সর্ব-শান্ত না করে ছাড়ে না। এটা রফিক জানে। কুতুব উদ্দিনের সাথে তার কি হয়েছিল তা রফিক ভুলে যায়নি। কুতুব উদ্দিন তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ছিল। সেই কুতুব উদ্দিনকে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য বলেছিলেন কিন্তু সে তা করেনি। বিনিময়ে কুতুব উদ্দিনের মেয়েকে উঠিয়ে আনা হলো। যদিও তার ইজ্জতে কোনো হাত দেয়া হয়নি। গ্রামবাসী জানে কুতুব উদ্দিনের মেয়ে তার প্রেমীকার সাথে পালিয়েছে। তা জানবেই না বা কেনো। কুতুব উদ্দিনের সাথে সারারাত গ্রামের পর গ্রাম কাশেমও তার সাথে ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে নিজের সততা, নিজের পরউপকারিতা প্রমাণের জন্য তিনি এ কাজটা করেছেন। যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি। গ্রামের মানুষও বলে, দে হ, কাশেম মিয়া কত্ত ভালো লোক। ভোটে বিপক্ষে হইলেও কুতুব সাহেবের বিপদে তিনি সাথে ছিলেন।
এসব ঘটনা রফিক ভোলে নি। সব ভিতরকার চাল। রাজনৈতিক চাল। সেই রাতেই কাশেম তার কালো পাজেরো জীপের ভিতরে ঠান্ডা মাথায় কুতুব উদ্দিনকে বলেন, আপনের হাতে এখনও সময় আছে। কি করবেন!
কুতুব উদ্দিন নির্বাক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। কাশেমের সমস্ত প্রস্তাব মেনে নেয় সে রাতেই। পরদিনই মেয়েকে তিনি পেয়ে যান। এবং সব অপমান কাঁধে নিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। চেয়ারম্যান ভোটে কাশেম বলতে গেলে ফাঁকা মাঠেই গোল দেন। সেই কুতুব উদ্দিন লজ্জায় অপমানে গ্রাম ছাড়ে যখন গ্রামে রটে তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে চরিত্রহীন।
সব মনে আছে রফিকের। নোংরা রাজনৈতিক চাল সে চোখের সামনেই দেখেছে। সে দেখেছে চেয়ারম্যান কি করে ঠান্ডা মাথায় মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
আজ তিনি মোনায়েম মাষ্টারকে হত্যার পরিকল্পনা করা শুরু করেছেন। রফিক ভেবে পায় না সে কি করবে। তার পিতার সমান শ্রদ্ধা সে যে মানুষটিকে করে এসেছে সে মানুষটিকে কোনো আঘাত সে করতে পারবে না। আবার আঘাত না করলে সে জানে তার নিজের অবধারিত মৃত্যুর কথা।
চেয়ারম্যানের বাসা থেকে বের হয়েই সে চলে যায় মোনায়েম মাষ্টারের বাড়ি। যে করেই হোক মাষ্টারকে ক্ষমা চাওয়াতে পারলেই সে নিজেও বাঁচবে সাথে মাষ্টারও বাঁচবে।
দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ে রফিক।
- কি রফিক! কি হইছে?
রফিকের সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। হাপাতে হাপাতে সে বলল, স্যার আপনেরে আল্লাহর দোহাই লাগে আপনে চেয়ারম্যনের কাছে মাফ চান।
মাষ্টার বুঝে যায়। মাষ্টার বুঝে যায় তার উপর কোনো আঘাত আসতে পারে। আর তাই রফিক এসেছে তার সাবধান বাণি শোনাতে।
মাষ্টার একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন, বস তুই। ঠান্ডা হ। লেবুর শরবত বানায়া দিমু?
- না না স্যার। আমি কিছু খামু না।
- আচ্ছা খাইস না। এখন বল কি হইছে?
- স্যার কি দরকার আপনের এই বয়সে চেয়াম্যানের লগে গুতাগুতি করনের। কি জন্যে এভাবে তারে অপমান কইরা ক্ষেপাইয়া দেন।
মাষ্টার হাসেন। শুধুই হাসেন।
রফিক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে মাষ্টারকে।
মাষ্টার তখন বলল, শোন রফিক, ওর মতো জানোয়াররে অপমান করলে আমার শান্তি লাগে।
-কিন্তু কি দরকার। কি পাবেন এই শান্তি দিয়া?
