হ্যাঁ উপরের শিরোনাম এর সবগুলোই আমার অভিব্যাক্তির প্রয়াস । শুধু আমার ই নয় আমার সাথে আরও কয়েকজন আছেন এবং আমি নিশ্চিত এমন অভিব্যক্তি হবে আপনাদেরও ।
যাই হোক এবার মূল কথায় আসি । আমাদের সহ ব্লগার ও আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু " ব্লগার একজন আরমান " গত ১৭-০১-২০১৪ দিবাগত রাত ১১:৪৫ মিনিটে শুভ কাজটা সেরে ফেলেছেন । জী হ্যাঁ তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ।
আরও ছবি আসছে ...........
ঘটনার বিস্তারিত আলোকপাতঃ
দুপুর ২ টা বাজে । বাসা থেকে বের হয়েছি ; ভার্সিটিতে যাবো । বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে হাঁটছি । এমন সময় ফোন টা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করার আগেই কেটে গেল। বের করে দেখি আরমান মিস কল দিয়েছে । একটু অবাক হলাম কারন আরমান কখনো মিস কল দেয় না ; তো আমি কল ব্যাক করার জন্য কল বাটন চাপতেই আরমানের কল আসলো । খুব তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করতেছে ' কই তুই ? " আমি ভাবলাম ও হয়তো আমাকে দেখেছে তাই আমি ওকে পালটা জিজ্ঞেস করলাম " তুই কই " ? বললো ও বাসায় । এরপর ইনিয়ে বিনিয়ে কই যাই , কখন ফিরবো জিজ্ঞেস করার পরে বললো " তোর সাথে জরুরি কথা আছে , কাজ শেষ করে আমার বাসায় আসবি " । আমি তাড়াহুড়োর মাঝে ছিলাম তাই আচ্ছা বলে কল কেটে দিয়ে বাসে উঠলাম ।
কিন্তু বাসে উঠার পর থেকেই মনটা যেন কেমন খুত খুত করছিল । কারন আরমান আমাকে কখনো এমন করে কিছু কখনো বলে নি । আমার আর আরমানের বন্ধুত্ব প্রায় ১৬/১৭ বছরের ; আমরা দুইজন একজন আরেকজনের এমন কোন কথা নেই যা জানিনা । আমি আরমানকে কল দিলাম ; জিজ্ঞেস করলাম " কি হইছে ? এমন গুজগুজ না কইরা কি কইবি ফোনেই আগে বল !" তখন সে যে কথা বললো তা আমার অজানা না হলেও ; পুরোপুরি জানাও ছিল না। অন্তত সেদিন , সেই সময় এমনকি এই বছর তো ভালো ২/৪ বছরের জন্য আমি শুনতে অথবা ফেইস করতে প্রস্তুত ছিলাম না ।
আরমান যা বলেছিল তার সারমর্ম করলে দাড়ায় যে , বর্তমান ভাবী-কে তার বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দেবার জন্য গত দু-তিন দিন ধরে তিন খানা পাত্রের সম্মুখে পেশ করেছেন এবং সে কারনে তিনি আরমানের উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন সকাল বেলা পরিবার- পরিজন ছেড়ে সারাজীবনের জন্য রওনা হয়েছেন । অতঃপর আর কি করার ! " আমি আসছি " শুধু এই কথাটুকু বলেই আমি কল কেটে দিলাম । যেতে যেতেই আমাকে ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা কল দিলেন এবং ঘটনার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন । তিনিও ততক্ষণে আরমানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন ।
কোন ভাবে তড়িঘড়ি করে ভার্সিটির কাজ চুকিয়ে ছুটে এলাম আমার বন্ধুর বাড়ি । এসে যাদের কেই কল দেই তাদের ফোনই ব্যাস্ত পেয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যাবার উপক্রম হতে হতেও বেঁচে গেলাম কাল্পনিক ভালোবাসা - ভাইয়ের কল রিসিভ করার জন্যে । উনার সাথে ব্লগার স্বপ্নবাজ অভি ও ছিলেন। কাল্পনিক ভাই জানালেন যে উনি পাশেই আছেন এবং মিনিট দুই পরেই ভাইয়ের দেখা পেলাম । ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতেই দেখলাম একটি ব্যাটারি রিক্সা যোগে নতুন তোষক , জাজিম , বালিশ , বেড কাভার নিয়ে ব্লগার আমিনুর , ব্লগার খাটাস এবং আমার বন্ধু বাসার সামনে এসে নামলেন । বন্ধুর আমার মুখ খানা লাল সাথে হাঁসি লেগেই আছে ! তখন ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম না আসলেই ঘটনা সত্য ( মনে হয় ) । এরপর সবাই ধরা ধরি করে ওগুলো নিয়ে বাসায় উঠালাম । এর মাঝেই উপস্থিত হলেন ব্লগার কান্ডারি অথর্ব ভাই। তিনি এসে জানালেন যে কাজী সাহেবের সাথে কথা পাকা করে এসেছেন । সাথে করে নিয়ে এসেছেন আরমান ও ভাবীর ফুলসজ্জার জন্য রুম ডেকোরেশনের সরঞ্জাম । আমার আর খাটাস ভাই এর উপর দায়িত্ব পড়লো রুম ডেকোরেশনের । ব্লগার কুনো ব্যাঙ এর মাঝেই নিয়ে আসলেন কাঁচা বাজার । তিনি আর কাণ্ডারি ভাই চলে গেলেন । বিয়ের রান্নার দায়িত্ব পড়লো নামি দামি বাবুর্চি থুক্কু ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসার উপরে । তিনি চটজলদি জামা কাপড় ছেড়ে লুঙ্গি আর টিশার্ট পড়ে বসে গেলেন তার কাজে । আর অভি আগের দিন রাতে না ঘুমানোর কারনে ঘুমাতে চলে গেলেন । কিন্তু ঘুমাতে পারলেন না । আরমান বিয়ে করছে ! এই চিন্তা টা তাকে ঘুমাতে দেয় নি ।
এর মাঝে কাণ্ডারি ভাই আর ভাবী মিলে বের হলেন বউ এর জন্য শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রি কিনতে । সন্ধার দিকে ওগুলো নিয়ে তিনি চলে আসলেন । এদিকে আমরা বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত । বন্ধু দোকা হয়ে যাচ্ছে আর আমি একাই রয়ে যাচ্ছি এই দুঃখ বুকে নিয়েই সাজাচ্ছিলাম । ৭ টার কিছু পরে আমি , খাটাস ভাই আর বাবুর্চি থুক্কু কাল্পনিক ভাই ছাড়া সবাই চলে গেলেন অন্যান্য কাজ করতে ।
১০ টার দিকে আমরা ফোন পেয়ে বাসা থেকে রওনা হয়ে গেলাম । সবাই গিয়ে কাজী অফিসের সামনে চায়ের দোকানে বসে আছি । আমাদের সাথে মাগুর রুবায়েত, সজিব ভাই ও জেরিফ এসে যোগ দিলেন।
ভাবী আসলেন যখন তখন রাত ১১ টার মতো । ব্লগার আমীন ভাইয়ের বোনের বাসায় তাকে আমাদের আরমান সাহেব নিয়ে গিয়েছেন । তড়িঘড়ি করে কোন মতে বেচারি ভাবিকে বিয়ের জন্য কেনা শাড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হলো কাজী অফিসে । ততক্ষণে রাত ১১.৩০ বেজে গেছে । ভাবীর চেহারায় ৩৫০ কিঃমি পথ পাড়ি দেবার ক্লান্তি স্পষ্ট ! তবু যে কিছুই করার নেই , বিয়ে বলে কথা ! আমরা সবাই কাজী সাহেবের অফিসে ঢুকলাম । প্রাপ্ত বয়স্ক কিনা উহার সত্যতা যাচাই বাছাইয়ের পড়ে শুরু হলো বিয়ের কার্যক্রম ।
