৪
এরপর? এরপরের কাহিনী বলার আগে দীপার ক্যারেক্টারটা একটু ডিস্ক্রাইব করে নিই। পরের ঘটনাগুলো বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। দীপার চোখ যে ছলছল হয়ে উঠেছিল, ওটা ইউজুয়াল না। নিজের কষ্ট অন্যকে দেখানো টাইপ মেয়ে ও না। যতক্ষণ আমি ওর ফিয়সে ছিলাম, ততক্ষণ এমনটা করলেও করতে পারত, বাট এখন, ইম্পসিবল। তারপরও...কাজটা করে ফেলল।
ওর মনের ভেতরে কি চলছে, আমি জানি। চোখের পানিটা, আমি ওকে ছেড়ে যাচ্ছি বলে না। ও কষ্টটা পেয়েছিল আমি ওর বিশ্বাস ভেঙ্গেছিলাম বলে। বিশ্বাস আসলে দুটো ছিল। প্রথমটা ছিল, ওকে আমি কখনও ডিচ করব না। সেই বিশ্বাস্টা অবশ্য আমি ভাঙ্গিনি। যে মুহূর্তে বুঝতে পেরেছি, ওকে আমি ভালবাসি না, আই টোল্ড হার।
ভেঙ্গেছিলাম অন্য বিশ্বাসটা। আসলে ওর কষ্টটা ছিল, আমি এমন একটা ক্যারেক্টার বের হলাম, যা ও আমাকে ভাবেনি। যে বিশ্বাস নিয়ে নিজের সুন্দরী বান্ধবীকে ও নিজের এনগেজমেন্টে ডেকেছিল, সে বিশ্বাস আমি ভেঙ্গেছিলাম। একজনের সাথে এনগেজ থাকা অবস্থাতেও আমি অন্য একজনের প্রেমে পড়েছিলাম। এটা ও আশা করেনি।
সুযোগ পেলে কখনও হয়তো নিজেকে এক্সপ্লেইন করব, বাট এখন না। এখন আসলে সুযোগও নেই, আমার লজিকগুলো নিয়ে আলাপ করার। তাছাড়া, অভিমানের ঘা’য়ে আঘাত দিতে নেই। ঘা যদি শুকায়, এমনিতে শুকাবে। আর নয়তো...সময়। সময় সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
এই মুহূর্তে আমার প্রথম কাজ, দীপার পাশে দাঁড়ানো। যদিও খুব জরুরী না, শক্ত মেয়ে, তারপরও ওকে কিছুটা চোখে চোখে রাখতে হবে। নাহ, লুবনার কাছে গিয়ে আমার নামে ‘কু’ গাইবে, এমন মেয়ে দীপা না। আসলে যে ভয়টা পাচ্ছি, তা হচ্ছে, অভিমানে কিছু একটা করে ফেলবে। হয়তো দেখা যাবে, এই চাকরীটা ছেড়ে দেবে, আমার মুখোমুখি যেন না হতে হয়। আর সেটাই আমি চাইছি না।
হয়তো একটু বেশিই চিন্তা করছি। হয়তো এমন কিছু হবে না। আসলে যে দীপাকে আমি চিনতাম, সেদিনের বিহেভে তার অনেকটাই পালটে যায়। ওর রিয়াকশানের পুরোটা প্রেডিক্টেড না হলেও, কাহিনীর অনেকখানি অংশই প্রেডিক্টেড ছিল। কষ্ট পাবে, অবাক হবে, এরপরে বিষাদমাখা মন নিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যাবে... এমনটা হওয়া, ওয়াজ ভেরি মাচ এক্সপেক্টেড। ‘কি ভুল করেছি আমি?’ কিংবা ‘লোকে কি বলবে?’ এমন ডায়ালগ দীপা দেবে না, আমি জানতাম। ওর সেলফ রেসপেক্ট অন্য লেভেলের। ‘দয়া ভিক্ষা’ করার মেয়ে ও না। ইভেন, ‘মেয়েটা কে’, এটাও জানতে চাইবে না, আমি জানতাম। পুরো ইন্টারঅ্যাকশানের আনএক্সপেক্টেড অংশ ছিল, ওর কান্নাটা। হয়তো আকস্মিকতার কারণে এটা হয়েছিল, আমার ভয় ওটাই। আমি ওর জন্য আনরিপেয়ারেবল কোন ড্যামেজ করে ফেললাম কি না। ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়লেও, তাকিয়ে আছে কফি মগটার দিকে। মন বলছে, আর কোন সমস্যা হবে না।
এরপরে ঘটনাগুলো ঘটল। দ্রুতই নিজেকে সামলে নিল দীপা। খুব শান্তভাবে কফিটা শেষ করল। একবার আমার দিকে তাকাল। চোখের দৃষ্টিতে একটাই জিজ্ঞাসা, ‘আমার কাছে কি চাও?’ উত্তরে কিছু না বলে, আমিও কেবল ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এর মানে হচ্ছে, ‘দেখো, ফ্যামিলি লেভেলে যেন খুব বেশি হাঙ্গামা না হয় এটা নিয়ে।‘ কথাটা বোধহয় ও বুঝল। কিংবা বলা যায়, এটা ওরও চাওয়া।
--বাসায় কি বলবে?
