আগের পর্ব
পরের পর্ব
অন্য পর্বগুলি
ব্লগে আমার লেখা “কম খরচে আবার ভারত” পড়ে অনেকেই আমার সাথে ব্যাক্তিগত যোগাযোগ করেছেন। এদের মধ্যে অল্পবয়সী ছাত্রদের সংখ্যাই বেশি । তারা আমার রুটটা ফলো করে ট্যুর দিতে খুবই আগ্রহী।
আমি সবাইকেই বলেছি যে, আমি একজন বাজেট ট্রাভেলার এবং সাথে একজন পরিব্রাজক। আমি কোন জায়গায় গেলে খুবই হাঁটাহাঁটি করি। অন্যদের মতো গাড়ি রিজার্ভ করে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সাধারণত ঘুরি না। পায়ে হেঁটে না কুলালে আমি লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করি। এতে খরচ যেমন কমে তেমনি স্থানীয়দের জীবন যাত্রা সম্পর্কেও মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়।
আর আমার ভ্রমণ ধরনও একটু অন্যরকম। সবাই সাধারণত যেখানে বেড়াতে যায় আমি সেখানে যাবোই ব্যাপারটা সেরকম না। আমার যেটা ভালো লাগে আমি সেটাই দেখি। সেই জায়গাটা অন্য কারো পছন্দ নাও হতে পারে। আমি কলকাতার পার্কস্ট্রীটের খ্রীষ্টান কবরস্থান দেখেছি। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার সেই বিখ্যাত গোরস্থান। আমার কাছে জায়গাটা অসাধারণ লেগেছে। অদ্ভুত একটা জায়গা। কিন্তু কলকাতায় বেড়াতে গেলে সবাই অবশ্যই যে জায়গাটায় যায় পার্কস্ট্রীটের কাছে সেই বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যাবার সৌভাগ্য আমার এখনো হয়ে ওঠেনি। হা হা
আমি কলকাতার নীমতলা শ্মশান ঘাটে বসে বসে মড়া পোড়ানো দেখেছি। কাঠে পোড়ানো আর মেশিনে পোড়ানো দুটোই। কিছু কিছু লাশের অর্ধদগ্ধ অংশ গঙ্গায় ফেলে দেয়া হচ্ছে আর বিরাট বড় বড় পাখি, বোধহয় চীল বা শকুন সেগুলো টেনে হিঁচড়ে খাচ্ছে। পাশেই আবার কতোগুলো লোক সেই পানিতে ভক্তি সহকারে গোসল করছে।
শ্মশানের একধার দিয়ে বিভিন্ন ধরণের দোকান। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পূজোর উপাচার সামগ্রীর দোকানের সংখ্যাই বেশি। কেউ কেউ তার সদ্য কেনা বাইক নিয়ে এসেছে পূজোর জন্য, পুরোহিত সেই বাইকে সিঁদুরের তিলক কেটে দিচ্ছে।
আর আছে হরেক রকম খাবারের দোকান। পুরি তরকারি কচুরি মিষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম খাবার বিক্রি হচ্ছে সেখানে। লোকজন সেখান থেকে সেগুলো কিনে খাচ্ছে, হৈ-হুল্লোড় করছে। অথচ মড়া পোড়ানোর গন্ধে চারপাশ এতো ভারী হয়ে আছে! বীভৎস বীকট দুর্গন্ধ। আমার মনে হয়েছিলো এখান থেকে কোন একটা জিনিস কিনে ৫০ মাইল দূরে নিয়ে গেলেও জিনিসটা থেকে মড়া পোড়ানোর গন্ধ পাওয়া যাবে। কিন্তু এই ব্যাপারটা নিশ্চয় এখানকার লোকের কাছে স্বাভাবিক, কারণ তারা এর মধ্যে থেকেই অভ্যস্থ।
আপনারা বোধহয় একটা তথ্য জানেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৎকার কিন্তু এই নীমতলা শ্মশান ঘাটেই হয়েছিলো। তার স্মরণে এখানে একটা সমাধী আছে। আমিও কিন্তু ব্যাপারটা জানতাম না, এখানে এসেই জেনেছি।
