এই মূহূর্তে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান? আপনাকে যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত র্যাংকিং সংস্থা টাইমস হায়ার এডুকেশন এবং কুয়াকুয়ারেলী সাইমন্ডস (কিউইএস) যৌথভাবে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে 'টপ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ' র্যাংকিং জরিপ পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক তথ্য, বুদ্ধিভিত্তিক গবেষণা, ওয়েবসাইটে সংযোজিত তথ্য এবং গবেষণা কর্মকাণ্ড নিয়ে জরিপ করে সংস্থাটি।
প্রকাশিত তালিকায় এ বছর গতবারের প্রথম স্থান অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিকে টপকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রথম স্থান দখল করেছে। আর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অবস্থান দ্বিতীয়। তৃতীয় অবস্থানে মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমা ইউনিভার্সিটি। চতুর্থ অবস্থানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি। পরের অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ও সপ্তম স্থানে ইয়েল ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। দ্বিতীয় অবস্থানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। বিশ্বে বুয়েট ২,৯১৬তম স্থানে এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ৪,৫৭৭তম স্থানে রয়েছে।
এবারের বিশ্ব র্যাংকিংয়ের দিক দিয়ে পাঁচ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে না। ক্রমাগত সূচকের নিচের দিকে যাচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১০ সালের প্রকাশিত জরিপে বিশ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫,৫৩১তম। এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও স্থান হয়নি অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। দক্ষিণ এশিয়ায় এর অবস্থান ৭৬।একই সংস্থার জরিপে ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৪৯২২তম। এক বছরের ব্যবধানে ৬০৯ ধাপ পিছিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ৩৮০১তম স্থান অধিকার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে পড়লেও আশার বাণী হচ্ছে বুয়েট এবার ২৯১৬তম স্থানে রয়েছে। গতবারের তুলনায় ৮৮৫ ধাপ এগিয়েছে। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ৪,৫৭৭তম স্থানে রয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে এ ধরনের তালিকা প্রকাশ করছে সংস্থাটি। প্রতিবছর জুন ও ডিসেম্বর মাসে সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ২০১০ সালের জরিপ ১০ই জুলাই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। বিশ্বের ২০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে বাছাই করে ১২ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করে এই গবেষণা সংস্থাটি। র্যাংক নির্ধারণে অনলাইনে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক প্রকাশনার পাশাপাশি শিক্ষকদের ব্যক্তিগত প্রকাশনাকেও বিবেচনা করা হয়। শিক্ষকদের দক্ষতার বিষয়টিও বিবেচনা করে সংস্থাটি। ২০১০ সালের স্পেনের সবচেয়ে বড় পাবলিক গবেষণা সংস্থা ‘কনসেজো সুপেরিয়র ডি ইনভেসটিসিওন সিয়েন্টিফিকাস’র গবেষণায় র্যাংকিংয়ে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ৯৫৪ ধাপ পেছনে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২০০৯ সালে স্পেন গবেষণা করেছিল। এতে ভারতীয় সাবকন্টিনেন্টে বুয়েটের অবস্থান ২৯তম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪৫তম হয়। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রথম ও যুক্তরাজ্যের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থান দখল করে। গতবার যৌথভাবে হার্ভার্ড ইউভার্সিটি দ্বিতীয় স্থান দখল করলেও এবার হয়েছে ৪২তম। প্রকাশিত জরিপে বিশ্বখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৬তম ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ১২তম স্থানে রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম দিকে স্থান করে নেয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ‘শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়’-এর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে ৬টি। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২৩), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (৫৬), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (৭৬), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (৮৭), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (৯৫), ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (৯৯)। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৭২টিই ভারতের। এছাড়া পাকিস্তানের ১৪টি, শ্রীলঙ্কার ৭টি এবং নেপালের ১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তালিকায় জায়গা করে নেয়া অপর বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (৫৮৮২তম স্থান), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (৬২১০), ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (৬৩৫৯), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (৬৮৬০), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (৭০৭৮), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (৭১৯৬), ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (৮৭৫৯), জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় (৮৭৮৯), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৯৪০৯), আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০২০৩), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (১০৪৭৪), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০৫০৩), ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক বাংলাদেশ (১০৫১৮), চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০৬৪৭), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (১০৬৬৭), ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (১১০৪৩), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (১১১৪২), ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১১২৩৫), খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১১৪২২) এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (১১৬৪৩)।
ওয়েবসাইটের জরিপে বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে থাকার মূল কারণ হলো-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বর্তমান যে ওবেসাইটটি রয়েছে সেটিতে যৎসামান্য তথ্য রয়েছে। ওয়েব সাইটের প্রতিটি বিভাগ, হল, ইনস্টিটিউট, লাইব্রেরী, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, সিন্ডিকেট, সিনেট, একাডেমিক কাউন্সিল, যাতায়াত ব্যবস্থা, মেডিকেল সেন্টার, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক বিষয় এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে নামেমাত্র তথ্য দেয়া হয়েছে। ওয়েব সাইটে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি, গ্র্যাজুয়েট, আন্ডাপরগ্র্যাজুয়েট এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডরা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেরও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সুত্রে জানা গেছে প্রকাশিত গবেষণাটির যেমন বাস্তবতা আছে তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতা আছে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেন। দিন দিন মেধাবী শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করছে। আমাদের শিক্ষার মান কমেনি। তবে এটা সত্য তথ্য-প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এর বেশির ভাগ অনলাইনে যায় না। ফলে অনলাইনের সঙ্গে বাস্তবের একটি ব্যবধান তৈরি হয়েছে। আমরা এ ব্যবধান কমাতে কাজ করে যাচ্ছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার হার্ডকপি জমা দেন শিক্ষকরা যা ওয়ার্ল্ড র্যাকিং-এ কাউন্ট হয় না। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাকিংর দিকে খেয়াল রেখে তাদের ওয়েবসাইট আপডেট করে থাকে। তাদের গবেষণা পেপারগুলোও ওয়েবসাইটে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
তবে সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায় গত কয়েক বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঐতিহ্য হারাচ্ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে বিরাজ করছে বেহাল দশা। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগুতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং-এ নিচের দিকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এগিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট, অঙ্গনে দলীয় রাজনীতি, আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্য, বিক্ষিপ্ত গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষকদের অন্যত্র খন্ডকালীন শিক্ষকতা, ভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে এই জরিপ নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত জরিপের ফলাফল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এক এক সংস্থার জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অবস্থান দেখানো হয়েছে।
র্যাংকিংটি দেখতে :
বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজে :