দুনৌকায় পা দেওয়ার কুফল সম্পর্কিত অনেক প্রবাদই প্রচলিত আছে বাংলা ভাষায়। প্রবাদগুলো জানা থাকলে তার মর্মার্থ নিশ্চয়ই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। কারজাইর নেতৃত্বাধীন ১১ বছরের বিশ্বস্ত আফগান সরকার আর ১২ বছর আগে শুরু হওয়া আফগান যুদ্ধের প্রধান শত্রু তালেবান দুপক্ষের সঙ্গেই ভাব রেখেই আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়েছিল বিশ্ব রাজনীতির কূটধুরন্ধর এ দেশটি। কাতারের দোহায় আলোচনার টেবিল পেতে বসেছিল শত্রু পক্ষ তালেবানের সঙ্গেও।
গতকাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও মার্কিন-তালেবান আলোচনা শেষ পর্যন্ত হয়নি। আর এই দুমুখো নীতির জেরে ভেস্তে গেছে কাঙ্খিত আফগান-মার্কিন শান্তি আলোচনাও। গত মাসের শুরুতে সিদ্ধান্ত হওয়া এই আলোচনার প্রস্তাবে আফগানিস্তান ও তালেবান দুপক্ষেরই বসার কথা ছিল।
কিন্তু মার্কিন প্রশ্রয়ে নিজেদের অফিস খোলার পর তালেবান জানিয়ে দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের প্রস্তাবিত শান্তি-প্রক্রিয়ায় তারা প্রভাবশালী আফগান ওয়ার লর্ড ও উপজাতি নেতাদের যুক্ত করতে চায়। কিন্তু হামিদ কারজাইকে নয়। প্রসঙ্গত, এর আগে বহুবার তালেবানরা কটাক্ষ করেছিল, কারজাইকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল হিসেবেই দেখে।
আজও আফগান-মার্কিন শান্তি আলোচনার বিষয়ে কাবুলে পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউসের কর্তাদের সঙ্গে কারজাইর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তালেবানের সঙ্গে ওয়াশিংটন যেভাবে 'ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোম্যাসি' চালাচ্ছে, তাতে ঘোরতর আপত্তি করে আলোচনা ভেঙে দিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট। গতকাল এক বিবৃতিতে কারজাই জানিয়েছেন, চলতি শান্তি-প্রক্রিয়া নিয়ে যেভাবে মার্কিন প্রশাসন কথা ও কাজে দুমুখো পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাতে আমরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
এ জন্য আফগান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করছে। অবশ্য গতকাল কারজাইর অফিস থেকে সরকারি বিবৃতি জারি হওয়ার পরে কাবুলের মার্কিন দূতাবাস বা ওয়াশিংটন থেকে মলম লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে বিস্তর। মান ভাঙাতে ২৪ ঘণ্টায় দুবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোন করেছেন।
কারজাইর এ উষ্মার পাশাপাশি তালেবানের কাছ থেকে কোনও শুভ বার্তা আসেনি মার্কিনিদের জন্য। দোহায় দপ্তর খোলার পরই গত বুধবার রাতে আফগানিস্তানের বাগরাম এয়ারবেসে তালেবানের জোড়া রকেট হামলায় নিহত হয়েছেন ৪ মার্কিন সেনা। এ ঘটনার পর কাতার থেকে তালেবানের মুখপাত্র মুহম্মদ সোহেল শাহিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও সংঘর্ষবিরতি হয়নি। তারা আমাদের আক্রমণ করে চলেছে আর আমরা ওদের। আলোচনা চলতে পারে, যুদ্ধবিরতি এখনই নয়।
এত কিছুর পরও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিল মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, এই ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রক্রিয়াটা চলবে বলে আমি আশাবাদী। কিন্তু আফগান প্রেসিডেন্ট আগাগোড়াই দুষেছেন মার্কিনিদের। বিশেষত, তালেবান যেভাবে তাদের নতুন দপ্তরকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তান’ জানায়, তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট কারজাই প্রশাসন। তাদের বক্তব্য- তালেবান সরকার যখন ছিল, তখন এই নাম ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন এ ধরনের কোনও কিছুরই অস্তিত্ব নেই। অবশ্য গতকাল রাতেই দপ্তরের নেমপ্লেট নামিয়ে ফেলে তালেবান।
তবে যত যাই হোক, শান্তি-প্রক্রিয়ায় মার্কিনিদের সদিচ্ছা নিয়ে তালেবান ও আফগান সরকার দুপক্ষের কাছেই একটি নেতিবাচক বার্তা গেছে, এতে সন্দেহ নেই । গতকাল আফগান পার্লামেন্ট লয়া জিগরার অধিবেশনের শুরুতেই মহিলা এমপি শুকরিয়া বারাকজাই যেমনটি বললেন, ‘ঐতিহাসিক ভুল করল আমেরিকা’।