প্রায় ৫ ঘন্টার জার্নি ছিলো, শেষেরটুকু ছিলো পাইনের ঘন জঙ্গলের মধ্যে বড় বড় বোল্ডারকে পাশ কাটিয়ে। শেয়ার জীপ থেকে যখন নামলাম তখন আমার নেপালি সহযাত্রী আমার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো। তার বক্তব্য হচ্ছে, প্যাহলে গঙ্গা মাইকি দর্শন। আমি তাকে বললাম, তিষ্ঠ বৎস! যে মন্দিরটা সহস্র বছর ধরে আছে সেটা এক্ষুণি পালিয়ে যাচ্ছে না। আমার এতো দৌড়ঝাপ নেই। আমি দুটোদিন থাকছি, আস্তে-ধীরে সব হবে।
বাসস্ট্যান্ডের সীমানা ছাড়িয়ে শহরে ঢুকলাম। একচিলতে সরু গলি সোজা চলে গিয়েছে, আর গলির দুপাশে ছোটছোট করে দ্বোতলা-তিনতলা বাড়ি। পাশ থেকে ভাগীরথির ভয়াবহ শব্দ ভেসে আসছে।
নেশাগ্রস্থের মতো হেঁটে চলেছি, আমি যেন আর আমাতে নেই। কি অপূর্ব একটা শহর!
গলির শেষ মাথায় পৌছে আমি পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ছোট্ট একচিলতে নদী, বড় বড় বোল্ডারকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে চলেছে। প্রচন্ড স্রোতে কান পাতা দায়। ৩০ ফিট চওড়া হবে কিনা সন্দেহ। কেউ কি বিশ্বাস করবে যে এই স্রোতধারাই বাংলাদেশে প্রায় ৭ কিমির পদ্মা।
ছোট্ট লোহার ব্রীজটি পার হলাম। নিজের বাড়ির উঠোনে এক তরুন চেয়ার পেতে রোদ পোহাচ্ছিলেন। মনেহল যেন আশির দশকের কোন বলিউডি হিরো।
হেসে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সুদর্শন, অনুগ্রহ করে থাকার জন্য আমি তোমার এই অসাধারণ হোটেলটাতে জায়গা পেতে পারি কিনা।
তিনি বললেন, কেন নয়! আমার হোটেলের সবচেয়ে সুন্দর ঘরটাই আমি তোমার জন্য বরাদ্দ করলাম।
আমি বললাম, আমার সামর্থ্য সীমিত। তুমি কি ভাড়াটা বলবে যেন আমি বুঝতে পারি যে সত্যিই এখানে থাকার সৌভাগ্য আমার হবে কিনা।
তিনি বললেন, নিশ্চয়ই। তোমার জন্য এটা ৩০০ টাকা।
আমি আমার মুখের হাসিটা আরেকটু বাড়িয়ে বললাম, না দেখ প্লিজ, এটা ২০০ করো।
আন্তরিকভাবে হেসে তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথাও থাকুক আমার কথাও থাকুক। এটা ২৫০ হোক।
আল্লাহর রহমতে আমি নিশ্চয় পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষদের একজন। নীচের ছবিটি আমার হোটেলের বারান্দা থেকে তোলা। নদীটা এখানে একটা বাঁক নিয়েছে। আমার রুমটা কিছুটা নদীর উপর ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলো।
জায়গাটা ১১,২০৪ ফিট উপরে। ❤️
হিমালয় ভ্রমণ নিয়ে অন্য পর্বগুলো
কম খরচে আবার ভারত
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১