৩
দীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ইম্প্রেশানটাকে কি বলে ডিস্ক্রাইব করব? এটা অবাক দৃষ্টি না। কষ্ট ও না। সামথিং এলস। সামথিং ডিফ্রেন্ট। আই গেস, ওটা, ‘আই সাসপেক্টেড’ টাইপ কিছু। আর সেটা হলে, ব্যাপারটা বেশ অ্যালার্মিং। কিছুটা ভ্রু কুঁচকানো।
আমার বুক তখন ঢিপঢিপ করছে। প্রেম টাইপ না, টেনশান টাইপ। আসলে, কি বলব, তা নিয়ে অনেক বেশি ভেবে এসেছিলাম। ওর রিয়াকশান কি হবে, কিভাবে হ্যান্ডল করব, তা নিয়ে তেমন করে ভাবিনি। আসলে ভাবতে চাইনি। মেয়েলি রিয়াকশানের তো কোন উত্তর হয় না। ভাবতে গেলে বরং আসল কথাগুলো বলতেই মন সায় দেবে না। দেখা যাবে, মুখ দিয়ে কোন কথাই বেরোচ্ছে না।
এনিওয়ে, ঘটনার শুরু কিছুক্ষণ আগে। লুবনার ফোনটা রিসিভ করল দীপা। দুপক্ষের কথা বার্তা যদিও শুনতে পাইনি, একপক্ষের কথা শুনেই বুঝে গেলাম, আলাপের সারাংশ। দীপা জানাল, আমার সাথে কোন কফি হাউজে আছে ও এখন। দেন কিছুক্ষণ চলল, এক্সকিউজ, ‘তর সইছে না’ জাতীয় কোন কোন ব্যাপার না। ‘ফাজলামি করিস না’ জাতীয় মেয়েলি আরগুমেন্ট। বোঝানোর জন্য এক্সকিউজও দিল, নেহাত জরুরী বলেই এই মিটিং। এরপরে শুধু বলল, ওকে, নো প্রব্লেম।
এরপরে, কিছুটা সময় পার করলাম, ‘কি খাবে?’ অ্যান্ড কফি অর্ডার করে। দীপা গতকালকের ওদের বাসার এক্সপেরিয়েন্স শুরু করল। আমি কিছুটা সময় নিচ্ছি। ওকে কিছুক্ষণ বলতে দিলাম। শী ইজ এক্সাইটেড। বলে যেতে লাগল, ওর তরফের আত্মীয়রা বেশ ইম্প্রেসড হয়েছে। এক সময় মনে পড়ল আমাদের বাড়ীর কথা। সেটাও জানত চাইল। স্মাইল সহকারে, ভাল ভাল কথা বললাম।
কফি এসে গেল। সেটায় চুমুক দিয়ে টেবিলের উপরে রাখলাম। আমার ঠান্ডা রেসপন্স দেখে দীপা বুঝে গেল, এসব গল্পের মুডে আমি এখন নেই। শী ইজ ইন্টেলিজেন্ট। কথা থামাল। কফির কাপে চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলে রাখতে রাখতে সে ও আমার দিকে তাকাল।
পারফেক্ট মোমেন্ট। অ্যাজ আই প্ল্যানড, কনফেশান পর্ব কিছুক্ষণ আগে শুরু করলাম যেভাবে ভেবে এসেছিলাম, সেভাবে প্রথমে দীপার হাত নিজের হাতে নিলাম। এরপরে ওর চোখের দিকে তাকালাম। চোখে গাম্ভীর্য আনবার চেস্টা করলাম। সম্ভবতঃ আসেনি। বরং, তার বদলে, আমার চোখের ভাষায় এসে যায় অন্য একটা ইমোশান। ‘অশনি সংকেত’। ভয়ঙ্কর কিছু একট আসছে। আর সেটা দীপা বেশ ভালভাবেই পড়তে পারল। মুখে শুধু জানতে চাইল
--এনিথিং সিরিয়াস?
