এই যুগটা একটা অসাধারণ যুগ। একটা সময় ছিলো; একজন লেখক তার পান্ডুলিপিটা প্রকাশের জন্য প্রকাশকের কাছে ঘুরতে ঘুরতে মরে যেতেন। তারপর একসময় কোন এক প্রকাশক হয়তো পান্ডূলিপিটা খুঁজে পেয়ে; ''অপ্রকাশিত ডায়েরী'' নামে ছেপেও দিতেন। কিন্তু-এখন; চাইলেই যে কেউ তার লেখা প্রকাশ করতে পারে; এখানে লেখক নিজেই প্রকাশক, নিজেই সম্পাদক।
ইন্টারনেটের উন্নতির এই যুগে লেখা প্রকাশের মাধ্যমের কোন অভাব নাই। কতোজন পড়েছেন, কতোজন দেখেছেন-তার সব হিসেব লেখক পেয়ে যান, পাঠক পেয়ে যান।
গ্রামে গ্রামে উচ্চ গতির ইন্টারনেট পৌছে গেছে। রাস্তাঘাটেরোও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। স্বাস্থ-সেবা কিংবা বিদ্যা অর্জনের জন্য বিলেতে যেতে হয়না। সব একসাথে পাশাপাশি আছে। গ্রাম হয়ে যাচ্ছে শহরতলি।
গ্রামে ফসল উৎপাদন হয়; শহরে? শহরে খাদ্য বস্তু উৎপাদন হয় গ্রামের কাঁচামাল দিয়ে।
তাহলে শহরে মানুষ থাকবে কেনো?
তবে কী গ্রামে ফিরে যাবার সময় চলে এসেছে?
''বিবিএস-এর ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ-২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল্লী অঞ্চল থেকে শহরে মানুষের স্থানান্তরের হার বাড়ছে। ২০০৯ সালে যেখানে পল্লী অঞ্চল থেকে শহরমুখী মানুষের হার ছিল ২১ দশমিক ৯ শতাংশ, সেটি এখন বেড়ে ২০১৪ সালে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ২ শতাংশে।
শুধু পল্লী অঞ্চল থেকে নয়, এক শহর থেকে আরেক শহরেও মানুষের স্থানান্তরের হার বেড়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০০৯ সালে এটা ছিল ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।''
এই যখন অবস্থাঃ এখানে আমি গ্রামে ফেরত যাবার কথা বলছি?
শহরে মানুষ আসছে কেনো? আধুনিক শিক্ষা আর চিকিৎসা অন্যতম কারণ। এক শহর থেকে অন্য শহরে মানুষ যাচ্ছে জীবিকার তাগিদে আর বিভিন্ন সুবিধার জন্যও।
গ্রামে যদি এসবের ব্যবস্থা করা যায় কিংবা গ্রামের সাথে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করলে গ্রাম খালি হবার প্রবণতা কমে যাবে। মানুষ বসবাসের জন্য নিরিবিলি স্থান বেশি পছন্দ করে কিন্তু শহর-তো নিরিবিলি নয়। তবুও মানুষ শহরে বসবাস করতে যায়। অনেকের জীবনের বেশিরভাগ উপার্জন শহরে বিনিয়োগ করে। শুধুমাত্র রিস্ক ফ্রী থাকার স্বার্থে।
এখন আরেকটা কথা আসি- শহরে যারা বাসা-বাড়ি ভাড়ায় থাকেন, তারা কতটুকু আরামে আছেন? আজ এ বাসা আর কাল অন্য বাসা। এভাবে দিন শেষে একজন ভাড়া থাকা মানুষের কী থাকে?
সময় এসেছে চিন্তা করারঃ
শহর থেকে শহরের মতো স্থান পরিবর্তনের মতো গ্রাম থেকে গ্রামে পরিবর্তনের হার বেড়েছে। যে গ্রাম শহরের বেশি কাছে সে গ্রামে লোক প্রবেশের হার বেশি। যদিও শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তরের হার নাই বললেই চলে। কেনো? শংকা প্রকাশ করা হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার, শিক্ষা ব্যবস্থার, চিকিৎসা ব্যবস্থার। এসব শংকা দূর করার মাধ্যমে শহরে প্রবেশের হার কমানো যায়।
এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে গুণীজনের।
দূর্বল গ্রামীণ অর্থনীতিঃ
শহরে গ্রামের যেসব মানুষ বসবাস করেন তারা কিন্তু বেশিরভাগই গ্রামের টাকা খরচ করেন। শহরে আয়কৃত টাকাও শহরেই খরচ করেন। এভাবে গ্রামে টাকার যোগান কমে যাচ্ছে। টাকার যোগান কমে যাওয়ায় গ্রামীন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্রামে অভাব বাড়ছে, কাজ কমে যাচ্ছে, কাজের মূল্যায়নোও তাই সঠিক হয়না।
একটি জরিপে বলা হয়েছে ২০৫০ সালে শহরে বাংলাদেশের ৬৫শতাংশ মানুষ বসবাস করবে যেখানে ১৯৫০ সালে শহরে ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ মানুষ বসবাস করতো।
এই জরিপ সত্য হিসেবে ২০৫০ সালে প্রতিষ্টিত হলে গ্রাম আরোও দূর্বল হয়ে যাবে। অথচ, তা হলে ভালো হবার কথা নয়।
উন্নত বিশ্বেও গ্রাম বা ছোট শহরগুলো জনশূণ্য হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও তা যে ঘটবেনা তা বলা যায়না। কিন্তু তা থেকে পরিত্রাণের উপায় হতে পারে সুযোগ-সুবিধার বিকেন্দ্রিকরণ।
আর তা এখনি করা শুরু না হলে ২০৫০ সালে তা আর ঠেকানো যাবেনা। সুতরাং গ্রামে মানুষকে ফেরত যাবার পথ করার সময় এখনি। তা না হলে; সে সময় আর কভু আসবে কী না সন্দেহ।
বিঃদ্রঃ লেখাটির অনেক তথ্য বিভিন্ন জার্নাল পড়ে দেয়া হয়েছে। পরে আরোও তথ্য যোগ করা হতে পারে। গুণিজনদের কাছ থেকে বিশদ মন্তব্য'র আশা রাখছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