ভয়ংকর ঠগী (দ্বীতিয় পর্ব)
ভয়ংকর ঠগী (তৃতীয় পর্ব)
ঠগিরা ছিল বাংলাদেশেও !
অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ঠগীদের হত্যাকান্ড তুঙ্গে উঠলেও ১৩ শতক থেকেই উত্তর ভারতে ঠগীদের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। আর বাংলায়? অনুমান করা যায় ঠগীরা পূর্বে দিল্লির আশেপাশে ছিল এবং ১২৯০ সালের পর বাংলায় আসে। ১৩৫৬ সালে ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দীন বারানি “ফিরোজ শাহর ইতিহাস” গ্রন্থে লিখেছেন: ‘ সুলতানের শাসনামলে (১২৯০) কয়েকজন ঠগীকে দিল্লিতে আনীত হইয়াছিল এবং উক্ত সংঘের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া আরও সহস্র ঠগীকে আটক করা হয়। সভাসদরা চাইলেও সুলতান তাহাদের হত্যার নির্দেশ দেন নাই। সুলতান উহাদিগকে নৌকায় করিয়া লক্ষণাবতীতে পাঠাইয়া দিতে নির্দেশ দেন যেন তাহারা আর দিল্লি এবং তার আশেপাশে গোলযোগ না করে।’
এখন প্রশ্ন হল লক্ষণাবতী কোথায়? লক্ষণাবতী বা লখনৌতি হল গৌড় বাংলা। যা অবস্থিত ছিল বর্তমান ভারতের পশ্চিম বাংলার মালদা জেলায়। সে হিসেবে বাংলায় ঠগীদের ইতিহাসের সূত্রপাত ১২৯০ সাল থেকেই। সেসময় বাংলাদেশ ছিল নদী নালায় ভরা। তারপরও বাংলার মানুষ ঠগির আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি।
বাংলার নদী নালার ঠগিদের নাম ছিল ‘ভাগিনা’। ভাগিনারা জলপথে আক্রমণের জন্য বেছে নেয় ভিন্ন কৌশল। জলপথে ঠগিদের শিকার করার পদ্ধতি ছিল অন্যরকম। তারা লোকজনে ভরা কোনও খেয়াঘাটে যাত্রী সেজে নৌকা নোঙ্গর করে বসে থাকত। দলের কিছু লোক ডাঙ্গায় ফাঁদ পাততো। তারা যাত্রীদের কৌশলে নৌকায় এনে তুলত। নির্জন যায়গায় নৌকা পৌঁছলে, ছইয়ে যারা বসে আছে তারা ইঙ্গিত দিত এবং হাল বাওয়া ঠগি পাটাতনে তিনবার বৈঠা ঠেকাত। এই সংকেত পাওয়ামাত্রই ছইয়ে এবং পাটাতনের যাত্রীদের উপর শুরু হয়ে যেত ঠগীদের আক্রমণ। অথবা ঠগিরা দেখল কোনও বেপারির নৌকা ভেসে যাচ্ছে। তখন ঠগীরা তাদের সাথে ভাব জমাত। এরপর দুই-তিনদিন একসাথে নৌকা চলা; একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া। ঠিক হতো সন্ধাবেলা গানের আসর বসবে। সেইমতো আয়োজন হত। ঠগীরা শিকারের আরপাশে গোল হয়ে বসত। গান যখন জমে ইঠত তখনই হত্যার নির্দেশ জারি হত। ব্যাস মুহূর্তেই সব শেষ। ফের যাত্রা শুরু হত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:২৩