প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। আমরা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বা বিরোধী দল দমন করতে গিয়ে আমাদের শক্তি ক্ষয় করিনি। বরং আমরা আমাদের সব চিন্তা, চেতনা ও শক্তি জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করেছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এত সুন্দর বক্তব্য শুনে ও কোন সাংবাদিক তাকে কালো মেয়াও সম্পর্কে জিজ্ঞাস করেন নি। অর্থাৎ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গুপ্তধন পাওয়ার ব্যাপারে। এতে কি বুঝা যায় সাংবাধিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল?
আজ শনিবার গণভবনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদেন তিনি এ সব কথা বলেন। উল্লেখ্য, তুরস্কে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন।
এ দিন সাংবাদিকদের কাছে বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন একখানা মাইক নিয়ে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে সমানে না বলে বরং জনগণের কল্যাণমূলক কিছু বলুন। নিশ্চয়ই ভালো পরামর্শ দিলে আমরা শুনব।
নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য শুনে এবং কালো মেয়াও সম্পর্কে মুখে কুলুপ দিয়ে রাখা আপনার কাছে কেমন লেগেছ?
এই শিকল-পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল
তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দি হতে নয়,
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়।
এই বাঁধন পরেই বাঁধন-ভয়কে করব মোরা জয়,
এই শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল-ভাঙা কল
তোমার বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্ব গ্রাস,
আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস!
সেই ভয়-দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ,
এবার আনব মাভৈ-বিজয়-মন্ত্র বল-হীনের বল
তোমরা ভয় দেখিয়ে করছ শাসন, জয় দেখিয়ে নয়;
সেই ভয়ের টুঁটিই ধরব টিপে, করব তারে লয়!
মোরা আপনি মরে মরার দেশে আনব বরাভয়,
মোরা ফাঁসি পরে আনব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল
ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন এই শিকল-ঝন্ঝনা,
এ যে মুক্ত-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা!
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হানছে লাঞ্ছনা,
মোদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে আবার বজ্রানল
কা জী ন জ রু ল ই স লা মে র ক বি তা
ধূমকেতু
আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
সাত— সাতশো নরক-জ্বালা জলে মম ললাটে,
মম ধূম-কুণ্ডলী করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘন ঘোলাটে।
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ,
আমি স্রষ্টার বুকে সৃষ্টি-পাপের অনুতাপ-তাপ-হাহাকার—
আর মর্তে সাহারা-গোবি-ছাপ,
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ!
আমি সর্বনাশের ঝাণ্ডা উড়ায়ে বোঁও বোঁও ঘুরি শূন্যে,
আমি বিষ-ধূম-বাণ হানি একা ঘিরে ভগবান-অভিমুন্যে।
শোঁও শন-নন-নন-শন-নন-নন শাঁই শাঁই,
ঘুর্ পাক্ খাই, ধাই পাঁই পাঁই
মম পুচ্ছে জড়ায়ে সৃষ্টি;
করি উল্কা-অশনি-বৃষ্টি,—
আমি একটা বিশ্ব গ্রাসিয়াছি, পারি গ্রাসিতে এখনো ত্রিশটি।
আমি অপঘাত দুর্দৈব রে আমি সৃষ্টির অনাসৃষ্টি!
আমি আপনার বিষ-জ্বালা-মদ-পিয়া মোচড় খাইয়া খাইয়া
জোর বুঁদ হয়ে আমি চলেছি ধাইয়া ভাইয়া!
শুনি মম বিষাক্ত ‘রিরিরিরি’-নাদ
শোনায় দ্বিরেফ-গুঞ্জন সম বিশ্ব-ঘোরার প্রণব-নিনাদ!
ধূর্জটি-শিখ করাল পুচ্ছে
দশ অবতারে বেঁধে ঝ্যাঁটা করে ঘুরাই উচ্চে, ঘুরাই—
আমি অগ্নি-কেতন উড়াই!—
আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
ঐ বামন বিধি সে আমারে ধরিতে বাড়ায়েছিল রে হাত
মম অগ্নি-দাহনে জ্বলে পুড়ে তাই ঠুঁটো সে জগন্নাথ!
আমি জানি জানি ঐ স্রষ্টার ফাঁকি, সৃষ্টির ঐ চাতুরী,
তাই বিধি ও নিয়মে লাথি মেরে, ঠুকি বিধাতার বুকে হাতুড়ি।
আমি জানি জানি ঐ ভুয়ো ঈশ্বর দিয়ে যা হয়নি হবে তাও!
তাই বিপ্লব আনি বিদ্রোহ করি, নেচে নেচে দিই গোঁফে তাও!
তোর নিযুত নরকে ফুঁ দিয়ে নিবাই, মৃত্যুর মুখে থুথু দি!
আর যে যত রাগে রে তারে তত কাল্-আগুনের কাতুকুতু দি।
মম তূরীয় লোকের তির্যক, গতি তূর্য গাজন বাজায়
মম বিষ নিশ্বাসে মারীভয় হানে অরাজক যত রাজায়!
কচি শিশু-রসনায় ধানি-লঙ্কার পোড়া ঝাল
আর বদ্ধ কারায় গন্ধক ধোঁয়া, এসিড, পটাশ, মোন্ছাল,
আর কাঁচা কলিজায় পচা ঘা’র সম সৃষ্টিরে আমি দাহ করি
আর স্রষ্টারে আমি চুষে খাই।
পেলে বাহান্ন-শও জাহান্নমেও আধা চুমুকে সে শুষে যাই!