শ্মশানের পাশ দিয়েই রেল লাইন। হাজার হাজার লোক সেই রেল লাইন ধরে হেঁটে চলেছে। আবার যখন ট্রেন আসছে তখন লোকগুলো রেল রাস্তা ছেড়ে নীচে নেমে দাড়াচ্ছে। বৈদ্যুতিক চালিত এই সার্কুলার ট্রেনগুলি প্রচন্ড গতিতে ছুটে চলে। আর এই ট্রেনগুলোতে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের উপছে ওঠা ভীড়। সার্কুলার ট্রেনের বিশাল চওড়া দরজায় ঝুলছে অসংখ্য মানুষ, এমনকি মহিলারাও।
আমি সবচাইতে অবাক হয়েছিলাম জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ি খুঁজতে গিয়ে। পুরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। কেউ রবীন্দ্রনাথের বাড়ি চেনে না। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, কেউ ২০ বছর ধরে শাহবাগে থাকে অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চেনে না।
প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে বিভিন্ন মানুষ জনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে একটা গলির বস্তির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম। আমাকে অনেকক্ষণ ধরে ঘুরঘুর করতে দেখে এক মুশকো লোক এসে আমাকে ধরেছিলো। আর অবশেষে সে লোকটাই আমাকে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছিলো। এই ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে আমি এই লোকটাকেই পেয়েছিলাম যে বাংলায় কথা বলে। এই এলাকার যে লোকগুলোকে আমি রবীন্দ্রনাথের বাড়ির হদিস জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা বাংলা বলা তো দূরে থাকুক কেউ কেউ বাংলা বুঝতেও পারে না। এরা রবীন্দ্রনাথের বাড়ি চিনবে কিভাবে! হায় কপাল, যে লোকটা সবচাইতে বড় বাংলা সাহিত্যিক তার নিজের পাড়ার লোকেরাও বাংলা জানে না, তাকে চেনা তো দূরে থাকুক!!!
হাওড়া ষ্টেশনটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আমি যেবার প্রথম কলকাতায় গিয়েছিলাম দূর থেকে এই বিশাল লাল কাঠামোগুলোকে কোন রাজপ্রাসাদ ভেবেছিলাম। আসলেই আসাধারণ আমার কাছে। আমি একবার সারাটা দিন ধরে এই ষ্টেশনটা ঘুরে দেখেছি। কি বিশাল ভীড়। কতো লোক আর কতো ট্রেন আর কতো ব্যাস্ততা! সারাটা দিন ধরে দেখেও আমার আঁশ মেটেনি। কিন্তু অন্য সবার কাছে এটা হয়তো শুধুই স্টেশন।
পরে আমি একবার হাওড়া স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে সারা রাত ধরে এই ষ্টেশনটা দেখেছি। মধ্যরাতের পরে এই ষ্টেশনটা একেবারেই অন্যরকম। কোন বাইরের লোককে তখন সেখানে থাকতে দেয়া হয় না। পুরো স্টেশনটা জুড়ে তখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলে। সে এক বিশাল কর্মজজ্ঞ। এতো বড় ষ্টেশনটা সেসময় ধুয়ে মুছে সাফ করা হয়। তখন মনেই হয় না যে সারাদিন ধরে এই স্টেশন দিয়ে প্রায় ১১ লাখ লোক চলাফেরা করেছে।
রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত হয়ে আমি এক প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তখনো আমার পকেটে প্রায় ১০ হাজার টাকা, অনেকের কাছে এটা হয়তো কোন টাকাই না কিন্তু এটা আমার মতো একজন বাজেট ট্রাভেলারের কাছে এটা অনেক বড় একটা এমাউন্ট। অথচ আমি বিদেশের এক রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে ঘুমাচ্ছি কোন রকম নিরাপত্তা ছাড়া। হোক না সে পাশের শহর কলকাতা। হা হা
