যে সরকার একটি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশে অঘোষিত হরতাল শুরু করে দেয়। থানায় থানায় পুলিশ দিয়ে জনতার স্রোতে বাঁধ দেয় তাদের মুখে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নিরপেক্ষতা কতটুকু। হ্যাঁ যতটুকু বিড়ালের কাছে সুটকি পাহারা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সাহারা....। এই মন্ত্রীগুলি তত্ত্বাবধয়কে কবর দিয়ে কুলখানি খেয়েছে। একটি মন্ত্রীরও মেরুদন্ড নেই, শেখ হাসিনার সামনে সত্য কথা বলা। হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল তা বহাল রাখার জন্য বলার সাহস নেই তাদের। কিন্তু বিরোধীদলের বিরুদ্ধে যত নোংরামি অসত্য কথা বলা তাদের মত পরিপক্ক কেউ নেই।
১২ তারিখের মহাসমাবেশের ২-৩ দিন পূর্ব থেকেই প্রকাশ্যে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া স্বয়ং এককালের স্বৈরাচারী বলে খ্যাত জনাব এরশাদও করেননি। এবার শেখ হাসিনার সরকার তা করতে সক্ষম হয়েছে। এতে কার লাভ হলো, আর কার ভরাডুবি হলো সে বিষয় সরকারের হিসেব করার এত সময় কোথায়? সমাবেশের তিন চার দিন পূর্ব থেকেই ঢাকার রাজপথের অলি আর গলিতে যেভাবে পুলিশ দেয়া হয়েছে তাতে মনে হয়েছে সেই চেঙ্গীসি আমলের দেশ দখলের মহড়া থেকে রক্ষার জন্য ক্ষমতাশালীরা যেভাব পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতো তারই প্রতিচ্ছবি। কেন এমনটি করা হলো?
১২ মার্চ কি কেউ ঢাকা দখল করার জন্য সৈন্যসামন্ত নিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে দেশ দখল করবে বলে? টিভির পর্দায় বাম দলের এক নেতা জনাব মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘‘এটা সরকারের একেবারেই অনুচিত একটি কাজ হয়েছে। আইন-শৃক্মখলা রক্ষার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও সমাবেশে লোক আসা বন্ধ করার জন্য যানবাহন বন্ধ করে দেয়া কোন মতেই ঠিক হয়নি।’’ আসলে মানুষের বিবেক তার অজান্তেই সত্য কথা বলে দেয়। সেটা অন্যায় তা সবাই বুঝতে পারে। বিবেক কখনো ভুল রায় দেয় না। যেমন দেয়নি জনাব রাশেদ খান মেননের বিবেক। যিনি মহান সংসদে বলেছেন, ‘‘আমাদের উপদেষ্টাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশের নয় ভারতের উপদেষ্টা।’’ এমন একটা চরম সত্য কথা রাশেদ খান মেননের মুখ থেকে কে আশা করেছে? যিনি জীবন অতিবাহিত করলেন ভারতের প্রেমে মজে গিয়ে।
জনাব তোফায়েল আহমদ মহান সংসদে বলেন, আজ আমরা জনগণের কাছে কোন জবাব দিতে পারি না এত দিনে যে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হয়নি আর ২২ মাসে তা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এ ২২ মাস আমাদেরকে শুনতে হবে দিচ্ছি দিচ্ছি এভাবেই ২২ মাস কেটে যাবে। খোদ আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছে। যেখানে বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে সংসদে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে। সেখানে বিরোধী দল তো এ ব্যাপারে একটু বেশি সোচ্চার হবে এটা অতীব সাধারণ কথা। তবে কেন সরকারের এত জ্বালা, কেনই বা এত হিংসা। তা হলে কি বিরোধীদলের কোন আন্দোলন করারই অধিকার নেই।
আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতা নামে খ্যাত জনাব মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন ‘‘আমরা যদি প্রতিরোধ করি তাহলে বিএনপি-জামায়াত দেশেই থাকতে পারবে না।’’ এমন কথা কি কোন দায়িত্বশীল লোকের মুখে মানায়? আসলে একটি পত্রিকায় দেখেছিলাম ‘‘হানিফ নাই হানিফ আছে’’ শিরোনামে একটি লেখা। এখন আমাদের মনে হয় হানিফ আগেরটাই ভালো ছিলো। বর্তমান হানিফ ছিনে আসার জন্য যতটা ভূমিকা পালন করছেন তা কিছুটা সীমা লংঘনের পর্যায় পড়ে বলেই, বিএনপি নেতা বাবু গয়েশ্বর রায় বলেছিলেন ‘‘হানিফ হচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতা।’’ যাই হোক আমরা বলতে চাই বিরোধী দলের মহাসমাবেশ করলে সরকারের এত জ্বালা কিসের? এতে বাধা দেয়াতে কি খুব ভালো হয়েছে?
১২ মার্চ সমাবেশে আসার জন্য যে যানবাহন বন্ধ করা হলো তাতে কি কেবল সমাবেশের মানুষই আসতো? ট্রেনে আসার সময় একজনকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি বি-বাড়ীয়া থেকে একজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা আনতে হবে অথচ গাড়ি বন্ধের জন্য আসতে পারছে না। টঙ্গীর একটি স্কুল শিক্ষিকা পারভীন আক্তার ‘‘৯ মার্চ বিক্রমপুর গিয়েছি ১১ মার্চ এসে ক্লাস নিব অথচ আসতে পারছি না গাড়ি বন্ধ’’। এই যে মানুষের চরম ভোগান্তি, এতে কি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়নি? এতকিছু করার পরেও কি বিরোধী দলের সমাবেশ বানচাল করতে পেরেছে সরকার? তাহলে এমন নোংরা কাজটি কেন করা হলো? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করে কি জনতার এই রোষানল থেকে রক্ষা পাবেন?