১
মেয়েটার ব্যাপারে আগেই আমাকে ওয়ার্ন করেছিল জসীম। বলেছিল,
— নেক্সট ভিজিটে ইউ উইল বি সারপ্রাইজড। শী ইজ ডিফ্রেন্ট।
কথাটা শোনার পর থেকেই এক্সাইটেড ছিলাম। অনেকটা প্রথমবারের মত। জসীম মিথ্যে বলে না। এর আগে যতজনকে দিয়েছে, সবার ছোট্ট একটা ইন্ট্রো দিয়ে দিয়েছে। সেভাবেই এক্সপেক্টেশান তৈরি হয়ে থাকত। ওর হিন্টের ভেতরে থাকত ক্লু। লাইক, ‘শী ইজ ক্রেজি’ কিংবা ‘শী ইজ রোমা।ন্টিক’। এবারে তেমন কোন ক্লু নেই। কেবল ‘ডিফ্রেন্ট' তাই কেমন যেন একটা আলাদা আগ্রহ জন্মেছিল। আর তাই, এই মুহূর্তে 'ইগারলি ওয়েটিং’ না হলেও কাছাকাছি একটা অনুভূতি কাজ করছে আমার ভেতরে।
বুঝতেই পারছেন, এটা অবশ্য আমার প্রথমবার না। এর আগেও, আই মিন…ঠিক রেগুলার না। অকেশনাল, বাট, কিছুটা হলেও অভিজ্ঞ। তাই, বুকটা ঢিপঢিপ করলেও, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাইনি। এসব সময়ে হার্ড ড্রিঙ্ক আনিয়ে রাখি। যে ধরনের মেয়েরা আসে, ওরা এসবে ইউসড টু। সিগারেটও থাকে।
তরুকে ফাঁকি দেয়ার জন্য ঘটনাগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সাজানো থাকে। অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে যেতে হচ্ছে বলে বাসা থেকে বেরোই। খুলনা কিংবা চিটাগাঙয়ের ফ্লাইটের একটা টিকিটও কাটা থাকে। সে ফ্লাইটের টাইম অনুযায়ী বাসা থেকে বের হই। এরপরে এয়ারপোর্টে নেমে গাড়ি ছেড়ে দিই। সেখানে আরেকটা গাড়ি আমার জন্য ওয়েট করে। সেটায় চেপে সোজা এই হোটেলে চেক ইন করি।
যে পোস্টে চাকরী করি, তাতে বিভিন্ন ধরনের উৎকোচের অফার থাকে। টাকা পয়সা কম করিনি। তবে এসবের অভ্যেস ছিল না। হয়তো হতও না। একদিন, অফারটা পেলাম। কুরিয়ারে এসেছিল অফারটা। একটা ছবি। অপূর্ব সুন্দরী। নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। অ্যান্ড দেন…
প্রথম প্রথম কিছুদিন অপরাধবোধ কাজ করেছিল। তবে এক্সাইটমেন্টও ছিল। সব মিলিয়ে, ইট ওয়াজ এঞ্জয়িং। এরপরে যেমনটা হয়, একঘেয়েমি ফিল করতে শুরু করি। যদিও একেবার বাদ দেয়ার কথা ভাবতে শুরু করিনি, তবে উত্তেজনায় ভাটার টান ফিল করতে শুরু করেছিলাম। আগের মত আর লাগে না। কেমন যেন রুটিন ওয়ার্ক টাইপ ফিলিং।
কিছুদিন আগে ব্যাপারটা জসীমকে জানালাম। এরপর থেকে ও কিছু পর্ণ মুভি আর কয়েকটা পর্ণ পত্রিকা আর বই নিয়মিত রুমে পাঠিয়ে দিত। এসবে আমি নতুন, এমন না। জাস্ট অনেকদিনের বিরতি পড়েছিল, এই আর কি। শুরু শুরুতে ভালোই কাজ করলে। কখনও রুমে থাকা এলইডি টিভিতে পেন ড্রাইভ লাগিয়ে পর্ণ মুভি গুলো দেখে নিতাম। কখনও একা কখনও মেয়ে গুলোকে সাথে নিয়ে। মাঝে মাঝে বইগুলো। পত্রিকা গুলোতে ছবি থাকত। এভাবেই চলছিল।
সবকিছুরই একটা চরম সীমা থাকে। আর এসব ব্যাপারে নতুনত্বের আর কি আছে। তাই এই টোটকাগুলোও একসময় এর ধার হারাতে লাগল। জসীমকে বললাম
