মাকে কেনা ভালবাসে। মায়ের মত আপন কেউ হয়না। হতে পারেনা। মাছরাঙা টেলিভিশনের ফয়েজরেজা তখন প্রথম আলোতে প্রদায়ক হিসাবে কর্মরত, তার মা মারা গেলে, নারীমঞ্চে মাকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন। চমৎকার সে লেখাটির নম্বর দশেÑদশ বা তার’চে বেশী দেয়া যেতে পারে। ভাল লেখার জন্য নয়, মাকে নিয়ে তার কিছু চমৎকার অনুভুতি আর ভালবাসার জন্য। ফয়েজের সে লেখা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। আমার পড়া মাকে নিয়ে অন্যতম সেরা লেখা বা সেরা অনুভুতি। ফয়েজরেজার মা না ফেরার দেশে খুব ভাল থাকুক, সেই দোয়া করি। আসলে মা বিষয়টাই এমন। মাকে নিয়ে পাতার পর পাতা লিখলেও শেষ হবেনা। তবু সবাই ফয়েজরেজার মত করে পারেনা তার অনুভুতি প্রকাশ করতে। আজ যখন প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সে সুযোগ করে দিল, আমি চেষ্টা শুরু করলাম মাকে নিয়ে কিছু লিখতে। শুরুতেই বলি- মা তোমাকে খুব ভালবাসি।
আমি আমার মায়ের প্রথম সন্তান । বিয়ের নয় মাসের মধ্যে আমার জন্ম। প্রথম সন্তান হবার আগে একটি অনুষ্ঠান হবার রেয়াজ আছে আমাদের দেশে, পুরান ঢাকায় একটু বেশী ঘটা করে সে অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। আমার মায়ের সে অনুষ্ঠানের দিন আমার জন্ম। অর্থ্যাৎ মাকে যাতনা দিয়েই জন্মেছিলাম আমি। সেই যে শুরু তারপর থেকে মাকে এখনও জ্বালিয়ে মারছি। আর মা জন্মের পর থেকেই আমাকে আগলে রেখেছেন। আমি খুব ঘুড্ডি ওড়াতাম। একদিন ঘুড্ডি ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গেলাম। সেদিন ছাদ থেকে পড়ে আমার গলায় রড প্রবেশ করার মত ঘটনা ঘটেছিল। আমি কিছু হয়নি এমন ভাবে মাকে সে ঘটনা দেখালাম। মা পড়িমড়ি করে আমাকে নিয়ে বাড়ির কাছের ন্যাশনাল হাসপাতালে ছুট লাগালেন। আবার একদিন কবি নজরুল কলেজ মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে হাত ভেঙ্গে গেল। বাবা বাড়ি ছিলেন। আমার এমন দস্যিপনা তার পছন্দ ছিলনা। হাত দেখে তিনি বললেন, মরুক! কিন্তু মা কী সে কথা বলতে পারেন। তিনি আমাকে পরম যতনে আবার সেই ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ন্যাশনাল হাসপাতাল আমার হাত দেখে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিলেন। মা আমাকে একাই সেদিন হাত-পা ভাঙ্গা রোগের একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখনও কিছু হলে মা-ই আমার প্রথম ভরসা। সেই জন্মের পর থেকেই মায়ের সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি - যেন কষ্ট ছুঁয়ে না দেয় আমায়। আমার ছেলেবেলায় একদিনের কথা খুব মনে আছে, বৃষ্টিতে ভিজে নানী বাড়ির পুকুরে ইচ্ছেমত গোসল করছি। বরষাকাল তবু মা আমার সারা গায়ে রসুন তেল মালিশ করেছিলেন, যাতে আমার ঠান্ডা না লাগে। গরমের দিনে আমার শরীরে এমন তেল মালিশ করা দেখে মায়ের দুরসম্পর্কের এক বোন আরেকজনকে বলছিলেন, দেখ দেখ ফরিদা ওর কালা পোলার শইলে কেমনে ডইলা রশুন তেল মাখতাছে। মায়ের সেসব আতিœয়রা কী করে বুঝবেন মা তো শুধুই তেল মালিশ করছিলেন না। তাতে উৎকন্ঠা ছিল, ছিল ভালবাসা।
স্নেহ-মমতা আর নিশ্চিন্ত এক আশ্রয়স্থল হলো-মা। মা কী এক মধুর ডাক। মায়ের জন্যই পৃথিবীটা এত সুন্দর।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১২ সকাল ১১:৩৯