somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রস খাবি তুই তানা নানা তানা নানা না তা...

০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমবাগান। দেশ জুঁড়ে বহু আম বাগান আছে। তবে আমার লেখা আমবাগানের বিশেষত্ব অন্যখানে। এ আমবাগান শুধু একটা আমের বাগান নয়, এবাগান আমাদের একান্ত। আর আম বাগানটি দিনদিন বিখ্যাত হয়ে উঠছে রসআড্ডাস্থল হিসেবে। এখানে রস খেতে প্রতিবছর একত্রিত হয় একদল রসিয়াল। রসিয়ালদের জমজমাট রস আড্ডা বসে এখানে, আমরা বলি রসউৎসব। প্রতিবছর মে মাসের ১ তারিখ সে উৎসবের দিন। আমাদের মে মাস মিস হতে পারে কিন্তু রস আড্ডা নয়, এবারও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। এবার ব্যাপ্তি ছিল অরও বেশী, প্রায় আশিজনের দল মিলিত হয়েছিলাম সাদুল্লাপুরের মৈস্তাপাড়ার মুসারবাড়ি এলাকার আমবাগান রসউৎসবে। রস আড্ডায় আপনার অংশিদারিত্ব ছিলনা। যেতে পারেননি, তবু আড্ডা আপনাকে বঞ্চিত করবেনা। চলুন আপনাকে আমবাগানের সেই রসউৎসব থেকে বেড়িয়ে নিয়ে আসি।
উৎসবের দিন
রসউৎসবের দিন ভোর রাত থেকে শুরু হল প্রচন্ড ঝড়ের সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সে বৃষ্টি রূপ নিল মুষলধারায়। আস্তে ধীরে দিনের আলো ফুটে উঠলেও বৃষ্টি কমার কোনও লন ছিলনা। রসউৎসবের আয়োজক গোলাম রাব্বানীর মন খারাপ। শুধুকি রাব্বানী, আসরে অংশগ্রহন ইচ্ছুক সব বন্ধুরই মনখারাপ। দাউদ হোসাইন রনির একটু বেশীই যেন। এক বছর হয়েছে বিয়ে করেছেন। নতুন বউ বিয়ের প্রথম বছরই রসআড্ডায় গিয়ে বুদ হয়ে দারুন মজা পেয়ে এবার সেই কাকডাকা ভোর থেকে প্রচন্ড ঝড় উপো করে উৎসব তৈরীতে ব্যাস্ত, চোখে-মুখে চিন্তার রেখা শেষ পর্যন্ত না আড্ডাটাই রসাতলে যায়। লাবু-লাবনী ফোনে কনফার্ম করছেন কে কে যাচ্ছেন আবার যাচ্ছেননা। কারো মুখে না নেই। শোনা গেল এবার আসরে নুতন অতিথি গামছা স্বপন, একলা পথিক (তুষার), শাওন(তিন)’র কথা। তায়েব মিল্লাত এক বছর বিরতী শেষে আবার উৎসবে সঙ্গি হচ্ছেন, তবু উদ্বেগ কমেনা। আহারে সাধের বৃষ্টি। কত সুখ পাই তোকে নিয়ে, তোকে কতনা ভালবাসি। গুনগুন করে কখনও চিৎকার করে তোর জন্য গাই;আমি ছিলাম মগ্ন গহন স্বপন ঘুমের ঘোরে যখন বৃষ্টি নামল। কিন্তু আজ তোকে চাইনা, চাইনা! মন দিয়ে কিছু চাইলে নাকি পাওয়া যায়। সবার মনের কথা বৃষ্টি কমুক। তাই তো বৃষ্টি একটু কমতেই দিয়াবাড়ির বটতলায় চলে গেলেন গোলাম রাব্বানী। আমি ঘুমঘুম চোখে রাব্বানীর পাঠানো ুদেবার্তায় চোখ বুলাই। তারপর বিছানা ছেঁড়ে উঠি। তৈরী হতে হতে দেখি বৃষ্টি থেমে রোদ হেসেছে। শুভমিতা আজ উৎসবে যাবেনা, তার এ্যাসাইনমেন্ট আছে। তাকে ধলেশ্বরি জোড়া সেতুর রিপোর্ট করতে হবে, ছবিও তোলা লাগবে। আমার মেজাজ খারাপ, তাই তো শুভমিতার নাস্তা বানানো হলেও, না খেয়েই পথে নামি। তারপর খুব দ্রততার সঙ্গে বাইক চালিয়ে চলে আসি দিয়াবাড়ি বটতলা হয়ে দিয়াবাড়ি ল্যান্ডিং ষ্টেশন। এখানে রসিয়াল বন্ধুদের অধিকাংশ ইতিমধ্যে চলে এসেছেন।
নাও ছাড়িয়াদে পাল উড়াইয়াদে
যারা আগের রস আড্ডায় ছিলেন তারা জানেন, সকালের খবরের ক্রাইম রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু রস আড্ডার প্রান, তার বউ মাসুদা লাবনী আড্ডার ভোমরা। আর টিংকু ভাই হলেন আসরের মধ্যমনি। এরা সবাই চলে এসেছেন। অনেকেই পথে, মোবাইলে তাদের আকুতি যেন ফেলে চলে না যাই। এবার অনেক নতুন চেহারা, নতুন প্রানে পাগল হই। এভাবেই এক সময় প্রায় আশিজন রসিয়াল বন্ধু নিয়ে আমাদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা তুরাগ বুকে ভাসে। সে সময় কেউ একজন পাশ থেকে গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠে-
নাও ছাড়িয়াদে পাল উড়াইয়াদে