— দারুণ এক্সাইটিং কিছুর ব্যাবস্থা কর।
আসলে, আমি বোধহয় মনে মনে অন্যরকম সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছিলাম। এসব একেবারে বন্ধ করে দেয়া। মনের একটা অংশ অবশ্য তখনও রাজী হয়নি। আমি তখন ‘আর কিছুদিন দেখি’ স্টেজে অবস্থান করছিলাম, আর নিজেকে চাঙ্গা রাখতে কখনও মুভি দেখি, কখনও বই পড়ি। অ্যান্ড… তখনও বন্ধ করিনি।
আসলে, ব্যাপারগুলো তখনও এঞ্জয় করছিলাম। সাথে হেল্প করছিল ডিফ্রেন্ট অভিজ্ঞতা। কিংবা কিছুটা রিলাক্সেশান হয়। একটা ব্যাপার তো ঠিক, যখন এখান থেকে ফিরি, অনেকটাই ফ্রেস লাগে।
যাই হোক, গতবার নতুন একটা বই পাঠিয়েছিল জসীম। এই লাইনের অন্য বইগুলোর চেয়ে এই বইটা বেশ আলাদা। সস্তা কাগজ আর সস্তা বাঁধাই না। ভাল কাগজ আর বেশ সুন্দর বাঁধাইয়ের। দেখে প্রথম রিয়াকশান হয়েছিল, 'স্ট্রেঞ্জ?’। আসলে এমনটা প্রথম দেখলাম। যদিও ছাত্রজীবনের পরে, এসব আর পড়িনি, তারপরও এসব বই সম্পর্কে একটা অ্যাভারেজ ধারণা ছিল। ইউজুয়ালি এসব বই, এতোটা সুন্দর গেটাপের হয় না।
বইটায়, বেশ প্রফেশনাল একটা টাচ আছে। টিপিক্যাল ডিটেলসের বদলে, গল্পগুলোয় একটা সত্যিকারের গল্প আছে। সুন্দর সুন্দর সব প্লট। সুন্দর ঝরঝরে ভাষা। বর্ণনাটাও এক্সাইটিং। রিয়েলি এক্সাইটিং।
এসব বইয়ে রাইটাররা সাধারনতঃ ফেক একটা নাম দেয়। ডাবল মিনিং, ইরোটিক একটা ফিলিং থাকে সেসব নামে। এই রাইটারের নামটা তেমন না। অপরাজিতা। মেয়ে। অন্ততঃ সেটাই বোঝাতে চেয়েছে। লেখক এখানে প্রথম পুরুষে লিখেছে। একজন মেয়ের জবানীতে। অ্যান্ড দ্যাট ওয়ার্কড। পড়তে গিয়ে সত্যিই… সেদিন বেশ এঞ্জয় করেছিলাম।
ব্যাপারটা জসীমকে জানালাম সেদিন।
— নট ফ্লিলিং এক্সাইটেড এনিমোর।
ও স্মিত হেসে শুধু জানাল
— নেক্সট ডে উইল বি ডিফ্রেন্ট। এক্সপেরিয়েন্স অফ অ্যা লাইফটাইম।
জসীমের বলার ভেতর লোভনীয় কিছু একটা ছিল। আস্থা রাখলাম। সেই ‘ডিফ্রেন্ট' অফারটা আজকে আসবে। নতুন কিছুটা কি, সেটা জানার জন্যই আসলে অপেক্ষা করছিলাম। দরজায় যখন নক হল, তখন ফিল করলাম বুকের ঢিপঢিপানি কিছুটা হলেও বেড়ে গেল। এক্সাইটমেন্টটা ঠিক কোয়ান্টিফাই করতে পারব না। আই গেস, প্রথমবারের মত না হলেও, কাছাকাছি। গাট ফিলিংস বলছে, আজকে নতুন কিছু হতে যাচ্ছে।
নিজেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজা খুললাম। মেয়েটা দাঁড়িয়ে। কালো একটা শাড়ি পড়েছে। হালকা প্রসাধন। ছোট বয় কাট চুল। প্রথম নজরে ভালোই লাগল। বাট ‘এক্সাইটিং' টাইপ মনে হল না। চেহারায় একটা মিষ্টি ভাব আছে, বাট...। চোখ তুলে আমার দিকে তাকাল। মুখে কিছু বলল না। আমি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালাম। মেয়েটা বেশ সাবলীলভাবে হেঁটে রুমে ঢুকল। এক কথায় যদি ডিস্ক্রাইব করতে হয় তাহলে বলব, স্মার্ট, বাট নট ‘এক্সাইটিং'।