আমি যুগে যুগে আসি আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু—
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
আমি শি শি শি প্রলয়-শিশ্ দিয়ে ঘুরি কৃতঘ্নী ঐ বিশ্বমাতার শোকাগ্নি,
আমি ত্রিভুবন তার পোড়ায়ে মারিয়া আমিই করিব মুখাগ্নি!
তাই আমি ঘোর তিক্ত সুখে রে, একপাক ঘুরে বোঁও করে ফের দু’পাক নি!
কৃতঘ্নী আমি কৃতঘ্নী ঐ বিশ্বমাতার শোকাগ্নি!
পঞ্জর মম খর্পরে জ্বলে নিদারুণ যেই বৈশ্বানর—
শোন্ রে মর, শোন্ অমর!—
সে যে তোদের ঐ বিশ্বপিতার চিতা!
এ চিতাগ্নিতে জগদীশ্বর পুড়ে ছাই হবে, হে সৃষ্টি জানো কি তা?
কি বলো? কি বলো? ফের বলো ভাই আমি শয়তান-মিতা!
হো হো ভগবানে আমি পোড়াব বলিয়া জ্বালায়েছি বুকে চিতা!
ছোট শন শন শন ঘর ঘর ঘর সাঁই সাঁই!
ছোট পাঁই পাঁই!
তুই অভিশাপ তুই শয়তান তোর অনন্তকাল পরমাই।
ওরে ভয় নাই তোর মার নাই!!
তুই প্রলয়ঙ্কর ধূমকেতু,
তুই উগ্র ক্ষিপ্ত তেজ-মরীচিকা ন’স্ অমরার ঘুম-সেতু
তুই ভৈরব ভয় ধূমকেতু!
আমি যুগে যুগে আসি আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
ঐ ঈশ্বর-শির উল্লঙ্ঘিতে আমি আগুনের সিঁড়ি,
আমি বসিব বলিয়া পেতেছে ভবানী ব্রহ্মার বুকে পিঁড়ি!
খ্যাপা মহেশের বিক্ষিপ্ত পিনাক, দেবরাজ-দম্ভোলি
লোকে বলে মোরে, শুনে হাসি আমি আর নাচি বব-বম্ বলি!
এই শিখায় আমার নিযুত ত্রিশূল বাশুলি বজ্র-ছড়ি
ওরে ছড়ানো রয়েছে, কত যায় গড়াগড়ি!
মহা সিংহাসনে সে কাঁপিছে বিশ্ব-সম্রাট নিরবধি,
তার ললাটে তপ্ত অভিশাপ-ছাপ এঁকে দিই আমি যদি!
তাই টিটকিরি দিয়ে হাহা হেসে উঠি,
সে হাসি গুমরি লুটায়ে পড়ে রে তুফান ঝন্ঝা সাইক্লোনে টুটি!
আমি বাজাই আকাশে তালি দিয়া ‘তাতা-উর্-তাক্’
আর সোঁও সোঁও করে প্যাঁচ দিয়ে খাই চিলে-ঘুড়ি সম ঘুরপাক!
মম নিশাস আভাসে অগ্নি-গিরির বুক ফেটে ওঠে ঘুত্কার
আর পুচ্ছে আমার কোটি নাগ-শিশু উদ্গারে বিষ-ফুত্কার!
কাল বাঘিনী যেমন ধরিয়া শিকার
তখনি রক্ত শোষে না রে তার,
দৃষ্টি-সীমায় রাখিয়া তাহারে উগ্রচণ্ড-সুখে
পুচ্ছ সাপটি খেলা করে আর শিকার মরে সে ধুঁকে!
তেমনি করিয়া ভগবানে আমি
দৃষ্টি-সীমায় রাখি দিবাযামী
ঘিরিয়া ঘিরিয়া খেলিতেছি খেলা, হাসি পিশাচের হাসি
এই অগ্নি-বাঘিনী আমি যে সর্বনাশী!
আজ রক্ত-মাতাল উল্লাসে মাতি রে—
মম পুচ্ছে ঠিকরে দশগুণ ভাতি,
রক্ত রুদ্র উল্লাসে মাতি রে!
ভগবান? সে তো হাতের শিকার!— মুখে ফেনা উঠে মরে!
ভয়ে কাঁপিছে, কখন পড়ি গিয়া তার আহত বুকের পরে!
অথবা যেন রে অসহায় এক শিশুরে ঘিরিয়া
অজগর কাল-কেউটে সে কোনো ফিরিয়া ফিরিয়া
চায়, আর ঘোরে শন্ শন্ শন্,
ভয়-বিহ্বল শিশু তার মাঝে কাঁপে রে যেমন—
তেমনি করিয়া ভগবানে ঘিরে
ধূমকেতু-কালনাগ অভিশাপ ছুটে চলেছি রে;
আর সাপে-ঘেরা অসহায় শিশু সম
বিধাতা তাদের কাঁপিছে রুদ্র ঘূর্ণির মাঝে মম!
আজিও ব্যথিত সৃষ্টির বুকে ভগবান কাঁদে ত্রাসে,
স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি পাছে বা বড় হয়ে তারে গ্রাসে!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১২ ভোর ৫:৩৫