ভাবীর তিন বার কবুল বলা এবং আরমানের হাঁসি হাঁসি মুখে তিন বার কবুল বলার পড়ে দুইজনের দস্তখতের দারা বিয়ের কাজ এগিয়ে চললো । এরপর আসলো ভাবীর উকিল বাপ যিনি তার দস্তখতের পালা । সবার সম্মতি ক্রমে ভাবীর উকিল বাপ হিসেবে ব্লগার খাটাস নিয়োগ পাইলেন এবং তার মুল্যবান দস্তখত প্রদান করিলেন । পাত্রের সাক্ষি হিসেবে আমি ও ব্লগার মাগুর দস্তখত দিলাম । কাজী সাহেবের বিয়ের দোয়া ও মোনাজাত এর পর মিষ্টি মুখের মাধ্যমে একজন আরমান বিবাহিত হিসেবে নিবন্ধন লাভ করিলেন ( অবশেষে ) ।
কাজী সাহেবের উপুযুক্ত পাওনা পরিশোধ শেষে রাত ১২ টার দিকে আমরা সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রউনা হইলাম । একটি সিএনজি যোগে আরমান, ভাবী ও ব্লগার সপ্নবাজ অভি এবং আমি রওনা হলাম । বাসায় এসে সবার পৌছাতে পৌছাতে রাত ১ টা । আমাদের বিয়ের বাবুর্চি ইয়ে মানে কাল্পনিক ভাই পোলাউ রান্না করতে ছুটে গেলেন । গোশত ও অন্যান্য খাবার আগেই রান্না হয়ে গিয়ে ছিল । সময়ের অভাবে পোলাউ টা রান্না করা সম্ভব হয় নি ।
যাই হোক রাত ২ টার কিছু পরে আমরা খেতে বসলাম । সবাই মিলে হাঁসি ঠাট্টা করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম । যে কথাটা না বললেই নয় , তা হলো ; সেইদিনের রান্না টা দারুন হয়েছিল । কাল্পনিক ভালোবাসা সত্যিই অসাধারন রান্না করেন ।
অতঃপর সেই সময় আসিল । আরমান আর নব বধু কে উহাদের ফুল সজ্জার জন্য নির্ধারিত রুমে প্রেরন করা হলো ।
এবং তারপর ............................. না পাঠকগণ তারপরের কাহিনী আমাদের আর জানা নেই । অনুমেয় কিছু না লেখাই ভাল পাঠকগণের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই না হয় বুঝে নিবেন ক্ষন
এভাবেই আমাদের একজন আরমান জীবিত থেকে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ ঘটলো ... ।
বিঃদ্রঃ কিছু কথা না বলে থাকতে পারছি না । ভার্চুয়াল কোন প্লাটফরম থেকে এমন কিছু মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি যাদের কে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার মতো সাহস আমার নেই । তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো আমি । এরা না থাকলে হয়তো আমার বন্ধুর এভাবে বিয়ে করা কখনো সম্ভব হতো না । আপন ভাই অথবা আত্মীয় স্বজনরাও অনেক ক্ষেত্রে এমন ভাবে পাশে থাকেনা । আমি আপনাদের সবার নাম উল্লেখ করতে চাই কিন্তু হয়তো এভাবে উল্লেখ করাটা ঠিক হবে না । আপনাদের কিছু দেবার সামর্থ্য আমার নেই । তাই শুধু এটুকুই বলবো আপনাদের অনেক ভালবাসি এবং একজন আরমান আই লাভ ইউ দোস্ত !
উৎসর্গঃ ব্লগার একজন আরমান ও নিশী (ভাবী) কে । সুখে থাকো তোমরা সবসময়