-কি শান্তি পাবো? কাপুরুষ হয়ে না থাকার শান্তি। প্রতিবাদ করার শান্তি। এই বয়সে তো রাস্তায় রাস্তায় হরতাল অবরোধ করার মতো শক্তি নাই। তাই বয়কটের মাধ্যমে প্রতিবাদ।
- কিন্তু কেন এই প্রতিবাদ! কি লাভ?
মাষ্টারের চোখ লাল হয়ে ওঠে। ক্যান প্রতিবাদ? তুই জানোস না ঐ হারামীটা যুদ্ধের সময় কি করছে? এই গ্রামের মানুষ সব ভুলতে পারে আমি কিন্তু ভুলি নাই। এই গ্রামের চা দোকানদার জব্বার ভুলতে পারে তার মেয়েকে এবং তার স্ত্রীকে মিলিটারী ক্যাম্পে তুলে দিয়ে এসেছিল এই কাশেম। আমি ভুলি নাই। পাগলী মরিয়মের নামের পাশে পাগলী কেন লাগলো তা এই গ্রামের মানুষ ভুলে যেতে পারে কিন্তু আমি ভুলি নাই। আমার মনে আছে, কাশেম নিজ হাতে মরিয়মের তিন ছেলেকে এবং তার স্বামীকে জবাই করে হত্যা করেছিল। আমি ভুলি নাই কিছুই।
বাংলার ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায় আমি ভুলি নাই। তাই প্রতিবাদ করি। আমার ছেলে এই দেশের জন্য নিজ দেহকে বিসর্জন দিছে আমি তা ভুলি নাই। আমার ছেলে আমারে চিঠিতে লিখছিল, বাবা তোমাকে একটি নতুন দেশ উপহার দিবো। আমার ছেলের সেই উপহার সংরক্ষণের জন্য আমার প্রতিবাদ। আর তুই বলতাছস আমি ঐ কুত্তাটার কাছে মাফ চামু। অসম্ভব! অসম্ভব রফিক।
আমার ছেলের রক্ত এই মাটিতে মিশে আছে। আমি পিতা হয়ে সেই রক্তের উপর দাড়িয়ে কোনো রাজাকারের কাছে ক্ষমা চাবো না।

এই সব কিছু রফিক হতভম্বের মতো শুনছিল। এক পর্যায়ে সে মাষ্টারকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। এবং কাঁদতে কাঁদতে বলে, স্যার আমি এখন কি করমু। কি করমু?
মাষ্টার রফিকের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, বাবা, তুই কি করবি এটা তোরে ঠিক করতে হইবো। তবে একটা কথা মনে রাখিস, মৃত্যুর আগে যখন নিজেকে প্রশ্ন করবি, তুই এই দেশের জন্য এই জাতির জন্য কি করেছিস, যখন তোর বিবেক বলবে, তুই কি করেছিস সারাজীবন। তখন এই সব প্রশ্নের উত্তর যখন তুই পাবি না তখন কিন্তু নিজের জীবনকে পুনরায় শুরু করবার কোনো সুযোগ থাকবে না। নিজেকে জবাব দেয়ার মতো কিছু করে মৃত্যুই হচ্ছে বীরের মতো মৃত্যু।

চেয়ারম্যান তার বসার ঘরে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। আজ রাতেই রফিকের মাষ্টারের বাড়িতে আগুন লাগানোর কথা। কিন্তু রফিক সকালের পর আর আসে নি। মিঠুকে খবর দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যাতে রফিককে নিয়ে তাড়াতাড়ি আসে। আগুন লাগানোর কাজটা ঠিক হবে কি ভুল হবে তা নিয়ে ভাবনায় মগ্ন কাশেম চেয়ারম্যান। এমন সময় আকমল দৌড়াতে দৌড়াতে চেয়াম্যানের বসবার ঘরে ঢুকে বলা শুরু করে,
চাচা, ও চাচা। আযাব, গজব পরছে আমাগো গেরামে। হে আল্লাহ। আমরা কি পাপ করছি!