--এখনও ঠিক করিনি।
--সম্ভব হলে লুবনার ব্যাপারটা বল না। ও সবার কাছে ছোট হয়ে যাবে।
দিস ইজ দীপা। এজন্যই ওকে এতো ভাল লাগত আমার। সেন্সিটিভ এবং বুদ্ধিমতী। হয়তো খুব ভাল একজন কম্প্যানিওন হারালাম। স্টিল, আমি বলব, যা হল, ভালোই হল। অ্যাট লিস্ট, আর কোন মিথ্যে থাকল না আমাদের ভেতরে।
দীপা অবশ্য তখনই উঠে যায়নি। কিছুটা সময় বসেছিল। নিজেকে যদিও ও তখনি সামলে নিয়েছিল, তারপরও কিছুটা সময় নিয়েছিল যেন চোখে মুখে এসে যাওয়া কান্নার ছাপটা মুছে যায়। স্বাভাবিক একটা চেহারা নিয়ে এখান থেকে যেতে চেয়েছিল। যাওয়ার আগে যে, ‘বেস্ট অফ লাক বলবে’ এটা জানতাম। লুবনাকে যে আমার সম্পর্কে নেগেটিভ কিছু বলবে, না, এটাও এক্সপেক্টেড ছিল। না, যাওয়ার আগে, ‘ভয় পেয়ো না, লুবনাকে আমি কিছু জানাব না’ এমন কিছু বলেনি। এটা আমার বিশ্বাস, কিংবা বলা যায়, আমি নিশ্চিত, দীপা এমন করবে না।
ব্যাপারটা আমার জন্যও প্রযোজ্য। আমিও কাউকে বলতে যাব না, ‘লুবনার প্রেমে পড়ে আমি বিয়ে ভেঙ্গেছি।‘ কথাটা শুনতে বিচ্ছিরী শোনায়, এজন্য না। আসলে কথাটা আমার জন্য তা যত না অপমানজনক, তার চেয়ে অনেক বেশি ইনসাল্টিং দীপার জন্য। ‘লুবনার জন্য নাকি তোকে ছেড়েছে?’ কথাটা কেউ দীপাকে জিজ্ঞেস করছে, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। তাই চাইলেও কথাটা আমি ডিসক্লোজ করতে পারব না। আর দীপা করবে না, কারণ তাতে আমাকে ছোট করা হয়। শী স্টিল লাভস মি।
দীপা ওয়েট করেছিল অন্য একটা কারণে। কিছুক্ষণ আগে যে লুবনা ফোন করেছিল, তখন ও জানতে চাইছিল, দীপা কোথায়। যখন দীপা জানায় ও কফি হাউজে, তখন দীপা জানতে চায়, কফি হাউজটাতে আর কতক্ষণ থাকবে। উত্তরে ও জানিয়েছিল, মিনিট পনের।
এরপরে লুবনা জানায়, ও মিনিট পনের ভেতরেই এখানে আসছে। প্ল্যান ছিল লুবনা ওকে এখান থেকে পিক করে শপিঙে যাবে। কথাটা আমাকে জানাল দীপা। এরপরে শী গেভ মি অ্যা সুইট লিটিল সারপ্রাইজ।
--আমি উঠছি। একটু ওয়েট কর, লুবনা এখনই এসে পড়বে। আমার বিয়েতে পড়ার জন্য একটা শাড়ি কিনতে নিউ মার্কেট যাবে। পারলে ওকে একটু কম্প্যানি দিও।
কথাটা ও বলল ঠিকই কিন্তু লিটারারি মিন করেনি। কথাগুলো বলে বোঝাতে চাইল, ইউ আর ফ্রি টু ডু এনিথিং। যদি লুবনা তোমার প্রেমে পড়ে, আমি বাধা হয়ে দাঁড়াব না। কথাটা বলে দীপা চেয়ার ছেড়ে উঠল। চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে গিয়েও থেমে গেল। ফিরে তাকিয়ে শুধু বলল।
--লুবনার ব্যাপারটা আর কাউকে না বললেও ওকে অন্ততঃ সব খুলে বল।
