মাঝেমাঝে হঠাৎ করে মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটে যায় যার জন্য মানুষ কখনো প্রস্তুত থাকেনা। মহুয়া আমার জীবনে ঘটে যাওয়া তেমনি এক ঘটনা। এখন ভাবলে মনে হয় একটা ঝড়ের মতই মহুয়া আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। বইমেলায় প্রথম যখন মহুয়ার সাথে কথা বলি তখন ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। মহুয়ার উপস্থিতি আমার ভালো লাগত। সে যেখানে যখন থাকে, গল্প করে কিংবা আড্ডা দেয় তখন সেই সময়টা আমার কাছে খুব জীবন্ত মনে হয়। আমি তাকে আগেও দেখেছি। তার উপস্থিতি উপভোগ করেছি। কিন্তু কেন যেন কখনো কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি। তাছাড়া মহুয়ার সাথে কোন দিক দিয়েই আমার কোন মিল নেই। সব মানুষেরই জীবন নিয়ে একটা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। আমরা সে দিক থেকে দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। কিন্তু তখনও আমি জানতাম না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে!
আমি নিজেকে যুক্তিবাদী মানুষ মনে করি। কখনো অযৌক্তিক আবেগকে প্রশ্রয় দেইনা। নিজের জীবনে কারো খবরদারি পছন্দ করিনা। তাই পরিচয় হওয়ার পর থেকেই মহুয়ার সাথে আমার অনেক কিছু নিয়েই দ্বিমত হতে থাকে। আমি যা ভাবি কিংবা যা কিছু আমার কাছে সঠিক মনে হত আমি সব সরাসরি বলে দিতাম। মহুয়া রেগে যেত! কষ্ট পেত এবং মাঝেমাঝে আমাকে যা তা বলে ফেলত! সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার ছিল খুব দ্রুত সে সবকিছু আবার ভুলেও যেত। মহুয়া অনেক আবেগপ্রবন এবং অনেকটাই শিশুদের মত। সে যখন রেগে যেত আমার খুব মায়া হত। কিন্তু আমি ঠিক করেছিলাম কোন ভাবেই এই মেয়েকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবেনা।
একদিন মহুয়ার সাথে আমার খুব বড় ধরনের ঝগড়া হয়। আমি অনেক কড়া কড়া কথা বলে ফেলি। মহুয়াও আমাকে যা তা বলে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এই মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব হবে না। বরং থাকলে সে আমার জন্য আরো অনেক কষ্ট পাবে। কেন যেন মহুয়ার মন খারাপ করে দিতে আমার কখনোই ভালো লাগত না। আবার আমার মাথা নত যেন না হয় সেটাও ভাবতাম। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারতাম না। তাই ভেবেছিলাম চলেই যাব! তাই গিয়েছিলাম একদিন। কিন্তু তারপর আমার জীবনে কিছু মুহূর্ত এসেছিল যার স্বাদ আমি আগে কখনোই পাইনি।
যেদিন মহুয়াকে বিদায় বলে তার উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে এসেছিলাম সেদিন রাতটা বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ রাত। কেমন যেন একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা হতে থাকে নিজের ভেতর। আমি কাঁদতে পারিনা। কাঁদিও না। মনে হচ্ছিল মহুয়ার মত কেঁদে বুক ভাসাতে পারলেও খুব আরাম পেতাম। কিন্তু তাও পারিনি। কেমন যেন একটা শূন্যতায় আমি নিমজ্জিত হয়ে যাই। শুধু মনে হচ্ছিল আমি মহুয়াকে কষ্ট দিয়েছি। মহুয়া কষ্ট পাচ্ছে। এই বোধটাই আমাকে অবশ করে দিচ্ছিল। খুব মহুয়ার কাছে যেতে ইচ্ছে করছিল। তার কথা শুনতে ইচ্ছে করছিল। তার হাত ধরে চুপচাপ বসে থাকতে চাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মহুয়া নামের এই মেয়েটিকে আমি আসলে পাগলের মত ভালোবাসি। যে ভালোবাসার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।
মহুয়া আমাকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। পরম মমতায় আমার সব দোষ মাফ করে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে। আমি কিন্তু সেই আগের মতই বেয়াদপ আছি! কিন্তু আমি এখন জানি আমি মহুয়াকে ভালোবাসি। এই জানাতাই আমার জন্য জরুরি খবর!
মহুয়া,
হয়তো একদিন অচেনা এক প্রচন্ড ঝড়ে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। কিন্তু মনে রেখো তোমার অস্তিত্ব আমৃত্যু আমার সাথেই থাকবে। যাই বলি না কেন শুধু মনে রেখো অনেক অনেক ভালোবাসি। যেখানেই থাক অনেক অনেক ভালো থেকো! তাতেই আমার সবকিছু পাওয়া হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০২