ধানকাটা, ধান মাড়াই
এখন বোরো ধান কাটার মরশুম। নৌকা চটবাড়ি পেছনে ফেলতেই ধানের মিষ্টি গন্ধে প্রান জুড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে আলোকচিত্রি বন্ধুরা ক্যামেরা সচল করে। ধান কাটা হচ্ছে, এগুলো আবার নৌকায় বোঝাই হচ্ছে এবার কৃষকের গোলা ভরে উঠবে বোরো ধানে। কৃষিভিত্তিক বাংলার এ এক অতীত ঐতিহ্য। দুপাশে ধানের খেত আর মাঝে তুরাগ নদ ধরে আমাদের নৌকা এগিয়ে চলে। এর মাঝে এক ঝাঁক বকের দেখা মেলে। বক দেখে মনে হচিছল আমরা গ্রীস্মে নয়, শীতের তুরাগ নদে ভেসে চলেছি। দুরে একাকী হিজল গাছ অনন্য সৌন্দর্য ছড়িয়ে নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। এভাবেই আমরা ভেসে ভেসে এক সময় সাদুল্লাপুর ঘাটে চলে আসি।
গোলাপ কথা
এবার পায়ে হাঁটা পথ। ভোররাত আর সকালের বৃষ্টিতে সাদুল্লাপুর খেয়াঘাট কাদায় মাখামাখি। সে কাদায় ভর করে আমরা এগিয়ে চলি। কিছুদুর গিয়ে পেয়ে যাই পিচ পথ। এখানে পিচ পথের দু’ধারে আবার গোলাপ বাগান। এখানকার লোকেরা ধানের পাশাপাশি গোলাপ চাষের ওপর নির্ভরশীল। সাদুল্লাপুরে এসব গ্রাম গুলোকে বলা হয় গোলাপ গ্রাম। রাব্বানীর ঘোষনা কেউ গোলাপ ছিঁড়বেননা। আপনাদের জন্য গোলাপের ব্যবস্থা আছে। গোলাপ দেখতে দেখতে আর খেজুর গাছে খেজুর শোভা দেখে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ এক অদ্ভুদ দৃশ্য চোখে এল। দুরে এক লাইনে অনেক গুলো মহিষের গাড়ি আসছে। এরা চলেছে ধান বোঝাইয়ে। পাশেই সোনালু গাছের হলুদে দুটি ফিঙ্গে ল্যাজ ঝুলিয়ে দিবানিদ্রায় ব্যস্ত। এভাবেই আমরা চলে আসি মৈস্তাপাড়ার মুসারবাড়ি। এখানে আমাদের এবার বনপথ ধরে এগিয়ে চলা। কিছুদুর গিয়ে বিশাল ধানখেত চোখে পরে। সে ধানখেতের আল ধরে পড়িমড়ি করে চলে আসি আমাদের উৎসবস্থল আমতলা।
নেশার লাটিম ঝিম ধরেনি
আমরা এখন প্রকৃতির শিক সবুজের মাঝে। চারিপাশটা অসাধারন সৌন্দর্যে ঘেরা। এখানকার আমগাছের গল্প আগে বহুবার করা। তবু আরেকবার বলি, আমগাছ তলা কেবল একটি গাছ তলা নয়, এ যেন সুনিবিড় ছায়াঘেরা অসাধারন পরিবেশ! যে দিকে তাকাই মনে হয় এ যে দেখছি গাছেদের গড়া একেকটি অসাধারন শিল্পকর্ম। যা চোখে না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়। জানিনা এসব পািকল্পিত কিনা। পরিকল্পিত বা প্রকৃতি প্রদত্ত যাই হোক, এখানে এসে যে কেউ বলতে বাধ্য হবেন - অসাধারন! পাশেই ধানের তে, তাল গাছের ঝোঁপ। সাথে আনা পাটি বিছিয়ে সবাই বসে পড়ি। কারো যেন তর সইছেনা। রস কই বলে চিৎকার করে ওঠেন টিংকু ভাই। তুষার ব্যস্ত তাঁর হাতের কাঁকড়া আর মাছি নিয়ে। সেখানে আবার আলোকচিত্রিদের ঝাঁপিয়ে পড়া ভীড়। এর মধ্যে গরুর মাংস ভূনা চলে এসেছে। এবারের রস গুরু গতবারের মতই টিংকু ভাই। সবার সঙ্গে পরিচয় পর্ব আর রস আড্ডার ইতিবৃত্ত বলা শেষ হতেই দুটি গ্লাসে রস ঢেলে আমার আর টিংকু ভাইর হাতে ধরিয়ে দেয়া হল, সে রসে চুমুক দিতেই শুরু হয়ে গেল দিনভর রসউৎসব।
শেষকথা
সবার হাতে রসের গ্লাস। রস খাচ্ছেন আর গান গাচ্ছেন। গিটার হারিয়ে গেছে কন্ঠ মাধুর্যে, মুড়ির বল রূপ পেয়েছে তবলায়। আশিজনের কন্ঠ এক সুতোয় গাঁথা। মনে কারো কোন খচখচানি নেই, বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। সবার চোখ আধবোঝা। নিশ্চিন্ত হয়ে গ্লাস ভরছে আর গিলছে। প্রতিবারের মতই লাবু লাবনীকে সাবধান করে দিয়েছে। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। লাবনী হেসে কুটিকুটি। একটি রসের ড্রাম শেষ হতেই অরেকটি চলে আসছে। রস গিলছে আর চিৎকার করে গাইছে- রস খাবি তুই রস খাবি তুই তানানানা তানানানা তা!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১২ রাত ১২:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×