somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শবে বরাত কি এখনো শিশুদের মনে ততটা আনন্দ নিয়ে উপস্থিত হয়?

১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় আমাদের আনন্দ-উৎসবের বড় একটা উপলক্ষ্য ছিল শবে বরাত। সারারাত মসজিদে দোয়া দুরুদ চলত। মুরুব্বিরা যে যার মতো করে ইবাদত বন্দেগীতে সময় কাটাতেন।



আর আমরা ছেলের দল দস্যিপনা করে বেড়াতাম। এশার নামাজের পর প্রথমবার জিলাপী নিয়ে, খেয়ে-দেয়ে আমাদের মিশন শুরু হতো।

রাত ১ টার পর বড় পর্দার বিরতির মতো একটা ইন্টারভাল। আবার সদলবলে মসজিদে ঢোকা। সেটা ইবাদত না, দ্বিতীয় দফা জিলাপী (আমিত্তি) পাওয়ার আশায়। জিলাপী পাওয়া হয়ে গেলে ফের ঘোরাঘুরি শুরু হতো। গেরস্থ মহিলারা বিশেষ সতর্ক থাকতেন। কার বাড়ির গাছের ফল যেন কার পেটে যায়। যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে খোয়ারে ডিম আছে হাঁস নাই। কড়া পাহাড়ার মধ্যেও অবশ্য অনেক কিছু ঘটে যেত।

এর আগে সন্ধ্যা রাত থেকে নানা জায়গায় চলতো আতশবাজি-পটকা ফুটানো। দলাদলি, লাফালাফি, ফালাফালি, কখনো সখনো মারামারি। প্রতি ঘরে চালের পিঠা, ফিরনি এসব বানানো হতো। সবায় সবার ঘরে বানানো খাবার পাঠাত। সন্ধ্যায় গরু/মুরগী দিয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকত। কারো কারো বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসত।

মনে পড়ে আমার শৈশবের বরাত ছিল শীতে। আর তখনকার সময় শীত মানেই ছিল সন্ধ্যার পর আগুন জ্বালানো। বরাত যেন রোজার আগমনী গান শুনিয়ে যেত। রমাদান মানে ছিল উৎসবের এক শুরু। ঈদের চাঁদ দর্শনে যার সমাপ্তি হতো। রমাদান কারিমের শেষ ক’দিন সে কি উত্তেজনা। চাঁদ দেখার জন্য সদলবলে বহুদূর চলে যেতাম। ২৯ রোজায় চাঁদের দেখা না পেলে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতাম। ফিরে ফিরে আসমানে তাকাতাম। যদি এখন দেখা যায়! আমাদের বরাত ও রোজার সেই দিনগুলো ছিল এমনই আনন্দময়। যা এখনো স্মৃতিকাতর করে তুলে।

এই বয়সে এসে দেখি সেসবের সবই বন্ধ যা যা আমরা শৈশবে করতাম। বা নিষিদ্ধ। হুজুরদের ‘বিশুদ্ধ ইসলামে’র জেরে উৎসব-সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। বরাতের রাত আসে কিন্তু টের পাওয়া যায় না। আমি অন্তত পাই না। কেমন যেন নিরবে চলে যায়। ক’দিন আগে শবে মেরাজ গেল, জানলামই না মেরাজের রাত ছিল কোনটা। আম্মার কাছ থেকে শুনলাম শবে মেরাজ চলে গেছে। তারপর কয়েকজনের সাথে কথা বলে দেখি তারাও জানে না, শবে মেরাজ কবে ছিল।

বরাতের রাতে আজকাল আর উৎসব হয় কি না জানি না। রমজান কি এখনো মানুষের ঘরে ঘরে, শিশুদের মনে ততটা আনন্দ নিয়ে উপস্থিত হয়? নাকি নানা ফতোয়ার বেড়াজালে সবকিছু রং হারিয়েছে! হয়তো অনেক কিছু পথও হারিয়েছে!

আমরা হয়তো ভুলে গেছি কেবল ধর্ম দিয়ে মানুষ বা সমাজ হয় না। শিল্প সংস্কৃতিও লাগে। আর কোনো বিশ্বাস বা মতবাদ সংস্কৃতি ছাড়া একলা চলতে পারে না। বিশ্বাস-সমাজ-মতবাদ সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে পারলেই কেবল তা থেকে ভালো কিছু হয়। ইসলামের আগমনের পর আরবে কিন্তু তাই হয়েছিল। আবার ইসলাম বাংলায় এসেছিল ঠিক তার মতো করে। এখানকার স্থানীয় উপাদানের সাথে মিশে যেতে পেরেছিল বলেই মানুষ রাতারাতি নতুন এই ধর্মটিকে নিজের করে নেয়। এবং এখনো খুব মমতায় আকড়ে ধরে আছে।

যদি বাংলায় বাংলার মতো করে ইসলাম না আসতো তাহলে এখানে সুফিবাদের দরকার হতো না। খানকা একটা বিশেষ জায়গা দখল করে থাকত না। বাংলার ইসলাম আরবের চেয়ে ধারে ভারে ভিন্ন হওয়ার দরকার ছিল না। আসলে আমরা ভুলে যাই, আমাদের এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বেঁচে আছে চাষা-ভূষা, সাধারণ মানুষের বুকে। তাদের অপার ভালোবাসায়। আর এইসব শিক্ষাহীন মানুষগুলো এই ধর্মটাকে কেবল আবেগ দিয়ে নিজের করে নিয়েছিলেন বলেই আজকে আমরা 'কথিত শিক্ষিতরা' মুসলমান।

আগমনের শুরুতেই মোল্লাদের পাল্লায় পড়লে হয়তো এটা মানুষ দাড়গোড়ায় পৌঁছাতই না।

আমার মনে হয়, আমাদের হুজুরেরা ও আমরা ‘বউ’ মানে কেবল শিশুদের মতো করে ‘নতুন বউ’ বুঝি। অথচ ‘বউ’ মানে এক বিশাল সাগর যেখানে কন্যা, জায়া, মা, বিজয়ী, মহীয়সী কতোকিছু লুকিয়ে আছে। খালি আবিষ্কারের অপেক্ষায়। সবার সুমতি হোক।

শবে বরাতের শুভেচ্ছা।

(আমার হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের প্রতি রইল হলির শুভেচ্ছা)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৫৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×