২
ইউজিয়ালি আমি খানিকক্ষণ গল্প করি। ওদেরকেই বলতে দিই। পার্সোনাল ব্যাপারে এঁরা সাধারনতঃ মিথ্যে বলে। তাই, নাম, কিভাবে এই প্রফেশানে এসেছে, এসব ইউজুয়ালি জিজ্ঞেস করি না। তবে বললে, শুনি। কখনও ড্রিংক অফার করে, কখনও 'রাতে কি খাবে?' দিয়ে শুরু করি।
আজ অবশ্য কেমন একটা পরীক্ষা নেয়া মুডে ছিলাম। মেয়েটার সব কিছু অ্যাসেস করছিলাম। আদৌ সেক্সি বিহেভ করছিল না। সিডিউস করার তেমন কোন লক্ষণ নেই। দরজা দিয়ে ঢুকে সোজা সোফায় গিয়ে বসল। এদিক ওদিক তাকিয়ে অ্যাশট্রেটা খুঁজল। এরপরে একটা সিগারেট ধরাল। একরাশ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে
— বসো।
আমি যে তখনও দাঁড়িয়ে ছিলাম, ব্যাপারটা নিজেই লক্ষ্য করিনি। বেশ ধাক্কা খেলাম। আমি না হলেও ওর চেয়ে বছর ত্রিশেক বড় হব। চুল পাকা। ডাইও করি না। এভাবে ‘তুমি' দিয়ে শুরু করাটা তাই এক্সপেক্ট করিনি। ইনফ্যাক্ট এর আগে কেউ এমন করেও নি। চেহারার গাম্ভীর্যের কারণেই হোক আর বয়সের দাগের কারণেই হোক, বেশিরভাগই, ‘আপনি' করেই বলেছে। বয়স অবশ্য সবারই এরকম বাইশ তেইশ বছরই ছিল।
অবশ্য, ঐ সময়, ব্যাপারটায় পরিবর্তন আসত। বাট, আদার দ্যান দ্যাট, পুরো আলাপ, ‘আপনি' টোনেই হত।
এনিওয়ে, মাথায় তখন ‘ডিফ্রেন্ট' ব্যাপারটা বেশি ঘুরছিল। তাই ধাক্কাটা হজম করে নিলাম। অন্য একটা সোফায় বসতে বসতে উত্তর দিলাম
— ড্রিংক্স?
হাতের সিগারেটের দিকে ইশারা করে বলল
— এটা শেষ করে।
নিজের জন্য একটা ড্রিঙ্ক বানালাম। সেটায় চুমুক দিতে দিতে বললাম
— জসীম তোমার বেশ প্রশংসা করছিল।
আমার এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে, শুরুতে বেশ খানিকক্ষণ গল্প করলে… ইট বিকামস স্মুদ। এক্সাইটিং কিছুর এক্সপেক্টেশান তখন কমে আসতে শুরু করেছে। তাই আমার ইউজুয়াল প্ল্যানে এগোলাম। শুরুটা প্রশংসা দিয়ে করলে গল্পটা জমে ভাল। উত্তরের আশায় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মেয়েটা কিছুটা সামনে ঝুঁকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। এরপরে অ্যাশট্রেতে ছাই ফেলে সোফায় হেলান দিল। বলল
— কেমন লাগল?
প্রথমে কথাটা বুঝতে পারিনি। আমার ভ্রু কুঁচকে যাওয়া দেখে ও চোখের ইশারায় আমার বিছানা দেখাল। ওর চোখ অনুসরণ করে বুঝতে পারলাম কি বলতে চাইছে। বিছানার ওপর বইটা ছিল। পড়ছিলাম। ও আসাতে, বইটা উপুড় করে রেখে দরজা খুলতে যাই।
ওর ইশারা অনুসরণ করে বিছানার দিকে তাকিয়ে কিছুটা এম্ব্যারাসড হলাম। ও কি ভাবছে? এসব ছাড়া পারি না? বিব্রত ভাবটা লুকাতে তাই জিজ্ঞেস করলাম
— ইট ইজ সামথিং ডিফ্রেন্ট।
— এসবে আবার ডিফ্রেন্ট কি?
