১
প্রবলেমটা অস্বাভাবিক না। আবার স্বাভাবিকও না। বলা যায়, টেকনিক্যালি পসিবল, বাট নট ইউজুয়াল। তবে হতবাক হওয়ার মত ঘটনা। আমি নিজেও অবাক হয়েছি। শুধু অবাক না, বলা যায়, আমার অবস্থা এখন রীতিমত বিধ্বস্ত। সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার ঘটেছে। নিজের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। এতদিন ধারণা ছিল, আমি নিজেকে ভালোই চিনি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমি নিজেকে এতদিন কিছুই চিনি নি। আমার ভেতরে যে এমন একটা অদ্ভুত মানুষ লুকিয়েছিল, আমি নিজেই কখনও টের পাইনি। আর আজ যখন টের পেলাম, তখন…
না দেরী বলব না। ‘দেরী' স্টেটমেন্টটা নিয়ে কিছুটা কন্ট্রোভার্সি আছে। ইনফ্যাক্ট সেটা নিয়েই মনে ঝড় বইছে। বুঝে উঠতে পারছি না, কি করব। দোষ কার? অনেস্টলি স্পিকিং ‘জানি না’। তবে এমন সমস্যাটা যে হতে পারে, তা এদেশের মা কিংবা দাদীরা জানতেন। আর তাই, তাঁরা অঘোষিত একটা নিয়ম তাঁরা চালু রেখেছিলেন। সেটা চালু থাকলে ঘটনাটা হয়তো ঘটতো না। যদি বিয়েটা হয়ে যেত, তাহলে হয়তো…।
হলফ করে বলতে পারছি না। হয়তো তারপরেও হতে পারতো। হয়তো হত না। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা ভেবে আর লাভ নেই। যা ঘটার ঘটে গেছে। দাদী নানীদের তৈরি করা সেই নিয়মটা আজ ভেঙ্গেছিল দীপা। অ্যান্ড দ্যাট ক্রিয়েটেড দ্যা হোল ব্লান্ডার।
যাই হোক, সিদ্ধান্ত আমাকে একটা নিতে হবে। সময় হাতে বেশি নেই। কাজটা আজকেই করব কি না ভাবছি। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে বেশ কিছক্ষণ ধরেই নাড়াচাড়া করছিলাম। দীপাকে ফোন করব কি না, সেটাই লাস্ট ওয়ান আওয়ার থেকে ভাবছি। বুঝতেই পারছেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আসলে অনেকগুলো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথম সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কথাটা দীপাকে বলব কি না। সেটাও নিয়ে ফেলেছি। বলব। আটকে আছি, তৃতীয়টায়। কখন বলব। এখন? না অন্য কোন সময়।
ঘটনাটা নিয়ে বেশি ভূমিকা করছি, আই গেস। ওকে, লেটস কাম টু দ্যা পয়েন্ট। ঘটনাটা আজকের। আই মিন, যে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলছি, সেটা ঘটেছে আজকেই। একটু আগে। রাত আটটায় আমার এঙ্গেজমেন্ট ছিল। আমার মানে, দীপার। আমার জন্য দীপাকে এনগেজ করা হল। না, বাংলা সিনেমা টাইপ ব্যাপার না। পরিবারের মতের বিপক্ষে গিয়ে, পালিয়ে গিয়ে এ কম্ম আমি করিনি। বরং রিভার্স।
শি ইজ মাই ফিয়সে। চাইল্ডহুড সুইট হার্ট না। পরিণত বয়সের প্রেম। টিন এজে বাকী সবার মত দু একটা ট্রাই নিয়েছিলাম। একটা কিছুদিন চলেও ছিল। অ্যান্ড দেন… নায়িকা এখন দু সন্তানের জননী। আমাকে মামা ডাকে। এরপরে একরকম আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। দেন, পড়াশোনা শেষে এল চাকরী জীবন। আর সেখানেই দেখা পেলাম দীপার।