মাষ্টার বিচলিত কন্ঠে বললেন, অই হারামজাদা কি হয়েছে?
- চাচা, গেরামে অভিশাপ ঢুকছে। মসজিদের ইমামের কাছে চান্দা চাইছে। সে দেয় নাই। এখন নাপাকীগুলা লেংটা হইয়া মসজিদের সামনে নাচা শুরু করছে।
চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের সমস্ত কিছু যেনো ভেঙে পড়ছে। তার চারপাশে সব কিছু যেনো ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে তার শরীরে শক্তি ঝরে পড়ছে। তার পবিত্র গ্রামে ঢুকেছে অভিশপ্ত তৃতীয় লিঙ্গ। যাকে আমরা বলি হিজড়া সম্প্রদায়।

৪.

হিজড়ারাও দুই জাতের। মেয়েজাত এবং পুরুষজাত। মেয়ে হিজড়ারা মেয়েদের মতো আচরণ করলেও তাদের স্ত্রী-যৌনাঙ্গ না থাকায় শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক। আবার পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। তবে হিজড়ারা সব-সময় নিজেদের নারী ভাবতেই সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে। তাই তারা সাজ-গোজের উপরে থাকে।
বদরপুর গ্রামে তিনজন প্রবেশ করেছে। তিনজনই দৈহিকভাবে দেখতে পুরুষের মতো। তবে নারীদের মতই সু-ঢৌল স্তন আছে, বড় বড় চুল, কোমল দুলিয়ে দুলিয়ে হাটা, এবং সবসময় শাড়ী পরার অভ্যাস তাদের আছে।
মাত্র দুদিন হলো তারা গ্রামে ঢুকেছে। ইতিমধ্যে তাদের জ্বালাতনে গ্রামের সবাই মোটামুটি অস্থির।
প্রথমদিন গ্রামে ঢুকেই তারা মসজিদের সামনে যায়। ভাগ্যক্রমে ইমামের সাথে দেখা হয়। ইমাম সাহেবের কাছে তারা একটু ভাত খেতে চেয়েছিল। কিন্তু ইমাম তাদের গালাগাল করে এবং একজনকে লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়। এই ঘটনায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদের সামনে লেংটা নাচ দেয়া শুরু করে। আসলে এটা ছিল ওদের প্রতিবাদের ভাষা।
তাদের নামও চমৎকার। প্রত্যেকের নাম হিন্দি সিনামার নায়িকাদের নামে। একজনের নাম মাধুরী। সে তাদের তিনজনের মধ্যে সবচাইতে বড়। বয়স চল্লিসের কাছাকাছি হবে। অন্যদুজনের থেকে সে একটু শান্ত স্বভাবের। এটা হয়তো তার বয়সের ভারিক্কির কারণেও হতে পারে। তবে বাকি দুজন তাকে গুরু বলে সম্বধণ করে। বাকি দুজন একদম বাচ্চা। বয়স বিশ অথবা একুশ। এর বেশী হওয়ার কথা না। একজনের নাম কারিশমা এবং অপরজনের নাম কারিনা। তারা দুজন খুবই উগ্র স্বভাবের। তাদের কেউ কটাক্ষ করলে তারা তা মানতে পারে না। সাথে সাথে ঝাপিয়ে পড়ে এর বিরুদ্ধে। যেমন, ইমাম সাহেবের কান্ডটার পর লেংটা নাচটা তারা দুজন মিলেই দিয়েছিল। কারণ, মাধুরীর শরীরে ইমাম আঘাত করেছিল দেখে।
