somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেলদির পথে

৩১ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় ছিল খুব হাঁটতাম। হেঁটে হেঁটে বহুদুর চলে যেতাম। একা একা নয় , দল বেঁধে। সুদুর সৌন্দর্যের সন্ধানে পদযাত্রা , এটা বলা যায়। আমরা যে কোন বাহনে চড়ে কোথাও গেলে খুব দ্রুততার সঙ্গে চলে যাই। যেতে যেতে অনেক সৌন্দর্য শোভা পথে ফেলে চলে যাই। আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় কিন্তু হেঁটে পথ চললে সে সব গিলে হজম করে যাওয়া যায়। এভাবেই একদিন আমরা হেঁটে হেঁটে বেলদি পৌঁছে গেলাম। বাসে চড়ে খিলখেত , তারপর পায়ে হেঁটে বেলদি। সেবার সেই পায়ে হাঁটা পথ আমরা পূর্বাচল সিটির ভেতর দিয়ে চলে ছিলাম। সে পথ ছিল অজপাড়া গাঁয়ের , কিছুটা পথ আবার মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ি এলাকা। সে সৌন্দর্য চাখে লেগে আছে। সে কথা মনে পড়তেই একদিন শুভমিতাকে নিয়ে বের হলাম বেলদির উদ্দেশ্যে। এবার পায়ে হেঁটে নয় , সাথে মটর বাইক।
ঢাকা থেকে খুব দুরে নয় , নারায়নগঞ্জের কাছেই রুপগঞ্জ উপজেলা। রুপগঞ্জের একটি গ্রাম হল বেলদি। শীতল্যা নদীর তীরের গ্রামটি সত্যি অসাধারন। কাঁচপুর হয়ে যাওয়া যায় , আবার খিলখেত হয়ে ও যাওয়া যায়। দুটো পথই ভিন্ন। আমরা এয়াপোর্টের কাছের খিলখেতের ভেতরের পথ ধরলাম। যখন আমি পায়ে হেঁটে গিয়েছিলাম , তখন খিলখেত হয়েই গিয়েছিলাম। গুলিস্তান পার হয়ে খিলখেত পৌঁছাতে বেশী সময় লাগেনি , কিন্তু রেলগেট হয়ে খিলখেত বাজার টুকু পেরুতে সময় অনেক লেগে যায়। এই যায়গাটাতে যানজট নিত্য। তারপর বরুয়া আর ইছাপুর পেছনে ফেলে কাঞ্চন সেতু পার হয়ে বেলদি। মাঝ পথে আমরা নদী পথ অতিক্রম করেছিলাম - বালুনদী। সে বহু আগের ঘটনা , মনে নেই। এর মধ্যে বালু নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। চর পড়েছে আবার দখল হয়ে গেছে। যমুনা হাউজিং লিমিটেড তড়তড় করে গড়ে উঠেছে। পিংক সিটি , পুর্বাচল সিটি , পুর্বাচল আমেরিকান সিটি সহ কত যে সিটি এখানে! বালুনদীর মাঝ খানে পুলিশের নিজস্ব সম্পদ। সাইনবোর্ড দেখে কতবার যে হেসেছি , তার ইয়ত্তা নেই। এখনও মনে পড়লে হাসি পায়। নদীতে মানুষের সম্পদ থাকে কী করে!