বছর দুয়েকের প্রেম। নাহ, ভুল বললাম। পরিচয় বছর দুয়েকের। শুরুতে সম্পর্কটা ছিল কলিগের। এরপরে 'জাস্ট ফ্রেন্ড’ ছিলাম কিছুদিন। অ্যান্ড দেন…যেমনটা হয় আর কি।
আমাদের প্রেম কাহিনীতেও তেমন কোন স্বাতন্ত্র্য নেই। টিপিক্যাল 'কলিগ প্রেম’ যেমন হয়। কাজের সূত্রে একে অপরের সাথে আলাপ। এরপরে আড়চোখে দেখা, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে দীপার টেবিলের আশে পাশে দিয়ে এক চক্কর মেরে আসা। পরের ধাপে এল, একসাথে চা কফি খেতে যাওয়া। দীপা আমার ধারণা ততদিনে বুঝে গেছে, আই অ্যাম ইন্টেরেস্টেড। আমি একাই যে ক্যান্ডিডেট ছিলাম, তেমন না। আরও অনেকেই ছিল। তবে মাস ছয়েকের ভেতরে পরিস্থিতি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। শিকে আমার কপালেই ছিঁড়ছে।
অফিশিয়াল প্রপোজাল দেয়া হল। উত্তরটা কি হতে যাচ্ছে, সেটা ততোদিনে সবাই বুঝে গেছে। আমি নিজেও সিওর ছিলাম। তারপরও, ফর্মালিটি। ব্যাপারটা হওয়র পরে, একটাই পরিবর্তন হল। কলিগরা ‘চান্সে আছে’ টাইপ কিছু না বলে, বলা শুরু করল ‘কাপল'।
বছর খানেক এভাবেই চলল। ইতিমধ্যে ‘বিয়ে' নামক ঘটনার জন্য ছোট খাট প্ল্যানিং চলতে লাগল। লুকোচুরি ছিল না। দীপাও যেমন ওর বাসায় জানিয়েছিল, আমিও ইনফরম করে রেখেছিলাম। সবাই জানত, আমরা বিয়ে করছি। বাকী যা ছিল তা ছিল আনুষ্ঠানিকতা। লোকজন ডেকে জানান দেয়া, আজ থেকে আমরা দম্পতি।
সেটায়ও সমস্যার কিছু ছিল না। দীপা ভাল ফ্যামিলির মেয়ে। দেখতে সুন্দরী। শিক্ষিতা। টিপিক্যাম মধ্যবিত্ত পরিবার যেমন বউ চায়, সেরকম। আমিও পাত্র হিসেবে মন্দ না। চাকরী আছে, স্যালারি ভাল। ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনা আছে। আর কি চাই?
দীপার সাথে আলাপ করেই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, সম্পর্কে একটা সরকারী সিল পড়ার সময় হয়ে গেছে। বাসায় জানালাম। কাহিনীর শুরুটা যেহেতু ছেলের বাসা থেকেই ইনিশিয়েট হয়, তাই আমার বাসায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, প্রথম ধাপ ফেলার। কাহিনী পারিবারিকভাবে এনওসি যদিও আগে থেকে ছিল, তারপরও, নিয়ম বলে কথা। নানী দাদীরা যেসব নিয়ম কানুন তৈরি করে এতদিন ধরে যত্নে লালন করে এসেছেন, কাহিনীগুলো সেভাবে শুরু হয়ে গেল। সিদ্ধান্ত হল, প্রথমে আমাদের বাসা থেকে দীপার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হবে। সেদিন বাকী সব দিন তারিখ ঠিক হবে।
এই হচ্ছে ভূমিকা। সো, গল্পের সারাংশ হচ্ছে, আমাদের প্রেমকাহিনী আজ অফিশাল হওয়ার পথে প্রথম ধাপ ফেলতে যাচ্ছিল। আর সেই মোতাবেক, কিছুক্ষণ আগে ছিল আমাদের এনগেজমেন্ট। প্রস্তুতি পর্বে যা যা হয়, সবই ঠিকঠাক মত ঘটে। যথারীতি আত্মীয় স্বজনদের ভেতরে দূরত্বের পরিমাপ হয়। কে কে কাছের লোক, কাদের বাদ দেয়া যাবে না, কাকে কৌশলে বাদ দিতে হবে, আই মিন বিয়েতে যা যা ঘটে, সবই চলেছে গত কদিন ধরে। ফাইনাল সিদ্ধান্ত দীপাদের বাসায় জানান হল। আজ সন্ধ্যায় আমরা আসছি। কতজন আসব সেটা শুনে দীপার বাসার লোকজন ঢোক গিলেছিল কি না জানি না, বাট আপত্তি করেননি।