শুধু যে ইমামের উপরই তারা চড়াও হয়েছে তা কিন্তু নয়। আজ সকালে বদরপুর স্কুলের দারোয়ান হাওলাদার তাদের দেখে একটা গালি দিয়েছে এবং সেই সাথে মাটিতে থুতু ছিটিয়েছে। তখনই কারিশমা হাওলাদারকে জাবড়িয়ে ধরে বলে, ওরে আমার সুইটহার্ট, এতো ঘিন্না!! থুতু ছেডাও!! আসো তুমার ঘিন্না দূর কইরা দেই। এই বলেই সে হাওলাদারের ঠোটে কষে এক চুমু খায়। এই ঘটনার পরপর হাওলাদেরর বমি করা শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত বন্ধ হয় নাই। কিছুক্ষণ আগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আকাশে সূর্য। রৌদ্র আগুন ছড়াচ্ছে চারিপাশে। গরম যেনো জাবড়ে ধরে আছে সবাইকে। এই ভরদুপুরে তারা তিনজন গ্রামের তরুণ কোরআন হাফেজ নুরুলের পুকুর ঘাটে গোসলের জন্য যায়। তার আগে তারা সারা গাযে তেল মাখাচ্ছে। এতে নাকি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
নুরুল তাদের খেয়াল করেছে একদম শুরু থেকেই। সে অনেকক্ষণ ধরে হাতে লাঠি নিয়ে আম গাছের আড়ালে দাড়িয়ে আছে। ভয়ে সে সামনে আসতে পারছে না। তারপরও শেষে ভয়কে জয় করে সে লাঠি হাতে এগিয়ে আসে তাদের দিকে।
- ঐ কুত্তাগুলা খবরদার আমার পুকুরে নামবি না।
আচমকা নুরুলের আগমন আর এই গালী শুনে তারা যেনো খুব মজা পেলো। তারা তিনজনই হো হো করে হাসা শুরু করে দিলো।
মাধুরী বলল, ওরে আল্লাহ, তো তুমি জানলা কেমনে মোরা কুত্তা না কুত্তি!
এরপর কারিনা বলে, কুত্তা যেহেতু কইছো, তয় আসো তুমারে একটু কামরাইয়া দেই।
আবার তিনজনের হাসি।
কোরআন হাফেজ নুরুল একটু ভড়কে যায়। শেষমেষ সাহস নিয়ে আবারও বলল, খবরদার নাপাকীগুলা। খবরদার..আমার পুকুরে নামবী না। আমি প্রত্যেকদিন এইহানে গোসল করি, ওযু কইরা নামায পড়ি। তোরা আমার পুকুরটারে নাপাক করিস না।
করিনা একটু আল্লাদ করে বলে, একটু না হয় নাপাক হলই বা। তুমি এতো চিন্তা নিয়া তো....
এক ভিন্ন জাতের এই লিঙ্গের আল্লাদি স্বর তার পছন্দ হয় নি। পাশের বাসার মুসলেমাও ঠিক এভাবে কথা বলে; তখন কতো ভালো লাগে! আর.. আর জাহিদ ভাইয়ের বউ..আহ্ কি আল্লাদি স্বর। মনের সাথে দেহটাও নাইচা ওঠে। কিন্তু এই ভিন্নজাত, নাপাকী জাত, অভিশপ্ত জাত......না পুরুষ না মাইয়া। ছি ছি ছি... নুরুল ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, চুপ থাক মাগী। ঢং মারাইতে আইসোস। খবরদার আমার পুকুরে নামবি না।
এতে মাধুরী একটু গম্ভীর হয়ে যায়। এই বাক্যটি যেনো গায়ে শুলের মতো বিধে। সে একধাপ এগিয়ে নুরুলের সামনে গিয়ে দাড়ায়। দেহের শক্তির বিচারে মাধুরীও যে কম যাবে না তা দেখলেই বোঝা যায়।
- এমন করো কেন গো? আমরা নাপাক এতে আমাগো কি দোষ। যে পাক-নাপাক আবিস্কার করছে তারে যাইয়া কও। আচ্ছা যাও আমরা একা নামমু না। তুমার পুকুর তুমারে নিয়াই নামি। দেহি আমার নাপাকি পানি তুমার শরীরে লাগলে কি অয়।
এই বলে মাধুরী নুরুলকে কোলে তুলে ধপাস করে পুকুরে নিয়ে ফেলে। তাকে চেপে ধরে রাখে মাধুরী। আর কারিশমা ও কারিনা নুরুলের জামা কাপড় খুলে নেয়। উলঙ্গ নুরুল পুকুরে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×