মাথা উপর নীচে ঝুঁকিয়ে সম্মতি সূচক ইঙ্গিত করলাম। এরপরে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কথাটা বলার পূর্ব প্রস্তুতি কমপ্লিট করলাম। কথাটা বলতে যাব, এমন সময় দীপা বলে উঠল
--পুরোটা বলবে। কিচ্ছু লুকোবে না।
দীপার এ ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। পুরোটা শোনে। একলাইন শুনে ঝামটে ওঠে না। বরং ‘আর কিছু বলার আছে?’ বলে বলে সিওর হয়ে নেয়, আমি কথা শেষ করেছি কি না। যত বিচ্ছিরী সিচুয়েশানই হোক, আমাকে পুরো কথা বলার সুযোগ দেয়। এবার অবশ্য বলার মত কথা তেমন ছিল না। ঠিক করে এসেছিলাম, ‘সরি’র পরে আর তেমন ব্যাখ্যা দেব না। ডিসাইড করেছিলাম ‘আসলে... আই ডোন্ট লাভ ইউ’ জাতীয় কথা নেহাত প্রয়োজন না পড়লে, বলব না।
তাই দীপার দিকে তাকিয়ে শুধু বললাম
--আই অ্যাম সরি।
দীপা অবাক হয়ে জানতে চাইল
--কেন সরি?
দীপার অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মনে মনে কথাগুলো আরেকবার আউড়ে নিলাম। এরপরে যন্ত্র চালিতের মত কথাগুলো বলে ফেললাম
--আই ওয়ান্ট টু ব্রেক দ্যা এনগেজমেন্ট।
অবাক চাহনি। এক্সপেক্টেড। এর জন্য তৈরি ছিলাম। দীপার হাতে মৃদু চাপ দিলাম। বললাম
--ক্ষমা চাইছি না। আই থিঙ্ক ইট উইল নট বি পসিবল ফর ইউ।
এবার দীপা কথা খুঁজে পেল। জিজ্ঞেস করল
--প্লিজ। যা বলার পরিস্কার করে বল।
এই প্রশ্নটাও প্রত্যাশিত। কিন্তু উত্তরে কি বলব, তা নিয়ে আমি কনফিউশানে ছিলাম। কোন এক্সকিউজ দেব? না ‘আর কিচ্ছু জানতে চেয়ো না’ বলে এড়িয়ে যাব? দীপার চোখ আমার কনফিউশান দূর করে দিল। মনে হল, দীপা ডিসার্ভস অ্যান অনেস্ট অ্যান্সার। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, ওকে সব বলব।
দীপার চোখে চোখ রাখলাম। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। অপেক্ষা করে আছে। কথাগুলো আরেকবার গুছিয়ে নিলাম। এরপরে শুরু করলাম
--আই জাস্ট ফলেন ইন লাভ।
দীপা কোন প্রশ্ন করল না। কেবল তাকিয়ে থাকল। ওর চোখ বলছে, ‘কথা শেষ কর’। আমিও দিপার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। লুবনার নামটা বলার ইচ্ছে নেই। আসলে লুবনার ব্যাপারে কি করব, তা এখনও ঠিক করিনি। ওর সম্পর্কে সেই অর্থে আমার জ্ঞান শূন্য। ও কেমন মেয়ে, কি পছন্দ করে, কেমন ছেলে চায়, আদৌ এনগেজড কি না, কিছুই জানি না। ওর সাথে আমার আদৌ কোন রিলেশানশীপ হবে কি না, তা নিয়েও ভাবিনি। শুধু একটা কথাই ভেবেছি, দীপার সাথে ডিজনেস্ট হব না।
আর কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে থাকলাম। দীপা বুঝল, আমার আর কিছু বলার নেই। এবার তাই প্রশ্ন করল
--অন্য কারো?
ডেঞ্জার জোনের দিকে যাচ্ছি। লুবনাকে জড়াতে চাইছি না। অযথা ওর উপর ব্লেম আসবে। বাড়ীর মুরুব্বীরা সব দোষ দীপা আর লুবনার উপর চাপাবে। ‘কেন ডাকলি ওকে এনগেজমেন্টের দিন?’ মনে প্রাণে চাইহি, নোংরা অ্যালিগেশানটা আমার উপর দিয়েই যাক। উত্তরে কি বলব, ঠিক করে উঠতে পারছি না। ‘হ্যা’ পর্যন্ত বলা যায়। নড করে সেটাই বললাম।
দেন কেম দ্যা সারপ্রাইজ। আমার দিকে ওর ‘আই সাসপেক্টেড’ দৃষ্টিটা ফেলল। এরপরে ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে উঠল। এই ব্যাপারটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। ভ্রু কুঁচকে গেল। কিছু না বলে, কেবল প্রশ্ন নিয়ে দীপার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এবার দীপা চেয়ারে হেলান দিল। জিজ্ঞেস করল
--কবে?