— তুমি পড়েছ?
মেয়েটা এবার সরাসরি আমার দিকে তাকাল। সিগারেটে টান দিল। ছাদের দিকে তাক করে ধোঁয়া ছাড়ল। ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলল
— নাহ। তবে মহিলাকে চিনি।
— তাই?
— হ্যাঁ। প্রফেশনাল রাইটার। বেশ ভাল কাটতি।
মাথা ঝুঁকিয়ে ব্যাপারটায় সম্মতি জানালাম। বললাম
— হওয়ার কথা। দ্যা রাইটিং ইজ গুড। পড়ে দেখতে পার। ইয়াং বয়সে যেসব পড়েছিলাম, সেসবের চেয়ে আলাদা। ডেস্ক্রিপশানে একটা সৌন্দর্য আছে। তবে…
— তবে?
— রাইটার নামটা কেমন স্বাভাবিক টাইপ। আই মিন, এসব যারা লেখে, তাঁরা কেমন একটা এরোটিং, ডাবল মিনিং নাম রাখে, এটা তেমন না। অপরাজিতা।
— শী ইজ ডিফ্রেন্ট। সবগুলোই তাঁর পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স।
— হোয়াট?
— সিওর না। শোনা কথা।
বেশ অবাক হলাম। নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম
— কল গার্ল হলেও, রাইটিং ইজ গুড। রিয়েলি এক্সাইট করে দেয়।
আমার দিকে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকাল মেয়েটা। এরপরে বলল
— শি ইজ নট অ্যা কল গার্ল।
কথাটায় কিছু একটা ছিল। বুঝে গেলাম, মেয়েটা এনিয়ে তর্ক করতে চাইছে না। শি গেভ হাড় জাজমেন্ট। এনিয়ে আমারও আলাপ করার ইচ্ছে ছিল না। মেয়েটা আমার দিকে হাত বাড়াল। সেরকম বাড়ানো না। বইটা চাইছে।
উঠে গিয়ে বিছানা থেকে বইটা নিলাম। অনেকগুলো ছোট ছোট গল্প। তার একটার মাঝামাঝি ছিলাম। বইটা উপুড় করে রেখেছিলাম। ওকে দেয়ার জন্য সেই পাতাটা ভাঁজ করে বইটা বন্ধ করলাম। বইটা এগিয়ে দিতে দিতে বললাম
— রিয়েলি নাইস। পড়ে দেখতে পার।
বইটা আমার হাত থেকে নিল। কয়েকটা পাতা ওল্টালো। এরপরে আমার ভাঁজ করা পাতাটায় এসে বইটা খুলল। গল্পের যেখানে থেমে ছিলাম সেই পেজ এর প্রথম থেকে পড়তে শুরু করল। গলার আওয়াজে কোথা থেকে যেন একরাশ মাদকতা এসে ভর করল। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। শুনে যেতে লাগলাম। দারুণ একসাইটিং এক মুহূর্তে বইটা বন্ধ করে পাশে সোফায় রাখল। বলল
— রেডি?