কলকাতার ট্রাম আমার দেখা সবচাইতে অসাধারণ একটা বাহন। কলকাতায় গিয়েছি অথচ ট্রামে চড়িনি এরকম কখনো হয়নি। সর্পিল গতিতে ট্রামের চলা দেখে মনে হয়েছে যে এটি বুঝি খুব আস্তে চলে। আমি বেশ কয়েকবার ট্রাম চলন্ত অবস্থায় উঠতে বা নামতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে একবারও সফল হইনি। এটি আসলে বেশ দ্রুতই চলে। ছুটন্ত অবস্থায় এটাতে ওঠা বা নামা যায় না।
সবচাইতে ভালো লাগে ট্রামের ক্রসিং গুলো দেখতে। প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে ট্রামের কিছু বিহারী কর্মচারী শাবল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বিহারী কর্মচারীগুলো ট্রামরাস্তার ক্রসিঙে যে ট্রামের যে রুট, শাবল দিয়ে ট্রামের লাইন সেইদিকে ঘুরিয়ে দেয়। এই বিহারী লোকগুলো কিন্তু বেশ দরিদ্র। আমি যখন এদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তখন আমার মতো গরীব লোককে দেখেও ওরা বেশ বড়লোক ভেবেছিলো। হা হা
আমার কাছে সবচাইতে সুন্দর লেগেছে এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর যাবার ট্রামপথটি। ময়দানের পাশ দিয়ে এই ট্রাম রাস্তাটি চলে গেছে। দুপাশ দিয়ে সবুজ ঝাকড়া গাছের সুড়ঙ্গ আর মাঝখান দিয়ে দুই সারি ট্রাম পথ চলে গেছে, ট্রাম পথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই ব্যাপারটি দেখতে এতো ভালো লাগে যে বলার মতো না। কিন্তু ট্রামের ভিতরে বসে থেকে এই ব্যাপারটি পরিপূর্ণ ভাবে হৃদয়াঙ্গম করা সম্ভব না।
তবে সবচাইতে উপভোগ্য লেগেছে বিবাদি বাগ থেকে উত্তর কলকাতা হয়ে শোভাবাজার যাবার ট্রাম রুটটি। এটা আমার এতো ভালো লেগেছিলো যে আমি একবার সারাটা দিন ধরে এই রুট ধরে কয়েকবার চলাচল করেছি। পুরানো কলকাতার সরু সরু রাস্তার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে এই ট্রাম রাস্তা। দুপাশে দুশো তিনশো বছরের পুরানো তিনতলা-চারতলা বাড়ি। দেখলে মনে হয় যেকোন সময় ভেঙে পড়বে। আর সরু সরু গলীর মধ্যে ছোট ছোট মন্দির। সেই মন্দিরগুলো থেকে ঘন্টা ধ্বনি ভেসে আসছে। দুপাশের লোকের ব্যাস্ততা আর জ্যাম। দোকানগুলোতে কাসা তামা পিতলের জিনিস বিক্রী হচ্ছে। প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে পানির চৌবাচ্চা। গঙ্গা নদী থেকে পানি এসে তাতে জমা হচ্ছে, তারপর চৌবাচ্চা উপছে উঠে সেই পানি নর্দমা দিয়ে আবার গঙ্গায় মিশে যাচ্ছে। পুরুষেরা প্রায় নগ্ন হয়ে কোনরকমে ছোট একটা জাঙ্গিয়া পড়ে সেই চৌবাচ্চার পানি দিয়ে গা ডলে ডলে গোসল করছে।
কুমোরটুলি পার হবার সময় দেখা যায় দেব-দেবীর বিভিন্ন ভঙ্গিমার কাঠামো। কোনটা তৈরীর পর রোদে শুকাচ্ছে আবার কোনটাতে কেবল মাটির প্রলেপ লাগানো হয়েছে। কী করুণ যে লাগে এই অসম্পূর্ণ মাটির প্রতিমার ভঙ্গিগুলো দেখতে। তার মধ্য দিয়ে ঘন্টা বাজিয়ে ট্রাম এগিয়ে চলেছে। উফ! ব্যাপারটা পুরাই অস্থির আমার কাছে! কোন ভালো ফটোগ্রাফার নিশ্চয় এই বিষয়গুলো খুবই রুচিসম্পন্নভাবে তার ক্যামেরায় চিরবন্দী করে রাখতে পারতো। কিন্তু আমার তো সেই ক্ষমতা নেই, তাই আমি শুধু চোখ দিয়ে সবকিছু বুভুক্ষের মতো গিলি।
আবার যেখানে সেখানে হুট করে নেমে পড়ি আমি। কলকাতার স্ট্রীট ফুডগুলো খুবই রীচ, আর খুব সস্তা। বিশেষ করে মিষ্টিগুলো। আমি একটা জিনিস দেখেছি, বড় দোকানগুলোর তুলনায় পাড়ার মোড়ের ছোট দোকানগুলোর মিষ্টি বেশি মজার হয়। শোভাবাজারে রাস্তার ধারে এক ছোট দোকানে আমি একদিন সকালবেলা গরম গরম মিষ্টি খেয়েছি। আমি প্রথমে বুঝিনি যে মিষ্টিটা গরম ছিলো। আস্ত মিষ্টি মুখে পুরে আবার সঙ্গে সঙ্গে বের করে ফেলেছি। হা হা । এর স্বাদ আমার মুখে এখনো লেগে আছে। মনে হয় শুধুমাত্র ওই দোকানের মিষ্টি খাবার জন্যই আবার কলকাতায় যেতে হবে।
আমি একা ঘুরতে ভালোবাসি। একা ঘোরা সবচাইতে ভালো। বিরক্ত করার কেউ থাকে না। যখন যা খুশি তাই করা যায়। যদিও একা ঘুরতে গেলে খরচ একটু বেশি পড়ে যায়, কিন্তু এই টাকায় অনেক স্বস্তি কেনা যায়। ইচ্ছা হলো সারাদিন হাটলাম, কেউ কিছু বলার নেই। ইচ্ছা হলো সারাদিন না খেয়ে থাকলাম, কারো কিছু বলার নেই। ইচ্ছা হলো সারাদিন হোটেল থেকে বের হলাম না, তাতেও কারো কিছু বলার নেই। একা ট্যুর দেয়া মানে পুরাই স্বাধীন একটা অবস্থা। আর একা ট্যুর দেবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আশেপাশের সবকিছু খুব মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করা যায়। কিন্তু কোন সঙ্গী থাকলে বেশীর ভাগ মনোযোগ সঙ্গীর প্রতিই চলে যায়। তবে দলগত ট্যুরের নিশ্চয় আলাদা আকর্ষণ আছে। নাহলে এরকম কথা কেন হবে, একা ভোগ করা যায় কিন্তু উপভোগ করতে দল লাগে।
ট্যুর দেবার জন্য যে অনেক দূরেই যেতে হবে তা কেন? আমার সবচাইতে প্রিয় শহর ঢাকা। এখানেও তো দেখার জিনিসের কমতি নেই। আমি তো প্রায়ই গুলিস্তানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। এতো মানুষ আর তাদের এতো রকম ব্যাস্ততা। কতো কিছু আছে দেখার। কতো রকম হকার যে আছে, তা শুধুমাত্র যারা চাঁদা তোলে তারাই জানে। পুরানো জুতো থেকে শুরু করে হিরোইন বিক্রেতা পর্যন্ত।
আর আছে বিভিন্ন ধরনের যাত্রী। স্যুটেড ব্যুটেড ঝকঝকে পুরুষ থেকে শুরু করে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে সদ্য নেমে আসা ১০/১১ বছরের বাচ্চার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ বোরকা পরা মা পর্যন্ত। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় এইরকম মহিলাদের হাতে একটা করে পুরানো সেলাইকরা ছেঁড়া ময়লা কাপড়ের ব্যাগ,যা সে খুব শক্ত করে ধরে আছে আর অন্য হাতে ধরে আছে তার ছেলেকে, যে ছেলের হাতে খুব মমতায় ধরে রাখা একটা চটের ব্যাগ, যার মধ্য দিয়ে একটা জীবন্ত পাতিহাঁস উঁকি মারছে। গুলিস্তানে দাঁড়িয়ে তারা ওইপথে চলাচলকারী সব লোকাল বাসের হেল্পারকেই জিজ্ঞাসা করে যে বাসটা কোথায় যাবে।
ঢাকা শহরে দেখার মতো আরেকটা মজার জিনিস হচ্ছে, যারা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রসাব করছে তাদের ভঙ্গিগুলো। খুবই মজাদার! একেকজনের ভঙ্গি একেকরকম। কেউ মোবাইলে কথা বলতে বলতে প্রসাব করছে, কেউ সিগারেট খেতে খেতে প্রসাব করছে, কেউ সবাইকে দেখিয়ে প্রসাব করছে, কেউ খুব সাবধানে প্রসাব করছে যেন অন্য কেউ তারটা দেখে না ফেলে, আবার কেউ উঁকিঝুঁকি অথবা আড়চোখে আরেকজনের প্রসাব করা দেখার চেস্টা করছে। হা হা
ঢাকার দ্বোতলা বাসগুলো আমার খুবই ভালো লাগে। আমি প্রায়ই কোন দ্বোতলা বাস দেখলে সেটাতে উঠে পড়ি।দ্বোতলার একদম সামনের সীটটাতে বসলে মনে হয় আমিই রাজা। ভারতীয় কাশ্মীরের শীতকালীন রাজধানী জম্মু থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী নয়াদিল্লীতে আসার সময় দ্বোতলা বাসে উঠেছিলাম। ওদের ওখানে দূরপাল্লার বাসেও শোবার ব্যাবস্থা। ৬০০ কিমি যাত্রাপথ কিভাবে কেটে গেল আমি একেবারেই টের পাইনি। অনেকটা স্বপ্নের মতো। রাতে এতো ঠান্ডা পড়ে আমি তো জানতাম না। বাধ্য হয়ে আমার অচেনা ঘুমন্ত সহযাত্রীর গা থেকে চাদর টেনে নিয়ে আমার গায়ে দিয়েছি। হা হা । পরে কাশ্মিরী এই তরুনের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে।
আরো অনেক কিছু লেখার আকাঙ্ক্ষা ছিলো, কিন্তু সেসব পরে অন্যএক সময় হবে।
আমি স্যামহোয়ার ইন ব্লগের প্রতি একরাশ ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ঝকঝকে লেখা আর ছবি দেখে এই ব্লগটার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। পরে দেখলাম এখনকার সবগুলো লেখার মান অন্যান্য বাংলা ব্লগগুলোর তুলনায় খুবই ভালো। সদস্য হয়ে গেলাম। আজ দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেছে। সামুর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি সামুকে আমার ব্যাক্তিগত কারণে একটা বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার লেখা “কম খরচে আবার ভারত” সিরিজের একটা পর্ব প্রথম পাতা, নির্বাচিত পাতা, আলোচিত পাতা, ভ্রমণ পাতা আর ছবি পাতা এই ৫টা পাতায় একই সাথে স্থান দেবার জন্য। সামুর মতো কোন প্ল্যাটফর্ম আছে বলেই আমি আমার মনের কথাগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারছি।
সামু ব্লগের বোকা মানুষ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বোকা মানুষ নামের এই লোকটা মাস শেষে সমস্ত ভ্রমণ লেখাগুলো সংকলন করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন যে, আমার ট্যুরের ধরণ তাদের অনেক ভালো লাগে। শুনে প্রীত হলাম। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু ভাই, আমার ট্যুর স্টাইল ফলো করে ঘুরতে গিয়ে যদি কারো কোনরূপ সমস্যা হয় তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিবেন না। হা হা। আমার লেখা পড়ে আমার সাথে যারা দেখা করতে এসেছেন তারা সবাই পরে আমাকে বলেছেন যে আমার মাথায় কোন সমস্যা আছে। কি কারণে ব্যাপারটা বলেছে আমি একেবারেই বুঝতে পারিনি। যাই হোক আমি কিন্তু কিছুই মনে করি নাই। হা হা। তবে আমি সবাইকেই বলেছি ট্যুর শেষে দেশে আসার সময় অবশ্যই আমার জন্য ভালো কোন উপহার আনতে হবে। একজন তো আমাকে জানিয়েছে সিমলা থেকে আমার জন্য ভালো দেখে একটা মহিলা পুলিশ নিয়ে আসবে। হা হা হা। ভালো থাকবেন সবাই। সবশেষে আমার এই ট্যুর সিরিজটার প্রতি এতো সাড়া দেবার জন্য আপনাদের সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২২