প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলাম। এ প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলাম না। প্রেমে গতকাল পড়েছি বললে, পুরো সন্দেহ লুবনার উপরে গিয়ে পড়বে। এখন আর প্রশ্নটা অ্যাভয়েড করবার উপায়ও নেই। মিথ্যে বলব না, সে ব্যাপারে আমি অনড়। উত্তরটা দিতে দেরী করা যাবে না। কমপ্লিকেশান বাড়বে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এখন আর পেছানোর উপায় নেই। দীপার চোখে চোখ রেখে বললাম
--গতকাল
কথাটা শুনে দীপা হাসল। চোখ হাসল না, শুধু ঠোঁট। এরপরে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। কফির কাপটায় আবার চুমুক দিল। এরপরে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু জানতে চাইল
--বাসায় জানিয়ে দিই তাহলে?
দীপার কথার মানে বুঝতে কিছুটা সময় লাগল। এর মানে কি? শী এগ্রিড? এই ব্যাপারটা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই? কার প্রেমে পড়লাম, কেন ওকে ডিচ করলাম, এসব প্রশ্ন করবে না? আমার হতবাক অবস্থা দেখতে দেখতে কফির কাপে আরেক চুমুক দিল। এরপরে ওর হাতটা আমার হাতের উপর রেখে মৃদু চাপ দিল। বলল
--উই নিউ ইট।
এবারের ধাক্কাটা সত্যিই আনএক্সপেক্টেড ছিল। নিজের চেহারা দেখতে পাচ্ছি না, বাট আমার ধারণা, চোখ ঠিকরে বের হবার মত অবস্থা হয়েছিল। প্ল্যানের এতোটাই বাইরে চলে গেল ঘটনা যে স্বয়ংক্রিয় রেসপন্স চলে এল নিজের অজান্তে
--উই নিউ ইট মানে? উই কে?
দীপা সেই হাসি আবার দিল। শুধু ঠোঁটে হাসি। কফি বোধহয় শেষ হয়ে গেছে। কফির কাপটা আর মুখে দিল না। খুব মনোযোগ দিয়ে ওটার দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপরে হাত দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
--পৃথিবীর সব মেয়েই, একটা দুর্দান্ত কোয়ালিটি নিয়ে জন্মায়।
আমি যন্ত্রচালিতের মত প্রশ্নটা করলাম
--মানে?
যদিও ‘মানে?’ বলেছি, বাট আমার আসল প্রশ্ন সম্ভবতঃ ছিল, ‘কি কোয়ালিটি?’ দীপা সেই প্রশ্নের উত্তরটাই দিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-- পুরুষদের চাহনি আমরা খুব ভাল বুঝতে পারি।
কি বলতে চাইছে, এখনও আমি বুঝতে পারছি না। এখনকার ঘটনা নিয়ে বলছে, না গতকালকের? মূল কথা কোনটা, সেটাও বুঝতে পারছিনা। তবে এটা বুঝতে পারছি, এই কথাগুলো ওর আসল বক্তব্য না। ভুমিকা। আসল কথাটা এখনই বলবে।
‘উই’ কে, সেই উত্তরটাই এখন দেবে। মাই ফিঙ্গারস আর ক্রসড। কতটুকু বুঝেছে দীপা। আর ভাবতে পারলাম না। দীপা আবার বলতে শুরু করল। এবার আর কাপের দিকে তাকিয়ে না। আমার দিকে তাকিয়ে। মনে হচ্ছে চোখে পানি টলটল করছে।
--তোমার ব্যাপারে অন্ধ না হলে আমিও হয়তো ব্যাপারটা টের পেতাম।
দীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু মনে হচ্ছে না আমাকে দেখছে। কথাগুলোও মনে হয় নিজেকে বলছে। টলমল চোখ নিয়ে ও শেষ কথাটা বলল। ফিল করলাম, এক মুহুর্তের জন্য, মাই হার্ট স্টপড বিটিং।
--লুবনা গতকালকেই বলছিল, তোর হবু বরের চাহনিটা সুবিধার না।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪১