অঁরি কার্তিয়ে ব্রেস
৩৫মিমি লাইকা ক্যামেরা। যে ক্যামেরা দিয়ে ১৯৩২ সাল থেকে ছবি তুলে গেছেন তিনি, সে সময় থেকেই তাঁর নিত্য সঙ্গি ছিলো সে ক্যামেরাটি। তিনি ক্যামেরা দিয়ে মানুষ, নগর, সভ্যতা মহাদেশীয় মাটির গন্ধে পৃথিবীর মাটিকে সিক্ত করেছেন। আধুনিক আলোকচিত্রের জনক তিনি, শতাব্ধীর শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রীদের একজন হিসাবে বিবেচিত অঁরি কার্তিয়ে ব্রেসঁ। ১৯০৮ সালে অঁরি কার্তিয়ে ব্রেসঁ ফ্রান্সের সন্তেল পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। সংস্কৃতি ও ঐশ্বর্যে বনেদি সে পরিবারের ছোট ছেলে অঁরি কার্তিয়ে ব্রেসের কাকা লুই কার্তিয়ে ছিলেন বিখ্যাত প্রি দা রোম জয়ী শিল্পী। চাচার আগ্রহে তিনি চিত্র শিল্পী হিসাবেই তাঁর শৈল্পিক জীবন শুরু করেন। ১৯৩০ সালের দিকে তার মনের ভেতর কী এক তোলপাড় শুরু হলো - ‘আমি আমার মত হতে চাই’ আর এই ভাবনা থেকেই তিনি ক্যামেরা হাতে তুলে নিলেন। তারপর তিনি ফ্রান্স থেকে আফ্রিকা চলে যান। তখন আফ্রিকা ফ্রান্সের ঔপনিবেশ। সেখানে জীবনের মন্থনে প্রবেশ করে ব্রেসেঁর ভাবনার জগত বদলে যায়। তিনি লিখলেন ছবি তোলা এবং পৃথিবীকে বদলে দেয়া আমার জীবনের সব কিছুর চেয়ে গুরুত্বপুর্ন। আফ্রিকাতে ব্রেসের জীবন কেটেছে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী করে। ব্লাকওয়াটার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই ছবি ছবি তোলার শিল্পিকে ফিরে আসতে হয়।
ব্রেস একজন সচেতন নাগরিক ছিলেন। রাজনীতির প্রতিও তাঁর ভীষন ঝোঁক ছিল। এক সময় তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৩৭ এর দিকে তিনি দলিয় সন্ধ্যাকালিন দৈনিক ছো ছোয়ায় আলোকচিত্রি হিসাবে নিয়োগ পান। তার ছবির বিষয় ছিল গন মানুষ ও সামাজিক চরিত্র সমুহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ফরাসি সেনাবাহিনীর ফিল্ম ও ফটো গ্রাফিক ইউনিটে যোগ দেন। প্রো-ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময় তিনি বন্দি হন। তিনি সে সময় শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন , কিন্তু তাঁর ছবি তোলা কখনও বন্ধ হয়নি। কারন তিনি তার প্রিয় ক্যামেরা লাইকাকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার মনে করতেন। আলোকচিত্র তাঁর কাছে ছিল বেঁচে থাকার অন্যতম একটা দিক। বিশ শতকের কিছু অবিস্মরনিয় ঘটনা অঁরি তাঁর ক্যামেরা বন্দি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। গান্ধীজির শেষ মুহুর্তের ছবি তাঁরই তোলা। ৬৮র ছাত্র আন্দোলনসহ দেশ সমাজ রাজনীতির অমূল্য ইতিহাস স্মৃতির সাি হয়ে আছে ব্রেসের ক্যামেরায়। ব্রেস ফ্রান্স মুক্তির ছবি তুলেছেন। সারা পৃথিবী চষে তিনি যে সব আলোকচিত্র তাঁর ক্যামেরায় ধারন করেছেন, তা এককটা শিল্পের সম্ভার ও ইতিহাসের দলিল হয়ে আছে।