এবার শবেহ বরাত শেষ হতেই শুভমিতার ঘোষনা। গরম পড়েছে খুব। রমজান মাসে কেনাকাটার কষ্ট করতে পারবোনা। সুতরাং এবার রমজানের আগেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করতে হবে। কী আর করা শুক্রবার কোথাও যাবনা ঠিক করে সকাল বেলা বের হলাম নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে। একটু ঘোরা ঘুরি করে নতুন কিছু না পেয়ে শুভ হতাশ হয়ে বললো ভাল লাগছেনা চল কোথাও বেরিয়ে আসি। অজানাতে তো আর নয় , কাছে পিঠে কোথাও যাব ঠিক করে পথে নামলাম। তারপর ফার্ম গেটের কাছে এসে মনস্থির করলাম ইছাপুর হয়ে আজ বেলদি যাব।
প্রচন্ড গরমে পথ চলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। একবার ভেবেছিলাম বাসায় ফিরে যাই। কিন্তু ইতিমধ্যে খিলখেত চলে আসায় পরিকল্পনা মতই এগিয়ে চলি। বরুয়ার কাছে আসতেই প্রচন্ড বাতাসে প্রান জুড়িয়ে গেল , এখানে রাস্তার দুপাশের গাছ আমাদের ছাঁয়া হয়ে থাকলো সারান। বর্ষার শুরুতেই বরুয়া বিল ভরে গেছে জলে। রাস্তার দুপাশে পানি আর পানি। বিলের নতুন পানিতে শিশুদের সেকি লাফালফি। এর মধ্যে একদল শিশু কোত্থেকে ককসিটের একটা বোর্ড যোগার করে একজন করে বসছে বাকী সবাই ধাক্কা মেরে তাকে বিলের পানিতে ফেলছে। ধাক্কায় যেমন মজা পানিতে পরে হাবুডুবু খেতে আরও বেশী মজা। শিশুদের সে আনন্দে আমরাও ভাগ নিয়ে সামনে এগিয়ে চলি। গত বছর রমজানের ঈদের দিন বরুয়া বিল বেরিয়ে গেছি। এখানে এসে শরতের শোভা কাশ ফুলের ছবি তুলেছিলাম। তারপর মাছ কিনে তবেই বাড়ি ফিরেছিলাম। বরুয়া বিলের কাছে আজও মাছ নিয়ে বসে আছে কিছু লোক। মাছ দেখে শুভর মাছ কেনার লোভ জাগলো। কিন্তু উপায় নেই এখন আমরা যাত্রার শুরুতে ফেরার পথে হলে ভাবনা চিন্তা করা যেত। শুভমিতার মুখের দিকে চেয়ে বিখ্যাত সে সংলাপটি আওরালাম , উপায় নেই গোলাম হোসেন!
ইতিমধ্যে আমরা ডুমনি পেছনে ফেলে ইছাপুর এসে যাত্রায় বিরতী টেনেছি। এখানে শুক্রবার হাঁটবার। দুরদুরান্ত থেকে বিক্রেতারা এসেছে বিভিন্ন প্রকার পন্য সামগ্রী নিয়ে। টাটকা শব্জি আর খাঁটি দুধ পেতে চাইলে শুক্রবার সক্কাল বেলা আপনিও ইছাপুর বাজারে চলে আসতে পারেন। হাঁটে নানা প্রকার পশরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। মিরচিনি মুরালি আর মিষ্টির দোকানে খুব ভিড়। বালিশ মিষ্টি , গজা , আর বালুসাইর প্রতি যত আকর্ষন সবার। আমরা এখানে পানি , গজা আর খাঁটি গরুর দুধের চা পান করে আবার যাত্রা পথে পা বাড়াই। আমরা পিচঢালা পথে চলছি কিন্তু পুরো পথের ছবি একবারে গাঁও গ্রামের। লাল মাটির বাড়ি। আর রাস্তার দু’পাশে বিস্তির্ন লাল মাটির তে। সে েেত আবার মাচায় মাচায় চিচিঙ্গা , কহি , জিঙ্গা আর ঘিয়াতরই। আর পাশের বিল ভর্তি শাপলা আর চাঁদমালায়। বিলের মাঝখানে ছোট ছোট অনেক নৌকা। নৌকার মাঝিদের সবার হাতে বড়শি। সে বড়শি বিলের পানিতে পেতে তারা চেয়ে আছে কখন শিকার ধরা পরবে সে আশায়। এখানে তাদের শিকার পুটি মাছ। তারপর যদি অন্য কিছু ধরা পরে তো ভাগ্য। আমরা বিলের পানে চোখ মেলে চাই। পাশের ভুমিতে দেখি কাশ। কাশ বেড়ে উঠে জানান দিচ্ছে শরত এলো বলে! গত বছর শরতের শেষে কাশ পেয়েছিলাম। কাশের জন্য কী এক হাহাকার ছিল। এবার কদম ফুল বর্ষার শুরুতে গাছে ছিলনা। অথচ এখন প্রতিদিন পথে আর মোড়ে মোড়ে কদম ফুল নিয়ে বিক্রেতারা ঘুরে বেড়ায়। আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির রাজ্যে বিরাট এক পরিবর্তনের আভাস এটি। যেমন গত কয়েক বছর খরা কাটানোর পর এ বছরের আষাঢ় মাসে কী বৃষ্টিই না হয়ে গেল। এমন বরষা আমরা প্রতি বছরই আশা করি। কিন্তু চাইলেই কী নিজের মত করে সব হয়! আর সব চাইতে বড় কথা , প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই।