৩
নিজেকে আমি সেই অর্থে অনুভূতিহীন বলি না। তবে এতোটা এঞ্জয় অনেকদিন করিনি। সেই প্রথম জীবনের অনুভূতি। জসীমকে মন মনে একটা থ্যাংকস দিলাম। এর আগে যাদের সাথেই রাত কাটিয়েছি, পরের দিন ভুলে গিয়েছি। সেভাবে কোন স্মৃতি কখনও তৈরি হয়নি। কাউকেই সেভাবে মনে রাখিনি। হঠাৎ করে রাস্তায় দেখা হলে কাউকে চিনতে পারব বলেও মনে হয় না। বাট, শী ইজ রিয়েলি ড্রিফ্রেন্ট। ও মনে দাগ কেটে ফেলেছে।
মেয়েটার আচরণে সাবলীলতাটা অ্যাক্টিং না। স্বতঃস্ফূর্ত। সাথে সাথে আরেকটা যে ব্যাপার আছে তা হচ্ছে স্মার্টনেস। রুমের ভেতর যখন হেঁটে বেড়াচ্ছে, মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। সবকিছুই কেন যেন ইরোটিক ফিলিং দিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একটা শাওয়ার নিয়েছে। এখন একটা গাউন পড়ে আছে। সোফায় বসে, একটা পকেট হেয়ার ড্রায়ারে ভেজা চুল শুকাচ্ছে। লুকিং রিয়েলি সেক্সি। আরেকবার ইচ্ছে করছে। বাট…
বিছানার বেড সাইড টেবিলে বইটা রাখা ছিল। হাতে তুলে নিলাম। এই মুহূর্তে বইটায় ঢুকতে পারব? অবশ্য এসব বই পড়তে সেই অর্থে মনোযোগ লাগে না। ওটা এসে যায়। স্টিল, এই পরিবেশে…। যা ভয় পেয়েছিলাম, তাই হল। পারছি না। বারবার চোখ চলে যাচ্ছে মেয়েটার দিকে।
ব্যাপারটা ওর চোখ এড়াল না। চুল শুকানো বন্ধ করে ধীরে ধীরে উঠে আসল। বিছানায় বসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। বইটা এগিয়ে দিলাম। সেটা হাতে নিয়ে আরেকটা গল্প পড়তে শুরু করল।
কিছুক্ষণ পরেই মনে হল, পারব। হাত বাড়িয়ে বইটা টেনে নিলাম। বন্ধ করে বেড সাইড টেবিলে রাখলাম। আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। চোখের চাহনি ডিফ্রেন্ট। মুখে শুধু বলল
— আজ শুধু গল্প।
কথাটায় কিছু একটা ছিল। ঠিক অনুরোধ না। নির্দেশও না। সামথিং ডিফ্রেন্ট। বললাম
— বেশ।
৪
ঘুম যখন ভাঙল তখন সময়টা বুঝতে পারলাম না। ঘরের জানালার পর্দা টানা। হালকা আলো আসছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, নটা। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। তারপরও উঠে বসলাম। পাশে তাকিয়ে বুঝলাম, মেয়েটা চলে গেছে। পেমেন্ট ইউজুয়ালি জসীম করে দেয়। আর টাকাটা কার কাছ থেকে কালেক্ট করবে, সেটা আমি জানিয়ে দিই। সো, পেমেন্টের জন্য কেউই অপেক্ষা করে না, কিংবা আমাকে সকাল সকাল ডিস্টার্ব করে না। প্রায় কেউই তাই, ফর্মালি আমার কাছ থেকে বিদায় নেয় না।
এর আগে কখনও হয়নি। আজ হল। কেন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগল। মনে হল, একটা ফর্মাল বিদায় হলে ভাল হত। রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, মনে নাই। শুধু মনে আছে, বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে দুজন গল্প করছিলাম। দুজন ঠিক না, আমিই বলছিলাম। নিজের গল্প, আমার জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা, জমে থাকা সব কথা। যদিও কাজটা আমি করি না, তবে এবার করলাম। মেয়েটার নাম জানতে চাইলাম।
— আপত্তি থাকলে বল না, বাট মিথ্যে নাম বল না।
ইউজুয়ালি মিথ্যে নাম বলে দেখে ইদানীং আর নাম জানতে চাই না। ‘শোন' দিয়েই চালিয়ে দিই। বাট আজ কেন যেন সব এলোমেলো করে ফেললাম। উত্তরে শুধু বলল
— নাম তুমি জেনে যাবে।
— কিভাবে?
উত্তরে কিছু না বলে শুধু হাসল। বলল
— এবার শুয়ে পড়।
এরপরে হয়তো আরও কিছুক্ষণ জেগে ছিলাম। তবে আর ট্রাই করিনি।
ঘোর কাটছিল না। তাই একটা শাওয়ার নিলাম। ফ্রেস হয়ে বিছানায় এসে বসলাম। সামনে তাকাতেই বইটা চোখে পড়ল। বইটা অন্যদিকের বেডসাইড টেবিলে রাখা। মনে হচ্ছে বইয়ের ভেতরে কিছু একটা রাখা। উঁচু হয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে বইটা হাতে নিলাম।
একটা খাম। চিঠি? একটু অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল।খামটা খুললাম। একটা চেক। বেশ হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্টের। সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট। সেটায় কেবল দুটো শব্দ লেখা ‘ইতি, অপরাজিতা’।
শেষ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৩৩