ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশিদের ঈদ নিয়ে প্রথম আলোর দূর পরবাসে লেখা প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েক দিন হলো। আমাদের দেশে অনেক পরিবারেরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রবাসের অভিজ্ঞতা থাকার কথা। হয়তো এ জন্যই প্রবাসীদের যেকোনো খবর তাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তারা আমাদের খবর পেয়ে আপ্লুত হন। সমব্যথী হন। যতভাবেই বর্ণনা করি না কেন, সাদামাটা এমন একটি লেখা নিয়ে মেইল, ফেসবুকে এত মানুষের উৎসাহ আমাকে অবাক করেছে। তবে আসল বিস্ময় বোধ হয় জমা ছিল আজকের সকালটার জন্য।
ঘুম থেকে উঠে দেখি ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দীনের ফোন। প্রথম আলোয় ঈদ উদ্যাপন নিয়ে প্রকাশিত লেখাটি পড়ে তিনি আমাকে ফোন করেছেন। ফোনে না পেয়ে হোয়াটস অ্যাপে ভয়েস মেসেজ করেছেন। আমি ফোন ব্যাক করি। তিনি নানা উৎসাহমূলক কথা বলেন। আমি তার কথা শুনে যাই। শুনে আপ্লুত হই। তাকে জানাই, বিজয় দিবসকে সামনে রেখে একদল বিদেশির অভিনয়ে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরির পরিকল্পনার কথা। তার কণ্ঠে আবেগ ঝরে পড়ে। বারবার জোর দিয়ে বলেন, তিনি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারলে ভালো বোধ করবেন। আমি তাকে জানাব বলে কথা দিই।
ইংরেজিতে ডকুমেন্টারির জন্য প্রাথমিক স্ক্রিপ্ট আমি নিজেই লিখেছি। এ স্বপ্ন আলোর মুখ দেখবে কিনা কে জানে। আমার কিন্তু ভাবতেই চোখ ভিজে উঠে। একদল বিদেশির অভিনয়ে উঠে আসবে প্রিয় বাংলাদেশের সৌর্য ও বীর্য।
যা হোক, কনসাল জেনারেলে সঙ্গে কথা বলা শেষ হলে দেখি কনসাল মো. আনিসুজ্জামানও ফোন করেছিলেন। তাদের এমন আগ্রহ দেখে ভালো লাগে। লেখাটি নিয়ে ইস্তাম্বুলপ্রবাসী শিক্ষার্থীদের উৎসাহও কম ছিল না। এখানে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির মাহবুব রানা, ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুমিন ও ইয়েলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির তানভীর হাসান রকি, কবি সালেহ ইমরানের কথা না বললেই নয়। এত ভালো লাগার মধ্যে কিছুটা দুঃখবোধও থেকে যায়। যেমন আমার বন্ধু কবি হুসাইন আজাদের এ লেখাটি পড়ার সুযোগও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোতে যাকে প্রথম দেখায় মনে ধরেছিল, সেই সে...।
লেখালেখিতে আর্থিক কোনো লাভ নেই। লেখা বিষয়টাই অলাভজনক। একটি গল্প পড়ে কোনো ভদ্রলোক হয়তো কাঁদছেন, তার শোয়ার ঘরে হয়তো শোভা পাচ্ছে সে গল্পের হার্ড কপি। কিন্তু গল্পকারের জায়গা তার বাড়ির ত্রিসীমানায়ও হয় না। বিদেশে সাহিত্য চর্চার পরিবেশ ভিন্নরকম হলেও বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত এটাই নিয়তি।
তবে আমার কাছে মনে হয়, লাভ লোকসানের হিসাব সব সময় করা যায় না। ভালোবাসার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। আমি যেমন আমার প্রেমের জন্য, প্রেমের মানুষটির জন্য লিখে যাই অনবরত। তার জন্য প্রেমের কবিতা পড়ি। প্রেমিক কবির সঙ্গে একাত্ম হই। আমার ভালোবাসার কথা ভালোবাসার মানুষটিকে লেখায় লেখায় জানাই।
একজন রমণী, শুধু আমার ভালোবাসা। আর প্রকৃতির রানি বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের ভালোবাসা। আমি তাই বাংলাদেশ নিয়ে লিখে যাই। নিজের লেখায় পজিটিভ বাংলাদেশকে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখি।
জানি এ জীবনটা অনেক কঠিন, কণ্টকাকীর্ণ। মাঝে মধ্যে হতাশ হই। ভাবি সব ছেড়ে শুধু ক্যারিয়ার নিয়ে ছুটি। ঠিক সে সময়গুলোতে এমন মানুষগুলোর ফোন আমাকে আশাবাদী করে তোলে। নতুন করে কিছু করার স্বপ্ন দেখি। নিজের ভেতর অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। আজ যেমন করছে। এই দিনে প্রথম আলো ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ধন্যবাদ না দিলে লেখাটা অপূর্ণ থেকে যাবে।
কবির মনভোলানো কবিতায় নয়, আমাদের সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় ধনে, ধান্যে ও পুষ্পের সমাহারে বাংলাদেশ হয়ে উঠুক সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশে। সবার জন্য শুভ কামনা।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১
প্রথম আলোর লিংক- প্রবাসে আমি, আমরা ও প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৫