আমরা রওনা হয়েছিলাম দুপুর বারোটায়। ঠিক দুইটায় কাঞ্চন সেতু পৌঁছাই। তারপর মায়ের দোয়া রেষ্টুরেন্ট এ দুপুরের খাবার। এখানে হাইওয়েতে এমন অনেক হোটেল রয়েছে। স্বল্প মুল্যে ভাল খাবার পাওয়া যায়। খাবারের মানও ভাল। এখানে হোটেলের মুল গ্রাহক ট্রাক ড্রাইভার। এপথ দিয়ে ট্রাক চলাচল করে খুব বেশী। ঢাকা হয়ে চিটাগাং সিলেট অঞ্চল এদের গন্তব্য। আমরা মায়ের দোয়া হোটেলের দারুন আতিথিয়তার মধ্যে হাঁসের মাংস দিয়ে ভাত খাই। হোটেল মালিক আমাদের সম্মানে চা এনে খাওয়ান। বাক্যহারা হলাম আমরা তাঁর ব্যবহারে। তারপর আবার বেলদির পথে যাত্রা। এবার আমরা কাঞ্চন সেতুর নিচ দিয়ে বেলদির পথ ধরি। এখানে নতুন সড়ক হচ্ছে। পুরো রাস্তা তাই মাটি আর বালুতে মাখামাখি। বৃষ্টির দিন হলে কী হতো ভাবলাম অনেকন। এখানে বালুর আধিক্য বিধায় সারি সারি কাশের দেখা মিললো। বোঝা গেল অল্প দিন পর এখানে কাশবনে ছেঁয়ে যাবে। এভাবেই আমরা উপজেলা রুপগঞ্জের রুপগঞ্জ ইউনিয়নে পৌঁছি। এখানে যে যায়গাতে আমরা প্রথম পা রাখি , সে যায়গার নাম সাইনবোর্ডে লেখা ব্রাম্মনখালী , রুপগঞ্জ। ব্রাম্মনখালী কমিউনিটি কিনিক অতিক্রম করে আমরা খুব দ্রুত পৌঁছে যাই পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প অফিসের সামনে। প্রকল্প অফিসটা দারুন। আরও দারুন এখান থেকে দেখা কাঞ্চন সেতু। আমরা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প অফিসের সামনের মাঠে গিয়ে দাঁড়াই। এখান থেকে শীতল্যা নদীর বুকে কাঞ্চন সেতুকে স্বপ্নময় মনে হয়। নদীর ওপারের রুপগঞ্জে ধনিচা তে। নদীতে নৌকা , ভেসাল জাল - সব কিছু মিলিয়ে সত্যি সত্যি স্বপ্নময় পরিবেশ। ইচ্ছে করছিল এখানেই থেকে যাই কিছু সময় , কিন্তু কাছেই বেলদি , এত কাছে এসে বেলদি যাবনা সেকি হয় , তাছাড়া আমাদের ঢাকাও ফিরতে হবে। সুতরাং আমরা ব্রাম্মন খালী উচ্চ বিদ্যালয় আর বেলদি বাজার পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত বেলদি পৌঁছাই। শান্ত , নিরিবিলি ছায়া সুনিবিঢ় চমৎকার একটি গ্রাম বেলদি। পাশ দিয়ে বয়ে চলা শীতল্যা নদী এখানে অসাধারন। আমরা নদীর পারে বসি , গ্রামের পথ ধরে হাঁটি। মিষ্টির দোকানে গিয়ে গরম গরম মিষ্টি আর জিলাপী কিনে খাই। তারপর দুজনে শীতল্যা পারে গিয়ে বসি।
কিছুনের মধ্যে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ল। সাথে সাথে শীতল্যার পানির রঙ অপার্থিব পরিবর্তন। এ যেন এক স্বপ্নের দৃশ্য। সে দৃশ্য বুকে নিয়ে ঘন্টা দেড়েক বাইক চালিয়ে যখন আমরা খিলখেত বাজারে পৌঁছি তখন রাত প্রায় নয়টা বাজে। আজ আমরা অপরুপ বাংলার বেলদি গায়ের কাছে শীতল্যা নদী তীরে বসে যে অপরুপ সূর্যাস্ত দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশের নয়!
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×