এরপরে আর দাঁড়ায়নি দীপা। কফি হাউজের দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল। ওর চলে যাওয়া পথের দিকে বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকলাম। খারাপ লাগছে। কিন্তু এটাও জানি, দয়া প্রেম না। যা করলাম, তা খুব ভাল কাজ, তা বলছি না। অন্যায়। নিঃসন্দেহে অন্যায়। কিন্তু ওর কি হবে, কিংবা ও সবাইকে কিভাবে মুখ দেখাবে, এটা ভেবে ওকে বিয়ে করাটা বরং আরও বড় অন্যায় হত। দেয়ার স্যুড বি লাভ ইন ম্যারেজ।
নাও হোয়াট? অনেস্টলি স্পীকিং, ভাবিনি। আই মিন, লুবনার ব্যাপারে এখনও ভাবিনি। যা ভেবেছি, তা হচ্ছে, এরপরের অংশে যে মেলোড্রামাগুলো নিয়ে। সেসবের জন্য আমি অনেকটাই প্রস্তুত। গত রাতে যখন সিদ্ধান্ত নিই, দীপাকে সব বলব, তখনই ঠিক করে ফেলি, বাসায় ব্যাপারটা কিভাবে জানাব। বলব, ‘উই ব্রোক আপ’। এর বেশি আর কিছু বলা সম্ভব না। জানি, কারণ না জানালে বাসায় মহা গন্ডগোল শুরু হবে। তারপরও, আমি এর বেশি কিছু বলব না। বাসার পরিবেশের যে বিচ্ছিরী অবস্থা হবে, সেটার জন্য সত্যিই আমার কিছু করার নেই।
দীপার বাসা নিয়ে আমি ভাবছি না। ওটা দীপা সুন্দরভাবেই সামলাবে, আই নো। হয়তো একই কথা বলবে। আমার মত। কিছুদিন ওখানেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকবে। এরপরে ঠিক হয়ে আসবে। আফটার অল, ইট ইজ জাস্ট অ্যান এনগেজমেন্ট।
অফিসের পরিস্থিতিটা বরং কিছুটা বিরক্তিকর হবে। ‘কি হল?’, ‘হঠাৎ?’, টাইপ প্রশ্নগুলো শুনতে বিরক্তিকর লাগবে। ওটা অ্যাভয়েড করার মোক্ষম রাস্তা হচ্ছে, ‘ছুটি’। রিজাইন করতে পারলে ভাল হত, হয়তোবা অচিরেই কাজটা করব, বাট আপাততঃ দিন পনেরর ছুটি জরুরী।
ঠিক করে রেখেছি, আগামীকাল অফিসে গিয়ে ছুটির অ্যাপ্লিকেশানটা সেরে ফেলব। কফির বিল দিলাম। লুবনার জন্য অপেক্ষা করব? যদিও আমার জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেল দীপা, তারপরও, কেন যেন ইচ্ছে করছে না। এই মুহূর্তটা আর যাই হোক নিজেক ইন্ট্রোডিউস করার জন্য প্রপার না।
কফি হাউজ থেকে বেরিয়ে এলাম। এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ পেলাম। লুবনার আওয়াজ। শিহাব ভাই বলেই ডাকছে। বুকটা ছলকে উঠল। আওয়াজের দূরত্ব আন্দাজ করে বুঝলাম, খুব বেশি পেছনে নেই। আমার বর্তমান স্পীডে হাঁটলে কিছুক্ষনের ভেতরেই একটু জোরে হেঁটে এসে আমাকে ধরে ফেলবে। আর আমি যদি স্পীড বাড়াই, বুঝে ফেলবে, ওকে অ্যাভয়েড করছি।
সো, ওর মুখোমুখি হওয়া ছাড়া উপায় নেই। থেমে গেলাম। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালাম। লুবনা এগিয়ে আসছে। হালকা নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। শী ইজ লুকিং গর্জিয়াস। একেবার আমার সামনে এসে দাঁড়াল। হার্ট স্টার্টেড বিটিং এগেইন।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:১৩