অ্যান্ড দেন, শুরু হয়ে যায়, আমাদের তরফের প্রস্তুতি। আঙ্গুলের মাপ নিয়ে আগে আংটি কেনা হয়ে গিয়েছিল। আজ শুধু ডালা ফালা সাজানো হল। সুন্দর করে র্যাপ করা হল। বাড়ির আগ্রহী পিচ্চি পাচ্ছিরা নাচানাচি শুরু করল। দুই বাড়ীর ভেতরে কথা চালাচালির জন্য একজন মিডল ম্যান তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তিনি জানালেন শুধু আংটি নিয়ে গেলে কেমন দেখায়। তাই, সঙ্গে শাড়ি আর একটা নেকলেস দেয়ার সিদ্ধান্ত হল। আরও ঠিক হল, হিন্দি ফিল্ম স্টাইলে আংটি আমি পড়াব। আর নেকলেস মা।
অতঃপর, দুই মাইক্রো ভর্তি করে এনগেজমেন্ট বাহিনী রওয়ানা দিলাম। সন্ধ্যার পর পর দীপাদের বাসায় পৌঁছে গেলাম। ওদের তরফ থেকে ফর্মালিটিতে কোন ত্রুটি হল না। আমাদের ফুল টুল দিয়ে রিসিভ করা হল। ড্রয়িং রুমে মুরুব্বীদের বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট ছিল। উনাদের সাথে আমিও সেখানে অবস্থান নিলাম। বাকীরা এদিক ওদিক যে যেখানে পারল। শুরু হল বোরিং অপেক্ষা। মুরুব্বী লেভেল নিজেরা গল্প গুজবে ব্যস্ত হলেন। পিচ্চিপাচ্চি লেভেল, আর কিছু আত্মীয় শুরু করে দিল, গোয়েন্দাগিরি। এই বাসায় কোথায় কি খুঁত আছে, কিভাবে প্রমাণ করা যায়, ছেলে পক্ষ বেটার, এসবের অ্যানালাইসিস। আমার তেমন কিছু করার নেই। হাসি হাসি মুখ নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।
দীপা যেকোন সময়ে এসে পড়বে। মা কিংবা ভাবী সম্পর্কের কেউ সাথে করে নিয়ে আসবে। আমি একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছি। দীপা আসলে, আমার পাশের সোফাটায় বসবে। এরপরে…
অপেক্ষা চলছে। ও এখনও আমাদের সামনে আসেনি। সাথে সাথে আসাটা নিয়ম না। কিছুটা দেরী করে আসা নিয়ম। আমাদের জানানো হল, ও সাজগোজ করছে। এক্ষুনি এসে পড়বে। বিশ্বাস করাটাই নিয়ম।
বিকেল থেকে না হলেও বাড় দশেক দীপার সাথে ফোনে কথা হয়েছে। আর তাই আমি জানি, ও ইতিমধ্যে পার্লার হয়ে এসেছে। তারপরও… একটা ফাইনাল টাচ না দিলে মেয়েদের মন ভরে না। সবার সামনে ফোন করতে পারছি না। তাছাড়া, আমদের তখন হালকা নাস্তা দেয়া হয়েছে। সরবত টরবত।
এমন সময় পিচ্চি পাচ্ছিদের ভেতরে নড়াচড়ার ধরন পাল্টে গেল। বোঝা গেল, দীপা আসছে। দীপা যে ঘরে ছিল, সেটা ভেতরের দিকে। ড্রয়িং রুম পর্যন্ত আসতে একটা প্যাসেজ পার হতে হয়। ও এখন সেই প্যাসেজে। ড্রয়িং রুমে না ঢুকলে ওকে দেখা যাবে না। অপেক্ষা করে আছি, কখন দীপা এসে দাঁড়াবে দরজায়।
এরপর? ইয়েস। অঘটনটা ঘটল।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